ঘোড়াশাল বিদ্যুত প্রকল্পের দরপত্র নিয়ে অভিযোগ সংসদীয় কমিটিতে- তদন্ত কমিটি করা হবে
ঘোড়াশাল বিদ্যুত প্রকল্পের দরপত্র নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সংসদীয় কমিটিতে। হাজার কোটি টাকার গ্যাসভিত্তিক এ বিদ্যুত প্রকল্পের সর্বনিম্ন দরদাতা দুই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শর্তভঙ্গের অভিযোগ করা হয়েছে বিদ্যুত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে।
এদিকে কমিটি জানিয়েছে, অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে।সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঘোড়াশাল ৩০০-৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্রকল্পের জন্য গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দরপত্র আহ্বান করা হয়। চলতি বছরের ২১ জুন পর্যন্ত ৬টি কোম্পানি দরপত্র জমা দেয়। সেগুলো হচ্ছে- সাংহাই ইলেকট্রিক গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (এসইসি), পি আর চায়না, চায়না ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএনটিআইসি), চায়না এ্যান্ড সিএমসি চায়না কনসোর্টিয়াম, সেপকো থ্রি ইলেকট্রিক পাওয়ার কর্পোরেশন, চায়না, আলস্টম(সুইজারল্যান্ড) লিমিটেড এ্যান্ড আলস্টোম ইন্ডিয়া লিমিটেড কনসোর্টিয়াম, মারুবেনি কর্পোরেশন এ্যান্ড হুন্দাই ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড কনসোর্টিয়াম ও সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন চায়না।
বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের পরিকল্পনা ও উন্নয়নের সদস্য আবদুহ রুহ্ল্লুাহর নেতৃত্বে গঠিত ৭ সদস্যর দরপত্র মুল্যায়ন কমিটি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সিএনটিআইসিকে কাজ দেয়ার সুপারিশ করে। প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ৯৪৪ কোটি ৯৩ লাখ ৭ হাজার ৯৯৪ টাকা দর ডাকে। দ্বিতীয় সর্বনিম্ন প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সাংহাই ইলেকট্রিক গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড (এসইসি)। তাদের দর ১ হাজার ৯৯১ কোটি ৪৮ লাখ ২৭ হাজার ১৩১ টাকা।
তবে দুটি কোম্পানির বিরুদ্ধেই শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ করে সংসদীয় কমিটিকে বলা হয়েছে, এভাবে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ এ কাজটি দিলে দেশের অপূরণীয় ক্ষতি হবে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুবিদ আলী ভুঁইয়া শনিবার জনকণ্ঠকে বলেন, অভিযোগটি এখনও আমার নজরে আসেনি। সাধারণত কমিটির কাছে যে কোন অভিযোগ এলেই সেটি যাচাই করা হয়। সেক্ষেত্রে অভিযোগটি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি গঠনের মাধ্যমে অভিযোগ যাচাই করা হবে। তিনি আরও বলেন, স্থায়ী কমিটির কাছে এ ধরনের আরও কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে। আগামী বৈঠকে সে সব নিয়ে আলোচনা হবে।
জানা গেছে, সংসদীয় কমিটিকে দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মূল্যায়ন কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনের পর এসইসি বেশ কিছু শর্তভঙ্গের অভিযোগ আনে সিএনটিআইসির বিরুদ্ধে। অভিযোগ করা হয়, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, প্রকল্পের অন্তত ৮৫ ভাগ অর্থায়ন করবে কাজ পাওয়া কোম্পানি। এর বিপরীতে ব্যাংকের অনুমোদন চিঠি থাকতে হবে। বাকি ১৫ ভাগ ব্যয় করবে সরকার। তবে সিএনটিসি শর্ত ভঙ্গ করে দরপত্রের সঙ্গে ৮৫ শতাংশ অর্থায়নের বিষয়টি উল্লেখ করেনি। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, চায়না ভিত্তিক ক্রেডিট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি সাইনোসরের কাছ থেকে ঋণ নিশ্চয়তা সনদপত্র দেয়ার শর্ত থাকলেও দরপত্র দলিলাদিতে তা দেয়া হয়নি। এছাড়া নেট হিটের আউটপুট হবে ১৫০ ভাগ। অথচ দরপত্রে সিএনটিআইসি দিয়েছে ১৪১ দশমিক ১২ ভাগ। এটাও অন্যতম বড় শর্ত লঙ্ঘন।
এদিকে দরপত্রে অংশ নেয়া দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা এসইসির বিরুদ্ধেও শর্ত ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। দরপত্র শর্তে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট এ্যান্ড কনস্ট্রাকশনে (ইপিসি) বলা আছে, দরপত্রে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানকে ২৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুত প্ল্যান্টের কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অথচ এসইসির সে অভিজ্ঞতা নেই।
No comments