ভিন্নমত-আমরা সব পাবলিক ভাই by আবু আহমেদ
ওপরের টাইটেলটা একটা সিনেমার গানের। তবে ওইখানে টাইটেলটা হলো 'ইয়ে সব পাবলিক হ্যায়।' যে মেসেজ বা বার্তাটা আমরা সব পাবলিক ভাই দিতে চেয়েছে, তা হলো যত দোষ পাবলিকেরই, যত ক্ষতি পাবলিকেরই। এই পাবলিক কারা, অতি সাধারণ জনসাধারণ।
এই লোকরাই বিনা প্রতিবাদে ভ্যাট ও অন্যান্য ট্যাক্স দিচ্ছে। এই লোকরাই ফলের রস পান করার নামে স্যাকারিন মেশানো কিছু রঙিন পানি খাচ্ছে। এই লোকরাই বিজ্ঞাপনের কথার কাছে হার মানে। আর হার মেনে বাজার থেকে গুঁড়ো দুধ কিনে সন্তানকে খাইয়ে তার মেধাকে শাণিত করতে চাচ্ছে! এই পাবলিকরাই জনসভায় গিয়ে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে তাদের নেতাদের কথা শোনে। বাড়ি ফিরে এই ভেবে, তাদের এই নেতার থেকে ভালো মানুষ বুঝি আর নেই।
এই পাবলিকই পুলিশের খাতায় দাগি অপরাধী। পুলিশ সে-ই তো কত ভালো, মানুষের নিরাপত্তার প্রহরী! এই পাবলিকই পুলিশের হাতের ইশারায় ট্রাক থামাচ্ছে। একটু পরে কিছু একটা হাতবদল হলে আবার ছেড়েও দিচ্ছে। এই পাবলিকই তো সিনেমা দেখতে গিয়ে নায়িকার কান্না দেখে সিটে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এই পাবলিকই তো ডেসটিনি নামের এমএলএম কম্পানির গাছ কিনেছে, যে গাছ ভবিষ্যতে হবে। এই পাবলিকের টাকাই তো ব্যক্তিবিশেষের পকেটে গিয়ে শত শত কোটিতে জমা হচ্ছে। এই পাবলিকই তো বাজারের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে ডাক্তার সাহেবের লেকচার শুনছে, যে ডাক্তার সাহেব আবার সব রোগ ভালো করতে পারে! এই পাবলিকই তো হাসপাতালে গেল রোগ দেখাতে। হাসপাতালের ডাক্তার সিটে ভর্তি করিয়ে পাঁচ দিনের মাথায় তার থেকে এক লাখ টাকার বিল আদায় করল। এই পাবলিকই তো ফরমালিনযুক্ত আপেল খাচ্ছে অতি শখে বিদেশি ফল বলে, যে আপেল আবার পচে না! এই পাবলিকই তো ব্যাংকে টাকা রাখে, যে টাকা হাত ঘুরে আবার হলমার্কের মতো ব্যবসার হাতে পড়ে যায়। এই পাবলিকই তো বিনা প্রতিবাদে বেশি বেশি বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল দিয়ে যাচ্ছে। এই পাবলিকের অর্থ দিয়েই তো কথিত প্রতিনিধিরা বিনা মূল্যের পাজেরো গাড়ি আমদানি করছে। এই পাবলিকের অর্থ দিয়েই তো পুল-ব্রিজ হচ্ছে, আবার দুই বছরের মাথায় ভেঙে পড়ছে। এই পাবলিকই তো উচ্চশিক্ষা কিনছে অর্থ দিয়ে, যে শিক্ষা আবার জঞ্জালের সমতুল্য। এই পাবলিকই তো মেয়েকে ভালো রেজাল্ট করানোর জন্য উপযুক্ত টিউটর খুঁজে যার কাছে পাঠাচ্ছে, সে না আবার পশুর মতো আচরণ করছে তার ছাত্রীর সঙ্গে। এই পাবলিকই তো নাটক-সিনেমার শুটিংয়ের সময় চারদিকে জড়ো হয়। এই পাবলিকই তো অন্যকে ভোটে জেতানোর জন্য মারামারি করে নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করছে। এই পাবলিকই তো দেশের উন্নয়নের কথা শুনে অতি খুশি হয়ে যায়, যদিও উন্নয়নের ভাগ তার ভাগে মোটেই পড়ছে না। এই পাবলিকই তো রাত জেগে অন্যের জন্য হাততালি দিতে গিয়ে পরের দিন নিজের জন্য কাজ থেকে বিরত থাকে। এই পাবলিকই তো ছবি পেস্টিং দেখছে আর মুগ্ধ হচ্ছে, যদিও সে ওই সব ছবি পেইন্টিংয়ের মাথামুণ্ডু কিছু বোঝে না। এই পাবলিকই তো ক্ষমতাকে ভয় করে, তোয়াজও করে।
আমরা সব পাবলিক ভাই, তাই তো ভাবি, আমেরিকা কত মহান, যদিও সেই মহান আমেরিকা অন্যের দেশ দখল করতে অতি পটু। আমরা সব পাবলিক ভাই, তাই তো বলি, ভারত আমাদের জল দিলেও ভালো, না দিলেও ভালো। আমরা সব পাবলিক ভাই, তাই তো কম্পানির মিথ্যা কথাকে বিশ্বাস করে উচ্চ মূল্যে শেয়ার কিনে প্রতারিত হই। আমরা সব পাবলিক ভাই, তাই তো ফেল করা লোকদের কল্পকাহিনী আবার অর্থ দিয়ে কিনি। আমরা সবাই পাবলিক ভাই, তাই তো সম-অধিকারের কথা শুনলে মনে হয়, কালই আমাদের অবস্থার উন্নতি হয়ে যাচ্ছে। আমরা সবাই পাবলিক ভাই, তাই তো সুন্দর মোড়কে সবাই আমাদের কাছে জঞ্জাল বেচতে পারছে। আমরা সবাই পাবলিক, তবে আমরা কারা, আমাদের পরিচিতি কী। আমাদের অনেক পরিচয়, আমরা বেকার, আমরা ছোট কর্মচারী, আমরা কর্মকর্তা, আমরা ভোটার, আমরা আবার জজ-ব্যারিস্টারও! আমরা সবই। তবে সদা ঠকার জন্য আর অন্যকে বিশ্বাস করার জন্য যেন প্রস্তুত। সিনেমার সেই পাবলিকরা অবশ্য খেপে গিয়ে অত্যাচারী নেতাদের এক হাত নিয়েছিলেন। তবে আমাদের পাবলিক সে তুলনায় অনেক শান্তশিষ্ট।
লেখক : অর্থনীতিবিদ ও কলামিস্ট
এই পাবলিকই পুলিশের খাতায় দাগি অপরাধী। পুলিশ সে-ই তো কত ভালো, মানুষের নিরাপত্তার প্রহরী! এই পাবলিকই পুলিশের হাতের ইশারায় ট্রাক থামাচ্ছে। একটু পরে কিছু একটা হাতবদল হলে আবার ছেড়েও দিচ্ছে। এই পাবলিকই তো সিনেমা দেখতে গিয়ে নায়িকার কান্না দেখে সিটে বসে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। এই পাবলিকই তো ডেসটিনি নামের এমএলএম কম্পানির গাছ কিনেছে, যে গাছ ভবিষ্যতে হবে। এই পাবলিকের টাকাই তো ব্যক্তিবিশেষের পকেটে গিয়ে শত শত কোটিতে জমা হচ্ছে। এই পাবলিকই তো বাজারের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে ডাক্তার সাহেবের লেকচার শুনছে, যে ডাক্তার সাহেব আবার সব রোগ ভালো করতে পারে! এই পাবলিকই তো হাসপাতালে গেল রোগ দেখাতে। হাসপাতালের ডাক্তার সিটে ভর্তি করিয়ে পাঁচ দিনের মাথায় তার থেকে এক লাখ টাকার বিল আদায় করল। এই পাবলিকই তো ফরমালিনযুক্ত আপেল খাচ্ছে অতি শখে বিদেশি ফল বলে, যে আপেল আবার পচে না! এই পাবলিকই তো ব্যাংকে টাকা রাখে, যে টাকা হাত ঘুরে আবার হলমার্কের মতো ব্যবসার হাতে পড়ে যায়। এই পাবলিকই তো বিনা প্রতিবাদে বেশি বেশি বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল দিয়ে যাচ্ছে। এই পাবলিকের অর্থ দিয়েই তো কথিত প্রতিনিধিরা বিনা মূল্যের পাজেরো গাড়ি আমদানি করছে। এই পাবলিকের অর্থ দিয়েই তো পুল-ব্রিজ হচ্ছে, আবার দুই বছরের মাথায় ভেঙে পড়ছে। এই পাবলিকই তো উচ্চশিক্ষা কিনছে অর্থ দিয়ে, যে শিক্ষা আবার জঞ্জালের সমতুল্য। এই পাবলিকই তো মেয়েকে ভালো রেজাল্ট করানোর জন্য উপযুক্ত টিউটর খুঁজে যার কাছে পাঠাচ্ছে, সে না আবার পশুর মতো আচরণ করছে তার ছাত্রীর সঙ্গে। এই পাবলিকই তো নাটক-সিনেমার শুটিংয়ের সময় চারদিকে জড়ো হয়। এই পাবলিকই তো অন্যকে ভোটে জেতানোর জন্য মারামারি করে নিজের জীবনটাকে উৎসর্গ করছে। এই পাবলিকই তো দেশের উন্নয়নের কথা শুনে অতি খুশি হয়ে যায়, যদিও উন্নয়নের ভাগ তার ভাগে মোটেই পড়ছে না। এই পাবলিকই তো রাত জেগে অন্যের জন্য হাততালি দিতে গিয়ে পরের দিন নিজের জন্য কাজ থেকে বিরত থাকে। এই পাবলিকই তো ছবি পেস্টিং দেখছে আর মুগ্ধ হচ্ছে, যদিও সে ওই সব ছবি পেইন্টিংয়ের মাথামুণ্ডু কিছু বোঝে না। এই পাবলিকই তো ক্ষমতাকে ভয় করে, তোয়াজও করে।
আমরা সব পাবলিক ভাই, তাই তো ভাবি, আমেরিকা কত মহান, যদিও সেই মহান আমেরিকা অন্যের দেশ দখল করতে অতি পটু। আমরা সব পাবলিক ভাই, তাই তো বলি, ভারত আমাদের জল দিলেও ভালো, না দিলেও ভালো। আমরা সব পাবলিক ভাই, তাই তো কম্পানির মিথ্যা কথাকে বিশ্বাস করে উচ্চ মূল্যে শেয়ার কিনে প্রতারিত হই। আমরা সব পাবলিক ভাই, তাই তো ফেল করা লোকদের কল্পকাহিনী আবার অর্থ দিয়ে কিনি। আমরা সবাই পাবলিক ভাই, তাই তো সম-অধিকারের কথা শুনলে মনে হয়, কালই আমাদের অবস্থার উন্নতি হয়ে যাচ্ছে। আমরা সবাই পাবলিক ভাই, তাই তো সুন্দর মোড়কে সবাই আমাদের কাছে জঞ্জাল বেচতে পারছে। আমরা সবাই পাবলিক, তবে আমরা কারা, আমাদের পরিচিতি কী। আমাদের অনেক পরিচয়, আমরা বেকার, আমরা ছোট কর্মচারী, আমরা কর্মকর্তা, আমরা ভোটার, আমরা আবার জজ-ব্যারিস্টারও! আমরা সবই। তবে সদা ঠকার জন্য আর অন্যকে বিশ্বাস করার জন্য যেন প্রস্তুত। সিনেমার সেই পাবলিকরা অবশ্য খেপে গিয়ে অত্যাচারী নেতাদের এক হাত নিয়েছিলেন। তবে আমাদের পাবলিক সে তুলনায় অনেক শান্তশিষ্ট।
লেখক : অর্থনীতিবিদ ও কলামিস্ট
No comments