শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা-যোগ্যরাই আসুক শিক্ষকতায়
বে সরকারি স্কুল-কলেজের জন্য শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাসের হার ২০ শতাংশেরও কম_ এ তথ্য উদ্বেগজনক। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষায় ২ লাখ ২০ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন প্রায় ৪৩ হাজার।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা সচিবের দেওয়া তথ্যের অবশ্য ভিন্ন ব্যাখ্যাও করা চলে_ শিক্ষা মন্ত্রণালয় যথাযথ বাছবিচার করেই শিক্ষক নিয়োগ করতে চায়। শিক্ষার মান বাড়ানোর যে প্রবল তাগিদ সে লক্ষ্য অর্জন করতে হলে এর বিকল্প নেই। শিক্ষক হতে আগ্রহীদের আশি শতাংশ পরীক্ষায় ফেল করেছেন। পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষক হতে ইচ্ছুকদের তালিকা প্রণয়ন যে কতটা বিবেচনাপ্রসূত, এ থেকে তার প্রমাণ পাওয়া যায়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও কিছু বাছবিচার থাকবে। এ কাজে স্বচ্ছতাও থাকা চাই। কিন্তু মুদ্রার অপর পিঠও রয়েছে। শিক্ষকতা পেশা হিসেবে সম্মানের হলেও এখন পর্যন্ত যে বেতন-ভাতা দেওয়া হয় তা মোটেই আকর্ষণীয় নয়। শুধু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনধারণ কঠিন হয়ে পড়ছে বলেই নয়, শিক্ষকদের নিজেদের মান ক্রমে বাড়িয়ে নেওয়ার জন্যও তাদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার। কিন্তু সীমিত বেতন-ভাতার কারণে মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশার প্রতি আদৌ আকৃষ্ট হয় না। বর্তমানে ১৫-২০ বছর চাকরি করার পরও একজন স্কুলশিক্ষক যে বেতন-ভাতা পান তা সরকারি অফিসের পিয়ন-দারোয়ানের তুলনায় বেশি নয়। শিক্ষামন্ত্রী এ সমস্যা উপলব্ধি করতে পারছেন বলেই আমাদের ধারণা। তিনি শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর যৌক্তিকতা মেনে নিয়েছেন এবং এজন্য সরকারের কাছে বাজেট বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তেমন অবস্থায় শিক্ষাজীবনে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখা ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে উৎসাহবোধ করবেন। আমরা আশা করব, সরকার এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। বর্তমান যুগ হচ্ছে প্রতিযোগিতার। মেধাবীদের সবাই নিয়োগ করতে চায়। স্কুল-কলেজে পাঠদানের জন্য সেরা শিক্ষকদের পেতে হলে দুটি শর্ত অপরিহার্য : এক. পর্যাপ্ত আর্থিক ও অন্যান্য সুবিধা প্রদান এবং দুই. কাজের যথাযথ পরিবেশ ও শিক্ষকদের মর্যাদা নিশ্চিত করা। শিক্ষকতার পেশা মহান হিসেবে স্বীকৃত এবং অনেক তরুণ-তরুণীই এতে যোগদানে আগ্রহী হতে পারে। নতুন প্রজন্মকে যোগ্য ও দক্ষ করে তুলতে পারেন তারাই। এজন্য শর্ত পূরণের প্রধান দায় অবশ্যই সরকারের। তবে বেসরকারি স্কুল-কলেজের পরিচালনা পরিষদের তরফেও শিক্ষকদের জন্য বাড়তি সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে নিজস্ব পরিচালনা পরিষদ। তাদের একটি অংশ নির্বাচিত এবং অন্যরা মনোনীত। পরিচালনা কমিটিগুলোর সদস্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম এমনকি দুর্নীতির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি সরকার মনোনীত সদস্যরাও এতে জড়িয়ে পড়েন। সরকার শিক্ষকদের বেতন-ভাতা বাড়ালে ঘুষের রেটও বাড়বে, এমন অভিমত রয়েছে এবং তা অমূলক বলা যাবে না। গত দুই বছরে মহাজোট সরকারের শিক্ষা খাতে অর্জন প্রশংসিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেওয়ার পদক্ষেপ যুগান্তকারী হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো সুবিধাও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তৈরি করে দিচ্ছে সরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার বিষয়টির প্রতি তারা মনোযোগ বাড়াবেন বলে আমরা আশা করব।
No comments