কী দারুণ মিল! by আসিফ আহমদ

 বন্ধ, পথজুড়ে সভা নিষিদ্ধ হবে এমন সংকল্প কিংবা প্রতিশ্রুতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সোমবার আনন্দবাজার পত্রিকা এ খবর দিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতির খোঁজখবর যারা রাখেন তারা ভালো করেই জানেন, এখানে সরকারি দল এবং সরকার সর্বদা হরতাল-অবরোধের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ থাকে, আর বিরোধী দল সেটাই বেশি বেশি করে করতে চায়।
সরকার বলে, হরতালে দেশে এত্ত এত্ত আর্থিক ও অন্যান্য ক্ষতি হয়। আর বিরোধীরা বলে : 'তোমরা যখন বিরোধী দলে থেকে এসব করেছ, তখন মনে ছিল না?'
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান নেত্রী। এখন এ রাজ্যে ভোটগ্রহণ চলছে। তার দল কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকা প্রধান দল কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে বলেই ব্যাপকভাবে ধারণা করা হয়।
তিনি বিভিন্ন জনসভায় বলেছেন, তার দল রাজ্যে ক্ষমতায় এলে প্রয়োজনে কঠোর আইন করে বন্ধ-অবরোধ তুলে দেবেন। মেট্রো চ্যানেলের মতো রাস্তা আটকে রাজনৈতিক সভা করাও বন্ধ হবে। প্রাথমিকভাবে মমতা জানিয়েছেন, শহরে একমাত্র শহীদ মিনার ময়দান নির্দিষ্ট হবে সভা-সমাবেশের জন্য। তার কথায়, যারা সভা করতে চাইবে, তারা ১৫ দিন আগে আবেদন করবে। তারপর 'আগে এলে আগে পাবেন' ভিত্তিতে অনুমতি দেওয়া হবে।
কেন এমন সিদ্ধান্ত? এ বিষয়ে আনন্দবাজার লিখেছে : মমতা মনে করেন, 'মানুষই প্রথম! মানুষের ভোগান্তি করে কিছু হয় না। রাজনৈতিক দলগুলোর এটা বোঝা উচিত। মানুষকে সঙ্গে নিয়েই রাজনীতি।'
গত প্রায় তিন বছর মমতা নিজে কোনো বন্ধ ডাকেননি। তার জোটসঙ্গী এসইউসি বন্ধ ডাকলেও তা সমর্থন করেননি। নেতাই নামক স্থানে সন্ত্রাসের বড় ঘটনা বন্ধ ডাকার পক্ষে 'উপযুক্ত' হলেও তৃণমূল নেত্রী সেই রাস্তায় হাঁটেননি। এমনকি অবরোধও করেননি। দলের অন্দরেও তিনি ইতিমধ্যে ফরমান জারি করেছেন, দলের শীর্ষনেতাদের অনুমোদন ছাড়া কোথাও রাস্তা অবরোধ করা যাবে না। তবে পথ আটকে সভা করার ব্যাপারে এখনও কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেননি মমতা। প্রতিবছর একুশে জুলাই ধর্মতলার মোড়জুড়ে তার বৃহত্তম 'শহীদ সমাবেশ' করেন তিনি। এতে রাস্তা বন্ধ হয়। মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। তবে এখন তো তিনি বিরোধী দলে। রাজপথের আন্দোলন তার কাছে ন্যায্য মনে হয়। আর ক্ষমতায় গেলে সেটা হবে অন্যায়-অন্যায্য।
কাজের ক্ষেত্রে যে শ্রমিক ইউনিয়নের বাধা মানবেন না, তা-ও জানিয়েছেন মমতা। বলেছেন, 'এক দিনে ইউনিয়ন ভেঙে যাবে! আমার বিশ্বাস, যারা সত্যিই বামপন্থী ইউনিয়ন করেন, তারা আমায় সাহায্যই করবেন।' মমতার কথায়, 'ইউনিয়ন আসে-যায়। ওসব আমি অনেক দেখেছি। যখন যে ক্ষমতায় থাকে, ইউনিয়ন তাদের দিকেই থাকে। আমার রেলেও তো ইউনিয়ন আছে। তারা কি আমার সঙ্গে অসহযোগিতা করে?' তার আরও বক্তব্য, 'আমি আন্দোলনের লোক। আন্দোলন কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, তা আমি জানি।' ক্ষমতায় এলে দশ বছর সময় তাকে দিতে হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী এবং জানিয়ে দিয়েছেন, প্রথম দশ বছর কোনো 'বাঁদরামি' বরদাশত করা হবে না। শুধু উন্নয়নের কাজ হবে।
বাংলাদেশে এমন ধারার বক্তব্য আমরা ঢের শুনেছি। এখন বিএনপি বিরোধী দলে। তারা মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সরকারের পদত্যাগ দাবি করছে এবং তা না করলে আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানো হবে বলে হুমকি দিচ্ছে। এতে অর্থনীতির ক্ষতি হয় তো হবে, কিন্তু জনগণকে সেটা মেনে নিতে হবে, কারণ ব্যক্তিস্বার্থের চেয়ে দেশ বড়! তারা যদি ক্ষমতায় যেতে পারে তবে অবশ্যই বলবে উল্টো কথা_ হরতালের চেয়ে সর্বনাশা আর কিছু নেই, থাকতে পারে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানের সঙ্গে দারুণ মিল রয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিকদের!
 

No comments

Powered by Blogger.