যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রসঙ্গ by শাহীন রেজা নূর

নূরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালের সামনে যেসব যুদ্ধাপরাধীকে হাজির করা হয়েছিল তাদের প্রায় সবাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে অস্বীকার করেছিল। বাংলাদেশেও আমরা জামায়াতে ইসলামী ও পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর এ দেশীয় দোসরদের গণহত্যায় শামিল থাকার অভিযোগ অস্বীকার বা প্রত্যাখ্যান


করতে দেখছি। তারা এই ধারণাটিই প্রচারে সচেষ্ট যে, যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার কোন প্রমাণই নেই। কিন্তু এ ক্ষেত্রে যে বিষয়টি এদের চোখে পড়ছে না বা মাথায় আসছে না তা হলো গণহত্যার বিচারিক কার্যক্রম কোন প্রত্যক্ষদর্শীর ধার ধারে না। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মুক্তিযোদ্ধাদের খতম করার জন্য জামায়াতে ইসলামী যে ব্যাপক নিগ্রহ-নির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যাকা- চালিয়েছে তার ভূরি ভূরি প্রমাণ তখনকার পত্র-পত্রিকার পাতায় বিধৃত আছে। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের যে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তা নস্যাতের জন্য জামায়াতে ইসলামী ও তার দোসররা এখন মরিয়া। জামায়াতী নেতারা তাই ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার অপব্যাখ্যা করে জনগণের চোখে ধুলো দিতে চাইছে। তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ঐ সাধারণ ক্ষমা নাকি হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যাকারী এবং লাখো মা-বোনের সম্ভ্রম হরণকারী জঘন্য অপরাধীদের বেলায়ও প্রযোজ্য। জামায়াতের নেতাকর্মীরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বান্চালের জন্য সাংঘর্ষিক ও হিংসাশ্রয়ী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং গোলযোগ সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে আর এ জন্য তারা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ ও পেশী শক্তির সমাবেশ ঘটিয়ে চলেছে। তারা এ উদ্দেশ্যে অন্যান্য জঙ্গী ও মৌলবাদী গ্রুপের সঙ্গেও আঁতাত গড়ে তুলছে। বিএনপির কাঁধে সত্তয়ার হয়ে এই সব মতলব হাসিলে সচেষ্ট আজ তারা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভ-ুলের জন্য জামায়াতী নেতারা বাংলাদেশ সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগের প্রচেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। এ ক্ষেত্রে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশকে কাজে লাগাতে সচেষ্ট রয়েছে তারা। তবে এ ব্যাপারে এই অবধি তেমন কোন সাফল্য তারা লাভ করতে পারেনি। এখন আসলে জামায়াতী নেতারা বাংলাদেশের জনগণের রোষানলে পড়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ যতই এগুচ্ছে ততই জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের চোখের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। অচিরেই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত জামায়াতী নেতারা দোষী সাব্যস্ত হবে এবং সে অনুযায়ী দ-প্রাপ্তও হবে বলে জাতি আশা করে। জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামী, মহাসচিব আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং দুই সহকারী সচিব যথা মোঃ কামারুজ্জামান ও আব্দুল কাদের মোল্লাকে ইতোমধ্যেই যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পর চল্লিশ বছরেরও বেশি সময় পার হয়েছে অথচ, এ সব যুদ্ধাপরাধীকে এত দিনেও বিচারের সম্মুখীন করা যায়নি এর চাইতে দুর্ভাগ্যের আর কি আছে! জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী একাত্তরে জামায়াতের ঘাতক বাহিনী হিসেবে পরিচিত আলবদর বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব পালন করে। ‘মইত্যা রাজাকার’ নামে পরিচিতি লাভ করে সে তখন। একাত্তরে জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ করা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে সে একটুও অনুতপ্ত নয়। সম্প্রতি সে দাবি করে যে, জামায়াতের নেতারা যুদ্ধাপরাধী এর নাকি কোনই প্রমাণ নেই। এই ‘মইত্যা রাজাকার’রা যখন গাড়িতে জাতীয় পতাকা টাঙ্গিয়ে এ দেশে মন্ত্রিত্ব করে বেড়ায় তখন লাখো শহীদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যা বা পরিবার-পরিজনদের কষ্টের সীমা থাকে না। বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মতিউরের বিধবা পতœী কিভাবে নিজেকে প্রবোধ দেবেন যখন তিনি দেখেন যে তার স্বামী হন্তা ‘মইত্যা রাজাকার’ মন্ত্রীবেশে বাংলাদেশ চষে বেড়ায়!
যাই হোক, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভ-ুলের প্রয়াসে বাংলাদেশ সরকারের ওপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টির জামায়াতী প্রয়াস-প্রচেষ্টা খুব জোরে-শোরেই চালানো হয়েছিল। বিশেষ করে সৌদি আরব এবং মধ্যপ্রাচ্যের আরও কয়েকটি দেশকে দিয়ে সরকারের ওপর এই চাপ সৃষ্টির প্রচেষ্টা চলে। ঐ সব দেশে কর্মরত বাংলাদেশীদের বহিষ্কার করা হলে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ সরকার বেকায়দায় পড়ে যাবে এবং তখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য প্রবল চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে এই ধারণার বশবর্তী হয়ে জামায়াত আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছে সৌদি আরব এবং অন্য কিছু রাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে প্রভাবিত করতে। কিন্তু বিধিবাম! তাই তাদের এ সব দূরভিসন্ধি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। জামায়াত এ ক্ষেত্রে পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সৌদি আরব এবং একাত্তরে পাকিস্তানী সামরিক জান্তার পক্ষাবলম্বনকারী দেশসমূহের ওপর নির্ভর করছিল। জামায়াত মনে করেছিল যে, তাদের অভিপ্রায় অনুযায়ী এ সব দেশ বাংলাদেশ সরকারের ওপর যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিলের জন্য প্রচ- চাপ প্রয়োগ করবে। কিন্তু ইতোমধ্যেই যে বিশ্ব পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে তা তারা ঠাওরই করতে পারেনি। আর সে কারণেই পূর্বে যারা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়েছিল বা জামায়াতের পাশে ছিল তারাও এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বর্তমানে এ সব দেশ স্বচ্ছতা ও ন্যায় বিচারের ভিত্তিতে ঐ বিচার কার্যক্রম চালিয়ে যাবার পক্ষে বিবৃতি দিচ্ছে ও তাদের অনুমোদন ব্যক্ত করছে।
এ কথা সত্যি যে, বঙ্গবন্ধু একাত্তরের রাজাকার বা অপরাধীদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছিলেন। জামায়াত ও তার দোসররা বঙ্গবন্ধুর এই সাধারণ ক্ষমার অপব্যাখ্যা করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা কম চালায়নি। তারা যুক্তি দেখাচ্ছে যে, বাহাত্তরে বঙ্গবন্ধু তো সবাইকে ক্ষমা করেই দিয়েছেন। সুতরাং, এখন আবার এই বিচারের আয়োজন কেন। অর্থাৎ, তারা বোঝাতে চাইছে যে, রাজনৈতিকভাবে জামায়াতকে ঘায়েলের উদ্দেশ্যে সরকার এই বিচার করতে চাইছে। কিন্তু আমরা যদি অনুসন্ধিৎসু মন দিয়ে ঘটনাবলীর দিকে তাকাই তাহলেই জামায়াতীদের এইসব যুক্তির অসারতা বুঝতে সক্ষম হবো। বঙ্গবন্ধুর সেদিনের সাধারণ ক্ষমা ঢালাওভাবে সকল রাজাকারের জন্য প্রযোজ্য ছিল না। ঐ ঘোষণায় সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছিল যে, যাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, লুট ও অগ্নিসংযোগের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে তারা এই ক্ষমার আওতায় পড়বে না। সুতরাং, বলাই বাহুল্য যে, জঘন্য মিথ্যাচারের মাধ্যমে জামায়াতীরা বঙ্গবন্ধুর ঐ ঘোষণা বিষয়ে জনগণের চোখে ধুলো দিতে চাইছে।
একাত্তরে কৃত জঘন্য অপরাধের বিচার কোন প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে নয় বরং সভ্যতার দাবি পূরণের এবং জাতির দায় মোচনের স্বার্থে করা অপরিহার্য। বিশ্ব বিবেক এ বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করছে এবং সে কারণেই দেশে-বিদেশে কিছু মতলববাজ ছাড়া জামায়াতী যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি কারও কোন সহানুভূতিই নেই। যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগসমূহ সর্বদাই মারাত্মক ধরনের হয়ে থাকে, ফলে অপরাধীদের পক্ষাবলম্বন বা তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন মানবতার বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণেরই শামিল। এদের পক্ষে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন আদায় কিংবা দেশে হিংসাত্মক বা অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপের মাধ্যমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে এই বিচারিক কার্যক্রম রোধের চক্রান্ত এ যাবতকাল ব্যর্থ হয়েছে।
জামায়াত ও তাদের সাঙ্গ-পাঙ্গরা বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে এই বিচারের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে জনমত তৈরি করতে। অর্থের বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ও যুক্তরাজ্যের অন্যতম নামী-দামী আইনজীবী ফার্মকে লবিষ্ট হিসেবে নিয়োগ দান, দি ইকোনমিস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস ও অন্যকিছু স্বনামধন্য আন্তর্জাতিক পত্র-পত্রিকায় প্রচ্ছন্নভাবে জামায়াতী বা যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থনে এবং বর্তমান মহাজোট সরকারের সমালোচনামূলক প্রবন্ধ-নিবন্ধ প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরন্তর আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ ধরনের প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়টিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রচার করে তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মন গলাতে চাইছে বটে কিন্তু এ অবধি বলতে গেলে এ সব প্রচেষ্টা কোন কাজেই আসেনি বরং তা উল্টো তাদের বিপক্ষেই যাচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। একাত্তরে যে সব জঘন্য অপরাধ তারা করেছে সে জন্য কোন অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিবাদী দলের সমর্থন-সহানুভূতি পাবার কোন প্রশ্নই ওঠে না এ কথা জামায়াতীরা জানে। সে জন্য তারা ধর্মীয় অনুভূতিকে যে সব দল কাজে লাগিয়ে রাজনীতি করে তাদের শরণাপন্ন হচ্ছে। কিন্তু যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এমনই গুরুতর যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঐ সব দলও জামায়াতের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শনের ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্ক। তাই জামায়াতের প্রধানতম মিত্র বিএনপি কিছুকাল আগেও প্রকাশ্যে জামায়াতের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করলেও এখন যেন যুদ্ধাপরাধের বিচার বিষয়ে জামায়াতের হয়ে মুখ খুলতেই নারাজ। এ ব্যাপারে মুখ খুললে যে জনসমর্থন খোয়ানোর আশঙ্কা রয়েছে তা এখন বিএনপি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছে বলেই মনে হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি দেশের মৌলবাদী, জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের মদদদাতাদের ব্যাপারে সকলকে সতর্ক থাকার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন এবং ঐ অপশক্তি যাতে পুনরায় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য জনগণকে সবিশেষ লক্ষ্য রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। তবে শেখ হাসিনার সরকার যে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাস দমনে অত্যন্ত সাফল্য প্রদর্শন করেছেন এতে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত বা পশ্চিমা দুনিয়ার কারও মনেই কোন সন্দেহ নেই। বিগত সাড়ে তিন বছরে কারও পক্ষেই কোন প্রকার জঙ্গী তৎপরতা এ দেশে চালানো সম্ভব হয়নি সরকারের নিরবচ্ছিন্ন জঙ্গীবিরোধী অভিযানের কারণে। সরকার এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক নজরদারি ও জঙ্গী বা সন্ত্রাসীদের ঘাঁটিতে মাঝে মধ্যেই অভিযান চালিয়ে এই সাফল্য অর্জন করেছে। আমরা যদি বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের সঙ্গে এই মহাজোট সরকারের সময়টাকে তুলনা করি তাহলে এই ক্ষেত্রে এ সরকারের অসামান্য সাফল্য দেখতে পাব। একই সঙ্গে দেশের ৬৫টির মধ্যে ৬৪টি জেলাতেই জঙ্গীদের বোমা হামলা, রমনা বটমূলে এবং ময়মনসিংহের ৩টি সিনেমা হলে উপর্যুপরি বোমা হামলা, শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা ইত্যাদির আলোকে বর্তমানের শেখ হাসিনার আমল বিচার করলে আমরা গভীর তাৎপর্যপূর্ণ সাফল্য খুঁজে পাব। জঙ্গীরা ইসলামী শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের নামে এসব জঘন্য হামলা চালিয়েছিল সেদিন। আজও তারা ঘাপটি মেরে বসে আছে মোক্ষম সুযোগের অপেক্ষায়।
সম্প্রতি ঢাকায় এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার ১১টি দেশের ৪৪ জন প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞ এক সেমিনারে মিলিত হয়ে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর দোসরদের বিচারের পক্ষে অত্যন্ত জোরালো বক্তব্য প্রদান করেন। গত বছরের জুনে আয়োজিত শান্তি, ন্যায়বিচার ও অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদ বিষয়ক এই আন্তর্জাতিক সেমিনারে অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে, একাত্তরের ঐ গণহত্যা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালের সবচাইতে জঘন্য গণহত্যা। সেমিনারে ‘ঢাকা ঘোষণা’ শিরোনামে গৃহীত প্রস্তাবে একাত্তরে বাংলাদেশে সংঘটিত জঘন্য হত্যাকা-কে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতিদান এবং ঐ জঘন্য অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের প্রতি সমর্থন প্রদানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এতে বলা হয় মাত্র ৯ মাসে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা (জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য মৌলবাদী গোষ্ঠী) ৩০ লাখ মানুষ হত্যা ও দুই লক্ষাধিক নারীর সম্ভ্রমহানি ঘটিয়েছে। মানবতার বিরুদ্ধে এই অপরাধের বিচার প্রক্রিয়াকে সমর্থন প্রদানের আহ্বান জানিয়ে ঐ ঘোষণায় আরও বলা হয় যে, এই বিচারকার্য সমাধার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিচার এড়িয়ে যাওয়ার অপসংস্কৃতি দূর করতে হবে আর এ জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সোচ্চার হতে হবে। ঢাকা ঘোষণার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের বিবেক কিভাবে সাড়া দেয় বা দিচ্ছে তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে এ দেশের বিচারপ্রত্যাশী কোটি কোটি মানুষ।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট

No comments

Powered by Blogger.