বাসচাপায় ঢাবি ছাত্র নিহত-প্রতিবাদ হোক শান্তিপূর্ণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন শাহবাগ মোড়ে সড়ক দুর্ঘটনায় কিছুদিন পরপর শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় আমরা বিচলিত। দুর্ভাগ্যজনক এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তিতে আমরা একই সঙ্গে শোকাভিভূত ও ক্ষুব্ধ। পরিবার ও সমাজের স্বপ্ন পূরণে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে শিক্ষার জন্য এসে লাশ হয়ে ঘরে ফেরা কীভাবে মেনে নেওয়া যায়? একই স্থানে বারংবার
দুর্ঘটনা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ তা রোধ করতে পারছে না_ এই পরিস্থিতিও কি গ্রহণযোগ্য? প্রতিবারই দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা যেভাবে গাড়ি ভাংচুর ও অগি্নসংযোগ করে থাকে, তাও সমর্থন করা যায় না। আমরা জানি, কারও অবহেলা কিংবা বেপরোয়া মনোভাবের কারণে সতীর্থের অকালমৃত্যু কতটা বেদনাদায়ক। কেবল দুর্ঘটনাকবলিতদের পরিবার নয়, রক্তক্ষরণ হয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সব সদস্যের বুকেই। কিন্তু এর জের ধরে নির্বিচার ভাংচুর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া বলে বিবেচিত হতে পারে না। ঘাতক চালকের দায়ে সাধারণ নাগরিকের সম্পদ ও স্বাচ্ছন্দ্য বিনষ্ট হবে কেন? দেশের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে গর্জে ওঠা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মানুষের দুর্ভোগও বিবেচনায় নেবে_ এটাই কাম্য। দুর্ঘটনার খলনায়ক বাসচালককে যাত্রীরাই যে আটক করেছে_ তা ভুলে যাওয়া চলবে না। আমরা চাই, শিক্ষার্থী হতাহতের প্রতিকারে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিই গৃহীত হবে। এক-দু'দিনের ভাংচুর নয়; সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখা জরুরি; নৈরাজ্য নয়, শৃঙ্খলাই পারে দুর্ঘটনা রোধ করতে। মঙ্গলবারের ভাংচুরের সময়ও এই সত্য প্রমাণ হয়েছে। বিক্ষোভকারী এক শিক্ষার্থীকে অজ্ঞাত কারণে গুলিবিদ্ধ হতে হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি শাহবাগ মোড়টিকে সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত করতেও প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রজ্ঞা ও পরামর্শ কাজে লাগবে। সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও যে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয় না_ তাও বলা জরুরি। মঙ্গলবার ভাংচুর, অগি্নসংযোগের সময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে নির্লিপ্ততা প্রদর্শন করেছে, তা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা ছাড়া কিছুই নয়। পূর্বঘোষণা ছাড়া বুধবার অর্ধবেলা ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ রাখাও হঠকারিতার নামান্তর। নাগরিকের নিরাপদ যাত্রা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রশাসনকেই নিতে হবে। সংশ্লিষ্টদের মৌসুমি তৎপরতার ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, একটি দুর্ঘটনার পরপর নগর ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যতটা উদ্যোগ প্রদর্শন করে, কিছুদিন পর যেন ততটাই নির্লিপ্ত হয়ে পড়ে, যা কাঙ্ক্ষিত নয়। তৌহিদুজ্জামানের মৃত্যুর জন্য দায়ী বাসচালকের উপযুক্ত শাস্তি ভবিষ্যতে বেপরোয়া ড্রাইভিং রোধে সহায়ক হবে। ২০০৫ সালে একই স্থানে একইভাবে আরেক শিক্ষার্থী শাম্মী নিহত হওয়ার পর শাহবাগে আন্ডারপাস নির্মাণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এরও অগ্রগতি জানতে চাই আমরা। নগরীর এই ব্যস্ত মোড়টিতে ফুট ওভারব্রিজের সংখ্যাও অপ্রতুল। নগর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে অবিলম্বে উদ্যোগী হোক। সবাই আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হলে শাহবাগ মোড় নিরাপদ রাখা অবশ্যই সম্ভব। আমরা সেই প্রত্যাশাই করি। দেশের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রধান প্রবেশপথ নিরাপদ রাখতেই হবে।
No comments