জার্মানি-সাফল্য বুভুক্ষু by পবিত্র কুন্ডু

জার্মানি হলো বিশ্ব ফুটবলের সেই মোড়ল, যাদের বাদ দিয়ে আপনি শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে বসতে পারেন না। তাদের ধারাবাহিকতা এমনই, যখন কোনো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টের সম্ভাব্য বিজয়ীর কথা বলতে যাবেন, জার্মানির নাম মুখে নিতেই হবে।


এসে গেল আরেকটি ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ। ইউরোপীয় শ্রেষ্ঠত্বের পরীক্ষা। জার্মানি যথারীতি অন্যতম ফেবারিট। কোচ জোয়াকিম ‘লো’র ওপর আবার ‘হাই এক্সপেকটেশন’-এর চাপ।
ঐতিহ্যগতভাবেই জার্মানি নাকি যন্ত্রবৎ এক ফুটবল দল। প্রত্যাশা তাদের কাছে চাপের বদলে অনুপ্রেরণা। কিন্তু ১৯৯৬ ইউরো জয়ের পর থেকে ওই যন্ত্রটার মধ্যেই কেমন করে যেন মানবিক গুণাবলি ঢুকে গেল। চাপ এলেই ভেঙে পড়ে। আসল সময়েই কাঁপাকাঁপি করে ইস্পাতকঠিন স্নায়ু। তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা ইদানীং বিশ্বকাপে নামে তৃতীয় হওয়ার অভিযানে। ইউরোটা আবার দ্বিতীয় হওয়ার অভিযান হলো কি না, সেটি ১ জুলাই ফাইনাল পেরোলেই বলা যাবে। অবশ্য আগে উঠতে হবে ফাইনালে।
তবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ইউরোর তিনবারের চ্যাম্পিয়ন ও সবচেয়ে সফল দলটি শিরোপার জপমালাই জপবে। ১৬ বছর পেরিয়ে গেল, কোনো বড় টুর্নামেন্টের শিরোপা হাতে ওঠেনি। কোচদের ঠুনকো পৃথিবীতেও ছয় বছরের বেশি হয়ে গেল দায়িত্বে আছেন লো। সমকালীন বিশ্বে বড় দলের দীর্ঘতম মেয়াদের কোচ। বুঝতে পারছেন কিছু একটা দেওয়ার সময় হয়ে গেছে। ঘণ্টাধ্বনি শুনতেও পাচ্ছেন।
বাছাইপর্বের নিখুঁত অভিযান দিয়ে নিজেদের শিরোপাক্ষুধাটাও জানিয়ে দিয়েছেন লো। দশে দশ বাছাইপর্বে। মানে ১০ ম্যাচে হাতে পুরেছেন পুরো ৩০ পয়েন্ট। তাই নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারলেন, ‘আমরা ক্ষুধার্ত, খুবই ক্ষুধার্ত।’ ছয় বছরের রূপান্তর প্রক্রিয়ায় যে দলটি গড়ে তুলেছেন, তা রীতিমতো স্বপ্নের দল। অভিজ্ঞতার সঙ্গে মিলেছে তারুণ্যদীপ্ত প্রতিভার ঝলকানি। ১৯৯৮ বিশ্বকাপের পর যে জার্মানির ফুটবলে প্রজন্ম-শেষের হাহাকার পড়ে গিয়েছিল, সেখানেই প্রাপ্তির আলোর বিচ্ছুরণ। গোলবারের নিচে ম্যানুয়েল নয়্যার, আর তার ওপর থেকে হোলগার বাডস্টুবার, টনি ক্রুজ, বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগার, স্যামি খেদিরা, মেসুত ওজিল, মারিও গোটশে, টমাস মুলার, আন্দ্রে শুর্লেদের মতো প্রতিভাদের হাতে ইউরো তো বটেই, বিশ্বকাপের শিরোপাটাকেই যোগ্যতমের পুরস্কার হিসেবে দেখে সবাই।
জার্মানদের বিশ্বাস, বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল আর ইউরোর ফাইনাল সব সময় পায়ের নিচে চোরাবালি হয়ে থাকতে পারে না। একসময় সেই চোরাবালিতেই গড়ে ওঠে শক্ত ভিত। ঠিক যেমন করে দুর্দিন পেরিয়ে যাত্রী খুঁজে পায় সুদিনের সুবর্ণ প্রত্যাশা। ১০ জুন পর্তুগালের সঙ্গে ‘মৃত্যু উপত্যকা’র প্রথম লড়াই থেকেই হয়তো ফুটবল নবান্নের উৎসব সাজাতে শুরু করবে জার্মানি। উৎসব হয়তো পূর্ণতাই পাবে। স্পেন টানা তৃতীয়বার নিশ্চয়ই অসহ্য সুন্দর ফুটবলের গিলোটিন নিয়ে সামনে দাঁড়াবে না!

চূড়ান্তপর্ব
১১ (১৯৭২ থেকে ২০১২)
সেরা পারফরম্যান্স: চ্যাম্পিয়ন (১৯৭২, ১৯৮০, ১৯৯৬), রানার্সআপ (১৯৭৬, ১৯৯২, ২০০৮), সেমিফাইনাল (১৯৮৮)
বড় জয়: ৩-০, সোভিয়েত ইউনিয়ন (১৯৭২) ও রাশিয়া (১৯৯৬)
বড় পরাজয়: ০-৩, পর্তুগাল (২০০০)
সবচেয়ে বেশি গোল: ৫, ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যান
ইউরো রেকর্ড
ম্যাচ জয় ড্র হার স্ব./বি.
৩৮ ১৯ ১০ ৯ ৫৫/৩৯

 সবচেয়ে বেশি, ৫৫ গোল করেছে জার্মানি ও হল্যান্ড। ৪৬ ও ৩৬ গোল নিয়ে এর পরই আছে ফ্রান্স ও স্পেন।

 এ পর্যন্ত ইউরোজয়ী ১৩টি দেশের মধ্যে গ্রিসই একমাত্র দল, যারা ভিনদেশি কোচ নিয়ে শিরোপা জিতেছে।

 সর্বোচ্চ ৪টি টুর্নামেন্ট খেলেছেন ছয় ফুটবলার। সৌভাগ্যবানরা হলেন—লোথার ম্যাথাউস (জার্মানি), পিটার স্মাইকেল (ডেনমার্ক), অ্যারন উইন্টার (হল্যান্ড), আলেসান্দ্রো ডেল পিয়েরো (ইতালি), এডউইন ফন ডার সার (হল্যান্ড) ও লিলিয়ান থুরাম (ফ্রান্স)।

No comments

Powered by Blogger.