পবিত্র কোরআনের আলো-সৎকর্মশীল মানুষের জন্য কত সুন্দর প্রতিদানের ব্যবস্থা রয়েছে

১৩৪. আল্লাযীনা ইউন্ফিক্বূনা ফিস্সার্রায়ি ওয়াদ্ব্দ্বার্রায়ি ওয়াল কাজিমীনাল গাইজা ওয়াল 'আফীনা 'আনিন্নাসি; ওয়াল্লাহু ইউহিব্বুল মুহ্সিনীন। ১৩৫. ওয়াল্লাযীনা ইযা ফা'আলূ ফাহিশাতান আও জলামূ আন্ফুসাহুম যাকারুল্লাহা ফাস্তাগ্ফারূ লিযুনূবিহিম; ওয়া মাইঁ ইয়াগ্ফিরুয যুনূবা ইল্লাল্লাহ; ওয়া লাম ইউসির্রূ 'আলা মা ফা'আলূ ওয়া হুম ইয়া'লামূন।


১৩৬. উলায়িকা জাযাউহুম মাগ্ফিরাতুম মির রাবি্বহিম ওয়া জান্নাতুন তাজ্রী মিন তাহ্তিহাল আন্হারু খালিদীনা ফীহা; ওয়া নি'মা আজ্রুল 'আমিলীন। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪-১৩৬]
অনুবাদ : ১৩৪. যারা নিজেদের ধন-সম্পদ সৎ কাজে ব্যয় করে সচ্ছল বা অসচ্ছল অবস্থায়, যারা নিজেদের ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল হয়, এরূপ ভালো মানুষকে আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন।
১৩৫. আর ওইসব লোক, যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা নিজের ওপর জুলুম করে ফেললে সঙ্গে সঙ্গেই আল্লাহকে স্মরণ করে এবং পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। কেননা, আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে, পাপ ক্ষমা করে দিতে পারে। তারা জেনে-বুঝে কখনো পাপ কাজে লিপ্ত থাকে না।
১৩৬. ওইসব লোকের জন্য তাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে প্রতিদান হিসেবে রয়েছে ক্ষমা আর রয়েছে জান্নাত, যার নিচ দিয়ে ঝরনাধারা বয়ে গেছে। তারা সেখানে অনন্তকাল থাকবে। আর সৎকর্মশীল মানুষের জন্য কত সুন্দর প্রতিদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে!
ব্যাখ্যা : এসব আয়াতে মানুষের কতকগুলো সৎ গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে; এবং এসব গুণের বিকাশ সাধনে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। আর সেই সঙ্গে সৎকর্মের সুন্দর প্রতিদানের সুখবরও দেওয়া হয়েছে। ১৩৪ নম্বর আয়াতের প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে ধন-সম্পদ সৎ পথে ব্যয় করার কথা। সেই সঙ্গে ক্রোধ সংবরণ করা এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল হওয়ার ব্যাপারে উপদেশ দেওয়া হয়েছে। এগুলো উত্তম মানবিক গুণ। মানুষ যদি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে চায় বা আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চায়, তাহলে তারা যেন এসব গুণ অর্জনের অনুশীলন অবশ্যই করে। এরপর এসেছে পাপ থেকে মুক্তি লাভের পথ সম্পর্কে উপদেশ।
১৩৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে এমনসব লোকের কথা, যারা ভুলক্রমে কোনো পাপকর্ম করে ফেলে এবং পরক্ষণেই আল্লাহকে স্মরণ করে এবং পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। এসব লোকের বৈশিষ্ট্য হলো, তারা জেনে-বুঝে পাপ কাজে লিপ্ত থাকে না। এসব লোকও সৎলোকদের মধ্যে গণ্য হওয়ার যোগ্য। কারণ, ভুল মানুষ করতেই পারে। সবচেয়ে বড় কথা হলো, ভুল থেকে ফিরে আসার মানসিকতা। আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্য ভুল থেকে ফিরে আসার পথ সব সময় খোলা রেখেছেন। এটাই মাগফিরাত বা ক্ষমাশীলতা। আল্লাহ নিজে ক্ষমাশীল; এবং তিনি মানুষকে মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল হওয়ার উপদেশ দিয়েছেন। এই আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে, 'আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে, যে পাপ ক্ষমা করে দিতে পারে'। এখানে আল্লাহর সার্বভৌম ক্ষমতার কথাই বলা হয়েছে। মানুষের অধিকার হরণ করে পাপ করলে সেই পাপের ক্ষমা মানুষের কাছ থেকেই নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অন্যত্র আল্লাহ বলেছেন, প্রাপক ব্যক্তি ক্ষমা না করা পর্যন্ত তিনি ক্ষমা করবেন না। ক্ষমা পেতে হলে প্রাপক ব্যক্তির প্রাপ্য যে চুকিয়ে দিতে হবে, এ ব্যাপারে কোনো বিতর্ক নেই। তবে পাপ থেকে ক্ষমা প্রদান করার সার্বভৌম অধিকারী আল্লাহ নিজে। তিনিই শুধু পারেন পাপ থেকে ক্ষমা মঞ্জুর করতে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.