৬ জুন সূর্যের সামনে শুক্র গ্রহ by সৈয়দ আশরাফ উদ্দিন

৬ জুন শুক্র গ্রহকে আমরা দেখব সূর্যের চাকতির ওপর দিয়ে অতিক্রম করতে। জ্যোতির্বিজ্ঞানে এ ঘটনাকে বলা হয় ট্রানজিট (অতিক্রমণ)। কক্ষপথে সূর্যের চারদিকে প্রদক্ষিণ করতে করতে কখনো এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়; যখন অন্তগ্রহগুলো (বুধ ও শুক্র) পৃথিবী ও সূর্যের ঠিক মাঝে এসে পড়ে—অনেকটা চন্দ্রগ্রহণের মতো।


তবে সূর্যের চেয়ে শুক্রের আপাত আকার অনেক কম বলে এ সময় শুক্রকে একটি ছোট বিন্দুর মতো সূর্যের চাকতির ওপর দিয়ে পরিভ্রমণ করতে দেখা যায়। সর্বশেষ ২০০৪ সালে এ ট্রানজিট দেখা গিয়েছিল এবং পরবর্তী ট্রানজিট দেখা যাবে ২১১৭ সালে। তাই এবারের ট্রানজিট নিঃসন্দেহে খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এবারের ট্রানজিট শুরু হবে বাংলাদেশ সময় ৬ জুন ভোর চারটা ১০ মিনিটে। সুতরাং, আমাদের সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ওই দিন ঢাকায় সূর্যোদয় ভোর পাঁচটা ১৫ মিনিটে। সুতরাং, সূর্য উদয় হওয়ার পর থেকেই ট্রানজিট অবলোকন করা যাবে। শুক্র গ্রহ যখন সূর্যের দৃশ্যমান চাকতি প্রথম স্পর্শ করে, তা প্রথম সংস্পর্শ; যখন চাকতির ভেতরে পুরোপুরি ঢুকে যায়, তা দ্বিতীয় সংস্পর্শ; যখন চাকতি থেকে বের হওয়া শুরু করে, তা তৃতীয় সংস্পর্শ এবং সবশেষে যখন চাকতি থেকে সম্পূর্ণ বের হয়ে যায়, তা চতুর্থ সংস্পর্শ নামে পরিচিত। এ ছাড়া শুক্র যখন চাকতির মাঝামাঝি থাকবে, অর্থাৎ এ দুটোর মধ্যে দূরত্ব সর্বনিম্ন হবে, তখন তাকে মধ্য ট্রানজিট বলা হয়। ট্রানজিটের সময় শুক্র সূর্যের দৃশ্যমান চাকতির উত্তর দিক দিয়ে অতিক্রম করবে। সূর্যের আপাত আকার প্রায় ০ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং শুক্র গ্রহের আপাত আকার প্রায় ১ আর্কমিনিট (০ দশমিক ০১ ডিগ্রি)। অর্থাৎ আপাতভাবে সূর্যের চাকতি শুক্রের চেয়ে প্রায় ৫০ গুণ বড়। ট্রানজিটের বৃত্তান্ত নিচের সারণিতে দেওয়া হলো।
যেহেতু সূর্যের দিকে সরাসরি তাকানো বিপজ্জনক, তাই বিশেষ ব্যবস্থায় এ ট্রানজিট পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। সবচেয়ে নিরাপদ হলো, দূরবিণের মাধ্যমে সূর্যের প্রতিবিম্ব একটি সাদা পর্দায় ফেলা। তবে সঠিক ফিল্টার দূরবিণে ব্যবহার করে সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে। এ ছাড়া অভিনেত্রের স্থানে ডিজিটাল ক্যামেরা লাগিয়ে কম্পিউটারের পর্দায় দেখা যেতে পারে এবং পুরো ঘটনা রেকর্ড করা যেতে পারে। সূর্য পর্যবেক্ষণ করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি সৌর দূরবিনও ব্যবহার করা যায়।
প্রাচীন সভ্যতাগুলোয় ট্রানজিট নিয়ে তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না। জ্যোতির্বিদ জোহান কেপলার প্রথম ১৬২৭ সালে বুধ ও শুক্র গ্রহের ট্রানজিট বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। এর ওপর ভিত্তি করে পিয়েরে গ্যাসেনডি ১৬৩১ সালে বুধ গ্রহের এবং ১৬৩৯ সালে জেরেমিয়াহ হোরোক শুক্র গ্রহের ট্রানজিট পর্যবেক্ষণ করেন। বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ অ্যাডমন্ড হ্যালি ১৬৭৭ সালের ট্রানজিটের সময় অনুধাবন করেন যে লম্বনপদ্ধতি অনুসরণ করে ট্রানজিট ঘটনার মাধ্যমে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব নির্ণয় করা যায়। এ জন্য প্রতিটি সংস্পর্শ এর সময় জানা প্রয়োজন। সে সময় গ্রহগুলোর মধ্যকার আপেক্ষিক দূরত্ব জানা ছিল, আর সূর্যের দূরত্ব জানার কারণে পৃথিবী থেকে গ্রহদের প্রকৃত দূরত্ব বের করা সম্ভব হয়েছিল। উপরন্তু, বুধের তুলনায় শুক্র পৃথিবীর কাছে বলে লম্বনপদ্ধতি প্রয়োগ করাও সহজ ছিল।
তবে এখন রাডার প্রতিফলক ব্যবহার করে এ দূরত্বগুলো অনেক নিখুঁতভাবে পরিমাপ করা হয়েছে।
লেখক: পিএইচডি গবেষক, সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্স, সুইনবার্ন ইউনিভার্সিটি, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া।

No comments

Powered by Blogger.