চারদিক-চারদিকে আনন্দ, আনন্দ আর আনন্দ by রয়া মুনতাসীর
আরে! গণকের ভূমিকায় দেখি শোভন! একেবারে মাটিতে বসে পড়েছে! সামনে সাজিয়ে রেখেছে বন্ধুদের কাছ থেকে নেওয়া নিমন্ত্রণপত্রগুলো। তারপর ‘তোতা পাখি, কই আমার তোতা পাখি’ বলে অনবরত ডেকে চলেছে। তোতা পাখি আর আসে না। অবশেষে শোভনই হলো পাখি!
একেকটি নিমন্ত্রণপত্র ওঠাচ্ছে, আর করছে ভবিষ্যদ্বাণী। লুকিয়ে কার্ড দেখে কারও ঠিকানা বলে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে, কাউকে পাইয়ে দিচ্ছে লাখ টাকা! হাসতে হাসতে পেটে খিল।
বলুন তো, এই ঘটনা কোথায় ঘটছে? বায়তুল মোকাররম মার্কেটের সামনের ফুটপাতে, নাকি নিউ মার্কেটের পাশে?
আমরা আসলে বলছি ২০ জুলাইয়ের কথা। সেদিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ছিল সমাবর্তন অনুষ্ঠান। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের প্রথম সমাবর্তন এটি। সুতরাং সম্মেলন কেন্দ্রের নিচতলাটি যে সরগরম হবে, তাতে কি আর সন্দেহ আছে?
পাস করে যাওয়া শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে। যাঁরা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে এঁদের সামলানোর ভার নিয়েছিলেন, তাঁরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন কত ধানে কত চাল। শিক্ষকেরা আগেই এঁদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই জনস্রোত সামলানো কঠিন কাজ। বিশেষ করে, গণশিক্ষা ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের কি সামলানো যায়! এর আগে ১৯ জুলাই সমাবর্তনের অনুশীলনের (মহড়া) দিন ছিল। আজ মিলনমেলার চেহারাটাই তাই অন্য রকম। চারদিকে আনন্দ, আনন্দ আর আনন্দ। অনেক দিন পর সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ। কথার ফুলঝুরি। কথার শুরুই আছে কেবল, শেষ যেন নেই। কিন্তু এ রকম একটি সারিতে দাঁড়িয়ে কি ঠিকমতো কথা বলা যায়! তার পরও এদিক থেকে ওদিকে চলছে খুনসুটি। বাঁশি বাজল, তাই যে যাঁর মতো শান্ত হয়ে সারি ধরে এগোতে লাগলেন। সময় হয়ে গেছে ভেতরে যাওয়ার।
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি হিসেবে। তিনি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই আন্তরিক অভিনন্দন জানান। পাস করে যাওয়া শিক্ষার্থীরা তখন গর্বিত চেহারায় দাঁড়িয়ে। বসে থাকা প্রতিটি মানুষের চোখ এখন তাঁদেরই ওপরে।
মার্শেল ছিলেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান। তিনি বললেন, ‘ধন্যবাদ, মহামান্য রাষ্ট্রপতি। ছাত্রছাত্রীরা, তোমরা এখন তোমাদের টার্সেল বাম থেকে ডানে ঘোরাতে পারো। তোমরা এখন গ্র্যাজুয়েট। অভিনন্দন তোমাদের।’ মার্শেলের এই কথাগুলো শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তুমুল করতালি। এ সম্মানের অনুভূতি অন্য রকম। আনন্দের পাশাপাশি আছে বেদনাও। শেষ হয়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন। হাজারো স্মৃতি প্রত্যেকের মনে। এ সময়টায় মনে হয় সবার অনুভূতি একই রকম হয়, এ রকমই হয়।
বিবিএর দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী রুমানা আক্তার ভয়ে কাঁপছিলেন। কিন্তু কেন এই ভয়, তা তিনি নিজেই জানেন না। শুধু বললেন, ‘এ রকম দিন আর আসবে না। সব কিছু ছাড়িয়ে মহাখালীর প্রথম ক্যাম্পাসের সিঁড়িতে বসে আড্ডার সময়ের কথাই মনে পড়ছে বেশি।’
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন মিস আমিরা হক। তিনি জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল। প্রথম সমাবর্তনে ইউল্যাবের স্নাতক পর্যায় থেকে প্রথম পাঁচটি ব্যাচসহ স্নাতকোত্তর পর্যায়েরও বেশ কিছু ব্যাচ এ সম্মাননা পেয়েছে। অনুষ্ঠানে দুজন পান স্বর্ণপদক, তাঁরা সর্বোচ্চ গ্রেড অর্জন করেছেন। এ ছাড়া ৩.৮৫ সিজিপির বেশি নম্বর তোলার জন্য নয়জনকে ‘সুমা কাম লাওডে’ পদক দেওয়া হয়। ৩.৮০ থেকে ৩.৮৪ নম্বর তুলে চারজন ‘মেগনা কাম লাওডে’ পদক পান। ৩.৭৫ থেকে ৩.৭৯ নম্বর তুলে পাঁচজন পেয়েছেন কাম লাওডে পদক।
সবার কাছে থেকেও একটু দূরে বসে ব্রেক টাইমের খাবার খাচ্ছিলেন সাইফুল আর তানিয়া। একজন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের, অন্যজন ইংরেজি বিভাগের। বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা, তারপর বিয়ে। এসবই হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডির ভেতরেই। এ মুহূর্তে একজন আরেকজনকে খাইয়ে দিচ্ছেন। ওঁদের দেখে বন্ধুরা টিপ্পনি কাটছেন। আসিফ আক্তার পিয়াসের মনটা একটু খারাপ। তিনি চলে যাচ্ছেন জার্মানিতে। এটাই বোধ হয় অনেক দিনের জন্য অন্যদের সঙ্গে শেষ দেখা। সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষণটিই তাঁর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানান। অন্যদিকে মিখায়েল নভো বিশ্বাস তাঁর অসংখ্য প্রশ্ন দিয়ে জর্জরিত করছেন সবাইকে। চার বছর ধরেই তা তিনি করে এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অসাধারণ নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রতিভা দেখানোর কারণে ভেলেডেকটেরিয়ান হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে মো. গোলাম সামদানীকে। সব ছাত্রছাত্রীর পক্ষ থেকে সমাবর্তনে তিনি বক্তব্য দেন। গণশিক্ষা ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জুডিথা ওল মেকার সমাবর্তনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছুর দেখভাল করেন। শিক্ষার্থীদের সাফল্যে তাঁর চেহারায় যে আনন্দ ফুটে উঠছিল, তার তুলনা নেই।
গালা নাইটে বারবারই মনে পড়ে যাচ্ছিল কিছু স্মৃতি। ইউল্যাব থেকে আমাদের পঞ্চগড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে যে আনন্দ হয়েছিল, তারই রেশ এখনো আছে মনে।
মহড়া ও সমাবর্তনের দিন দুটোই ইউল্যাবের প্রত্যেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জন্য স্মরণীয়। কারণ, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাসটি শুরু করা ছাত্রছাত্রীরাও সেখানে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ের সঙ্গেই তাঁরা সবাই জড়িত। হোক সেটা আনন্দের, হোক বেদনার। সমাবর্তনের দিনটি এ কারণেই তাঁদের কাছে হয়ে থাকবে চিরস্মরণীয়।
বলুন তো, এই ঘটনা কোথায় ঘটছে? বায়তুল মোকাররম মার্কেটের সামনের ফুটপাতে, নাকি নিউ মার্কেটের পাশে?
আমরা আসলে বলছি ২০ জুলাইয়ের কথা। সেদিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ছিল সমাবর্তন অনুষ্ঠান। ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের প্রথম সমাবর্তন এটি। সুতরাং সম্মেলন কেন্দ্রের নিচতলাটি যে সরগরম হবে, তাতে কি আর সন্দেহ আছে?
পাস করে যাওয়া শিক্ষার্থীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে। যাঁরা স্বেচ্ছাসেবক হয়ে এঁদের সামলানোর ভার নিয়েছিলেন, তাঁরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন কত ধানে কত চাল। শিক্ষকেরা আগেই এঁদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এই জনস্রোত সামলানো কঠিন কাজ। বিশেষ করে, গণশিক্ষা ও সাংবাদিকতার শিক্ষার্থীদের কি সামলানো যায়! এর আগে ১৯ জুলাই সমাবর্তনের অনুশীলনের (মহড়া) দিন ছিল। আজ মিলনমেলার চেহারাটাই তাই অন্য রকম। চারদিকে আনন্দ, আনন্দ আর আনন্দ। অনেক দিন পর সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ। কথার ফুলঝুরি। কথার শুরুই আছে কেবল, শেষ যেন নেই। কিন্তু এ রকম একটি সারিতে দাঁড়িয়ে কি ঠিকমতো কথা বলা যায়! তার পরও এদিক থেকে ওদিকে চলছে খুনসুটি। বাঁশি বাজল, তাই যে যাঁর মতো শান্ত হয়ে সারি ধরে এগোতে লাগলেন। সময় হয়ে গেছে ভেতরে যাওয়ার।
রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও অনুষ্ঠানের সম্মানিত সভাপতি হিসেবে। তিনি প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই আন্তরিক অভিনন্দন জানান। পাস করে যাওয়া শিক্ষার্থীরা তখন গর্বিত চেহারায় দাঁড়িয়ে। বসে থাকা প্রতিটি মানুষের চোখ এখন তাঁদেরই ওপরে।
মার্শেল ছিলেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান। তিনি বললেন, ‘ধন্যবাদ, মহামান্য রাষ্ট্রপতি। ছাত্রছাত্রীরা, তোমরা এখন তোমাদের টার্সেল বাম থেকে ডানে ঘোরাতে পারো। তোমরা এখন গ্র্যাজুয়েট। অভিনন্দন তোমাদের।’ মার্শেলের এই কথাগুলো শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তুমুল করতালি। এ সম্মানের অনুভূতি অন্য রকম। আনন্দের পাশাপাশি আছে বেদনাও। শেষ হয়ে গেল বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন। হাজারো স্মৃতি প্রত্যেকের মনে। এ সময়টায় মনে হয় সবার অনুভূতি একই রকম হয়, এ রকমই হয়।
বিবিএর দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী রুমানা আক্তার ভয়ে কাঁপছিলেন। কিন্তু কেন এই ভয়, তা তিনি নিজেই জানেন না। শুধু বললেন, ‘এ রকম দিন আর আসবে না। সব কিছু ছাড়িয়ে মহাখালীর প্রথম ক্যাম্পাসের সিঁড়িতে বসে আড্ডার সময়ের কথাই মনে পড়ছে বেশি।’
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি হিসেবে। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন মিস আমিরা হক। তিনি জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল। প্রথম সমাবর্তনে ইউল্যাবের স্নাতক পর্যায় থেকে প্রথম পাঁচটি ব্যাচসহ স্নাতকোত্তর পর্যায়েরও বেশ কিছু ব্যাচ এ সম্মাননা পেয়েছে। অনুষ্ঠানে দুজন পান স্বর্ণপদক, তাঁরা সর্বোচ্চ গ্রেড অর্জন করেছেন। এ ছাড়া ৩.৮৫ সিজিপির বেশি নম্বর তোলার জন্য নয়জনকে ‘সুমা কাম লাওডে’ পদক দেওয়া হয়। ৩.৮০ থেকে ৩.৮৪ নম্বর তুলে চারজন ‘মেগনা কাম লাওডে’ পদক পান। ৩.৭৫ থেকে ৩.৭৯ নম্বর তুলে পাঁচজন পেয়েছেন কাম লাওডে পদক।
সবার কাছে থেকেও একটু দূরে বসে ব্রেক টাইমের খাবার খাচ্ছিলেন সাইফুল আর তানিয়া। একজন কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের, অন্যজন ইংরেজি বিভাগের। বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা, তারপর বিয়ে। এসবই হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডির ভেতরেই। এ মুহূর্তে একজন আরেকজনকে খাইয়ে দিচ্ছেন। ওঁদের দেখে বন্ধুরা টিপ্পনি কাটছেন। আসিফ আক্তার পিয়াসের মনটা একটু খারাপ। তিনি চলে যাচ্ছেন জার্মানিতে। এটাই বোধ হয় অনেক দিনের জন্য অন্যদের সঙ্গে শেষ দেখা। সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষণটিই তাঁর কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে জানান। অন্যদিকে মিখায়েল নভো বিশ্বাস তাঁর অসংখ্য প্রশ্ন দিয়ে জর্জরিত করছেন সবাইকে। চার বছর ধরেই তা তিনি করে এসেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অসাধারণ নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রতিভা দেখানোর কারণে ভেলেডেকটেরিয়ান হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে মো. গোলাম সামদানীকে। সব ছাত্রছাত্রীর পক্ষ থেকে সমাবর্তনে তিনি বক্তব্য দেন। গণশিক্ষা ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জুডিথা ওল মেকার সমাবর্তনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছুর দেখভাল করেন। শিক্ষার্থীদের সাফল্যে তাঁর চেহারায় যে আনন্দ ফুটে উঠছিল, তার তুলনা নেই।
গালা নাইটে বারবারই মনে পড়ে যাচ্ছিল কিছু স্মৃতি। ইউল্যাব থেকে আমাদের পঞ্চগড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে যে আনন্দ হয়েছিল, তারই রেশ এখনো আছে মনে।
মহড়া ও সমাবর্তনের দিন দুটোই ইউল্যাবের প্রত্যেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর জন্য স্মরণীয়। কারণ, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাসটি শুরু করা ছাত্রছাত্রীরাও সেখানে ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয়ের সঙ্গেই তাঁরা সবাই জড়িত। হোক সেটা আনন্দের, হোক বেদনার। সমাবর্তনের দিনটি এ কারণেই তাঁদের কাছে হয়ে থাকবে চিরস্মরণীয়।
No comments