বিশেষ সাক্ষাৎকার-রাজউক ঘুমিয়ে নেই by মো. নূরুল হুদা
মো. নূরুল হুদার জন্ম ১৯৪৯ সালে। ১৯৬৫ সালে মাধ্যমিক ও ১৯৬৭ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাসের পর তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি সড়ক ও জনপথ বিভাগে সহকারী প্রকৌশলী পদে যোগ দেন এবং ২০০৬ সালে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী
হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। নূরুল হুদা ২০০৯ সালের ৩০ মার্চ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মশিউল আলম
প্রথম আলো রাজউক হচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজধানীর উন্নয়ন করা এর মূল কাজ। কিন্তু বহু বছর ধরে সাধারণ অভিযোগ হচ্ছে, রাজধানীর উন্নয়নের ক্ষেত্রে রাজউকের ভূমিকা আশাপ্রদ নয়। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
মো. নূরুল হুদা উন্নয়ন পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ—এই তিনটা উদ্দেশ্য সামনে রেখে ১৯৫৩ সালে টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট গৃহীত হয় এবং এ আইনের অধীনে ১৯৫৬ সালে গঠিত হয় ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বা ডিআইটি। অনেক পরে, ১৯৮৭ সালে এর নামকরণ করা হয় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, সংক্ষেপে রাজউক। ১৯৬৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত আমরা ৫৪ বছর অতিক্রম করতে চলেছি। রাজধানী শহরটাকে পরিকল্পিত, পরিবেশবান্ধব, বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করার দায়িত্ব ছিল রাজউকের ওপর। ১৯৫৩ সালের টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট অনুসারে পুরো ঢাকা শহরের উন্নয়নের দায়িত্ব রাজউকের ওপরই বর্তায়। আর সময়ের চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে রাজউকের পুনর্গঠন, একে শক্তিশালী করার দায়িত্ব ছিল সরকারগুলোর। কিন্তু সেই প্রক্রিয়াটা ঠিকমতো এগোয়নি বলে রাজউকের পক্ষে মানুষের চাহিদা ও প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করা, সেবা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এমনকি, বর্তমান সরকার যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সেগুলো বাস্তবায়নেও রাজউককে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কারণ, রাজধানীর সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে রাজউকের সামর্থ্য বৃদ্ধি করা হয়নি।
প্রথম আলো আপনারা সম্প্রতি কিছু অবৈধ, অননুমোদিত ভবন চিহ্নিত করেছেন এবং সেগুলো ক্রমান্বয়ে ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছেন। কোনো ভবন তো রাতারাতি তৈরি হয় না। অনুমোদন ছাড়া, বা অনুমোদিত নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভবন নির্মাণ চলেছে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর ধরে। আপনাদের চোখের সামনেই। নয়তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন নিয়ে কেউ যদি ২২ তলা বানায়, সেটা আপনারা নির্মাণের সময়ই থামান না কেন? রাজউকের কি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা নেই?
মো. নূরুল হুদা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছেন। শুধু উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ নয়, ঠিকমতো মনিটর করাও রাজউকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কিন্তু যে কথা একটু আগেই বললাম, মহানগরের বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রাজউককে সেভাবে গড়ে তোলা হয়নি। ঠিকমতো মনিটরিং অতীতে করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর সার্বিক তত্ত্বাবধানে সচিবসহ আমরা একটা টিম-ওয়ার্ক গড়ে তুলেছি এবং এখানে আমরা গত এক বছরে এমন কিছু কর্মকর্তা পেয়েছি, যাঁরা মানুষের মঙ্গলার্থে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছেন। ভবন নির্মাণকারীরা যে নকশার অনুমোদন পান, সেই অনুযায়ী নির্মাণকাজ করছেন কি না সেটা এখন রাজউক মনিটর করছে। যেখানে অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী নির্মাণকাজ করা হচ্ছে না, ব্যত্যয় ঘটানো হচ্ছে, সেখানে তাৎক্ষণিকভাবে নির্মাণকারীকে নোটিশ করা হচ্ছে, বাধা দেওয়া হচ্ছে, প্রয়োজনে অননুমোদিত অংশ ভেঙে দেওয়ারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
প্রথম আলো কিন্তু ইতিমধ্যেই তো প্রচুরসংখ্যক ভবন এভাবেই তৈরি হয়েছে। সেগুলোর ব্যাপারে আপনারা আসলে কত দূর কী করবেন, বা করতে পারবেন?
মো. নূরুল হুদা হ্যাঁ, অতীতে নানা রকম ব্যত্যয় ঘটিয়ে অনেক ভবন তৈরি করা হয়েছে। অনেক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে কোনোরকম অনুমোদন ছাড়াই। অনেকগুলোর অনুমোদন নেওয়া হয়েছে, কিন্তু নির্মাণের সময় অনুমোদিত নকশা মানা হয়নি, নানা রকম ডেভিয়েশন বা ব্যত্যয় ঘটিয়ে নির্মাণকাজ করা হয়েছে। আমরা তিন মাস সমীক্ষা চালিয়ে পাঁচ হাজার ভবন চিহ্নিত করেছি। এগুলোর মধ্যে কিছু আছে একেবারেই অনুমোদনহীন, কিছু মেজর ডেভিয়েশন আছে, কিছুর মাইনর ডেভিয়েশন আছে। ব্যত্যয়গুলোর মধ্যে আছে, যেমন, ভবনের নিচতলায় গাড়ি রাখার ব্যবস্থার কথা অনুমোদিত নকশায় আছে, কিন্তু তা না করে সেই জায়গা অন্য কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। অনেকে চারতলা বা ছয়তলার অনুমোদন নিয়ে আট-নয়তলা বানিয়েছে। অনেকে বারান্দার বর্ধিতাংশ নির্মাণ করেছে, অনুমোদিত নকশাতে যা নেই। আমরা এগুলো চিহ্নিত করেছি; ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী আইনের আওতায় পর্যায়ক্রমে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
প্রথম আলো কিন্তু নানা রকম বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। বাধাগুলো কী রকম, সংক্ষেপে একটু বলবেন?
মো. নূরুল হুদা সবচেয়ে অসুবিধা বা প্রতিবন্ধকতাটা এ রকম: যখন আমরা কোনো অবৈধ বা অননুমোদিত স্থাপনার ব্যাপারে ওই স্থাপনার মালিক-কর্তৃপক্ষের কাছে নোটিশ পাঠাই, তারা নোটিশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদালতে চলে যায়। হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে স্থিতাবস্থা বা ইনজাংশন নিয়ে নিজেদের নির্মাণকাজ চালিয়ে যেতে থাকে। তখন আমাদেরও আইনজীবী নিয়োগ করে মামলা লড়তে হয়, আমরা হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে সিনিয়র আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে আদালতের সেই আদেশ ভ্যাকেট করিয়ে নিতে নিতে তারা তাদের নির্মাণকাজ শেষ করে ফেলে, কারণ এই আইনি প্রক্রিয়া চলে দীর্ঘ সময়। এইভাবে অবৈধ বা অননুমোদিত স্থাপনার সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে। অনেকে জিজ্ঞেস করেন, রাজউক ঘুমায় নাকি? না, আসলে রাজউক ঘুমিয়ে নেই। দেখবেন যতগুলো অবৈধ স্থাপনা আছে সেগুলোর প্রত্যেকটিকে রাজউক থেকে একাধিকবার নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু অবৈধভাবে ভবন নির্মাণের জন্য মানুষ যদি মরিয়া হয়ে ওঠে, ছলেবলে কৌশলে তারা যদি সেটা নির্মাণ করেই ছাড়বে বলে পণ করে, তাহলে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তাদের ঠেকানো রাজউকের পক্ষে কঠিন। তারা আদালতের শরণাপন্ন হলে আমাদের পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে করার কিছু থাকে না, আদালতেই লড়তে হয়। সে জন্য নির্মাণক্ষেত্রে আমাদের কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয় না। তাই মনে হয়, রাজউক বুঝি ঘুমিয়ে আছে, নইলে তাদের চোখের সামনে এসব অবৈধ ভবন উঠে যাচ্ছে কীভাবে।
প্রথম আলো এসব করার জন্য আপনাদের কি পর্যাপ্ত লোকবল আছে?
মো. নূরুল হুদা না। যে লোকবল আছে তা মোটেও পর্যাপ্ত নয়। আমাদের প্রয়োজন ২০ জন অথোরাইজ অফিসার, কিন্তু আছেন পাঁচজন।
প্রথম আলো অথোরাইজ অফিসারদের দায়িত্ব কী?
মো. নূরুল হুদা ভবন নির্মাণের নকশা অনুমোদন এবং নকশা অনুযায়ী নির্মাণকাজ করা হচ্ছে কি না সেগুলো তদারক করা অথোরাইজ অফিসারদের কাজ। আমাদের যে কাজের পরিধি, তাতে এ রকম অফিসারের প্রয়োজন কমপক্ষে ২০ জন, কিন্তু আছেন মাত্র পাঁচজন। তারপর, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজন কমপক্ষে ১০ জন। কিন্তু আমাদের ছিলেন মাত্র একজন। আমরা গত ছয় মাস ধরে অনেক চেষ্টা করে আমাদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে মাত্র গত সপ্তাহে আরও তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট পেয়েছি। কিন্তু গোটা ঢাকা শহরের জন্য পাঁচজন অথোরাইজ অফিসার ও চারজন ম্যাজিস্ট্রেট কোনোভাবেই পর্যাপ্ত নয়। আমাদের আরও লোকবল প্রয়োজন। আশা করি ভবিষ্যতে লোকবল বাড়বে। ইতিমধ্যে যেটুকু বেড়েছে, তাতে আমরা মনিটরিং ব্যবস্থাটাকে আগের চেয়ে জোরদার করতে পেরেছি। আমরা চাচ্ছি, অতীতে যা হয়েছে হয়েছে, এখন থেকে যেন আর কোনো অনিয়ম না হয়। আমরা রাজউকের মনিটরিং ব্যবস্থাকে জোরদার করেছি, যাতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমাদের কথা হচ্ছে, কেউ আমাদের শত্রু নয়, সবাই সবার পুরিপূরক। সবাই মিলে ঢাকা মহানগরের সুষ্ঠু পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে, যেন এই মহানগর আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বসবাসযোগ্য, সুন্দর ও পরিবেশবান্ধব হতে পারে। আমরা যেন সবাই আইনের আওতায় থেকে বিধিমোতাবেক চলি, সেটা নিশ্চিত করাই রাজউকের লক্ষ্য। এ ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
প্রথম আলো দীর্ঘ সময় ধরে অনেক রিয়েল এস্টেট কোম্পানি অবৈধ, অনুমোদনহীন প্রকল্প করে লোকজনকে ঠকাচ্ছে। তারা অবৈধ প্রকল্পের বিজ্ঞাপন প্রচার করে লোকজনকে প্রলুব্ধ করছে। আপনারা রাজউকের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে সংবাদমাধ্যমে কিছু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এদের সম্পর্কে জনগণকে সাবধান থাকতে বলেন। কিন্তু শুধু বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেই কি রাজউকের কর্তব্য শেষ হয়ে যায়? নাকি আপনাদের আরও কিছু করার আছে?
মো. নূরুল হুদা রাজউকের মূল কর্মকাণ্ড পরিকল্পনা প্রণয়ন, উন্নয়ন ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ। এই কাজগুলো করা হয় তিনটি আইনের অধীনে: ইমারত নির্মাণ বিধিমালা আইন ২০০৮, জলাশয় সংরক্ষণ আইন ২০০০, এবং রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন (সংশোধিত) ২০১০। এ ছাড়া আছে ১৯৫৩ সালের টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্ট। এ আইনগুলো দ্বারাই রাজউক নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হয়। আমরা অবৈধ রিয়েল এস্টেট প্রকল্পগুলো সম্পর্কে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জনগণকে সচেতন ও সতর্ক করার চেষ্টা করছি, কিন্তু শুধু বিজ্ঞপ্তি দিলেই রাজউকের কর্তব্য শেষ হয়ে যায় না। আইনের বাইরে গিয়ে যারা এসব করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করাও রাজউকের দায়িত্ব। সে অনুসারে আমরা কাজ করার চেষ্টা করছি। অনেক অবৈধ স্থাপনা আমরা উচ্ছেদ করছি, পর্যায়ক্রমে আরও অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। জলধারা আইন প্রয়োগ করতে গিয়ে আমার দেখলাম, একটা ধারা আছে যেখানে বলা হয়েছে, কোনো ভূমি জলধারা হলে তা জলধারা হিসেবে চিহ্নিত করে সেই হিসেবে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। আমরা বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের স্থাপনার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলাম যে তারা জলধারা আইন লঙ্ঘন করে স্থাপনাগুলো করছে। কিন্তু মামলাগুলো আদালতে টেকেনি, কারণ ওই সব ভূমি জলধারা হিসেবে চিহ্নিত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়নি।
প্রথম আলো তাহলে তো ঢাকার চারপাশে কোনো জলধারাই থাকবে না...।
মো. নূরুল হুদা না না, ড্যাপের যে গেজেট প্রকাতি হয়েছে, তার মধ্যে সবকিছু চিহ্নিত করা হয়েছে। ড্যাপ অনুসারে যে ৫৯০ বর্গকিলোমিটার অঞ্চল রাজউকের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তার মধ্যে কতটা জলধারা, কতটা কৃষিজমি, কতটা আবাসভূমি, কতটা শিল্পভূমি ইত্যাদি সবকিছু চিহ্নিত ও নির্ধারিত করা হয়েছে। এখন আমরা জলধারা আইন অনুযায়ী রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর অবৈধ প্রকল্পের বিরুদ্ধে কার্যকর আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারব। যদি জলাশয় ভরাট করে আবাসন গড়া হয়, সেগুলো অবশ্যই বন্ধ করা যাবে।
প্রথম আলো বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) নিয়ে তো কিছু আপত্তি এবং প্রতিবাদও লক্ষ করা যাচ্ছে।
মো. নূরুল হুদা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। ড্যাপ অনুসারে ঢাকা মহানগর ও তার আশপাশের মোট ৫৯০ বর্গমাইল এলাকা রাজউকের আওতার মধ্যে নেওয়া হয়েছে। যেমনটি বলছিলাম, এই ৫৯০ বর্গকিলোমিটারের মধ্যে জলধারা, কৃষিজমি, শিল্পকারখানার জন্য বরাদ্দ ভূমি, আবাসভূমি ইত্যাদি চিহ্নিত করা হয়েছে। হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পার্ক, লেক, খেলার মাঠ, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, রাস্তাঘাট ইত্যাদি সবকিছুর পরিকল্পনা করা হয়েছে বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার মধ্যে। এখন এই বিশাল এলাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা, উন্নয়ন ও উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজউকের প্রচুর লোকবল বাড়ানোর প্রয়োজন হবে। পর্যাপ্তসংখ্যক প্রকৌশলী, স্থপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ প্রয়োজন হবে। এখন পর্যন্ত রাজউকের পরিকল্পনা শাখা বা উন্নয়ন শাখা খুব দুর্বল, সেটা লোকবলের অভাবের কারণেই। ড্যাপ বাস্তবায়ন করতে গেলে সবকিছুর আগে প্রয়োজন হবে এসব ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত লোকবলের।
প্রথম আলো অনেকে অভিযোগ করেছেন, তাঁরা নকশার অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেন, কিন্তু রাজউক সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে অনেক দেরি করে। এ বিষয়ে আপনাদের ব্যাখ্যা কী?
মো. নূরুল হুদা প্রথমেই বলেছি, সব ক্ষেত্রে রাজউকের লোকবল-সংকট আছে। নকশার আবেদন যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়া বা প্রত্যাখ্যান করার ক্ষেত্রেও লোকবলের ঘাটতি প্রকট। এখন এটাকে গতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আপনি যে প্রশ্নটি করলেন, কোনো স্থাপনা নির্মাণের নকশার আবেদনপত্র পেয়ে ৪৫ দিনের মধ্যে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষেত্রে কতকগুলো জটিলতার মধ্যে আমাদের পড়তে হয়। অনুমোদন দিতে মোট ১২টি সংস্থার ছাড়পত্র প্রয়োজন হয়। সব আবেদনকারী নকশার অনুমোদনের জন্য আবেদন করার সময় সেসব ছাড়পত্র জমা দেয় না। আমাদের কাছে আবেদনপত্র আসার পর আমরা দেখি কোন কোন সংস্থার ছাড়পত্র আছে, কোন কোন সংস্থার ছাড়পত্র নেই। যেগুলো নেই, সেগুলো আমরা জমা দিতে বলি। তখন তারা ওই সব সংস্থার ছাড়পত্র নিতে যায়, এভাবে প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ হয়ে যায়।
প্রথম আলো রাজউকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ শোনা যায়...।
মো. নূরুল হুদা রাজউকের ভেতরে প্রত্যেকটা খাতে কী কী সমস্যা আছে সেগুলো চিহ্নিত ও দূর করার জন্য আমরা একটা সংস্কার কর্মসূচি নিয়েছি। রাজউকের ভেতরে যেসব অনিয়ম আছে সেগুলোও আমরা চিহ্নিত করেছি। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে, কিছু সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে, কিছু কর্মকর্তার দায়িত্বের ক্ষেত্র পরিবর্তন করা হয়েছে এবং কিছু কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, ক্রমশ আরও দক্ষতার সঙ্গে সময়ানুগভাবে দায়িত্ব পালনের সক্ষমতা অর্জন করছে রাজউক। তবে আমাদের এই প্রিয় নগরকে সুন্দর, সুপরিকল্পিত, পরিবেশবান্ধব ও আগামী প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য করে গড়ে তুলতে শুধু রাজউকের একার উদ্যোগ যথেষ্ট নয়, প্রত্যেক নাগরিকের সহযোগিতা প্রয়োজন। সবার সহযোগিতায় আমরা একটি বাসযোগ্য মহানগর অবশ্যই গড়ে তুলতে সক্ষম হব।
প্রথম আলো আপনাকে ধন্যবাদ।
মো. নূরুল হুদা ধন্যবাদ।
No comments