বাজেট ২০১২-১৩-দুই কোটি টাকার মালিক মাত্র সাড়ে চার হাজার! by জাহাঙ্গীর শাহ
সবচেয়ে বিলাসবহুল গাড়ি বিক্রি হতে বাংলাদেশে সময় লাগে না। জমির দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে, কেনাবেচাও হচ্ছে। ঢাকার আকাশ ঢাকা পড়ছে আকাশছোঁয়া ভবনে। অথচ, এই দেশেই দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদ আছে মাত্র চার হাজার ৪৬৭ জনের। এই হিসাব সরকারি প্রতিষ্ঠান জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)।
চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের বার্ষিক আয়কর বিবরণীতে এই চার হাজার ৪৬৭ জন দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদ দেখিয়েছেন।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন একটি সারচার্জ আরোপের বিধান চালু করেছিলেন। বলা হয়েছিল, দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক হলে প্রদত্ত করের ওপর ১০ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হবে। এ বছর এই খাতে ৪৪ কোটি ৬২ লাখ ৮৮ হাজার ২৩৫ টাকা পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সংখ্যা অবিশ্বাস্য বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এর দুটি কারণ হতে পারে—যাঁরা দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক, তাঁরা কর দিয়ে দায়িত্ব পালন করেননি। আবার হতে পারে, সম্পদের বিবরণী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে কর কর্মকর্তাদের ঘাটতি রয়েছে।
এনবিআরের একটি বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) রয়েছে। এখানে নিবন্ধিত বড় করদাতার সংখ্যা ৭০৬। তাঁরা সবাই ব্যাংক, বিমা, লিজিং কোম্পানি, বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক। অথচ তাঁদের মধ্যে মাত্র ৪৩৫ জন দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক বলে জানিয়েছেন। আর তাঁরা আয়কর বিবরণী জমার সময় মোট ছয় কোটি পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা সারচার্জ দিয়েছেন।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী করদাতাদের মধ্যে মাত্র ৩৪৯ জন দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক। কর অঞ্চল-৪ অধিভুক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ বছর সারচার্জ হিসাবে দুই কোটি ৫৪ হাজার ৪৯ হাজার ৮৩৫ টাকা দিয়েছেন।
পেশাজীবীদের অধিক্ষেত্র কর অঞ্চল-১০ থেকে তিন কোটি ৮২ লাখ ২৯ হাজার ৪৬৫ টাকা পাওয়া গেছে। চিকিৎসক ও প্রকৌশলীসহ পেশাজীবীদের মধ্যে ৩৩৩ জন সারচার্জ দিয়েছেন। এর মধ্যে আইনজীবী করদাতাই ৩০৮ জন। তাঁরা দিয়েছেন তিন কোটি ৬২ লাখ ৮৬ হাজার টাকার সারচার্জ।
ঢাকায় মোট কর অঞ্চল রয়েছে ১৫টি। এসব কর অঞ্চলে মোট দুই হাজার ৬৭২ জন করদাতা রয়েছেন, যাঁরা দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক। আর চট্টগ্রামে এ রকম দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিকদের সংখ্যা ৬৬০ জন, খুলনায় ২০৭ জন, কুমিল্লায় ৭৩ জন, ময়মনসিংহে ৫১ জন, নারায়ণগঞ্জে ৫০ জন, রংপুরে ৪৮ জন, বরিশালে ৪৯ জন এবং গাজীপুরে এমন সম্পদশালী করদাতা ৪১ জন।
এই তালিকায় কতজন সংসদ সদস্য আছেন, তা অবশ্য জানা যায়নি। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) তথ্য অনুযায়ী, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত ৩০০ সাংসদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ বা ১২৮ জনই কোটিপতি। আর তাঁদের মধ্যে ২১ জনের সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি টাকার বেশি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকার সম্পদের সারচার্জ আরোপ করে ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। তবে যত লোক সারচার্জ দিয়েছেন, তা সন্তোষজনক নয়। এনবিআরের উচিত সম্পদশালী লোক খুঁজে বের করে তাঁদের কাছে কর আদায় করা। কেননা আরও অনেক বেশি লোকের কর দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে।
বর্তমানে দেশে কর শনাক্তকারী নম্বর বা টিআইএনধারীর সংখ্যা ৩৩ লাখ। তাঁদের মধ্যে চলতি অর্থবছরে মোট ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৪৫২ জন তাঁদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে কর দেন তারও অর্ধেক।
বাংলাদেশে কোটিপতির সংখ্যা জানার সঠিক কোনো ভিত্তি নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছে কোটি টাকার বেশি ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা। এর মধ্যে ব্যক্তিও আছে, প্রতিষ্ঠানও আছে। তবে কোনটি কত, তার কোনো পৃথক হিসাব নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ রকম ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার। আর ১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০০১ সালে তা ছিল পাঁচ হাজার ৭৯৯টি। ১৯৭৫ সালে কোটি টাকার বেশি অর্থ আছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ৪৭টি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানী ঢাকা শহরে জমি বেচাকেনা হয় সরকারি খাতায় ঘোষণার চেয়ে অনেক বেশি দামে। জমির প্রকৃত বাজার দর সম্পদের বিবরণীতে ঘোষণায় আনা হয় না। আবার কোনো ব্যক্তি যদি ৩০-৪০ বছর আগে গুলশানে কাঠাপ্রতি ১০ হাজার টাকায় জমি কেনেন, এখনো সেই দামই দেখানো হয়েছে। এতে সম্পদের প্রকৃত মূল্য আয়কর বিবরণীতে আসছে না।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত নতুন একটি সারচার্জ আরোপের বিধান চালু করেছিলেন। বলা হয়েছিল, দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক হলে প্রদত্ত করের ওপর ১০ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হবে। এ বছর এই খাতে ৪৪ কোটি ৬২ লাখ ৮৮ হাজার ২৩৫ টাকা পাওয়া গেছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই সংখ্যা অবিশ্বাস্য বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, এর দুটি কারণ হতে পারে—যাঁরা দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক, তাঁরা কর দিয়ে দায়িত্ব পালন করেননি। আবার হতে পারে, সম্পদের বিবরণী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে কর কর্মকর্তাদের ঘাটতি রয়েছে।
এনবিআরের একটি বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) রয়েছে। এখানে নিবন্ধিত বড় করদাতার সংখ্যা ৭০৬। তাঁরা সবাই ব্যাংক, বিমা, লিজিং কোম্পানি, বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের মালিক। অথচ তাঁদের মধ্যে মাত্র ৪৩৫ জন দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক বলে জানিয়েছেন। আর তাঁরা আয়কর বিবরণী জমার সময় মোট ছয় কোটি পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা সারচার্জ দিয়েছেন।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী করদাতাদের মধ্যে মাত্র ৩৪৯ জন দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক। কর অঞ্চল-৪ অধিভুক্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ বছর সারচার্জ হিসাবে দুই কোটি ৫৪ হাজার ৪৯ হাজার ৮৩৫ টাকা দিয়েছেন।
পেশাজীবীদের অধিক্ষেত্র কর অঞ্চল-১০ থেকে তিন কোটি ৮২ লাখ ২৯ হাজার ৪৬৫ টাকা পাওয়া গেছে। চিকিৎসক ও প্রকৌশলীসহ পেশাজীবীদের মধ্যে ৩৩৩ জন সারচার্জ দিয়েছেন। এর মধ্যে আইনজীবী করদাতাই ৩০৮ জন। তাঁরা দিয়েছেন তিন কোটি ৬২ লাখ ৮৬ হাজার টাকার সারচার্জ।
ঢাকায় মোট কর অঞ্চল রয়েছে ১৫টি। এসব কর অঞ্চলে মোট দুই হাজার ৬৭২ জন করদাতা রয়েছেন, যাঁরা দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক। আর চট্টগ্রামে এ রকম দুই কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিকদের সংখ্যা ৬৬০ জন, খুলনায় ২০৭ জন, কুমিল্লায় ৭৩ জন, ময়মনসিংহে ৫১ জন, নারায়ণগঞ্জে ৫০ জন, রংপুরে ৪৮ জন, বরিশালে ৪৯ জন এবং গাজীপুরে এমন সম্পদশালী করদাতা ৪১ জন।
এই তালিকায় কতজন সংসদ সদস্য আছেন, তা অবশ্য জানা যায়নি। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) তথ্য অনুযায়ী, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত ৩০০ সাংসদের মধ্যে ৪৪ শতাংশ বা ১২৮ জনই কোটিপতি। আর তাঁদের মধ্যে ২১ জনের সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি টাকার বেশি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান প্রথম আলোকে বলেন, সরকার সম্পদের সারচার্জ আরোপ করে ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। তবে যত লোক সারচার্জ দিয়েছেন, তা সন্তোষজনক নয়। এনবিআরের উচিত সম্পদশালী লোক খুঁজে বের করে তাঁদের কাছে কর আদায় করা। কেননা আরও অনেক বেশি লোকের কর দেওয়ার সামর্থ্য রয়েছে।
বর্তমানে দেশে কর শনাক্তকারী নম্বর বা টিআইএনধারীর সংখ্যা ৩৩ লাখ। তাঁদের মধ্যে চলতি অর্থবছরে মোট ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৪৫২ জন তাঁদের বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে কর দেন তারও অর্ধেক।
বাংলাদেশে কোটিপতির সংখ্যা জানার সঠিক কোনো ভিত্তি নেই। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকে রয়েছে কোটি টাকার বেশি ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা। এর মধ্যে ব্যক্তিও আছে, প্রতিষ্ঠানও আছে। তবে কোনটি কত, তার কোনো পৃথক হিসাব নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ রকম ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা প্রায় ২৭ হাজার। আর ১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০০১ সালে তা ছিল পাঁচ হাজার ৭৯৯টি। ১৯৭৫ সালে কোটি টাকার বেশি অর্থ আছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল ৪৭টি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানী ঢাকা শহরে জমি বেচাকেনা হয় সরকারি খাতায় ঘোষণার চেয়ে অনেক বেশি দামে। জমির প্রকৃত বাজার দর সম্পদের বিবরণীতে ঘোষণায় আনা হয় না। আবার কোনো ব্যক্তি যদি ৩০-৪০ বছর আগে গুলশানে কাঠাপ্রতি ১০ হাজার টাকায় জমি কেনেন, এখনো সেই দামই দেখানো হয়েছে। এতে সম্পদের প্রকৃত মূল্য আয়কর বিবরণীতে আসছে না।
No comments