অভিমত ভিন্নমত

ভূমিপুত্রদের ভূমি ফিরিয়েদেওয়াই ভূমি কমিশনের কাজ পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠিত ভূমি কমিশন নিয়ে অচলাবস্থা বিষয়ে গত সপ্তাহে প্রথম আলোয় প্রকাশিত সর্বশেষ খবর পাওয়া গেল। পার্বত্য চুক্তির আওতায় ভূমি বিরোধ মেটানোর লক্ষ্যে গঠিত এই কমিশনের কাজ যে সঠিক পথে চলছিল না, তা কয়েক মাস আগে


পার্বত্য জেলাগুলোয় আয়োজিত কমিশনের বৈঠকসংক্রান্ত খবর থেকেই জানা গিয়েছিল। সর্বশেষ খবরে জানা গেল ভূমি কমিশন নিয়ে তিন পার্বত্য সার্কেল চিফ ও কমিশন চেয়ারম্যানের বিপরীতমুখী অবস্থানের কথা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিরোধের মূল কারণই হলো ভূমি। শুধু পার্বত্য চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশের সব আদিবাসীর জন্য ভূমি থেকে উচ্ছেদ, দখল, ভিটেমাটি হারানো প্রভৃতিই হলো প্রধান সমস্যা। বহুকালের পুরোনো এই সমস্যা সমাধানে কোনো সরকারই আন্তরিক প্রচেষ্টা চালায়নি। তিন পার্বত্য জেলায় ১৩-১৪টি পাহাড়ি জাতিভুক্ত আদিবাসী ও বাঙালিদের মধ্যে ভূমির দখল নিয়ে এই সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি দীর্ঘদিন সংঘাতপূর্ণ থাকায় একদিকে আদিবাসী পাহাড়িরা যেমন তাদের ভিটেমাটি হারিয়ে অভ্যন্তরীণভাবে কিংবা পাশ্বর্বর্তী ভারতের ত্রিপুরা ও অরুণাচলে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে; তেমনি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সত্তর ও আশির দশকে দেশের বিভিন্ন এলাকার বাঙালিদের পার্বত্য নানা এলাকায় বসতি স্থাপনে সহায়তা করা হয়েছে। এসব কারণে সৃষ্ট ভূমিবিরোধই পার্বত্য চট্টগ্রামে সমস্যার প্রধান কারণ।
ভূমিসংক্রান্ত এসব বিরোধ জারি থাকা অবস্থায় তিন পার্বত্য জেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময় প্রভাবশালী ব্যক্তি বা গোষ্ঠী, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও বা সমাজসেবা প্রতিষ্ঠানের নামে ভূমি ইজারা দিয়েছে, যা ভূমিসংক্রান্ত বিরোধকে আরও জটিল করেছে। এ সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় বিস্তৃত প্রতিবেদনও ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।
তাই পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে পাহাড়ি আদিবাসীদের অবশ্যই আস্থায় নিতে হবে। ভূমি কমিশনের সদস্য হিসেবে সার্কেল চিফ ও আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যানকে এড়িয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া কমিশনের ঠিক হবে না। পাশাপাশি ভূমি কমিশন আইনের যেসব ধারা পার্বত্য চুক্তির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নয়, সেই ধারাগুলো সংশোধনেও সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা কমিশন থেকে দেওয়া হবে, এটা আশা করাই যায়।
পার্বত্য ভূমি কমিশন তার সব সদস্যকে আস্থায় নিয়ে কাজ করলেই কেবল পার্বত্য এলাকার ভূমি বিরোধের নিষ্পত্তি সম্ভব হবে। এ ক্ষেত্রে কমিশনের বৈঠকে সরকারি প্রশাসন অথবা দলের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি কাম্য নয়।
আশা করি, পার্বত্য ভূমি কমিশনের পরবর্তী বৈঠকগুলোতে আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও সার্কেল চিফরাসহ অনুপস্থিত সব সদস্য সক্রিয়ভাবে অংশ নেবেন। তাঁদের অংশগ্রহণের সুযোগটি ভূমি কমিশন চেয়ারম্যানকেই করে দিতে হবে। কারণ, পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার। আর চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হলে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ অবশ্যই নিষ্পত্তি করতে হবে। আগামী ৯ আগস্ট বিশ্ব আদিবাসী দিবস। আশা করি, তার আগেই এই ভূমি কমিশনকে সক্রিয় করতে সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।
তারেক আহমেদ, মিরপুর, ঢাকা।

বেনামে মোবাইলের সিম বিক্রি
গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অনেক ভালো কাজের একটা ছিল, নিজ নামে মোবাইলের সিম রেজিস্ট্রেশন করা। এতে অপরাধের প্রবণতা অনেক কমে গিয়েছিল। মোবাইলের সিম যদি নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করা থাকে, তাহলে অপরাধীরা মোবাইলে কোনো অপরাধ করার আগে চিন্তা করে। কিন্তু নিজের নামে সিম রেজিস্ট্রেশন করা না থাকলে অপরাধীরা মনে করে, এত সহজে আমাকে ধরতে পারবে না। তখন অপরাধের প্রবণতাও বেড়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে মফস্বলসহ শহরের অনেক জায়গায় বেনামে মোবাইলের সিম বিক্রি হয়। যেসব দোকানে মোবাইলের সিম বিক্রি হয়, সেখানে তাদের কাছে বিটিআরসির ফরম থাকে। কেউ যদি তার ন্যাশনাল আইডি কার্ডের ফটোকপি না নিয়ে যায়, তাহলে সেই বিটিআরসির ফরম পূরণের মাধ্যমে মোবাইলের সিম বিক্রি করা হয়। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, ছবি এবং বিটিআরসির ফরম পূরণ ছাড়াই বেনামে সিম বিক্রি করা হয়। পরে দোকানিরা স্টুডিও থেকে ছবি এনে নিজে নিজে সত্যায়িত করে, নিজেই বিটিআরসির ফরম পূরণ করে জমা দেয়। এতে করে বর্তমানে প্রত্যেকের সিম রেজিস্ট্রেশন করা থাকলেও কয়জনের সঠিক পরিচয় দিয়ে সিম রেজিস্ট্রেশন করা আছে, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আর যাদের অসৎ উদ্দেশ্য থাকে, তারাই বেনামে সিম কেনে। এতে করে দিন দিন মোবাইল অপরাধ বেড়েই যাচ্ছে। দেশে মোবাইল অপরাধ বন্ধের স্বার্থে বেনামে যাতে মোবাইলের সিম বিক্রি না হয়, সে বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি কামনা করছি।
মো. আমিনুর রহমান, শাবিপ্রবি, সিলেট।

শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি
তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ নিয়ে চলছে অনেক আলোচনা। সর্বাধিক ব্যবসাসফল এই শিল্পটি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় খাত, আর শ্রমিকেরাই এই অর্জনে একটি বড় ভূমিকা রাখেন। সেই শ্রমিকদের জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম মজুরির নিশ্চয়তা বিধান নিয়ে যখন এত বিপত্তি, তখন এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ এখন খুব জরুরি।
আসলে শুধু শ্রমিকের মজুরি নয়, প্রতিটি স্তরের কর্মজীবী, পেশাজীবী মানুষের জন্য যোগ্যতানুসারে ন্যূনতম মজুরি/বেতন নির্ধারণ করে দেওয়া প্রয়োজন সরকারের তরফ থেকে। সরকারি বেতনকাঠামোর মতো বেসরকারি খাতের একটা নির্দিষ্ট বেতনকাঠামো তৈরি করে তার অনুসরণ বাধ্যতামূলক করা দরকার। নয়তো কখনোই ধনী-গরিবের প্রচণ্ড বৈষম্য রোধ করা সম্ভব নয়। আমাদের যা কিছু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, যা কিছু উন্নয়ন; অবশ্যই তা দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য উত্তরোত্তর বাড়ানোর জন্য নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য তৈরি হয়ে গেছে। এই অবস্থা থেকে এখনই পরিত্রাণের চেষ্টা করতে হবে, নয়তো ভবিষ্যতের জটিল সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
সবকিছুর ওপরে মানুষ, মানুষের মৌলিক অধিকার মেটানো আর সুস্থ-সুন্দরভাবে মানুষের বেঁচে থাকা। শ্রমিকদের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তার বিধান না করে তাদের কাছ থেকে ভালো কাজের আশা করা যায় না। শুধুই শ্রমিক শোষণ করে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করা যাবে না, আসবে না প্রকৃত অর্থে অর্থনৈতিক মুক্তি। ধনী আরও ধনী, আর গরিব আরও গরিব হওয়ার দুষ্ট চক্র থেকে জাতিকে বাঁচানোর জন্য শ্রমিকসহ সব স্তরের মানুষের মানসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মজুরি বা বেতনকাঠামো নির্ধারণ করে দেওয়া হোক সরকারিভাবে। মৌলিক অধিকার রক্ষা, দারিদ্র্য মোচন আর অর্থনৈতিক মুক্তি একই সূত্রে গাঁথা। একটির পরিবর্তন অন্যটির পরিবর্তনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ন্যায্য মজুরি শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা বাড়ায়, কমায় না। তাই অতি দ্রুত সরকার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করবে, এই আমাদের প্রত্যাশা।
বন্দনা আমীর, উত্তরা, ঢাকা।

ম্রিয়মাণ শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিতম ইনস্টিটিউট। কিন্তু শিক্ষার্থীরা এখানকার শিক্ষকদের অবহেলার শিকার। শিক্ষকেরা ঠিকমতো ক্লাস নিতে চান না, রেফারেন্স দেন না, নির্দিষ্ট বই থেকে পড়িয়ে দেন, পরীক্ষার খাতা দেখা, প্রশ্ন করা, অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া প্রভৃতি কাজ করেন দায়সারাভাবে। ক্লাসের পরপরই বহু শিক্ষক প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করেন। ক্লাসের বাইরে ব্যক্তিগত কিংবা সহ-শিক্ষাক্রমিক কোনো বিষয়ে পরামর্শ নিতে গেলে শিক্ষকেরা সময় দেন না। এর প্রধান কারণ দুটি; প্রথমত শিক্ষকদের বিশাল অংশ বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেন, দ্বিতীয়ত আইইআর—এ বছরের বড় সময় জুড়ে চলে নাইট কোর্স ও সরকারি-বেসরকারি নানা প্রজেক্ট। এর ফলে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো মানের লেকচার তৈরি করার সুযোগ না হওয়ায় পুরোনো লেকচার দিয়ে দেন। বিভিন্ন শিক্ষক কোর্সের বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের দ্বারা প্রেজেন্টেশনের নাম করে সমাপ্ত করেন। শিক্ষার্থীরা কিছু বলতে চাইলে একে অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে শিক্ষাদান, আনন্দদায়ক পদ্ধতিতে শিক্ষাদান বলে আখ্যা দেওয়া হয়। এখানকার কম্পিউটার ল্যাব জীর্ণশীর্ণ, লাইব্রেরিতে পুস্তকের সংকট। বিভিন্ন প্রজেক্ট বা নাইট কোর্সের শিক্ষার্থীদের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরি, ক্যানটিন ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারেন না।
ভবনটিতে যে দু-তিনটি কক্ষে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের সুবিধা রয়েছে, সেগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের না দিয়ে প্রজেক্টে বা নাইট কোর্সের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়। বলা হয়, প্রজেক্টের জন্য প্রচুর অর্থ বরাদ্দ থাকে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা কক্ষ বা এর অবকাঠামোর ক্ষতি করতে পারেন। তা ছাড়া শিক্ষকের সংকট থাকা সত্ত্বেও নাইট কোর্স বা প্রজেক্ট বন্ধ হচ্ছে না। তবে কেন আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসব? পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত বাংলাদেশের অধিকাংশ গরিব-মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানেরা তুলনামূলক মেধার পরিচয় দিয়ে শিক্ষার্জনে আসে। সাধারণ মানুষের করের টাকায় যে প্রতিষ্ঠান চলে, সেই প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে কেন শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করবেন? বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্যিক নাইট কোর্স, স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম বাদ দিয়ে শিক্ষকদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা প্রভৃতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে। কয়েকটি বিভাগে বাণিজ্যিক নাইট কোর্স বন্ধ হয়েছে। যেসব বিভাগে বাণিজ্যিক নাইট কোর্স চালু আছে, কিংবা শিক্ষকেরা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন, সেসব বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ মোটা দাগে একই। শিক্ষামন্ত্রীও সমপ্রতি শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য করার বিপক্ষে মত দিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটকে বাণিজ্যিক প্রবণতা থেকে মুক্ত করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্র প্রসার করা হোক।
রহমান শিহান, শিক্ষার্থী
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের উপদ্রব
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ একের পর এক ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিয়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো উদ্ধারের ব্যাপারে কিংবা কোনো ছাত্র-অধিকার রক্ষা বা ক্যাম্পাসের সামগ্রিক কল্যাণের কোনো কাজ এই দেড় বছরে তো করেইনি, বরং সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলের আন্দোলনে নামলেই মারধর করে ক্যাম্পাস-ছাড়া করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ক্যাম্পাসে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অন্তর্দ্বন্দ্ব্বজনিত সহিংসতা ও রাহাজানির মতো ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন এবং ক্যাম্পাস জুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করে রেখেছেন।
সভাপতি এককভাবে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব একটি ক্যাডার বাহিনী। ওই বাহিনী সব সময় ক্যাম্পাস ও তার আশপাশে সদরঘাট, পাটুয়াটুলী, বাংলাবাজারের দোকানপাট ও বিভিন্ন পরিবহন থেকে চাঁদা নেয়। সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকায় ছিনতাই হয়। ছাত্রলীগের সভাপতির ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না।
আর অন্যান্য সংগঠনের ছাত্ররা ক্লাস করতে পারছেন না। তা ছাড়া ছাত্রলীগের ক্যাডাররা এ পর্যন্ত অনেক মেয়েকে লাঞ্ছিত করেছে। এক শিক্ষিকার শাড়ির আঁচল টেনে ধরার দৃষ্টান্তও আছে। এক ক্যাডারের প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এক মেয়েকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত করা হয়েছে, সেই মেয়ে এখনো ক্লাস করতে পারছেন না। গত মে মাসে গণিত বিভাগের এক ছাত্রীকে অপদস্থ করে মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায় আরেক ক্যাডার। ছাত্রলীগের কথামতো ছাত্র ভর্তি না করায় সমাজবিজ্ঞানের ডিনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। গত মাসে শত শত শিক্ষক-কর্মচারীর সামনে মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যানকে তারা মারতে উদ্যত হয়।
বিভিন্ন সংবাদপত্রের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদেরও মারধর করা হয়।
ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংগঠনিক নেত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বারবার তাদের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তবু তাদের লাগামহীন তাণ্ডব চলছেই।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৩ সালের পরে আর ছাত্রলীগের কোনো কমিটি হয়নি, এখন কারও কাছে তাদের জবাবদিহি করতে হয় না। সাধারণ শিক্ষার্থীরা একেবারে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। সব সময় অজানা আশঙ্কা নিয়ে তাঁরা ক্যাম্পাসে যান। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের এসব কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এদের হাত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্ত করার উদ্যোগ নিন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী।

সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর কর কেন
গত ১৬ জুলাই প্রথম আলোয় তিনটি দুঃসংবাদ ছাপা হয়। ১. সঞ্চয়পত্রের আয়কে আয়করের আওতায় আনা হয়েছে, ২. সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো হয়েছে, এবং ৩. যখনই আয় হোক না কেন, ১ জুলাই থেকে যিনিই সঞ্চয়পত্র ভাঙাবেন তাঁকেই আয়কর দিতে হবে।
প্রথম ও দ্বিতীয় সিদ্ধান্তের পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি থাকতে পারে। তৃতীয় সিদ্ধান্তটির পক্ষে একটি যুক্তিও পাওয়া গেল না।
এক ব্যক্তির কেনা সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে ২০১০ সালের এপ্রিল মাসে। তিনি তখন সেটি ভাঙাতে পারেননি নানা ব্যস্ততার কারণে। ১ জুলাইয়ের পরে তিনি সঞ্চয়পত্র ভাঙাতে ব্যাংকে গেছেন, তাঁর প্রাপ্য সুদের ওপর থেকে ১০ শতাংশ কর কেটে নেওয়া হলো।
কিন্তু এর পক্ষে কী যুক্তি থাকতে পারে? সঞ্চয়পত্র কেনা হয় একটা এগ্রিমেন্ট বা চুক্তির ভিত্তিতে। সঞ্চয়পত্র কেনার সময় সেই চুক্তির শর্তগুলো কার্যকর থাকে। যে-মেয়াদের জন্য সঞ্চয়পত্রটি কেনা হয়, ওই মেয়াদপূর্তির আগে সেসব শর্তের একটিও কোনো পক্ষ লংঘন করতে পারে না। আজ থেকে তিন বছর আগে আমি যে সঞ্চয়পত্র কিনেছিলাম, তাতে এমন শর্ত ছিল না যে আমার সুদের ওপর থেকে ১০ শতাংশ কর কেটে নেওয়া হবে। তেমন শর্ত তখনই যদি দেওয়া হতো, তাহলে আমি চিন্তা করে দেখতাম ওই শর্তে আমি সঞ্চয়পত্র কিনব কি কিনব না। আজকে যে সুদের ওপর কর কাটার নিয়ম ঘোষণা করা হয়েছে, সেটি কেন আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে? এটা চুক্তির খেলাপ, সরকার বা জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো বা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড—কারোরই এই অধিকার থাকতে পারে না।
সুতরাং যেসব মানুষের আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর থেকে ১০ শতাংশ কর কেটে নেওয়া হয়েছে তাদেরকে সেই অর্থ ফেরত দেওয়া উচিত এবং ১ জুলাই ২০১০ সালের আগে কেনা সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর থেকে ১০ শতাংশ কর কাটা বন্ধ করা উচিত।
এস এ হক, ঢাকা।

রাজশাহী যা হতে পারে
১৫ জুলাই প্রথম আলোর মশিউল আলমের ‘রাজশাহী: শান্ত সবুজ সুখী নগর’ শিরোনামের লেখাটির জন্য লেখককে ধন্যবাদ। রাজশাহীকে সবার সামনে তুলে ধরার আসলেই প্রয়োজন ছিল। লেখক লিখেছেন, ‘এখানকার পরিবেশ শান্ত, কোলাহলমুক্ত, সারা শহরে প্রচুর গাছপালা...শিক্ষা ও গবেষণার জন্য এমন উপযোগী পরিবেশ আর হয় না।’ কথাটা একদম আমার মনের কথা।
শিক্ষাকে কেন্দ্র করে রাজশাহীকে আরও উন্নত করে দেশের উচ্চশিক্ষাপ্রত্যাশীদের একটা বড় অংশকে এখানে আনতে পারলে রাজধানী ঢাকাসহ অন্য বড় শহরগুলোর ওপর থেকে চাপ অনেক কমে যাবে। রাজশাহীতে জীবনযাত্রার ব্যয় ঢাকা ও চট্টগ্রামের চেয়ে বেশ কম। শিক্ষার্থীদের জন্য এটা হতে পারে দেশের সবচেয়ে উপযোগী শহর। এই শহরের আরেকটা বিশেষ দিক হলো, বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে রাজশাহী রেলপথে ঢাকা থেকে সবচেয়ে কাছে। নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য রাজশাহী খুব সুখের শহর। যারা একসময় রাজশাহীতে থাকতেন, এখন কোনো কারণে অন্য কোনো শহরে থাকেন, তাঁরাও এ কথা বলেন।
লেখাটিতে রাজশাহীর তরুণসমাজের মনের কথাগুলোর কিছু অংশ উঠে এসেছে। আমরা তরুণেরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করি।
ফারহান তানভীর। liton6300@gmail.com

জাবি সিন্ডিকেটের এ কেমন বিচার?
একেই বলে এক যাত্রায় দুই ফল। অতীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত শিক্ষকেরা চাকরি হারিয়েছেন। কিন্তু এবার দেখা গেল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত দুজন শিক্ষকের একজন পেয়েছেন পদাবনতি, অন্যজনের ব্যাপারে অভিযোগকারী শিক্ষিকাকে ‘হাইকোর্ট দেখানো’ হয়েছে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট বিষয়টি নিষ্পত্তির ভার উচ্চ আদালতের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। তাহলে কি সিন্ডিকেট অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের বিচার করতে অপারগ হলেন? তাই যদি হবে, তাহলে শাস্তি হিসেবে পদাবনতি পাওয়া ওই শিক্ষক কী দোষ করলেন?
সিন্ডিকেটের এই রায়কে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা পক্ষপাতমূলক ও অস্বচ্ছ বলে অভিযোগও করেছেন (মঙ্গলবার, প্রথম আলো)। প্রথম কথা, একই ধরনের অভিযোগে দুজনের বেলায় দুই রায় হতে পারে না। দ্বিতীয়ত, বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট অনুযায়ী কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন তথা নৈতিক স্খলনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর চাকরি থাকার কথা নয়। তৃতীয়ত, অভিযোগের তদন্ত যেহেতু আইন অনুযায়ী হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।
যৌন নিপীড়ক বলে প্রমাণিত সানোয়ার হোসেন সানীর পদাবনতিকে শাস্তি না বলে পুরস্কারই বলা উচিত। কারণ, কিছু সময় পর তাঁর আবার অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়ায় কোনো বাধা থাকল না। এ ছাড়া দুই বছরের সবেতন ছুটি যতটা না শাস্তি, তার থেকে বেশি পুরস্কার। অন্য শিক্ষক আবদুল্লাহ হেল কাফীর বিচারের ভার উচ্চ আদালতের ওপর দিয়ে কার্যত সিন্ডিকেট দায় এড়িয়েছে। এর আগে সংবাদপত্রে এসেছে যে, এই শিক্ষক পিএইচডির ছাত্র থাকার সময়ই একইভাবে যৌন নিপীড়ন ও প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত হন এবং তা প্রমাণিতও হয়। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, এহেন অপরাধ করেও তিনি কীভাবে কোন বিবেচনায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেলেন? বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ছিল বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী তাঁর অপরাধের প্রাতিষ্ঠানিক বিচার করা। দুটি রায়ই তাই বিশ্ববিদ্যালয় আইন ও চাকরিবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং পরিষ্কার অনৈতিকতা। এখানে বলা দরকার, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তথা উপাচার্যের অনুমোদনক্রমে রেজিস্ট্রার নিজেও সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে অভিযোগকারী শিক্ষিকার নাম প্রকাশ করে আইন লঙ্ঘন করেছিলেন। এই-ই যদি হয় অবস্থা, তাহলে কার বিচার তাহলে কে করবে?
অভিযুক্ত ওই দুজন শিক্ষকই ক্যাম্পাসে শিক্ষক রাজনীতিতে প্রভাবশালী এবং বর্তমান প্রশাসনে তাঁদের আসন সুপ্রতিষ্ঠিত। দেশের নাগরিক সমাজ থেকে শুরু করে সরকারেরও উচিত, অভিযুক্তদের উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা ঘটার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি জারি করা। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন ও অভিযোগকেন্দ্র গঠনের যে নির্দেশ উচ্চ আদালত থেকে দেওয়া হয়েছিল, তা কতটা পালন করা হচ্ছে? দলীয় ও পক্ষপাতপূর্ণ ব্যক্তিদের দ্বারা সেই অভিযোগ ও তার তদন্ত হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখারও উদ্যোগ নেওয়া উচিত। আমরা আশা করব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের পক্ষপাতপূর্ণ রায় নতুন করে বিবেচনা করবে এবং কোনোভাবেই যৌন নিপীড়কদের শিক্ষকতায় বহাল রেখে অন্যায়কে ‘ন্যায়’ বলার কপটতা করবে না। বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান ও নৈতিকতার সর্বোচ্চ পৃষ্ঠাপোষকতার স্থান, একে সন্ত্রাসী ও যৌন নিপীড়কদের অভয়ারণ্য করে তোলার ছাড়পত্র কেউই পেতে পারে না।
রোমেল রহমান, প্রাক্তন শিক্ষার্থী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
কলাবাগান, ঢাকা।

মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক
মানুষের মৌলিক চাহিদার প্রথমটি অন্ন, দ্বিতীয়টি বস্ত্র। মাত্র এক দশক আগেও আমরা বলতাম, বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, এ দেশের ৮০ শতাংশ লোক কৃষিজীবী, যেখানে পুরুষেরা মাঠে কাজ করত আর মেয়েরা শুধু স্বামী-সন্তানের সেবা করত। জনসংখ্যার অর্ধেক নারী, তবে দেশের অর্থনীতিতে তাদের তেমন কোনো প্রত্যক্ষ অবদান ছিল না।
আজকে দেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি তৈরি পোশাকশিল্প। এই শিল্পের মোট জনশক্তির ৮০ শতাংশই নারী। কৃষিক্ষেত্রে পুরুষ আর পোশাকশিল্পে নারীরা যদি সমান ভূমিকা রেখে এগিয়ে যেতে পারে, তবে নারী ও পুরুষের সমন্বয়ে গঠিত হবে উন্নয়নের সমান্তরাল রেললাইন, যার ওপর দিয়ে দ্রুত গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে সমৃদ্ধির পথে। তবে সুদিনের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ঘুমালে চলবে না।
দেশের এক কোটির অধিক মানুষের জীবিকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পোশাকশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তাই কোনো মতেই যেন সেই শিল্পের ক্ষতি সাধিত না হয়। মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সুসম্পর্ক নিশ্চিত করা দরকার। সেই সঙ্গে প্রয়োজন বহির্বিশ্বে নতুন নতুন বাজার সৃষ্টি করা।
ফরহাদ নাসিম
মার্চেন্ডাইজার, স্প্যারো অ্যাপারেলস লিমিটেড, গাজীপুর।
forhad.nachim@gmail.com

লিখুন, পাঠিয়ে দিন
প্রিয় পাঠক, প্রথম আলোয় প্রকাশিত সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয়, প্রতিবেদন ইত্যাদি নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া/ভিন্নমত আমাদের
লিখে পাঠান।
সমসাময়িক অন্যান্য বিষয়েও আপনার অভিমত, চিন্তা, বিশ্লেষণ সর্বোচ্চ ৪০০ শব্দের মধ্যে লিখে পাঠিয়ে দিন ডাকযোগে:
অভিমত, সম্পাদকীয় বিভাগ, প্রথম আলো, সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
কারওয়ান বাজার, ঢাকা।
ই-মেইলে (এমএস ওয়ার্ড অ্যাটাচমেন্ট):
obhimot@prothom-alo.info

No comments

Powered by Blogger.