রাজধানীর ফ্লাইওভার-সময় থাকতে ত্রুটি দূর করুন

যানজটে নাকাল রাজধানী ঢাকার বাসিন্দারা তিনটি ফ্লাইওভার, একটি ওভারপাস এবং হাতিরঝিল প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে। ইউরোপ ও আমেরিকার উন্নত দেশগুলোতে যাতায়াতের সুবাদে অনেকেই ফ্লাইওভারের সুবিধা দেখে মুগ্ধ। এমনকি পাশের দেশ ভারতের কলকাতা, মুম্বাই ও দিলি্লতেও উড়াল পথের ছড়াছড়ি।


কিন্তু শুক্রবার যোগাযোগ মন্ত্রণালয় আয়োজিত যানজট নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সমন্বয় সভায় ঢাকা মহানগর পুলিশের উপস্থাপন করা সচিত্র প্রতিবেদন থেকে ধারণা হতেই পারে যে, যানজটজনিত দুর্ভোগের অবসান নয়, বরং কয়েক মাসের মধ্যেই নতুন যন্ত্রণাক্লিষ্ট অধ্যায়ের সূচনা হতে চলেছে। সমকালে 'ফ্লাইওভার ঢাকার যানজট বাড়াবে!' শীর্ষক শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার বেনজীর আহমেদ মনে করেন, 'ঢাকা শহরে যেভাবে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হচ্ছে, তার ফলে যানজট আরও দুঃসহ হতে পারে। এখন বিনা পয়সায় যানজটে বসে থাকতে হয়, ফ্লাইওভার নির্মাণ হলে টোলের অর্থ পরিশোধ করার পর যানজটে বসে থাকতে হবে।' তিনি মহাখালী ফ্লাইওভার নির্মাণের সময় ঢাকা মহানগর পুলিশের আপত্তির প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, এ এলাকায় আগের চেয়ে যানজট বেশি হচ্ছে। ফ্লাইওভারটি বিজয় সরণি পার করে নেওয়া হলে ভালো ফল মিলত। রাজউকের প্রস্তাবিত ঝিলমিল এলাকা থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত আরও একটি ফ্লাইওভার নির্মিত হলে গুলিস্তান এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হতে পারে। প্রতিবেদনে বলা হয়, যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভার এমনভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে, যাতে নিচের রাস্তা ব্যবহারের সুযোগ সীমিত থাকছে। ফলে বেশি যানবাহন ফ্লাইওভারে উঠতে বাধ্য হবে এবং টোল প্লাজাতেই তীব্র যানজট হবে। হাতিরঝিল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রামপুরা সড়ক ও টঙ্গী ডাইভারশন রোডে ছয়টি নতুন সংযোগস্থল তৈরি হবে, যা যানজট বাড়াবে। কুড়িল ফ্লাইওভার ত্রুটিপূর্ণ বলেও প্রতিবেদনে অভিমত দেওয়া হয়। এসব ডিজাইন নিয়ে প্রকল্প কাজ শুরুর আগে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়নি কেন_ সে প্রশ্ন স্বাভাবিক। রাজধানীর ট্রাফিক বিভাগ কি যোগাযোগ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি যথাযথভাবে অবগত করেনি? প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে যুক্তি-তথ্য শোনার পর যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রশ্ন তুলেছেন_ 'তাহলে যানজট কমার উপায় কী?' প্রকৃতপক্ষে তিনি রাজধানীর দেড় কোটি অধিবাসীর মনের কথাই তুলে ধরেছেন। তার প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর পুলিশের এক যুগ্ম কমিশনার মেট্রোরেল ও মনোরেলের উপযোগিতার কথা বলেছেন। রেলওয়ের লেভেলক্রসিং ও আরও কিছু এলাকায় ছোট ছোট আন্ডারপাস নির্মাণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ফুটপাত এবং ফুট ওভারপাস ও আন্ডারপাসের কার্যকর ব্যবহারে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য। মগবাজার রেলক্রসিংয়ে ট্রেন চলাচল বিঘি্নত না করেই মাত্র ছয় মাসের মধ্যে আন্ডারপাস নির্মাণ সম্ভব বলেও বৈঠকে জানানো হয়। আমরা আশা করব, এসব সুপারিশ-পরামর্শ গুরুত্ব পাবে। ব্যয়বহুল যেসব ফ্লাইওভার নির্মিত হচ্ছে, সেগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতেই হবে। এ জন্য সর্বাগ্রে দরকার জরুরিভাবে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠকে বসা। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে খোলা মন নিয়ে এ জটিলতা নিরসনে সচেষ্ট হতে হবে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে সর্বোত্তম সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার ছেড়ে দিতে হবে বিশেষজ্ঞদের ওপরেই। 'তাহলে যানজট নিরসনের উপায়'_ যোগাযোগমন্ত্রীর এ প্রশ্নের উত্তর দেবেন তারাই। সরকারকে কেবল তা বাস্তবায়ন করে যেতে হবে। ফ্লাইওভার চালুর পর তা যেন ভেঙে ফেলতে না হয়, বরং ডিজাইনে ত্রুটিসহ যেসব সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে, তার নিরসন হতে হবে আগেভাগেই।
 

No comments

Powered by Blogger.