বেক্সিমকোর নিজস্ব কোম্পানির লেনদেন-৫ ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা আটকা by মনজুর আহমেদ
নিজেদের মধ্যে লেনদেন করেছে বেক্সিমকো গ্রুপের দুটি কোম্পানি। কিন্তু এ জন্য বিপদে পড়ে গেছে দেশের পাঁচ ব্যাংক। নিজেদের লেনদেনে অভিনব উপায়ে এই পাঁচ ব্যাংককে জড়িয়ে ফেলেছে বেক্সিমকো গ্রুপ। গ্রুপের এই কোম্পানি দুটি হচ্ছে বেক্সিমকো লিমিটেড ও বেক্সটেক্স লিমিটেড।
এর মধ্যে বিক্রেতা বেক্সটেক্স আর ক্রেতা বেক্সিমকো লিমিটেড। রাষ্ট্রীয় খাতের সোনালী ব্যাংক পণ্য বিক্রি বাবদ বেক্সটেক্সকে হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থ পরিশোধ করেছে। অথচ ক্রয়মূল্য পরিশোধ করেনি বেক্সিমকো লিমিটেড।
এখন এই অর্থ পরিশোধের দায় পড়েছে রাষ্ট্রীয় খাতের জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের ঘাড়ে। কেননা এই ব্যাংকগুলোই বেক্সিমকো লিমিটেডের পক্ষে ক্রয়মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা দিয়েছিল সোনালী ব্যাংককে।
ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে স্থানীয় এলসি (ঋণপত্র) খুলে বেক্সিমকো গ্রুপের এই দুই কোম্পানির মধ্যে এসব বাণিজ্য হয়েছে। সুতা বিক্রেতা বেক্সটেক্সের ব্যাংক সোনালী ব্যাংক, আর বেক্সিমকো লিমিটেডের হয়ে জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও এক্সিম ব্যাংক ক্রয়মূল্য পরিশোধের স্বীকৃতি (এলসি এক্সসেপটেন্স) দিয়েছে। এই স্বীকৃতি ধরেই সোনালী ব্যাংক থেকে বের করে নেওয়া হয়েছে হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ।
এর মধ্যে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা। পরবর্তীকালে আরও বেশ কয়েকটি স্থানীয় এলসির অর্থও পরিশোধ করেনি বেক্সিমকো লিমিটেড। সব মিলে ইতিমধ্যেই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ এখন আটকে আছে ব্যাংকগুলোর।
সোনালী ব্যাংক নিশ্চয়তা দানকারী ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে এই টাকা পেতে দফায় দফায় চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। অবশেষে ব্যাংকটি এই বিরোধ নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সালিসি বিচার দিয়েছে। কিন্তু, অজ্ঞাত কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এই বিরোধ জিইয়ে রেখেছে। ইতিমধ্যেই দুই দফা সময়ও বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কাগজপত্রে বেক্সিমকো গ্রুপের এই দুই কোম্পানির লেনদেনের তথ্য-উপাত্ত আছে ব্যাংকগুলোতে। কিন্তু আদৌ বেক্সিমকো লিমিটেড বেক্সটেক্সের কাছ থেকে সুতা ক্রয় করেছে কি না, তার তথ্য নেই। কেননা ব্যাংক কেবল কাগজপত্র নিয়ে কাজ করে। জিজ্ঞাসা করা হলে রূপালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংক কাগজপত্র (ডকুমেন্ট) নিয়ে কাজ করে। পণ্যের হাতবদল (ফিজিক্যাল ট্রানজেকশন) দেখে না।’
ব্যাংকগুলোর সূত্র বলছে, এই অর্থের একটা বড় অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে বলে তারা জেনেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কথা কেউ বলতে চায়নি।
তবে এসব বিষয় নিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সত্যিকারভাবেই পণ্যের হাতবদল হয়েছে, কেবল কাগজপত্রে লেনদেন নয়।’ একই সঙ্গে তিনি এও দাবি করেন, এখান থেকে কোনো টাকা বের করে শেয়ারবাজারে খাটানো হয়নি।
যেভাবে লেনদেন: এই যে বেক্সিমকো গ্রুপের দুই কোম্পানির পণ্য কেনাবেচা, তা হয়েছে এভাবে, বেক্সিমকো লিমিটেড স্থানীয় মুদ্রায় আমদানি এলসি (ঋণপত্র) খুলেছে জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও এক্সিম ব্যাংকে। তার বিপরীতে বেক্সটেক্স সোনালী ব্যাংক থেকে বিক্রয় এলসি পাঠিয়েছে (অর্থের নিশ্চয়তা চেয়ে) উল্লিখিত চার ব্যাংকের কাছে। চার ব্যাংক বেক্সিমকো লিমিটেডের পক্ষে এই অর্থপ্রাপ্তিতে স্বীকৃতি বা এলসি একসেপটেন্স দিয়েছে। সোনালী ব্যাংক সেই অনুসারে বেক্সটেক্সকে অর্থ পরিশোধও করে দিয়েছে। কিন্তু এই চার ব্যাংক আর সোনালী ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করেনি।
ব্যাংকগুলো বলছে, তাদের গ্রাহক বেক্সিমকো লিমিটেড ক্রয়মূল্য পরিশোধ করেনি। তাই তারা সোনালী ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না।
সালমান এফ রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের নগদ অর্থের টানাটানি ছিল। তাই ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। তবে কিছু অর্থ দিয়েছি। শিগগিরই বাকি অর্থ পরিশোধ করে দেওয়া হবে।’
স্থানীয় এসব এলসির মেয়াদ ১৮০ দিনের। তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, একটি ব্যাংকে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের বিভিন্ন সময়ে এই এলসিগুলো খোলা হয়েছিল। অর্থাৎআগস্ট মাসের বিভিন্ন সময় এই এলসিগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের চিঠি: বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিরোধ নিষ্পত্তি চেয়ে সোনালী ব্যাংকের দেওয়া চিঠি অনুসারে, ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের মেয়াদোত্তীর্ণ পাওনার পরিমাণ হচ্ছে ৬৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের কাছে ১৪টি এলসির স্বীকৃতির বিপরীতে পাওনা প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের কাছে সাতটি এলসিতে পাওনা ১০৯ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের নয়টি এলসির স্বীকৃতির বিপরীতে পাওনা ৭৫ কোটি টাকা এবং এক্সিম ব্যাংকের স্বীকৃতি দেওয়া পাঁচটি এলসির বিপরীতে পাওনা দাঁড়িয়েছে ১১১ কোটি টাকা।
এর মধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে বেক্সিমকো সিনথেটিক থেকেও ক্রয় দেখানো হয়েছে। যেমন—জনতা ব্যাংকে সিনথেটিকের পণ্য কেনার তিনটি এলসির তথ্য পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সোনালী ব্যাংকের লিখিত ৬৪৫ কোটি টাকার দাবি নিষ্পত্তির চেয়েও বেশি অঙ্কের মেয়াদোত্তীর্ণ অর্থ আটকা পড়ার তথ্যও পাওয়া গেছে। যেমন—এক্সিম ব্যাংকে এখন মোট আটটি এলসির স্বীকৃত অর্থ পরিশোধের দায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এই আট এলসিতে মোট দায় দাঁড়িয়েছে ১৫১ কোটি টাকা। অন্য ব্যাংকগুলোতেও নতুন নতুন এলসি দায় মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে। সোনালী ব্যাংক সূত্র বলছে, তাদের দাবি নিষ্পত্তিতে যে ৬৪৫ কোটি টাকার কথা উল্লেখ রয়েছে, তা ছিল ২০১১-এর ডিসেম্বরভিত্তিক। ইতিমধ্যেই এই টাকার অঙ্ক প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এক্সিম ব্যাংকে নতুন এলসি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া এবং টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি পাওয়ার তথ্য এরই স্বাক্ষর বহন করে।
নিষ্পত্তির চেষ্টা: অর্থ না পাওয়ায় সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে চারটি ব্যাংকের যে বিরোধ, তার নিষ্পত্তির দায় গিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর। সোনালী ব্যাংক বিচারও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। এসব ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পৃথক ব্যাংকগুলোর যে হিসাব আছে, সেখান থেকে অর্থ কেটে সোনালী ব্যাংকে পরিশোধ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথম সাত দিন, তারপর আরও এক মাস মিলে দুই দফা সময় বেঁধে দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে। রফা করার চেষ্টা চালিয়েছে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে ডেকে নিয়ে গিয়ে। তাতেও লাভ হয়নি। সর্বশেষ ৩০ এপ্রিল বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হয়েছে।
জানা যায়, সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে, চার ব্যাংকের হিসাব থেকে অর্থ কেটে সোনালী ব্যাংককে পরিশোধ করা হোক। গতকাল বুধবার পর্যন্ত এর কোনো সমাধান দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর কাছে এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে টাকা পরিশোধ করা না হলে বিধিমোতাবেক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসাব বিকলন করে পাওনাদার ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করা হবে।
এখন এই অর্থ পরিশোধের দায় পড়েছে রাষ্ট্রীয় খাতের জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের ঘাড়ে। কেননা এই ব্যাংকগুলোই বেক্সিমকো লিমিটেডের পক্ষে ক্রয়মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা দিয়েছিল সোনালী ব্যাংককে।
ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে স্থানীয় এলসি (ঋণপত্র) খুলে বেক্সিমকো গ্রুপের এই দুই কোম্পানির মধ্যে এসব বাণিজ্য হয়েছে। সুতা বিক্রেতা বেক্সটেক্সের ব্যাংক সোনালী ব্যাংক, আর বেক্সিমকো লিমিটেডের হয়ে জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও এক্সিম ব্যাংক ক্রয়মূল্য পরিশোধের স্বীকৃতি (এলসি এক্সসেপটেন্স) দিয়েছে। এই স্বীকৃতি ধরেই সোনালী ব্যাংক থেকে বের করে নেওয়া হয়েছে হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ।
এর মধ্যে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা। পরবর্তীকালে আরও বেশ কয়েকটি স্থানীয় এলসির অর্থও পরিশোধ করেনি বেক্সিমকো লিমিটেড। সব মিলে ইতিমধ্যেই হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ এখন আটকে আছে ব্যাংকগুলোর।
সোনালী ব্যাংক নিশ্চয়তা দানকারী ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে এই টাকা পেতে দফায় দফায় চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। অবশেষে ব্যাংকটি এই বিরোধ নিষ্পত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সালিসি বিচার দিয়েছে। কিন্তু, অজ্ঞাত কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকও এই বিরোধ জিইয়ে রেখেছে। ইতিমধ্যেই দুই দফা সময়ও বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কাগজপত্রে বেক্সিমকো গ্রুপের এই দুই কোম্পানির লেনদেনের তথ্য-উপাত্ত আছে ব্যাংকগুলোতে। কিন্তু আদৌ বেক্সিমকো লিমিটেড বেক্সটেক্সের কাছ থেকে সুতা ক্রয় করেছে কি না, তার তথ্য নেই। কেননা ব্যাংক কেবল কাগজপত্র নিয়ে কাজ করে। জিজ্ঞাসা করা হলে রূপালী ব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক আতিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্যাংক কাগজপত্র (ডকুমেন্ট) নিয়ে কাজ করে। পণ্যের হাতবদল (ফিজিক্যাল ট্রানজেকশন) দেখে না।’
ব্যাংকগুলোর সূত্র বলছে, এই অর্থের একটা বড় অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে বলে তারা জেনেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কথা কেউ বলতে চায়নি।
তবে এসব বিষয় নিয়ে বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সত্যিকারভাবেই পণ্যের হাতবদল হয়েছে, কেবল কাগজপত্রে লেনদেন নয়।’ একই সঙ্গে তিনি এও দাবি করেন, এখান থেকে কোনো টাকা বের করে শেয়ারবাজারে খাটানো হয়নি।
যেভাবে লেনদেন: এই যে বেক্সিমকো গ্রুপের দুই কোম্পানির পণ্য কেনাবেচা, তা হয়েছে এভাবে, বেক্সিমকো লিমিটেড স্থানীয় মুদ্রায় আমদানি এলসি (ঋণপত্র) খুলেছে জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও এক্সিম ব্যাংকে। তার বিপরীতে বেক্সটেক্স সোনালী ব্যাংক থেকে বিক্রয় এলসি পাঠিয়েছে (অর্থের নিশ্চয়তা চেয়ে) উল্লিখিত চার ব্যাংকের কাছে। চার ব্যাংক বেক্সিমকো লিমিটেডের পক্ষে এই অর্থপ্রাপ্তিতে স্বীকৃতি বা এলসি একসেপটেন্স দিয়েছে। সোনালী ব্যাংক সেই অনুসারে বেক্সটেক্সকে অর্থ পরিশোধও করে দিয়েছে। কিন্তু এই চার ব্যাংক আর সোনালী ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করেনি।
ব্যাংকগুলো বলছে, তাদের গ্রাহক বেক্সিমকো লিমিটেড ক্রয়মূল্য পরিশোধ করেনি। তাই তারা সোনালী ব্যাংকের অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না।
সালমান এফ রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের নগদ অর্থের টানাটানি ছিল। তাই ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করতে পারিনি। তবে কিছু অর্থ দিয়েছি। শিগগিরই বাকি অর্থ পরিশোধ করে দেওয়া হবে।’
স্থানীয় এসব এলসির মেয়াদ ১৮০ দিনের। তথ্য-উপাত্ত থেকে দেখা যায়, একটি ব্যাংকে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের বিভিন্ন সময়ে এই এলসিগুলো খোলা হয়েছিল। অর্থাৎআগস্ট মাসের বিভিন্ন সময় এই এলসিগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে।
সোনালী ব্যাংকের চিঠি: বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিরোধ নিষ্পত্তি চেয়ে সোনালী ব্যাংকের দেওয়া চিঠি অনুসারে, ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকের মেয়াদোত্তীর্ণ পাওনার পরিমাণ হচ্ছে ৬৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের কাছে ১৪টি এলসির স্বীকৃতির বিপরীতে পাওনা প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকের কাছে সাতটি এলসিতে পাওনা ১০৯ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংকের নয়টি এলসির স্বীকৃতির বিপরীতে পাওনা ৭৫ কোটি টাকা এবং এক্সিম ব্যাংকের স্বীকৃতি দেওয়া পাঁচটি এলসির বিপরীতে পাওনা দাঁড়িয়েছে ১১১ কোটি টাকা।
এর মধ্যে কয়েকটি ক্ষেত্রে বেক্সিমকো সিনথেটিক থেকেও ক্রয় দেখানো হয়েছে। যেমন—জনতা ব্যাংকে সিনথেটিকের পণ্য কেনার তিনটি এলসির তথ্য পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সোনালী ব্যাংকের লিখিত ৬৪৫ কোটি টাকার দাবি নিষ্পত্তির চেয়েও বেশি অঙ্কের মেয়াদোত্তীর্ণ অর্থ আটকা পড়ার তথ্যও পাওয়া গেছে। যেমন—এক্সিম ব্যাংকে এখন মোট আটটি এলসির স্বীকৃত অর্থ পরিশোধের দায় মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। এই আট এলসিতে মোট দায় দাঁড়িয়েছে ১৫১ কোটি টাকা। অন্য ব্যাংকগুলোতেও নতুন নতুন এলসি দায় মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে। সোনালী ব্যাংক সূত্র বলছে, তাদের দাবি নিষ্পত্তিতে যে ৬৪৫ কোটি টাকার কথা উল্লেখ রয়েছে, তা ছিল ২০১১-এর ডিসেম্বরভিত্তিক। ইতিমধ্যেই এই টাকার অঙ্ক প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। এক্সিম ব্যাংকে নতুন এলসি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়া এবং টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি পাওয়ার তথ্য এরই স্বাক্ষর বহন করে।
নিষ্পত্তির চেষ্টা: অর্থ না পাওয়ায় সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে চারটি ব্যাংকের যে বিরোধ, তার নিষ্পত্তির দায় গিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর। সোনালী ব্যাংক বিচারও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। এসব ক্ষেত্রে নিয়ম হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পৃথক ব্যাংকগুলোর যে হিসাব আছে, সেখান থেকে অর্থ কেটে সোনালী ব্যাংকে পরিশোধ করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথম সাত দিন, তারপর আরও এক মাস মিলে দুই দফা সময় বেঁধে দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে। রফা করার চেষ্টা চালিয়েছে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে ডেকে নিয়ে গিয়ে। তাতেও লাভ হয়নি। সর্বশেষ ৩০ এপ্রিল বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হয়েছে।
জানা যায়, সোনালী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করেছে, চার ব্যাংকের হিসাব থেকে অর্থ কেটে সোনালী ব্যাংককে পরিশোধ করা হোক। গতকাল বুধবার পর্যন্ত এর কোনো সমাধান দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরীর কাছে এ নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে টাকা পরিশোধ করা না হলে বিধিমোতাবেক সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের হিসাব বিকলন করে পাওনাদার ব্যাংকের টাকা পরিশোধ করা হবে।
No comments