মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সংস্কৃতির বড়ই আকাল by আবু এন এম ওয়াহিদ
গত ২৮ জুলাই হঠাৎ মনে পড়ল ইত্তেফাকের পাতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বেলাল হোসেইন রাহাতের একটি ছোট্ট লেখা পড়ে। রাহাত তাঁর লেখায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে যেভাবে ভেঙে পড়ছে, তার একটি করুণ কাহিনী সংক্ষেপে তুলে ধরেছেন।
রাহাত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকের ছাত্র, আর আমি একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন প্রাক্তন ছাত্র (দ্বিতীয় ব্যাচ, অর্থনীতি) ও শিক্ষক। আমার আজকের অভিজ্ঞতাটি রাহাতের মতোই আমার প্রিয় আল্মা মেটার জাহাঙ্গীরনগরকে নিয়েই। আমার এই সুপ্ত স্মৃতিকে নাড়া দেওয়ার জন্য রাহাতকে ধন্যবাদ।
১৯৯৭ সালের গ্রীষ্মের ছুটিতে ফুলব্রাইট ফেলোশিপ নিয়ে চার মাসের জন্য ঢাকায় ছিলাম। স্ত্রী-ছেলেমেয়ে নিয়ে মোহাম্মদপুরে শ্বশুরালয়ে থাকতাম। গবেষণাকাজের পাশাপাশি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে দুটি সামার কোর্স করাচ্ছিলাম। ইন্টেনসিভ কোর্স, সপ্তাহে পাঁচ দিনই ক্লাসে যেতে হতো। শুক্র-শনিই কেবল ছুটি পেতাম।
কঙ্বাজার বা এ রকম দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার ফুরসত ছিল না। তাই ভাবছিলাম, কোনো এক সাপ্তাহিক ছুটিতে ছেলেমেয়েদেরকে প্রথম বারের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দেখাতে নিয়ে যাব। পরিকল্পনা পর্যায়ে আমার শ্যালিকাদের (যতদূর মনে পড়ে, ওই সময় আমার একমাত্র শালা তার পরিবারসহ বিদেশে কর্মরত ছিল) সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক হলো, সপরিবারে আমরা সবাই একসঙ্গে যাব। আরো সিদ্ধান্ত হলো, যাওয়ার সময় আমরা হেমায়েতপুর হয়ে সোজা সাভারে যাব এবং ফেরার পথে আশুলিয়া হয়ে উত্তরায় আমার শ্যালিকার জমির প্লট দেখে মোহাম্মদপুরে ফিরে আসব। গাড়ি এবং ড্রাইভারের ব্যবস্থা করল আমার শ্যালিকা। এর জন্য তার কাছে আজও কৃতজ্ঞ আমি। শ্বশুরবাড়ি থেকে যথেষ্ট পরিমাণ শুকনো খাবার-দাবার ও পানীয় নিয়ে সবাই মিলে একসঙ্গে রওনা দিলাম জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসের দিকে। দিনটি শুক্র, না শনিবার ছিল, মনে নেই। তবে ছুটির দিন হওয়ায় পথে যানজটের যন্ত্রণা খুব একটা পোহাতে হয়নি। এক ঘণ্টা-সোয়া ঘণ্টার মধ্যেই আমরা গন্তব্যস্থলে পেঁৗছে যাই। মূল গেট দিয়ে ঢুকে সোজা আল-বিরুনী হলের সামনে এসে মাইক্রোবাস থামালাম।
গাড়ি থেকে নেমেই বাচ্চারা খেতে চাইল। তাই যাত্রার প্রথম বিরতিতেই খাওয়ার আয়োজন। আমি প্রস্তাব দিলাম, হলের ক্যান্টিনে বসে খাওয়া যাক। যদিও তখন থেকে ২০ বছর আগে জাহাঙ্গীরনগরে ছিল আমার অবাধ বিচরণ, তবু সফরসঙ্গীরা ভাবল, সেদিনকার ক্যাম্পাসের হাল-হকিকতও বুঝি আমার কাছে সমান জানা। আমিও আত্মবিশ্বাস আর গৌরবের সঙ্গে সবাইকে নিয়ে ঢুকলাম সেই দোচালা টিনের নিচে লাল ইটের দেয়াল ঘেরা চির পরিচিত ক্যান্টিনঘরে। ঢুকেই আমার চোখ ছানাবড়া। যা শুঁকলাম এবং যা দেখলাম, তা অত্যন্ত করুণ এবং বেদনাদায়ক। দরজা দিয়ে ঢুকতেই নাকে এসে লাগল এক ঝাট্কা ভাত পচা ভোঁটকা গন্ধ। গন্ধের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, বমি সামলানো আমার পক্ষে কষ্টকর হয়ে উঠছিল। নিচে চেয়ে দেখলাম, মেঝেতে ময়লা, পানি, ভাত-তরকারি পড়ে আছে। ছুটির দিন দুপুরবেলা ক্রেতাশূন্য ক্যান্টিন। টেবিলগুলো খালি, চেয়ার চারদিকে এলোমেলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। একটি টেবিলের সমতল উপরিভাগের মাঝখানটা দেবে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। গর্তে জমে আছে একগাদা পানি; এবং সেই পানিতে সাঁতার কাটছে সাদা সাদা ভাত।
চেয়ার টেনে বসা তো দূরের কথা, দু-তিন মিনিটের মধ্যে লজ্জায় মাথা নিচু করে আঙুল দিয়ে নাক চেপে বেরিয়ে এলাম ক্যান্টিন থেকে। এসে বসলাম আল-বিরুনী হলের শহীদ মিনারের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে এক বেঞ্চে। সেখানে বসেই গরমের দুপুরে শীতল ছায়ায় খোলা বাতাসে বসে পটেটো চিপস, বিস্কুট আর পানি খেয়ে সবাইকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম 'বি' ব্লকের চারতলার দিকে। সঙ্গীদের, বিশেষ করে আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে দেখাতে চাইছিলাম ৪১৫ নম্বর রুম, যে রুমে আমি কাটিয়েছি আমার জীবনের একটি আনন্দময় শ্রেষ্ঠ সময়। হলের বাইরের করিডোর ধরে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে যাওয়ার সময় ওপরের পাকা ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখি, জায়গায় জায়গায় ছাদ থেকে চাকা চাকা প্লাস্টার খসে পড়েছে। কোথাও কোথাও লোহার রড বেরিয়ে গেছে। কোনো কোনো রডে জং ধরেছে। 'বি' ব্লকের সিঁড়ি বেয়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে চারতলায় উঠলাম। সেখানেও দেখলাম, ছাদের একই অবস্থা। জানালার কাচ ভাঙা। বারান্দার লোহার গ্রিল খুলে পড়ে গেছে। এ রকমই একটি সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বছরখানেক আগে ছাত্রলীগের এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের সদস্যকে তিন কি চারতলা থেকে মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল।
বাথরুমের পাশ দিয়ে আসার সময় নাকে যে বাতাস লাগল, তাতে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও ওদিকে পা বাড়ানোর সাহস পেলাম না। মনে মনে ভাবলাম, ২০ বছর আগে আল-বিরুনী হল কী ছিল, আর আজ তার কী দশা! রাহাতের লেখা পড়ে যা বুঝলাম, ১৯৯৭ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অবস্থা ছিল, আজ তার চেয়ে আরো খারাপ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর শরীফ এনামুল কবির আমার অনুজপ্রতিম। তিনিও এই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্র। জাহাঙ্গীরনগরেরই প্রোডাক্ট। আমি এই কলামের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দালানগুলো, বিশেষ করে প্রথম স্থাপনাগুলোর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি উপাচার্যের ব্যক্তিগত দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এই দুরবস্থা যে শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েই সীমাবদ্ধ, তা মনে হয় না। দুঃখের বিষয়, দেশের সর্বত্রই কমবেশি একই অবস্থা বিরাজমান।
আমাদের দেশের কি প্রশাসক, কি ব্যবস্থাপক, কি প্রকৌশলী_ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজের যত্নের ব্যাপারে সবাই একটা মারাত্মক ভুল করে থাকেন। তাঁরা মনে করেন, একটি স্থায়ী পাকা বিল্ডিং বা স্থাপনা একবার তৈরি হলে তা ভেঙে পড়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ার আগ পর্যন্ত এর কোনো মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ দরকার নেই। কারণ, এটা স্থায়ী বা পাকা স্থাপনা। আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা মেইনটেন্যান্সের ব্যাপারে একেবারেই গাফিল। এর কারণ আমার মাথায় আসে না। দেশের প্রশাসক, প্রকৌশলী এবং পরিকল্পনাবিদদের অনেকেই বিদেশে লেখাপড়া করেছেন, বিদেশে চাকরি-বাকরি করেছেন, বিদেশে থেকেছেন। তা না হলেও তাঁরা আজকাল অহরহ বিদেশে যাতায়াত করেন। তাঁদের তো না জানার কোনো কারণ নেই, ইউরোপ-আমেরিকায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবছরের বাজেটে ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজের মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভালো অঙ্কের বরাদ্দ থাকে। তারা দালানকোঠা, রাস্তাঘাট এবং ব্রিজ-কালভার্টের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ অল্প অল্প করে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে করে থাকে। আমাদের দেশে এই সংস্কৃতি যত তাড়াতাড়ি গড়ে উঠবে, দেশ ও জাতির জন্য ততই মঙ্গল।
লেখক : আবু এন এম ওয়াহিদ; অধ্যাপক, টেনেসি স্টেইট ইউনিভার্সিটি; এডিটর, জার্নাল অব
ডেভেলপিং এরিয়াজ
awahid2569@gmail.com
১৯৯৭ সালের গ্রীষ্মের ছুটিতে ফুলব্রাইট ফেলোশিপ নিয়ে চার মাসের জন্য ঢাকায় ছিলাম। স্ত্রী-ছেলেমেয়ে নিয়ে মোহাম্মদপুরে শ্বশুরালয়ে থাকতাম। গবেষণাকাজের পাশাপাশি নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে দুটি সামার কোর্স করাচ্ছিলাম। ইন্টেনসিভ কোর্স, সপ্তাহে পাঁচ দিনই ক্লাসে যেতে হতো। শুক্র-শনিই কেবল ছুটি পেতাম।
কঙ্বাজার বা এ রকম দূরে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার ফুরসত ছিল না। তাই ভাবছিলাম, কোনো এক সাপ্তাহিক ছুটিতে ছেলেমেয়েদেরকে প্রথম বারের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দেখাতে নিয়ে যাব। পরিকল্পনা পর্যায়ে আমার শ্যালিকাদের (যতদূর মনে পড়ে, ওই সময় আমার একমাত্র শালা তার পরিবারসহ বিদেশে কর্মরত ছিল) সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক হলো, সপরিবারে আমরা সবাই একসঙ্গে যাব। আরো সিদ্ধান্ত হলো, যাওয়ার সময় আমরা হেমায়েতপুর হয়ে সোজা সাভারে যাব এবং ফেরার পথে আশুলিয়া হয়ে উত্তরায় আমার শ্যালিকার জমির প্লট দেখে মোহাম্মদপুরে ফিরে আসব। গাড়ি এবং ড্রাইভারের ব্যবস্থা করল আমার শ্যালিকা। এর জন্য তার কাছে আজও কৃতজ্ঞ আমি। শ্বশুরবাড়ি থেকে যথেষ্ট পরিমাণ শুকনো খাবার-দাবার ও পানীয় নিয়ে সবাই মিলে একসঙ্গে রওনা দিলাম জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসের দিকে। দিনটি শুক্র, না শনিবার ছিল, মনে নেই। তবে ছুটির দিন হওয়ায় পথে যানজটের যন্ত্রণা খুব একটা পোহাতে হয়নি। এক ঘণ্টা-সোয়া ঘণ্টার মধ্যেই আমরা গন্তব্যস্থলে পেঁৗছে যাই। মূল গেট দিয়ে ঢুকে সোজা আল-বিরুনী হলের সামনে এসে মাইক্রোবাস থামালাম।
গাড়ি থেকে নেমেই বাচ্চারা খেতে চাইল। তাই যাত্রার প্রথম বিরতিতেই খাওয়ার আয়োজন। আমি প্রস্তাব দিলাম, হলের ক্যান্টিনে বসে খাওয়া যাক। যদিও তখন থেকে ২০ বছর আগে জাহাঙ্গীরনগরে ছিল আমার অবাধ বিচরণ, তবু সফরসঙ্গীরা ভাবল, সেদিনকার ক্যাম্পাসের হাল-হকিকতও বুঝি আমার কাছে সমান জানা। আমিও আত্মবিশ্বাস আর গৌরবের সঙ্গে সবাইকে নিয়ে ঢুকলাম সেই দোচালা টিনের নিচে লাল ইটের দেয়াল ঘেরা চির পরিচিত ক্যান্টিনঘরে। ঢুকেই আমার চোখ ছানাবড়া। যা শুঁকলাম এবং যা দেখলাম, তা অত্যন্ত করুণ এবং বেদনাদায়ক। দরজা দিয়ে ঢুকতেই নাকে এসে লাগল এক ঝাট্কা ভাত পচা ভোঁটকা গন্ধ। গন্ধের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, বমি সামলানো আমার পক্ষে কষ্টকর হয়ে উঠছিল। নিচে চেয়ে দেখলাম, মেঝেতে ময়লা, পানি, ভাত-তরকারি পড়ে আছে। ছুটির দিন দুপুরবেলা ক্রেতাশূন্য ক্যান্টিন। টেবিলগুলো খালি, চেয়ার চারদিকে এলোমেলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। একটি টেবিলের সমতল উপরিভাগের মাঝখানটা দেবে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে গর্ত। গর্তে জমে আছে একগাদা পানি; এবং সেই পানিতে সাঁতার কাটছে সাদা সাদা ভাত।
চেয়ার টেনে বসা তো দূরের কথা, দু-তিন মিনিটের মধ্যে লজ্জায় মাথা নিচু করে আঙুল দিয়ে নাক চেপে বেরিয়ে এলাম ক্যান্টিন থেকে। এসে বসলাম আল-বিরুনী হলের শহীদ মিনারের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে এক বেঞ্চে। সেখানে বসেই গরমের দুপুরে শীতল ছায়ায় খোলা বাতাসে বসে পটেটো চিপস, বিস্কুট আর পানি খেয়ে সবাইকে নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম 'বি' ব্লকের চারতলার দিকে। সঙ্গীদের, বিশেষ করে আমাদের ছেলেমেয়েদেরকে দেখাতে চাইছিলাম ৪১৫ নম্বর রুম, যে রুমে আমি কাটিয়েছি আমার জীবনের একটি আনন্দময় শ্রেষ্ঠ সময়। হলের বাইরের করিডোর ধরে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে যাওয়ার সময় ওপরের পাকা ছাদের দিকে তাকিয়ে দেখি, জায়গায় জায়গায় ছাদ থেকে চাকা চাকা প্লাস্টার খসে পড়েছে। কোথাও কোথাও লোহার রড বেরিয়ে গেছে। কোনো কোনো রডে জং ধরেছে। 'বি' ব্লকের সিঁড়ি বেয়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে চারতলায় উঠলাম। সেখানেও দেখলাম, ছাদের একই অবস্থা। জানালার কাচ ভাঙা। বারান্দার লোহার গ্রিল খুলে পড়ে গেছে। এ রকমই একটি সুযোগের সদ্ব্যবহার করে বছরখানেক আগে ছাত্রলীগের এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের সদস্যকে তিন কি চারতলা থেকে মাটিতে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল।
বাথরুমের পাশ দিয়ে আসার সময় নাকে যে বাতাস লাগল, তাতে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও ওদিকে পা বাড়ানোর সাহস পেলাম না। মনে মনে ভাবলাম, ২০ বছর আগে আল-বিরুনী হল কী ছিল, আর আজ তার কী দশা! রাহাতের লেখা পড়ে যা বুঝলাম, ১৯৯৭ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে অবস্থা ছিল, আজ তার চেয়ে আরো খারাপ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর শরীফ এনামুল কবির আমার অনুজপ্রতিম। তিনিও এই প্রতিষ্ঠানেরই ছাত্র। জাহাঙ্গীরনগরেরই প্রোডাক্ট। আমি এই কলামের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দালানগুলো, বিশেষ করে প্রথম স্থাপনাগুলোর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রতি উপাচার্যের ব্যক্তিগত দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এই দুরবস্থা যে শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েই সীমাবদ্ধ, তা মনে হয় না। দুঃখের বিষয়, দেশের সর্বত্রই কমবেশি একই অবস্থা বিরাজমান।
আমাদের দেশের কি প্রশাসক, কি ব্যবস্থাপক, কি প্রকৌশলী_ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজের যত্নের ব্যাপারে সবাই একটা মারাত্মক ভুল করে থাকেন। তাঁরা মনে করেন, একটি স্থায়ী পাকা বিল্ডিং বা স্থাপনা একবার তৈরি হলে তা ভেঙে পড়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ার আগ পর্যন্ত এর কোনো মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ দরকার নেই। কারণ, এটা স্থায়ী বা পাকা স্থাপনা। আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা মেইনটেন্যান্সের ব্যাপারে একেবারেই গাফিল। এর কারণ আমার মাথায় আসে না। দেশের প্রশাসক, প্রকৌশলী এবং পরিকল্পনাবিদদের অনেকেই বিদেশে লেখাপড়া করেছেন, বিদেশে চাকরি-বাকরি করেছেন, বিদেশে থেকেছেন। তা না হলেও তাঁরা আজকাল অহরহ বিদেশে যাতায়াত করেন। তাঁদের তো না জানার কোনো কারণ নেই, ইউরোপ-আমেরিকায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবছরের বাজেটে ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজের মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ভালো অঙ্কের বরাদ্দ থাকে। তারা দালানকোঠা, রাস্তাঘাট এবং ব্রিজ-কালভার্টের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ অল্প অল্প করে প্রতিবছর নিয়মিতভাবে করে থাকে। আমাদের দেশে এই সংস্কৃতি যত তাড়াতাড়ি গড়ে উঠবে, দেশ ও জাতির জন্য ততই মঙ্গল।
লেখক : আবু এন এম ওয়াহিদ; অধ্যাপক, টেনেসি স্টেইট ইউনিভার্সিটি; এডিটর, জার্নাল অব
ডেভেলপিং এরিয়াজ
awahid2569@gmail.com
No comments