তিনবিঘা করিডর-সাময়িক নয়, স্থায়ী সমাধান চাই

অবশেষে দহগ্রাম, আঙ্গরপোতার বাংলাদেশিদের দীর্ঘদিনের কষ্ট লাঘব হতে যাচ্ছে। তিনবিঘা করিডরের ওপর দিয়ে তারা ২৪ ঘণ্টাই আসা-যাওয়া করতে পারবে। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের আসন্ন সফরের সময় এ ব্যাপারে একটি চুক্তি সই হতে পারে বলে সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতের একটি পত্রিকা খবরটি দিয়েছে।


তার আলোকে সোমবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, এই যাতায়াতের সময় নিরাপত্তার প্রশ্নটি কিভাবে সমাধান করা যায়_সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা চলছে।
দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা বাংলাদেশের ভূখণ্ড হলেও তিনবিঘা করিডরের কারণে তা বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিভিন্ন সময় চলাচলের ক্ষণিক অনুমতি দেওয়া হলেও সেখানকার অধিবাসীরা বাংলাদেশ কিংবা ভারতীয় ভূখণ্ডে_কোথাও যেতে পারত না। এমনকি জরুরি চিকিৎসাসেবার প্রয়োজনেও তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারত না। ফলে অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে তারা অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্যে একপ্রকার বন্দি জীবন যাপনই করে আসছিল। বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে তাদের সেই দুঃখ-কষ্টের কথা তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু তাতে সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি হওয়ায় তারা এবার কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু সেটা যে একটা স্থায়ী কোনো সমাধান হবে_তেমনটা ভাবার খুব একটা সুযোগ নেই। ভবিষ্যতে কোনো কারণে এই সম্পর্কে যদি ফাটল ধরে তাহলে আবার এ সুযোগ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যেমনটা হয়েছিল মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির ক্ষেত্রে। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রায় দেড় দশক এ দেশে সামরিক শাসন চলে। সে সময় দুই দেশের সম্পর্কের অনেকটাই অবনতি হয় এবং গঙ্গার পানিবণ্টনসহ মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির অনেক সুযোগ-সুবিধাই স্থগিত হয়ে যায়। সে দিকটি বিবেচনা করে তিনবিঘা করিডর স্থায়ীভাবে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য দিলি্লর কাছে ঢাকা প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু অসুবিধা হচ্ছে বাংলাদেশের ভেতরে থাকা ভারতীয় ছিটমহলের মেখলিগঞ্জ ও কুচলিবাড়ি এতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। বিকল্প হিসেবে তাই দিলি্ল ফ্লাইওভারের মাধ্যমে ছিটমহল দুটিকে সংযুক্ত করার চিন্তাভাবনা করেছিল। কিন্তু তাতে বাদ সাধে রাজ্য সরকার। এমনকি তিনবিঘা করিডর ২৪ ঘণ্টা ব্যবহার করতে দেওয়ার ব্যাপারেও স্থানীয়ভাবে অনেক আপত্তি রয়েছে। দুই দেশের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে এখন দুই পক্ষের জন্যই সুবিধাজনক হয়, এমনভাবে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা চলছে।
ভারতের এ সদিচ্ছাকে আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাই। পাশাপাশি আমরা সাময়িক নয়, মানবিক এ সমস্যাটির একটি স্থায়ী সমাধান চাই। সেই স্থায়ী সমাধানটি কিভাবে করা যায়, আমরা আশা করি দুই দেশের বিশেষজ্ঞরা সে পথটিই খুঁজে বের করবেন।

No comments

Powered by Blogger.