সামাজিক যোগাযোগ-সরকারের এত ভয় কেন? by কৌশিক আহমেদ
মাত্র তিন মাসের ভেতরে দুজন ব্লগার গ্রেপ্তার ও হয়রানির শিকার হলেন। দুবারই ব্লগারদের সঙ্গে শিক্ষক, কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকদের দৃঢ় প্রতিবাদ এবং রাজপথে বিক্ষোভ প্রদর্শনের ফলে পুলিশ তাঁদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ফলে ব্লগারদের শক্তি ও ক্ষমতার সঙ্গে সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের (ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, ফ্লিকার, জি প্লাস, ফোরাম ইত্যাদি) যোগসূত্র সম্পন্ন হয়ে এক নতুন ধরনের মিডিয়া-শক্তির উন্মেষ হতে দেখেছি আমরা।
এ বছরের ৩ জুলাই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ব্লগার দিনমজুর। বিভিন্ন ব্লগজুড়ে সে সময় দিনমজুর গ্রেপ্তার-পরবর্তী ব্লগারদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ-আন্দোলনের চিত্র এখনো দেখা যাবে। তিন মাস পর গত ১ অক্টোবর আটক হলেন আলোচিত ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন। তাঁকে গ্রেপ্তার ও হয়রানির প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কী পরিমাণ প্রতিবাদ হয়েছে, সেচিত্র এখনো বিভিন্ন ব্লগে টাটকা দেখা যাবে। এই সব ক্ষেত্রেই দেখা গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সক্ষমতা।
বাংলাদেশে ২০১১ সালের জুলাই কিংবা সেপ্টেম্বরে ব্লগার গ্রেপ্তারের এসব ঘটনার মাত্র কয়েক মাস আগে বিশ্বের বেশ কিছু দেশে (যেমন তিউনিসিয়া, মিসর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিপ্লব হয়ে গেল। মধ্যপ্রাচ্যের আরও বেশ কটি দেশে এখনো বিপ্লব-বিদ্রোহ চলছে। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ব্লগ ব্যবহার করে দ্রুততার সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের বীজ বপন করায় এই মাধ্যম ও ব্লগ আবির্ভূত হলো স্বৈরাচারী সরকারগুলোর মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে। বৈশ্বিক এই পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশের ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেল নতুন রাজনৈতিক মাত্রা। এত দিনের (একটা প্রজন্ম) অসচেতন ও রাজনীতিবিমুখ তরুণেরা সোচ্চার হয়ে উঠেছে ফেসবুক, ব্লগ থেকে শুরু করে আরও নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে। প্রচলিত গণমাধ্যম যেখানে আটকে গেছে সেখানে চিন্তার স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের ক্ষেত্রে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হয়ে উঠেছে দুরন্ত গতির এক মাধ্যম। সরকার বা প্রাতিষ্ঠানিক নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যে কঠোর ভূমিকা পালন করতে পারে, তা এই মাধ্যমটিকে একটি বিকল্প নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। নানা চাপে সংবাদপত্র ও টেলিভিশনগুলো যেখানে অনেক কিছু চেপে যায়, সেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আপসহীন।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ব্লগার বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কর্মীদের নিগ্রহ-গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনা অল্প সময়ের ব্যবধানেই ঘটতে শুরু করেছে। এই গ্রেপ্তারে প্রমাণিত হয়, ভবিষ্যতে ব্লগারদের ওপর আরও বেশি মাত্রায় গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনা ঘটবে। এতে আরও প্রমাণিত হয়, সরকার অনলাইনে সক্রিয় এই গোষ্ঠী নিয়ে আতঙ্কিত, বিপদগ্রস্ত এবং তারা জানে না কীভাবে এই ক্রমবর্ধমান শক্তিকে তারা মোকাবিলা করবে। ফলে প্রচলিত দমন-নিপীড়নের মতোই ব্লগারদের গ্রেপ্তার করে আন্দোলন স্তিমিত ও চিন্তার স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করার পদ্ধতি প্রয়োগ করছে।
কিন্তু অলাইনে সক্রিয় এই গোষ্ঠীর নিজস্ব গতিশীলতা ও বহুমাত্রিকতার কারণে প্রচলিত দমন-পীড়নমূলক নীতি মূলত প্রচারণার কাজই বেশি করে। এতে অনলাইন কর্মকাণ্ডের খবর আরও বেশিমাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে সাধারণের মধ্যে, যারা এখনো অনলাইন জগতে প্রবেশ করেনি। দ্বিতীয় ব্লগার গ্রেপ্তারের ঘটনা আমরা দেখলাম প্রচলিত গণমাধ্যমে প্রচার হতে, যা ক্রমশ আরও বৃদ্ধি পাবে প্রতিযোগিতামূলক গণমাধ্যমের বাজারে মূল্যবান নিউজ হিসেবেই। ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে গ্রেপ্তারের পর তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে এ ব্যাপারে বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করেছি। যদিও দুঃখজনকভাবে আসিফ মহিউদ্দীনের ওপর গোয়েন্দা সংস্থা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলায় বিধিনিষেধ আরোপ করায় বেশির ভাগ গণমাধ্যমই আসল খবর এখনো জানাতে পারেনি, তাঁর সাক্ষাৎ কার নিতে পারেনি। এই মুচলেকা নিয়ে ভয় প্রদানের খবরেও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরব। ফলে গ্রেপ্তার ও হয়রানির প্রচলিত পদ্ধতি অবলম্বন করে অনলাইনে সক্রিয় গোষ্ঠীকে প্রকারান্তরে আরও শক্তিশালী করে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভয়ে ভীত অনভিজ্ঞ সরকার।
বর্তমান পরিস্থিতিতে অনলাইনে সক্রিয় গোষ্ঠীর মত প্রকাশের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা ক্রমশ আরোপিত হচ্ছে, সেসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা জরুরি। এর মাধ্যমে সরকারকে অনলাইনে সক্রিয় যে গোষ্ঠী বা কমিউনিটি সে ব্যাপারে অভিজ্ঞতা অর্জনের একটা সুযোগও করে দেওয়া সম্ভব। কীভাবে সরকার এই ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা নাগরিক গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়ন আর নির্যাতনের পদ্ধতি অবলম্বন না করে এই শক্তিকে উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে পারবে, সেটা হয়তো এই গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা, কোনো কর্মশালার মাধ্যমে নির্ধারিত হতে পারবে।
অনলাইন কমিউনিটি প্রস্তাব করতে পারে, দিকনির্দেশনা দিতে পারে সরকারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সম্ভাব্য পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে। তথ্যপ্রবাহের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের এটাই একমাত্র পথ। না হলে সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম-ভীতি যত বৃদ্ধি পাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিপ্লবের পথও তত সুগম হবে।
কৌশিক আহমেদ: ব্লগার।
বাংলাদেশে ২০১১ সালের জুলাই কিংবা সেপ্টেম্বরে ব্লগার গ্রেপ্তারের এসব ঘটনার মাত্র কয়েক মাস আগে বিশ্বের বেশ কিছু দেশে (যেমন তিউনিসিয়া, মিসর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিপ্লব হয়ে গেল। মধ্যপ্রাচ্যের আরও বেশ কটি দেশে এখনো বিপ্লব-বিদ্রোহ চলছে। ফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং ব্লগ ব্যবহার করে দ্রুততার সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের বীজ বপন করায় এই মাধ্যম ও ব্লগ আবির্ভূত হলো স্বৈরাচারী সরকারগুলোর মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে। বৈশ্বিক এই পরিস্থিতির মধ্যেই বাংলাদেশের ব্লগ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পেল নতুন রাজনৈতিক মাত্রা। এত দিনের (একটা প্রজন্ম) অসচেতন ও রাজনীতিবিমুখ তরুণেরা সোচ্চার হয়ে উঠেছে ফেসবুক, ব্লগ থেকে শুরু করে আরও নানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মে। প্রচলিত গণমাধ্যম যেখানে আটকে গেছে সেখানে চিন্তার স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের ক্ষেত্রে এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হয়ে উঠেছে দুরন্ত গতির এক মাধ্যম। সরকার বা প্রাতিষ্ঠানিক নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম যে কঠোর ভূমিকা পালন করতে পারে, তা এই মাধ্যমটিকে একটি বিকল্প নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। নানা চাপে সংবাদপত্র ও টেলিভিশনগুলো যেখানে অনেক কিছু চেপে যায়, সেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আপসহীন।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ব্লগার বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কর্মীদের নিগ্রহ-গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনা অল্প সময়ের ব্যবধানেই ঘটতে শুরু করেছে। এই গ্রেপ্তারে প্রমাণিত হয়, ভবিষ্যতে ব্লগারদের ওপর আরও বেশি মাত্রায় গ্রেপ্তার ও হয়রানির ঘটনা ঘটবে। এতে আরও প্রমাণিত হয়, সরকার অনলাইনে সক্রিয় এই গোষ্ঠী নিয়ে আতঙ্কিত, বিপদগ্রস্ত এবং তারা জানে না কীভাবে এই ক্রমবর্ধমান শক্তিকে তারা মোকাবিলা করবে। ফলে প্রচলিত দমন-নিপীড়নের মতোই ব্লগারদের গ্রেপ্তার করে আন্দোলন স্তিমিত ও চিন্তার স্বাধীনতার পথ রুদ্ধ করার পদ্ধতি প্রয়োগ করছে।
কিন্তু অলাইনে সক্রিয় এই গোষ্ঠীর নিজস্ব গতিশীলতা ও বহুমাত্রিকতার কারণে প্রচলিত দমন-পীড়নমূলক নীতি মূলত প্রচারণার কাজই বেশি করে। এতে অনলাইন কর্মকাণ্ডের খবর আরও বেশিমাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে সাধারণের মধ্যে, যারা এখনো অনলাইন জগতে প্রবেশ করেনি। দ্বিতীয় ব্লগার গ্রেপ্তারের ঘটনা আমরা দেখলাম প্রচলিত গণমাধ্যমে প্রচার হতে, যা ক্রমশ আরও বৃদ্ধি পাবে প্রতিযোগিতামূলক গণমাধ্যমের বাজারে মূল্যবান নিউজ হিসেবেই। ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীনকে গ্রেপ্তারের পর তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করতে গিয়ে এ ব্যাপারে বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করেছি। যদিও দুঃখজনকভাবে আসিফ মহিউদ্দীনের ওপর গোয়েন্দা সংস্থা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলায় বিধিনিষেধ আরোপ করায় বেশির ভাগ গণমাধ্যমই আসল খবর এখনো জানাতে পারেনি, তাঁর সাক্ষাৎ কার নিতে পারেনি। এই মুচলেকা নিয়ে ভয় প্রদানের খবরেও এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সরব। ফলে গ্রেপ্তার ও হয়রানির প্রচলিত পদ্ধতি অবলম্বন করে অনলাইনে সক্রিয় গোষ্ঠীকে প্রকারান্তরে আরও শক্তিশালী করে দিচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভয়ে ভীত অনভিজ্ঞ সরকার।
বর্তমান পরিস্থিতিতে অনলাইনে সক্রিয় গোষ্ঠীর মত প্রকাশের ক্ষেত্রে যেসব প্রতিবন্ধকতা ক্রমশ আরোপিত হচ্ছে, সেসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা জরুরি। এর মাধ্যমে সরকারকে অনলাইনে সক্রিয় যে গোষ্ঠী বা কমিউনিটি সে ব্যাপারে অভিজ্ঞতা অর্জনের একটা সুযোগও করে দেওয়া সম্ভব। কীভাবে সরকার এই ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা নাগরিক গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে দমন-নিপীড়ন আর নির্যাতনের পদ্ধতি অবলম্বন না করে এই শক্তিকে উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে পারবে, সেটা হয়তো এই গোষ্ঠীর অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা, কোনো কর্মশালার মাধ্যমে নির্ধারিত হতে পারবে।
অনলাইন কমিউনিটি প্রস্তাব করতে পারে, দিকনির্দেশনা দিতে পারে সরকারের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার সম্ভাব্য পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে। তথ্যপ্রবাহের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির সরকারের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের এটাই একমাত্র পথ। না হলে সরকারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম-ভীতি যত বৃদ্ধি পাবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিপ্লবের পথও তত সুগম হবে।
কৌশিক আহমেদ: ব্লগার।
No comments