সরকার-দুর্নীতিকে আশকারা দেবেন না by মইনুল ইসলাম
কয়েকজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ জোরদার হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি অভিযোগকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘শুধু মৌখিক অভিযোগ করলে হবে না। তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ জানালে এবং তার প্রমাণ হাজির করতে হবে।’
আপাতদৃষ্টিতে দলীয় সমর্থকদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর এহেন বক্তব্য শ্রুতিমধুর বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু গভীরভাবে খতিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে, দুর্নীতিবাজদের প্রকারান্তরে তিনি আশকারাই দিলেন অভিযোগকারীদের প্রতি তথ্য-প্রমাণ উপস্থাপনের ‘প্রায় অসম্ভব’ একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে। দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-সাংসদ-আত্মীয়স্বজন-নেতা-পাতিনেতারা এ ধরনের বক্তব্যে বিলক্ষণ প্রীত হয়ে বগল বাজাচ্ছেন হয়তো বা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রতি সুবিবেচনার আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, মন্ত্রিসভার সবার বিরুদ্ধে তো দুর্নীতির অভিযোগ ওঠেনি, চিহ্নিত কয়েকজনের বিরুদ্ধে উঠেছে। সুতরাং, তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে দুর্নীতি প্রমাণ করার দায়িত্ব তো তাঁকে এবং সরকারকেই নিতে হবে। তিনি হাঁড়ির খবর রাখেন না, তা তো নয়।
ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে জাতীয় সংসদের ফ্লোরে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার বেহাল অবস্থার অভিযোগ প্রথম উত্থাপন করেছিলেন সাংসদ তোফায়েল আহমেদ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের সংস্কারবাদী ‘আরএটিএস’-এর অন্যতম নেতা হিসেবে তিনি যে ‘কক্ষচ্যুত নক্ষত্র’ হয়ে পড়েছেন, তা সারা দেশের মানুষই জানে। কিন্তু তাঁর অভিযোগটা ভিত্তিহীন ছিল না। ওই অভিযোগের জবাবে যখন টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে তিনি সংসদ নেত্রীর কাছ থেকে অপমানজনক জবাব পেলেন, তখন আওয়ামী লীগের ‘নতুন জাতে ওঠা জুনিয়র নেতা’ ওই অভিযোগকে এই বলে উড়িয়ে দিলেন, ‘ঈর্ষার কারণেই ওই অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।’
এরপর আগস্ট ২০১১ পর্যন্ত ছয় মাস পার করার পরও বিপর্যস্ত সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার মেরামত সম্পর্কে কিছুই করলেন না যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। রমজান মাসের সংক্ষিপ্ত অধিবেশনে আরও জোরেশোরে উঠল অভিযোগ। এবারও প্রধানমন্ত্রী অভিযুক্তকে বাঁচাতে বললেন, ‘শত্রুর হাতে অস্ত্র তুলে দেবেন না। তাহলে যা অর্জিত হয়েছে, সেগুলোও ভেস্তে যাবে।’ এভাবে দুর্নীতিবাজদের আড়াল করলে নিজের এবং দলের অবধারিত ভরাডুবি ঠেকানো যাবে না।
আমাদের যাদের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে এবং ছাত্রলীগের সক্রিয় মাঠকর্মী হিসেবে স্বাধীনতাসংগ্রাম এবং স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম বাংলাদেশ সরকারের শাসনামলকে একেবারে কাছে থেকে দেখার, তাদের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭২ সালের একটা সর্বনাশা আশকারা আজও দুঃস্বপ্নের মতো স্মৃতিতে জাগরূক রয়েছে। ওই সময়ের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মানুষের সাহায্যার্থে যে আন্তর্জাতিক রিলিফের বান ডেকেছিল, তার একাংশ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিল আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-পাতিনেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে, জাতীয়করণের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানাগুলোতেও শুরু হয়েছিল লুটপাট ও দুর্নীতি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এক বক্তৃতায় বলে বসলেন, ‘আমার দলের লোকদের কেউ কিছু বলবেন না, ওরা কখনো কিছু পায়নি।’ ওই সর্বনাশা আশকারার ভয়াবহ পরিণাম বঙ্গবন্ধুকে তাঁর শাসনের বাকি সময়জুড়েই বহন করতে হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে তাঁর দুঃখ-ভারাক্রান্ত উক্তিটা প্রধানমন্ত্রী কি ভুলে গেছেন, ‘সারা দুনিয়া থেকে আমার দুঃখী মানুষের জন্য আমি ভিক্ষা করে আনি আর তা লোপাট করে দেয় চাটার দল।’
১৯৯১ সালের পর থেকে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনেই শাসক দল জনগণ কর্তৃক বিপুলভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। প্রতিবারই প্রত্যাখ্যানের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে শাসক দলের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সৃষ্ট বিপুল গণরোষ। ১৯৯১-৯৬ মেয়াদের বিএনপি সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে বহু গুণে ছাড়িয়ে গিয়েছিল ২০০১-০৬ মেয়াদের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অভূতপূর্ব দুর্নীতি ও দুঃশাসনের রেকর্ড। সঙ্গে যোগ হয়েছিল জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন পকেট সংগঠন হিসেবে জন্মগ্রহণকারী বিভিন্ন নাম ও লেবাসধারী জঙ্গি সংগঠনগুলোর তালেবানি তাণ্ডব, বোমাবাজি ও হত্যাযজ্ঞ। সর্বোপরি যুক্ত হয়েছিল ‘যুবরাজ’ এর হাওয়া ভবনের প্যারালাল সরকারের দুর্নীতির মচ্ছব। তখন স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিবাজ এরশাদকে পর্যন্ত বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘তারেক জিয়ার বেধড়ক লুণ্ঠনের কাছে তাঁর দুর্নীতির রেকর্ড নাকি নস্যি প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল।’
২০০৮ সালের নির্বাচনে সেই বিএনপি-জামায়াত জোটকে মাত্র ৩২টি আসন ধরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ তাদের পর্বত-প্রমাণ দুর্নীতি-লুটপাট-জঙ্গিবাদ-দুঃশাসনের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছেন। কিন্তু ২০১১ সালের অক্টোবরে তাদের ওই লুটপাটের পর পাঁচ বছর হয়ে গেছে। মানুষের স্মৃতি থেকে তা অনেকখানি হারিয়ে গেছে। আর ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামধারী ছদ্মবেশী সামরিক সরকারের স্বাদও পেয়েছে জনগণ। ওই সরকারের সুপরিকল্পিত এজেন্ডা ছিল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুর্নীতির রেকর্ডগুলোকে জোরেশোরে জনগণের সামনে উন্মোচিত করে এবং দুই দলের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতির মামলায় দলে দলে জেলে পুরে দুই নেত্রীকে এ দেশের রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ এবং তৃতীয় একটি ‘কিংস পার্টির’ জন্মের জন্য রাজনৈতিক ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।
উইকিলিকসের সাম্প্রতিক ফাঁস করা গোপন তারবার্তা থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে ডিজিএফআইয়ের ওই সময়ের আসল টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা। তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরতে না দেওয়ার জন্য জেনারেলদের প্রাণপণ প্রয়াস ফলপ্রসূ না হওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আর ওই পদক্ষেপকে ‘ব্যালেন্স’ করার জন্যই ‘পাতানো খেলা’ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যা তিনি আগেই অবহিত হয়েছিলেন। আরও তাৎপর্যপূর্ণ হলো, জামায়াতে ইসলামী ২০০৭-০৮ সালের ডিজিএফআই ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বেশ কয়েকজন মহাশক্তিধর সামরিক কর্মকর্তার (অবসরপ্রাপ্তরাসহ) প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতার ছত্রচ্ছায়া লাভ করেছিল। মেজর জেনারেল আমিন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুল বারী এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মতিনের এহেন জামায়াতপ্রীতি এখন পুরোপুরি উন্মোচিত হয়েছে। শেখ হাসিনা তাঁর গত ৩৩ মাসের শাসনে এ দেশের সামরিক অ্যাস্টাবলিশমেন্টের বৃহদাংশের মজ্জাগত বিএনপি-জামায়াতপ্রীতি দূরীভূত করতে পেয়েছেন, তা বিশ্বাস করার কারণ নেই। অতএব, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এ দেশের রাজনীতির চারিত্র্য মনে রেখেই তাঁকে এবং আওয়ামী লীগকে এগোতে হবে। সামরিক কিংবা সিভিল আমলাতন্ত্রকে নির্বাচনে জেতার জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে পাশে পাবে বিএনপি-জামায়াত। এই শক্তি কেন্দ্রগুলোকে পরাস্ত করতে হবে আওয়ামী লীগ এবং তাদের প্রগতিশীল মিত্রদের ভরসা করতে হবে জনগণের ওপরই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি বুঝতে পারছেন না, জনগণ ক্রমেই তাঁর এবং তাঁর দলের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন? বেসামাল মূল্যস্ফীতি সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন জীবনকে আক্ষরিক অর্থেই অসহনীয় করে তুলেছে। সারা দেশের ভাঙাচোরা খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট, সড়ক-জনপথ—ওসব পথ চলাচলকারী জনমানুষের মরণ-ফাঁদে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। শুধু প্রলম্বিত বর্ষার অতিবৃষ্টির দোহাই দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। আড়াই বছরের অক্ষম্য অবহেলার কথা যেমন মানুষ ভুলে যায়নি তেমনি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি সংস্থা ও বিভাগের দুর্নীতির কাহিনিগুলোও তারা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে। এগুলো তাদের দৈনন্দিন জীবনের যন্ত্রণা ও অসনীয় অভিজ্ঞতারই অংশ। অতএব, যোগাযোগমন্ত্রী যতই বড় গলায় নিজের সার্টিফিকেট দেন না কেন, ‘I am a proven honest man’—ওই ধরনের বাগাড়ম্বর তাঁকে জনগণের কাছে আরও হাস্যাস্পদই করে তুলেছে (বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ‘We are lookig for Shatruj (শত্রুজ)’-এর মতো আবুল হোসেনের ওপরের বক্তব্যটা ভবিষ্যতে তাঁকে বহুদিন তাড়া করে ফিরবে!)।
বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ-প্ল্যান্টের ঠিকাদারি বিভিন্ন চীনা কোম্পানিকে পাইয়ে দেওয়ার জন্য যোগাযোগমন্ত্রীর দৌড়-ঝাঁপ ও লবিংয়ের খবর বহুবার পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে—এগুলো কি প্রধানমন্ত্রীর অজানা? অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনমন্ত্রী কর্ণফুলী ড্রেসিং প্রকল্প নিয়ে কত ধরনের নয়ছয় করেছেন, তা কি প্রধানমন্ত্রী জানেন না? মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি পদে বহাল থাকা কি ‘Clash of Interests’-এর প্রমাণ নয়? যে ২৪ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের জন্য নৌমন্ত্রী সুপারিশ করেছেন, তার বিনিময়ে লাইসেন্সপ্রার্থীরা কি দিয়েছেন, তা খুঁজে বের করা কি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়িত্বের আওতায় পড়ে না? ২০০৭-০৮-এর অভিজ্ঞতা বলছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে এই ফাইলগুলো ফের নড়াচড়া হবে। ২০০৭-০৮-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলাগুলোর আইনগত ত্রুটি ছিল বলে আদালতে ওগুলোর বেশির ভাগ টেকেনি। কিন্তু মামলাগুলো কি ভুয়া ছিল?
আইনের ফাঁকফোকরে অভিযুক্ত দুর্নীতিবাজেরা ওই ধরনের মামলা থেকে রেহাই পেয়ে এখন যখন সাধুসন্তের মতো সততার গলাবাজি শুরু করেছেন, তখন নব্য ফেরেশতাদের ভাবমূর্তি জনমনে উজ্জ্বল হয়েছে মনে করলে শেখ হাসিনা মারাত্মক ভুল করবেন। আইন প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কমিটির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মী, মন্ত্রী-সান্ত্রির দুর্নীতির মামলাগুলো প্রত্যাহারের মহাযজ্ঞে জনগণের বাহবা পাওয়ার কারণ নেই। এভাবে একতরফা নিজেদের মামলাগুলো প্রত্যাহার করায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, আরাফাত রহমান, গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, মোসাদ্দেক আলী ফালু, হারিছ চৌধুরীসহ বিএনপির দুর্নীতিবাজ নেতা-কর্মীদের দুর্নীতির মামলাগুলো কিছুটা হলেও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। আরেকটি কারণে ক্ষমতাসীনদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাহলো দুর্নীতি দমন কমিশনকে সুপরিকল্পিতভাবে ‘নখদন্তহীন ব্যাঘ্রে’ পরিণত করা। লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান মশহুদের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রচণ্ড গতিশীলতা ও কর্মতৎপরতার তুলনায় ড. গোলাম রহমানের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের ঝিমিয়ে পড়া বা অকর্মণ্যতা কি জনগণ খেয়াল করছে না? কমিশনকে এভাবে অকার্যকর করায় সরকারের কি কোনো ভূমিকা ছিল না? একজন সৎ আমলা হিসেবে গোলাম রহমানের সুনাম ছিল। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বাধীন কমিশনের এভাবে পথ হারানোর রহস্য কী? আমার সমালোচনামূলক এ নিবন্ধ হয়তো প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ হবে না। কিন্তু হালুয়া-রুটি এবং চেয়ারের লোভে তাঁর কৃপাপ্রার্থী হওয়ার জন্য যাঁরা চাটুকারিতায় গলদগর্ম হচ্ছেন, তাঁদের ব্যাপারে এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আমরা আওয়ামী লীগের সমালোচনা করি ভুল-ত্রুটিগুলো সংশোধনের প্রত্যাশায়। কারণ, আমরা আবারও বিএনপি-জামায়াত-জঙ্গিবাদীদের খপ্পরে পড়তে চাই না। আবারও হাওয়া ভবনের যুবরাজের প্রজা হতে চাই না। বাংলাদেশকে আবারও পাকিস্তান হতে দিতে চাই না।
সরকারের অনেক সুকৃতি ও সাফল্য রয়েছে। কৃষি, শিক্ষা, খাদ্যশিল্প, গণপূর্ত, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচার—এসব ক্ষেত্রে সরকারের নিষ্ঠাবান প্রয়াসকে সমর্থন করি। কিন্তু সব সাফল্যই চাপা পড়ে যাচ্ছে দুর্নীতির কারণে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আল্লাহর ওয়াস্তে দুর্নীতিকে আশকারা দেবেন না।
ড. মইনুল ইসলাম: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
ফেব্রুয়ারি ২০১১ সালে জাতীয় সংসদের ফ্লোরে সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার বেহাল অবস্থার অভিযোগ প্রথম উত্থাপন করেছিলেন সাংসদ তোফায়েল আহমেদ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের সংস্কারবাদী ‘আরএটিএস’-এর অন্যতম নেতা হিসেবে তিনি যে ‘কক্ষচ্যুত নক্ষত্র’ হয়ে পড়েছেন, তা সারা দেশের মানুষই জানে। কিন্তু তাঁর অভিযোগটা ভিত্তিহীন ছিল না। ওই অভিযোগের জবাবে যখন টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে তিনি সংসদ নেত্রীর কাছ থেকে অপমানজনক জবাব পেলেন, তখন আওয়ামী লীগের ‘নতুন জাতে ওঠা জুনিয়র নেতা’ ওই অভিযোগকে এই বলে উড়িয়ে দিলেন, ‘ঈর্ষার কারণেই ওই অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই।’
এরপর আগস্ট ২০১১ পর্যন্ত ছয় মাস পার করার পরও বিপর্যস্ত সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার মেরামত সম্পর্কে কিছুই করলেন না যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। রমজান মাসের সংক্ষিপ্ত অধিবেশনে আরও জোরেশোরে উঠল অভিযোগ। এবারও প্রধানমন্ত্রী অভিযুক্তকে বাঁচাতে বললেন, ‘শত্রুর হাতে অস্ত্র তুলে দেবেন না। তাহলে যা অর্জিত হয়েছে, সেগুলোও ভেস্তে যাবে।’ এভাবে দুর্নীতিবাজদের আড়াল করলে নিজের এবং দলের অবধারিত ভরাডুবি ঠেকানো যাবে না।
আমাদের যাদের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে এবং ছাত্রলীগের সক্রিয় মাঠকর্মী হিসেবে স্বাধীনতাসংগ্রাম এবং স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম বাংলাদেশ সরকারের শাসনামলকে একেবারে কাছে থেকে দেখার, তাদের কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭২ সালের একটা সর্বনাশা আশকারা আজও দুঃস্বপ্নের মতো স্মৃতিতে জাগরূক রয়েছে। ওই সময়ের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মানুষের সাহায্যার্থে যে আন্তর্জাতিক রিলিফের বান ডেকেছিল, তার একাংশ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছিল আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-পাতিনেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে, জাতীয়করণের মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত কলকারখানাগুলোতেও শুরু হয়েছিল লুটপাট ও দুর্নীতি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু এক বক্তৃতায় বলে বসলেন, ‘আমার দলের লোকদের কেউ কিছু বলবেন না, ওরা কখনো কিছু পায়নি।’ ওই সর্বনাশা আশকারার ভয়াবহ পরিণাম বঙ্গবন্ধুকে তাঁর শাসনের বাকি সময়জুড়েই বহন করতে হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে তাঁর দুঃখ-ভারাক্রান্ত উক্তিটা প্রধানমন্ত্রী কি ভুলে গেছেন, ‘সারা দুনিয়া থেকে আমার দুঃখী মানুষের জন্য আমি ভিক্ষা করে আনি আর তা লোপাট করে দেয় চাটার দল।’
১৯৯১ সালের পর থেকে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচনেই শাসক দল জনগণ কর্তৃক বিপুলভাবে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। প্রতিবারই প্রত্যাখ্যানের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে শাসক দলের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সৃষ্ট বিপুল গণরোষ। ১৯৯১-৯৬ মেয়াদের বিএনপি সরকারের দুর্নীতি ও দুঃশাসনকে বহু গুণে ছাড়িয়ে গিয়েছিল ২০০১-০৬ মেয়াদের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের অভূতপূর্ব দুর্নীতি ও দুঃশাসনের রেকর্ড। সঙ্গে যোগ হয়েছিল জামায়াত-শিবিরের বিভিন্ন পকেট সংগঠন হিসেবে জন্মগ্রহণকারী বিভিন্ন নাম ও লেবাসধারী জঙ্গি সংগঠনগুলোর তালেবানি তাণ্ডব, বোমাবাজি ও হত্যাযজ্ঞ। সর্বোপরি যুক্ত হয়েছিল ‘যুবরাজ’ এর হাওয়া ভবনের প্যারালাল সরকারের দুর্নীতির মচ্ছব। তখন স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিবাজ এরশাদকে পর্যন্ত বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘তারেক জিয়ার বেধড়ক লুণ্ঠনের কাছে তাঁর দুর্নীতির রেকর্ড নাকি নস্যি প্রমাণিত হয়ে গিয়েছিল।’
২০০৮ সালের নির্বাচনে সেই বিএনপি-জামায়াত জোটকে মাত্র ৩২টি আসন ধরিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ তাদের পর্বত-প্রমাণ দুর্নীতি-লুটপাট-জঙ্গিবাদ-দুঃশাসনের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছেন। কিন্তু ২০১১ সালের অক্টোবরে তাদের ওই লুটপাটের পর পাঁচ বছর হয়ে গেছে। মানুষের স্মৃতি থেকে তা অনেকখানি হারিয়ে গেছে। আর ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় দুই বছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামধারী ছদ্মবেশী সামরিক সরকারের স্বাদও পেয়েছে জনগণ। ওই সরকারের সুপরিকল্পিত এজেন্ডা ছিল বিএনপি ও আওয়ামী লীগের দুর্নীতির রেকর্ডগুলোকে জোরেশোরে জনগণের সামনে উন্মোচিত করে এবং দুই দলের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতির মামলায় দলে দলে জেলে পুরে দুই নেত্রীকে এ দেশের রাজনীতি থেকে ‘মাইনাস’ এবং তৃতীয় একটি ‘কিংস পার্টির’ জন্মের জন্য রাজনৈতিক ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।
উইকিলিকসের সাম্প্রতিক ফাঁস করা গোপন তারবার্তা থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে ডিজিএফআইয়ের ওই সময়ের আসল টার্গেট ছিলেন শেখ হাসিনা। তাঁকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরতে না দেওয়ার জন্য জেনারেলদের প্রাণপণ প্রয়াস ফলপ্রসূ না হওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আর ওই পদক্ষেপকে ‘ব্যালেন্স’ করার জন্যই ‘পাতানো খেলা’ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, যা তিনি আগেই অবহিত হয়েছিলেন। আরও তাৎপর্যপূর্ণ হলো, জামায়াতে ইসলামী ২০০৭-০৮ সালের ডিজিএফআই ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বেশ কয়েকজন মহাশক্তিধর সামরিক কর্মকর্তার (অবসরপ্রাপ্তরাসহ) প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতার ছত্রচ্ছায়া লাভ করেছিল। মেজর জেনারেল আমিন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফজলুল বারী এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মতিনের এহেন জামায়াতপ্রীতি এখন পুরোপুরি উন্মোচিত হয়েছে। শেখ হাসিনা তাঁর গত ৩৩ মাসের শাসনে এ দেশের সামরিক অ্যাস্টাবলিশমেন্টের বৃহদাংশের মজ্জাগত বিএনপি-জামায়াতপ্রীতি দূরীভূত করতে পেয়েছেন, তা বিশ্বাস করার কারণ নেই। অতএব, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এ দেশের রাজনীতির চারিত্র্য মনে রেখেই তাঁকে এবং আওয়ামী লীগকে এগোতে হবে। সামরিক কিংবা সিভিল আমলাতন্ত্রকে নির্বাচনে জেতার জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে পাশে পাবে বিএনপি-জামায়াত। এই শক্তি কেন্দ্রগুলোকে পরাস্ত করতে হবে আওয়ামী লীগ এবং তাদের প্রগতিশীল মিত্রদের ভরসা করতে হবে জনগণের ওপরই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি বুঝতে পারছেন না, জনগণ ক্রমেই তাঁর এবং তাঁর দলের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন? বেসামাল মূল্যস্ফীতি সাধারণ জনগণের দৈনন্দিন জীবনকে আক্ষরিক অর্থেই অসহনীয় করে তুলেছে। সারা দেশের ভাঙাচোরা খানাখন্দে ভরা রাস্তাঘাট, সড়ক-জনপথ—ওসব পথ চলাচলকারী জনমানুষের মরণ-ফাঁদে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। শুধু প্রলম্বিত বর্ষার অতিবৃষ্টির দোহাই দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। আড়াই বছরের অক্ষম্য অবহেলার কথা যেমন মানুষ ভুলে যায়নি তেমনি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি সংস্থা ও বিভাগের দুর্নীতির কাহিনিগুলোও তারা মনে-প্রাণে বিশ্বাস করে। এগুলো তাদের দৈনন্দিন জীবনের যন্ত্রণা ও অসনীয় অভিজ্ঞতারই অংশ। অতএব, যোগাযোগমন্ত্রী যতই বড় গলায় নিজের সার্টিফিকেট দেন না কেন, ‘I am a proven honest man’—ওই ধরনের বাগাড়ম্বর তাঁকে জনগণের কাছে আরও হাস্যাস্পদই করে তুলেছে (বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ‘We are lookig for Shatruj (শত্রুজ)’-এর মতো আবুল হোসেনের ওপরের বক্তব্যটা ভবিষ্যতে তাঁকে বহুদিন তাড়া করে ফিরবে!)।
বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ-প্ল্যান্টের ঠিকাদারি বিভিন্ন চীনা কোম্পানিকে পাইয়ে দেওয়ার জন্য যোগাযোগমন্ত্রীর দৌড়-ঝাঁপ ও লবিংয়ের খবর বহুবার পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে—এগুলো কি প্রধানমন্ত্রীর অজানা? অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহনমন্ত্রী কর্ণফুলী ড্রেসিং প্রকল্প নিয়ে কত ধরনের নয়ছয় করেছেন, তা কি প্রধানমন্ত্রী জানেন না? মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েও সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি পদে বহাল থাকা কি ‘Clash of Interests’-এর প্রমাণ নয়? যে ২৪ হাজার ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের জন্য নৌমন্ত্রী সুপারিশ করেছেন, তার বিনিময়ে লাইসেন্সপ্রার্থীরা কি দিয়েছেন, তা খুঁজে বের করা কি সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়িত্বের আওতায় পড়ে না? ২০০৭-০৮-এর অভিজ্ঞতা বলছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে এই ফাইলগুলো ফের নড়াচড়া হবে। ২০০৭-০৮-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের দুর্নীতি দমন কমিশনের মামলাগুলোর আইনগত ত্রুটি ছিল বলে আদালতে ওগুলোর বেশির ভাগ টেকেনি। কিন্তু মামলাগুলো কি ভুয়া ছিল?
আইনের ফাঁকফোকরে অভিযুক্ত দুর্নীতিবাজেরা ওই ধরনের মামলা থেকে রেহাই পেয়ে এখন যখন সাধুসন্তের মতো সততার গলাবাজি শুরু করেছেন, তখন নব্য ফেরেশতাদের ভাবমূর্তি জনমনে উজ্জ্বল হয়েছে মনে করলে শেখ হাসিনা মারাত্মক ভুল করবেন। আইন প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কমিটির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মী, মন্ত্রী-সান্ত্রির দুর্নীতির মামলাগুলো প্রত্যাহারের মহাযজ্ঞে জনগণের বাহবা পাওয়ার কারণ নেই। এভাবে একতরফা নিজেদের মামলাগুলো প্রত্যাহার করায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, আরাফাত রহমান, গিয়াসউদ্দিন আল মামুন, মোসাদ্দেক আলী ফালু, হারিছ চৌধুরীসহ বিএনপির দুর্নীতিবাজ নেতা-কর্মীদের দুর্নীতির মামলাগুলো কিছুটা হলেও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। আরেকটি কারণে ক্ষমতাসীনদের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। তাহলো দুর্নীতি দমন কমিশনকে সুপরিকল্পিতভাবে ‘নখদন্তহীন ব্যাঘ্রে’ পরিণত করা। লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান মশহুদের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রচণ্ড গতিশীলতা ও কর্মতৎপরতার তুলনায় ড. গোলাম রহমানের নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশনের ঝিমিয়ে পড়া বা অকর্মণ্যতা কি জনগণ খেয়াল করছে না? কমিশনকে এভাবে অকার্যকর করায় সরকারের কি কোনো ভূমিকা ছিল না? একজন সৎ আমলা হিসেবে গোলাম রহমানের সুনাম ছিল। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বাধীন কমিশনের এভাবে পথ হারানোর রহস্য কী? আমার সমালোচনামূলক এ নিবন্ধ হয়তো প্রধানমন্ত্রীর পছন্দ হবে না। কিন্তু হালুয়া-রুটি এবং চেয়ারের লোভে তাঁর কৃপাপ্রার্থী হওয়ার জন্য যাঁরা চাটুকারিতায় গলদগর্ম হচ্ছেন, তাঁদের ব্যাপারে এখনই সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আমরা আওয়ামী লীগের সমালোচনা করি ভুল-ত্রুটিগুলো সংশোধনের প্রত্যাশায়। কারণ, আমরা আবারও বিএনপি-জামায়াত-জঙ্গিবাদীদের খপ্পরে পড়তে চাই না। আবারও হাওয়া ভবনের যুবরাজের প্রজা হতে চাই না। বাংলাদেশকে আবারও পাকিস্তান হতে দিতে চাই না।
সরকারের অনেক সুকৃতি ও সাফল্য রয়েছে। কৃষি, শিক্ষা, খাদ্যশিল্প, গণপূর্ত, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার বিচার—এসব ক্ষেত্রে সরকারের নিষ্ঠাবান প্রয়াসকে সমর্থন করি। কিন্তু সব সাফল্যই চাপা পড়ে যাচ্ছে দুর্নীতির কারণে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আল্লাহর ওয়াস্তে দুর্নীতিকে আশকারা দেবেন না।
ড. মইনুল ইসলাম: অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments