সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই-শিশুদের শারীরিক শাস্তি

ইউনিসেফ ২০০৯ সালে শিশুদের ওপর শারীরিক নির্যাতন বিষয়ে যে গবেষণা জরিপ চালিয়েছে, তাতে প্রতিফলিত চিত্রটি বেশ উদ্বেগজনক। শিশুর প্রতি নির্মম আচরণ করা হয় প্রায় সর্বত্রই: পরিবারে, বিদ্যালয়ে, কর্মক্ষেত্রে—শিশুরা বেশির ভাগ সময় যেখানে অবস্থান করে।


গত মঙ্গলবার রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) আয়োজিত এক সভায় ইউনিসেফের ওই জরিপ প্রতিবেদনের সূত্র ধরে যেসব তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়, তাতে দেখা যাচ্ছে, শিশুর ওপর শারীরিক নির্যাতনের হার সবচেয়ে বেশি বাড়ির মধ্যেই; ৯৯ শতাংশ শিশু নিজের বাড়িতেই আক্রান্ত হয়। এর পরেই রয়েছে বিদ্যালয়: ৯১ শতাংশ শিশু আক্রান্ত হয় বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে গিয়ে।
এ বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ। শিশুর কচি দেহে আঘাতের কুফল শুধু তার দেহই বহন করে না, বরং বড় আঘাতটা লাগে তার কচি, নাজুক মনে। শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনের পথে শারীরিক নির্যাতন ও নির্মম আচরণ যে অত্যন্ত ক্ষতিকর, এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত তথ্য; এ নিয়ে আর কোনো দ্বিমতের অবকাশ নেই। তাই এর বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়েই জনমত প্রবল। ইউরোপ-আমেরিকায় শিশুদের প্রহারসহ অন্যান্যভাবে নির্যাতন করা গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত, সে কারণে সামাজিকভাবেও তা ঘৃণিত কাজ।
আমাদের দেশে একটি সাধারণ ধারণা এই যে শিশুদের প্রহার করাসহ নানাভাবে নির্যাতন হয় বিদ্যালয়ে, পড়া না করা বা দুষ্টুমির শাস্তি হিসেবে। কিন্তু চার হাজার শিশুর ওপর ইউনিসেফের পরিচালিত জরিপ থেকে জানা যাচ্ছে, নির্মম আচরণের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের আগে আছে শিশুর নিজগৃহ, যেখানে মা-বাবা, ভাইবোনসহ আপনজনদের সঙ্গে তার বাস। কোনো শিশু বিদ্যালয়ে শিক্ষকের হাতে প্রহূত হলে তার মা-বাবা ক্ষুব্ধ হন, কেউ কেউ প্রতিবাদ করেন, কখনো বা প্রহারকারী শিক্ষকের শাস্তি দাবি করেন, অনেক সময় প্রহারকারী শিক্ষকের শাস্তি হয়ও। কিন্তু পরিবারের ভেতর স্বজনদের হাতে শিশুর নির্যাতন বন্ধ করার উপায় কী?
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের শারীরিক শাস্তি বন্ধের জন্য দেশে আইন আছে। সে আইনের প্রয়োগ আরও বাড়িয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশুদের হয়তো কিছুুটা রক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু গৃহে যে শিশু নির্যাতিত হচ্ছে, তাকে রক্ষার উপায় রাষ্ট্রের হাতে যতটা নেই, তার চেয়ে বেশি আছে পরিবারের মধ্যেই। সেদিনে আলোচনায় বক্তাদের অনেকেই এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। এটিই সবচেয়ে জরুরি কাজ। এ কাজটি করার প্রধান দায়িত্ব সরকারের। একই সঙ্গে যে ৬০ শতাংশ শিশু কর্মক্ষেত্রে নির্যাতিত হয়, তাদের রক্ষা করতেও কঠোর আইনি পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.