গানের পেছনে লুকিয়ে থাকা মুখ by মেহেদী মাসুদ
গানগুলো ভালোবাসার। তুমুল জনপ্রিয়। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, সব কটি গানের পেছনেই লুকিয়ে আছে কোনো একটি মুখ কিংবা তাঁর কথা। গানগুলো যখন কেউ শোনেন, তখন তিনি নিজের মতো ভেবে নেন কোনো প্রিয় মুখ। কখনো মনে পড়ে যায় পেছনে ফেলে আসা কোনো কথা।
মঞ্চে, অ্যালবামে, টিভি কিংবা রেডিওতে গানগুলো গাওয়ার সময় শিল্পীর সামনে তেমনিভাবে কি ভেসে ওঠে কারও মুখ? গানটি গাওয়ার সময় তাঁর কি কারও কথা মনে পড়ে? আসুন, গানের পেছনের সেই অদৃশ্য মুখের একটু খোঁজ করা যাক। নিজের জনপ্রিয় গান নিয়ে বলেছেন আইয়ুব বাচ্চু, বাপ্পা মজুমদার, আসিফ আকবর, হাবিব, হূদয় খান ও শফিক তুহীন
গানটিতে কোনো ব্যক্তি নেই—আইয়ুব বাচ্চু
আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে
যদি একটু মজা করে বলি, তাহলে এখানে আমার স্ত্রীর কথাই বলব। তা কিন্তু নয়। গানটিতে কোনো ব্যক্তির কথা বলা হয়নি। এখানে যে ব্যাপারটা উঠে এসেছে তা হলো, জাগতিক নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা আকাঙ্ক্ষা। আমাদের তো অনেক চাহিদা; চাওয়া-পাওয়ার বড় পার্থক্য, ভালো লাগা, মন্দ লাগা, জীবনসংগ্রাম—এমন নানা কিছু যখন অপূর্ণ থেকে যায়, তখনই হয়তো কারও উদ্দেশে বলতে ইচ্ছে হয় কথাগুলো। তবে শ্রোতাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। তাঁরা হয়তো নিজেদের ভালোবাসার মানুষটিকেই তা বলতে চাইছেন কিংবা বলছেন।
কারও কথা ভাববার সময় কোথায়—আসিফ আকবর
ও প্রিয়া তুমি কোথায়
আমি কিন্তু নিজেকে শতভাগ পেশাদার শিল্পী মনে করি। এখানে গানটাই আমার কাছে মুখ্য। তা কত ভালোভাবে শ্রোতাদের সামনে গাইতে পারব—এই ব্যাপারটাই আমার মধ্যে কাজ করে। ওই সময় কোনো মুখ কিংবা কারও কথা ভাববার সময় কোথায়। এমনিতেই আমার একটা সমস্যা আছে, তা হলো, গানের কথা মনে থাকে না। তার ওপর ওই সময় যদি কারও কথা মনে আনার চেষ্টা করি, তা হলে তো বুঝতেই পারছেন। একটা ব্যাপার খেয়াল করবেন, গান করার সময় আমি শ্রোতাদেরও সুযোগ দিই। যখনই ভুলে যাই তখন এই কাজটা বেশি করি। আর যখন নিজে একটু ভুল গেয়ে ফেলি, তখন শ্রোতারা তা শুধরে দেন। তবে আলাদা করে দুটি গানের কথা বলব, ‘বুবু’ আর ‘বাবা’। দুটি গানই প্রিন্স মাহমুদের লেখা ও সুর করা। গানটি গাওয়ার দুই বছর আগে আমার বাবা মারা যান। যখন প্রথম ‘বাবা’ গানটি রেকর্ড করতে যাই, তখন নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। বারবার বাবার কথা মনে পড়ছিল আর আমি কাঁদতে শুরু করেছিলাম।
মেয়েটিকে তিনি ডাকতেন ‘পরি’ বলে—বাপ্পা
পরি
আমার ধুলো পড়া চিঠি অ্যালবামের ১১টা গান তৈরি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে আরও একটি গান রাখার জন্য অনুরোধ করল। হাতে সময়ও তেমন ছিল না, পরদিনই জমা দিতে হবে। ওই সময় আমার স্টুডিওতে বসে গানটি লিখে ফেললেন শেখ আবদুল মতিন। আর আমি মাত্র পাঁচ মিনিটে পুরো গানটির সুর করেছি। এটা ছিল ওই অ্যালবামের ১২ নম্বর গান। কিন্তু তখনো ভাবিনি, গানটি এতটা জনপ্রিয় হবে। পরে শুনেছিলাম গীতিকার একটি ছোট্ট মেয়েকে চিনতেন। তিনি মেয়েটিকে ডাকতেন ‘পরি’ বলে। আর আমি যখন গানটা করি, তখন আমার সামনে থাকেন অসংখ্য শ্রোতা। তবে আমার সংগীতজীবনে আমি খুব বেশি আবেগতাড়িত হয়েছিলাম দলছুটের হূদয়পুর অ্যালবামের কাজ করার সময়। ওটাতে সঞ্জীব চৌধুরীর লেখা ও সুর করা ‘আমার সন্তান’ গান রয়েছে। ওই গানটিতে কণ্ঠ দেওয়ার সময় আমি অনেক কেঁদেছিলাম। গানটির ভেতরের ভাবনাটা আমাকে আবেগাপ্লুত করেছিল।
চলচ্চিত্রে এটাই আমার প্রথম গান—হাবিব
ভালোবাসব রে বন্ধু
চলচ্চিত্রে এটাই ছিল আমার প্রথম গান। বিভিন্ন জায়গায় গান করতে গিয়ে আমি দেখেছি, অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে কারও কথা মনে করতে চায়। আমার কিন্তু তা কখনো হয়নি। একটা ভালোবাসার গান যেমনটা হওয়া উচিত—সুর, সংগীত পরিচালনা এবং গাওয়ার সময় এই দিকেই বেশি খেয়াল রেখেছি। যদি কেউ আমার এই গানটির মধ্য দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও আনন্দ পান, সুখ-স্মৃতি অনুভব করেন, তাতেই আমি খুশি। আমি কাউকে একটি গান উৎসর্গ করতে পারি, কিন্তু কাউকে মনে করে কিংবা কারও জন্য আমার এখনো কোনো গান তৈরি করা হয়নি।
গাওয়ার সময় এখন সুজানার মুখটা ভেসে ওঠে—হূদয় খান
চাই না মেয়ে
আমি কিন্তু আগে গানের সুর তৈরি করি। এখানে একটা ভাবনা থাকে। ঠিক তেমনিভাবে একটি সুরের ওপর আহমেদ রিজভী গানটা লিখেছিলেন। ওই সময় কারও কথা মনে হওয়ার সুযোগই ছিল না। অনেকটা মজা করেই আমরা মাত্র এক ঘণ্টায় পুরো গানটা তৈরি করেছিলাম। কিছুদিন পর টিভির ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘আজ কাল পরশু’তে গানটা প্রথম করি। তবে এটা ঠিক, সবার কিন্তু একটা স্বপ্ন থাকে। বাস্তব কিংবা কল্পনায় কারও কথা তার মনে পড়ে। পরে আমারও যে ব্যতিক্রম হয়নি, তা কিন্তু নয়। এখন গানটা গাওয়ার সময় সুজানার মুখটা স্পষ্ট ভেসে ওঠে। তখন মনে হয়, গানটা অন্য রকম একটা প্রাণ পায়। সুজানার কিন্তু খুব পছন্দ ‘অবুঝ মন’ গানটি। ওই গান গাওয়ার সময় মনে হয়, পুরো সময়টিতে সুজানা আমার পাশে আছে।
সেই ভালো লাগাটা ম্লান হয়ে যায়নি—শফিক তুহিন
ও আমার প্রাণপাখি ময়না
গান করার সময় এ ব্যাপারটা আমার ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। অতীতের খুব ভালো লাগার কিছু মুহূর্ত, কিছু সুন্দর স্মৃতি আর ভালো লাগার মানুষের কথা মনে পড়ে যায়। এইচএসসি পরীক্ষার পর মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। আমি ছিলাম সরকারি বিজ্ঞান কলেজের ছাত্র। ওখানে হলিক্রস কলেজের একটি মেয়ের সঙ্গে আমার দারুণ বন্ধুত্ব হয়েছিল। তেমন কিছুই না, কিন্তু সেই বন্ধুত্বের মূল্য আমার কাছে অনেক বেশি। ওর বিয়ে হয়েছে, দেশের বাইরে থাকে। এখনো মাঝেমাঝে আমাদের কথা হয়। গানটি করার সময় ওর কথা অনেক মনে পড়ে। সেই ভালো লাগাটা ম্লান হয়ে যায়নি।
গানটিতে কোনো ব্যক্তি নেই—আইয়ুব বাচ্চু
আর বেশি কাঁদালে উড়াল দেব আকাশে
যদি একটু মজা করে বলি, তাহলে এখানে আমার স্ত্রীর কথাই বলব। তা কিন্তু নয়। গানটিতে কোনো ব্যক্তির কথা বলা হয়নি। এখানে যে ব্যাপারটা উঠে এসেছে তা হলো, জাগতিক নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটা আকাঙ্ক্ষা। আমাদের তো অনেক চাহিদা; চাওয়া-পাওয়ার বড় পার্থক্য, ভালো লাগা, মন্দ লাগা, জীবনসংগ্রাম—এমন নানা কিছু যখন অপূর্ণ থেকে যায়, তখনই হয়তো কারও উদ্দেশে বলতে ইচ্ছে হয় কথাগুলো। তবে শ্রোতাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন কথা। তাঁরা হয়তো নিজেদের ভালোবাসার মানুষটিকেই তা বলতে চাইছেন কিংবা বলছেন।
কারও কথা ভাববার সময় কোথায়—আসিফ আকবর
ও প্রিয়া তুমি কোথায়
আমি কিন্তু নিজেকে শতভাগ পেশাদার শিল্পী মনে করি। এখানে গানটাই আমার কাছে মুখ্য। তা কত ভালোভাবে শ্রোতাদের সামনে গাইতে পারব—এই ব্যাপারটাই আমার মধ্যে কাজ করে। ওই সময় কোনো মুখ কিংবা কারও কথা ভাববার সময় কোথায়। এমনিতেই আমার একটা সমস্যা আছে, তা হলো, গানের কথা মনে থাকে না। তার ওপর ওই সময় যদি কারও কথা মনে আনার চেষ্টা করি, তা হলে তো বুঝতেই পারছেন। একটা ব্যাপার খেয়াল করবেন, গান করার সময় আমি শ্রোতাদেরও সুযোগ দিই। যখনই ভুলে যাই তখন এই কাজটা বেশি করি। আর যখন নিজে একটু ভুল গেয়ে ফেলি, তখন শ্রোতারা তা শুধরে দেন। তবে আলাদা করে দুটি গানের কথা বলব, ‘বুবু’ আর ‘বাবা’। দুটি গানই প্রিন্স মাহমুদের লেখা ও সুর করা। গানটি গাওয়ার দুই বছর আগে আমার বাবা মারা যান। যখন প্রথম ‘বাবা’ গানটি রেকর্ড করতে যাই, তখন নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। বারবার বাবার কথা মনে পড়ছিল আর আমি কাঁদতে শুরু করেছিলাম।
মেয়েটিকে তিনি ডাকতেন ‘পরি’ বলে—বাপ্পা
পরি
আমার ধুলো পড়া চিঠি অ্যালবামের ১১টা গান তৈরি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে আরও একটি গান রাখার জন্য অনুরোধ করল। হাতে সময়ও তেমন ছিল না, পরদিনই জমা দিতে হবে। ওই সময় আমার স্টুডিওতে বসে গানটি লিখে ফেললেন শেখ আবদুল মতিন। আর আমি মাত্র পাঁচ মিনিটে পুরো গানটির সুর করেছি। এটা ছিল ওই অ্যালবামের ১২ নম্বর গান। কিন্তু তখনো ভাবিনি, গানটি এতটা জনপ্রিয় হবে। পরে শুনেছিলাম গীতিকার একটি ছোট্ট মেয়েকে চিনতেন। তিনি মেয়েটিকে ডাকতেন ‘পরি’ বলে। আর আমি যখন গানটা করি, তখন আমার সামনে থাকেন অসংখ্য শ্রোতা। তবে আমার সংগীতজীবনে আমি খুব বেশি আবেগতাড়িত হয়েছিলাম দলছুটের হূদয়পুর অ্যালবামের কাজ করার সময়। ওটাতে সঞ্জীব চৌধুরীর লেখা ও সুর করা ‘আমার সন্তান’ গান রয়েছে। ওই গানটিতে কণ্ঠ দেওয়ার সময় আমি অনেক কেঁদেছিলাম। গানটির ভেতরের ভাবনাটা আমাকে আবেগাপ্লুত করেছিল।
চলচ্চিত্রে এটাই আমার প্রথম গান—হাবিব
ভালোবাসব রে বন্ধু
চলচ্চিত্রে এটাই ছিল আমার প্রথম গান। বিভিন্ন জায়গায় গান করতে গিয়ে আমি দেখেছি, অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে কারও কথা মনে করতে চায়। আমার কিন্তু তা কখনো হয়নি। একটা ভালোবাসার গান যেমনটা হওয়া উচিত—সুর, সংগীত পরিচালনা এবং গাওয়ার সময় এই দিকেই বেশি খেয়াল রেখেছি। যদি কেউ আমার এই গানটির মধ্য দিয়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও আনন্দ পান, সুখ-স্মৃতি অনুভব করেন, তাতেই আমি খুশি। আমি কাউকে একটি গান উৎসর্গ করতে পারি, কিন্তু কাউকে মনে করে কিংবা কারও জন্য আমার এখনো কোনো গান তৈরি করা হয়নি।
গাওয়ার সময় এখন সুজানার মুখটা ভেসে ওঠে—হূদয় খান
চাই না মেয়ে
আমি কিন্তু আগে গানের সুর তৈরি করি। এখানে একটা ভাবনা থাকে। ঠিক তেমনিভাবে একটি সুরের ওপর আহমেদ রিজভী গানটা লিখেছিলেন। ওই সময় কারও কথা মনে হওয়ার সুযোগই ছিল না। অনেকটা মজা করেই আমরা মাত্র এক ঘণ্টায় পুরো গানটা তৈরি করেছিলাম। কিছুদিন পর টিভির ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘আজ কাল পরশু’তে গানটা প্রথম করি। তবে এটা ঠিক, সবার কিন্তু একটা স্বপ্ন থাকে। বাস্তব কিংবা কল্পনায় কারও কথা তার মনে পড়ে। পরে আমারও যে ব্যতিক্রম হয়নি, তা কিন্তু নয়। এখন গানটা গাওয়ার সময় সুজানার মুখটা স্পষ্ট ভেসে ওঠে। তখন মনে হয়, গানটা অন্য রকম একটা প্রাণ পায়। সুজানার কিন্তু খুব পছন্দ ‘অবুঝ মন’ গানটি। ওই গান গাওয়ার সময় মনে হয়, পুরো সময়টিতে সুজানা আমার পাশে আছে।
সেই ভালো লাগাটা ম্লান হয়ে যায়নি—শফিক তুহিন
ও আমার প্রাণপাখি ময়না
গান করার সময় এ ব্যাপারটা আমার ওপর দারুণ প্রভাব ফেলে। অতীতের খুব ভালো লাগার কিছু মুহূর্ত, কিছু সুন্দর স্মৃতি আর ভালো লাগার মানুষের কথা মনে পড়ে যায়। এইচএসসি পরীক্ষার পর মেডিকেল কলেজে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। আমি ছিলাম সরকারি বিজ্ঞান কলেজের ছাত্র। ওখানে হলিক্রস কলেজের একটি মেয়ের সঙ্গে আমার দারুণ বন্ধুত্ব হয়েছিল। তেমন কিছুই না, কিন্তু সেই বন্ধুত্বের মূল্য আমার কাছে অনেক বেশি। ওর বিয়ে হয়েছে, দেশের বাইরে থাকে। এখনো মাঝেমাঝে আমাদের কথা হয়। গানটি করার সময় ওর কথা অনেক মনে পড়ে। সেই ভালো লাগাটা ম্লান হয়ে যায়নি।
No comments