শুধু সরকারের অর্থের ওপর নির্ভরতা কাম্য নয়-তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়

তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আলাদা আইনের বিষয়টি বৈষম্যমূলকই বটে। সব বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের কাছ থেকে অর্থ পাবে, শুধু তিনটি ছাড়া—এ বিষয়টি মেনে নেননি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা। সরকার এখন আইনটি পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এটাও ঠিক, যে শর্ত মেনে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন।


জগন্নাথ, কুমিল্লা ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় যে আইনের বলে গঠিত হয়েছিল, সেখানে একটি সময় পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শতভাগ নিজস্ব আয় ও উৎস থেকে পরিচালিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, সরকার একটি নির্দিষ্ট সময় পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আর অর্থ দেবে না। ২০০৫ সালের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২৭(৪) ধারা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পঞ্চম বছর থেকে নিজস্ব আয়ের ওপর নির্ভর হওয়ার কথা। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সে মেয়াদ পূর্ণ করায় সরকারের অর্থ বরাদ্দ বন্ধের বিষয়টি সামনে চলে আসে এবং এর চাপটি শিক্ষার্থীদের ওপর পড়বে—এ আশঙ্কা জোরালো হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থীরা এই ধারাটি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। সব বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের কাছ থেকে অর্থ পাবে, শুধু এ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া—এ বৈষম্যমূলক দিকটি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যৌক্তিকতা দিয়েছে। যদিও এ আন্দোলন শুরু করতে গিয়ে প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা যেভাবে রাজপথ অবরোধ করে গাড়ি ভাঙচুর করেন, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য ছিল না। আমরা মনে করি, কোনো দাবিদাওয়ার যৌক্তিক দিক থাকলে তা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমেই আদায় করা সম্ভব।
সরকার, বিশেষ করে, সরকারপ্রধান মনে করেছেন যে এ তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের এই ধারাগুলো বাস্তবসম্মত ও শিক্ষা-সহায়ক নয়। ফলে আইন পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে বৈষম্যমূলক কিছু না থাকাই বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি। তবে একই সঙ্গে আমরা এটাও মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সব সময় সরকারের অর্থের ওপর নির্ভর করে থাকবে, এটাও কাজের কথা হতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যেকোনো সম্প্রসারণ বা মানোন্নয়নে সরকার নিয়মিত অর্থ দিয়ে যেতে পারে, কিন্তু প্রতিবছরের নিয়মিত খরচের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যায়ক্রমে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে—এটাই প্রত্যাশিত। এটা রাতারাতি সম্ভব নয়। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী অগ্রসর হলে শিক্ষার্থীদের ওপর আকস্মিক বেতন-ফির চাপ না বাড়িয়েও পর্যায়ক্রমে তা করা যেতে পারে। সরকারের নীতিনির্ধারকেরা বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও এর শিক্ষার মান উন্নত হবে বলেই আমরা মনে করি।
আমরা আশা করছি, সরকার আইন পরিবর্তনের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার ফলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তা কেটে যাবে।

No comments

Powered by Blogger.