অবহেলার খপ্পরে নিয়ন্ত্রণ কর্মসূটি-ভুলে যাওয়া জনসংখ্যা সমস্যা

সময় এবং জন্ম কোনোটাই থেমে নেই বিশ্বের সর্বোচ্চ জনঘনত্বের এই দেশে। দেশে নেই কার্যকর জনসংখ্যা নীতি ও সচেতনতা অভিযান, নেই পর্যাপ্ত বরাদ্দ, লোকবল ও অবকাঠামো। এত ‘নেই’-এর মধ্যে স্থবির হয়ে আছে জনসংখ্যার ভার সহনীয় করার সরকারি কর্মসূচি। অথচ বলা হয়, জনসংখ্যাই নাকি এক নম্বর জাতীয় সমস্যা!


গত ৬ অক্টোবরের প্রথম আলোয় এ বিষয়ক প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, সরকারের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রচার-প্রচারণার আওতার বাইরে রয়ে গেছে ৬২ শতাংশ নারী ও ৩১ শতাংশ পুরুষ। সরকারের সর্বশেষ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের তথ্য বলছে, নিরক্ষর ৭৯ শতাংশ ও দরিদ্র ৮৫ শতাংশ নারী কোনো মাধ্যম থেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণের বার্তা পায় না। অথচ দেশে গণমাধ্যমের বিস্তার হয়েছে। নতুন এই সুযোগকে কাজে লাগানোর তেমন চেষ্টাও সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের নেই। রেডিও-টেলিভিশন-স্যাটেলাইট চ্যানেল, মুদ্রণ মাধ্যম ও বিলবোর্ডের মাধ্যমেই সাধারণত জনসংখ্যা সমস্যা সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির প্রচার চালানো হয়। কিন্তু এসব প্রচারণা অপ্রতুল ।
জনসংখ্যা নীতির আলোকেই কোন সময়ের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি কোন পর্যায়ে ধরে রাখতে হবে, তা ঠিক হওয়ার কথা। কিন্তু পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে খসড়া নীতিটি চূড়ান্তই করে যাচ্ছে! জোট সরকারের আমলে প্রণীত জনসংখ্যা নীতিতে ২০১০ সাল ছিল ২০৬০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা স্থিতিশীল করার পূর্বশর্ত সৃষ্টির বছর। সেই নীতিমালা যুগোপযোগী করার কাজও পড়েছে দীর্ঘসূত্রতার খপ্পরে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসংখ্যাকে সম্পদ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। বিশ্বের ধনী কয়েকটি দেশে জন্মহার কমে যাওয়ায় জনসম্পদের ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে, তাও সত্য। কিন্তু বাংলাদেশের বেলায় জনসম্পদের প্রাচুর্য সুবিধার বদলে অসুবিধাই তৈরি করছে বেশি। এত মানুষের ভার বহনের প্রাকৃতিক বা সামাজিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতা সৃষ্টি করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। সরকারসহ সবাইকে বুঝতে হবে, বাংলাদেশ জনসংখ্যা নামক একটি টাইম বোমার ওপর বসে আছে।
জনসংখ্যা নীতি আর জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি অবিচ্ছেদ্য। একটি পূর্ণাঙ্গ ও মোক্ষম না হলে অন্যটিতে সফল হওয়া কঠিন। মনে রাখতে হবে, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়।

No comments

Powered by Blogger.