দুর্ভোগের নাম রেলের টিকিট-শুধু ভিআইপিদের জন্য ঈদ নয়

রেলওয়ের অগ্রিম ঈদের টিকিট বিক্রি শুরু হতে এখনো দিন চারেক বাকি। এর আগেই ঈদের টিকিট হাওয়া হয়ে গেছে। কমলাপুর রেলস্টশনে এখন শুধুই 'নেই নেই' রব। একটি টিকিট এখনই যেন সোনার হরিণ। ঈদের অগ্রিম টিকিট হাওয়া হয়ে যাওয়া নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রতিবছরই দেখা যায়, ঈদের আগে অগ্রিম টিকিট কাউন্টার থেকে হাওয়া হয়ে যায়।


তবে এবারের ঘটনাটি একেবারেই ব্যতিক্রম। অন্য সময় দেখা যায়, কাউন্টার থেকে টিকিট চলে যায় কালোবাজারিদের হাতে। কালোবাজারিরা রেলওয়ের এক শ্রেণীর কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজশ করে টিকিট নিয়ে যায়। কাউন্টারে টিকিট পাওয়া না গেলেও কালোবাজারে উচ্চমূল্যে টিকিট মেলে। অন্যান্যবার ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পর কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্য লক্ষ করা যায়। কিন্তু এবারের দৃশ্যপট একেবারে আলাদা। এবার ঈদের টিকিট বিক্রি শুরুর আগেই স্টেশনের কাউন্টার থেকে টিকিট হাওয়া হয়ে গেছে। এবার ঈদের টিকিট চলে যাচ্ছে ভিআইপিদের দখলে। ভিআইপিদের চাপে এবার রেলের ঈদের টিকিট সাধারণের আয়ত্তের বাইরে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দেশের সড়কপথ এখন সাধারণ যাত্রীদের কাছে এক আতঙ্কের নাম। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনা এই আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশের সব সড়ক-মহাসড়ক যেন একেকটি মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গাড়িচালকদের খামখেয়ালির কাছে সাধারণ যাত্রীরা অসহায়। অন্যদিকে সড়ক-মহাসড়কগুলোও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কয়েক দিন ধরেই বন্ধ রয়েছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল। মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছাড়ছে না। মহাখালী থেকে আশুলিয়া হয়ে উত্তরবঙ্গগামী বাস চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ভাবলেশহীন। যাত্রীদের এই বিড়ম্বনায় কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই তাদের। যাত্রীরা অসহায়। এবার ঈদের আগে ইট ফেলে কোনোভাবে রাস্তা মেরামত করা হবে_সম্প্রতি এমন কথা শোনা গেছে। তবে তাতে সড়ক-মহাসড়কগুলো যান চলাচলের জন্য কতটা উপযোগী হবে, সে প্রশ্নটা অস্বাভাবিক নয়। এসব রাস্তায় অনেকটাই জীবন হাতে নিয়ে চলাচল করতে হয়। এমন কোনো দিন নেই, যেদিন এসব ভাঙাচোরা সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটে না। সম্প্রতি সেই দুর্ঘটনা অস্বাভাবিক হারেই যেন বেড়ে গেছে। এর মধ্যে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে সড়ক উন্নয়নের এজেন্ডা দিয়ে। দেখা যাক, কত দূর কী হয়। স্বাভাবিকভাবেই এবার ঈদে ঘরে ফেরার ক্ষেত্রে 'সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি'_এই আপ্তবাক্য মেনে নিয়ে সাধারণ মানুষ বাসের চেয়ে ট্রেনে ঘরে ফেরার সুযোগ নিতে চাইবে।
কিন্তু সেই ঈদের টিকিট রেলস্টেশন থেকে উধাও হয়ে গেছে বিক্রি শুরুর আগেই। চলে গেছে তা ভিআইপিদের দখলে। ঈদের টিকিট বিক্রির আগেই ভিআইপিরা চিঠি পাঠিয়ে টিকিট নিশ্চিত করতে চেয়েছেন। তাঁদের টিকিটের সংখ্যা একেবারে কম নয়। কেউ চেয়েছেন ২৫টি টিকিট, কেউ চেয়েছেন কেবিন। ভিআইপিদের টিকিটের একটি নির্দিষ্ট কোটা আছে। ভিআইপিদের চাহিদা সেই নির্দিষ্ট কোটা ছাড়িয়ে গেল কি না, সেটাই দেখার বিষয়। এর পাশাপাশি আরেকটি আশঙ্কা থাকে। সেটা হচ্ছে, রেলের অসাধু কর্মীরা ভিআইপিদের এই টিকিটের চাহিদার সুযোগ নিয়ে কিন্তু বিক্রি শুরু হওয়ার আগেই টিকিট কালোবাজারে ছেড়ে দিতে পারে_এমন আশঙ্কা একেবারে অমূলক নয়। ভিআইপিদের এই চাহিদা কালোবাজারিদের ঈদের টিকিট-বাণিজ্য রমরমা করে দিতে পারে।
ঈদে মানুষ ঘরমুখো হবে_এটাই স্বাভাবিক। অন্য সময়ের চেয়ে ঈদের সময় রাস্তায় মানুষের ভিড় বাড়ে। বেড়ে যায় গাড়ি চলাচল। ঈদের সময় বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সেই ট্রেনের টিকিট যদি বিক্রির আগেই চলে যায় ভিআইপিদের হাতে, তাহলে সাধারণ মানুষের কী হবে? ঈদে ভিআইপিদের টিকিট নিশ্চিত করার পাশাপাশি এটাও ভাবতে হবে, ঈদ শুধু ভিআইপিদের জন্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.