বঙ্গবন্ধু মেডিকেল-কম খরচে বিশেষায়িত চিকিৎসা by প্রাণ গোপাল দত্ত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব রেসিডেন্সি প্রোগ্রামে স্নাতকোত্তর কোর্স ছাড়াও সারা দেশে সব (৩২টি) স্নাতকোত্তর ইনস্টিটিউট/মেডিকেল কলেজের ৮২টি স্নাতকোত্তর কোর্স পরিচালনা করে আসছে এবং এক হাজার ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল পরিচালনা করছে।


সাবেক আইপিজিএমআরের (পিজি হাসপাতাল) সময় বিভিন্ন হাসপাতাল/বাইরে থেকে চিকিৎসকেরা রেফার্ড করলেই শুধু সেসব রোগীকে দেখা হতো। এর ফলে হাসপাতালে আসা রোগীরা এই হাসপাতালে দেখানোর সুযোগ পেত না।
১৯৯৮ সালে আইপিজিএমআর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার পর তৎকালীন প্রশাসন রেফার্ড সিস্টেম বন্ধ করে উন্মুক্ত টিকিটের মাধ্যমে রোগী দেখা শুরু করে। এতে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। এখন প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগী বহির্বিভাগে ভিড় করে, এমনকি বহির্বিভাগে দাঁড়ানোর মতো জায়গা থাকে না। দ্বিতীয়ত, বহু রোগী বহির্বিভাগে ভিড় দেখে এত সময় ব্যয় করে চিকিৎসক দেখাতে চায় না। ফলে এসব রোগী বিভিন্ন চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বারে যায়। সেখানে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা ফি দিয়ে রোগী দেখাতে হয় এবং দ্বিতীয়বার ওই চিকিৎসককে দেখাতে গেলে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা ফি দিতে হয়। চিকিৎসকেরা যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে উপদেশ দেন, সেগুলো বাইরের হাসপাতাল/ক্লিনিকগুলোতে করালে অনেক টাকা ব্যয় হয়, যা সাধারণ পরিবারের সদস্যদের পক্ষে বহন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়।
বর্তমান প্রশাসন ক্ষমতা পাওয়ার পর এসব রোগীকে অল্প পয়সায় কীভাবে সেবা দেওয়া যায়, সে ব্যাপারে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে অল্প পয়সায় অফিস সময়ের পর সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বেলা তিনটা থেকে ছয়টা পর্যন্ত অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদের রোগী দেখার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রোগীর পর্যাপ্ততা বিবেচনা করে প্রাথমিকভাবে ছয়টি বিভাগ, যেমন—মেডিসিন, নাক-কান-গলা, মহিলা ও প্রসূতি, চর্ম ও যৌনরোগ, শিশু ও ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদের নিয়ে বিশেষজ্ঞ কনসালটেশন সার্ভিস শুরু করা হয়। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পর্যায়ক্রমে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বিভাগেই বিশেষজ্ঞ কনসালটেশন সেবা দেওয়া সম্ভব।
এ সেবার জন্য ফি ধার্য করা হয়েছে ২০০ টাকা এবং এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয়বার দেখাতে এলে আর কোনো ফি দিতে হবে না। সুতরাং ২০০ টাকা ফি দিয়ে একজন রোগী দুবার চিকিৎসক দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে। আবার ২০০ টাকা ফির মধ্যে ৫০ টাকা পাবে বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাকি ১৫০ টাকা সেবা প্রদানকারী শিক্ষকসংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্টাফের মধ্যে বণ্টন করা হবে। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রায় ১০০ থেকে ১১০ টাকা পাবেন। তাহলে ১০০ টাকার বিনিময়ে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দুবার ওই রোগীকে দেখছেন। এ পদ্ধতির ফলে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য বিশেষজ্ঞ সেবা পাওয়ার সহজতর হবে। ফির এই বণ্টন একাডেমি কাউন্সিল ও সিন্ডিকেট অনুমোদিত হতে হবে।
হাসপাতালের অফিস সময় প্রতিদিন (শুক্রবার ও ছুটির দিন বাদে) সকাল আটটা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মোট সাড়ে ছয় ঘণ্টা। এই সময়ের পর এত ব্যস্ত হাসপাতাল যেন এক নীরব-নির্জন ভূমিতে পরিণত হয়। তার মানে, এত বিরাট হাসপাতালে দিনের মাত্র এক-চতুর্থাংশ সময় ব্যবহূত হচ্ছে।
এই বৈকালিক বিশেষজ্ঞ কনসালট্যান্সি সার্ভিস চালু করার ফলে অল্প আয়ের মানুষ কম খরচে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা পাওয়ার সুযোগ পাবে এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলো বাইরের হাসপাতাল/ক্লিনিকের চেয়ে কম মূল্যে করানোর সুবিধা পাবে। দ্বিতীয়ত, হাসপাতালের জায়গারও সর্বোচ্চ ব্যবহার হবে। তৃতীয়ত, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম চালু হয়েছে, সে প্রোগ্রামগুলোর ছাত্রদেরও বাস্তব প্রশিক্ষণ বৃদ্ধি পাবে।
এত জনবহুল একটি দেশে বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা দিয়ে সব রোগীর সেবা করা সম্ভব নয়। যদি অল্প খরচে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিয়ে সেবা দেওয়া যায়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এটা একটা বড় সাফল্য।
এ কার্যক্রম সফল হলে পর্যায়ক্রমে সরকারি মেডিকেল কলেজ ও বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোয় এই সেবা চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ভালো হবে। তবে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষভাবে লক্ষ রাখতে হবে, যেন কোনো অনিয়ম না হয়।
 প্রাণ গোপাল দত্ত: উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

No comments

Powered by Blogger.