আরও চিকিৎসক তৈরির উদ্যোগ নিন-তোপের মুখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বাংলাদেশের সরকারি স্বাস্থ্যসেবা-ব্যবস্থার দুর্দশা নতুন নয়। পুরোনো সমস্যা বলেই সম্ভবত এ খাতের সীমাবদ্ধতা, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার খবরগুলোতে কর্তৃপক্ষকে তেমন বিচলিত হতে দেখা যায় না। কিন্তু এ নিয়ে জাতীয় সংসদে যখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাংসদদের সম্মিলিত তোপের মুখে পড়েন, তখন স্বাস্থ্যসেবার দুর্দশা লাঘবের তাগিদ সরকারের উপলব্ধি করা উচিত।
জাতীয় সংসদের চলমান অধিবেশনে মঙ্গলবারের প্রশ্নোত্তর পর্বে বেশ কয়েকজন সাংসদ নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকার সরকারি স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা ও অব্যবস্থার অভিযোগ তুলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সাধারণ কয়েকটি অভিযোগ এ রকম: উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নেই; চিকিৎসার সরঞ্জাম-যন্ত্রপাতিরও প্রকট অভাব; অ্যাম্বুলেন্স থাকলে চালক নেই; চালকের পদে লোকবল আছে, কিন্তু চালানোর মতো যানবাহন নেই; কোনো কোনো হাসপাতালের সব অ্যাম্বুলেন্স অচল হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘ সময় ধরে।
সবচেয়ে বড় সংকট চিকিৎসকের। জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে নির্ধারিত পদের বিপরীতে চিকিৎসক আছেন নিতান্তই কম। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিজের নির্বাচনী এলাকাতেই চিকিৎসকের ৬৯টি পদ শূন্য রয়েছে—তিনি নিজেই সংসদে এই তথ্য দিয়ে বলেছেন, চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া নিয়ে তিনি বিপদে আছেন। এ হলো প্রকৃত চিত্রের এক পিঠ। অন্য পিঠে আছে এক অদ্ভুত সমস্যা: সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত চিকিৎসকদের সাধারণ অনাগ্রহ রয়েছে গ্রামাঞ্চলে যেতে, এমনকি জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে পাঠানো হলেও তাঁরা রাজধানী ও বড় বড় শহরে বদলি হওয়ার জন্য তদবির করেন। অনেক চিকিৎসক শহরে থাকেন, কর্মক্ষেত্রে হাজিরা দেন কালেভদ্রে। চিকিৎসকদের এই প্রবণতার সমালোচনা অনেক হয়েছে, ফল হয়নি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও তাঁদের গ্রামে যাওয়ার জন্য উৎসাহ জুগিয়েছেন, তাও কাজে লাগেনি।
এখানে প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, সংখ্যায় অল্প হলেও কিছু চিকিৎসক তো গ্রামাঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন; তাঁদের দৃষ্টান্ত অন্যরা অনুসরণ করছেন না কেন? আর যাঁরা প্রথমত রাজধানীতে, সম্ভব না হলে বড় কোনো শহরে, বদলি হওয়ার জন্য তদবির করেন এবং বদলি হয়ে আসতে পারেন, তাঁরা কারা? তাঁরা প্রধানত সেসব চিকিৎসক, যাঁরা ক্ষমতাসীন দলের চিকিৎসক সংগঠন বা রাজনৈতিক নেতাদের আনুকূল্য পেয়ে থাকেন। প্রধানমন্ত্রী যখন চিকিৎসকদের গ্রামে যাওয়ার আহ্বান জানান, তখন বিষয়টি যদি সরকার, অন্তত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্মরণ রাখত, তাহলে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোর চিকিৎসক-সংকট এতটা প্রকট হতো না।
অবশ্য প্রধান সমস্যা হলো, আমাদের প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক নেই। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হিসাবে আরও ছয়-সাত হাজার চিকিৎসক থাকলে সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হতো। তাহলে চিকিৎসক সৃষ্টির উদ্যোগটাই সবচেয়ে বেশি জরুরি। সে জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নতুন নতুন মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে; সরকারের তরফে এ লক্ষ্যে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে। তা ছাড়া ব্যবস্থাপনার বিষয়টি যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিদ্যমান সামর্থ্য নিয়েই যে স্বাস্থ্যসেবার মান অনেক বাড়ানো যেতে পারে, সেটাও মনে রাখা দরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থাপনার দিকেই দৃষ্টি দিতে হবে সবচেয়ে বেশি।
No comments