সব চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়িত হোক-প্রণব মুখার্জির সম্ভাব্য সফর

চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতের অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জির সম্ভাব্য বাংলাদেশ সফরের সংবাদে আশান্বিত হওয়ার যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। কারণ দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নের প্রশ্নে বাংলাদেশে ইতিমধ্যে যে হতাশা দেখা দিয়েছে, তা দূর করার জন্য ভারতের বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। আশা করা হচ্ছে, প্রণব মুখার্জির সফর দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর করতে সাহায্য করবে।


গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় হাসিনা-মনমোহন শীর্ষ বৈঠকের সময় তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি এবং ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি বিনিময় ও সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমানা চিহ্নিত করতে স্বাক্ষরিত প্রটোকল আজও পর্যন্ত অনুমোদিত না হওয়ায় বাংলাদেশে যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে, সেটা দূর করার সহজ উপায় হলো, দ্রুত চুক্তি করা ও বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ। এখন দেখতে হবে প্রণব মুখার্জি সত্যিই সফরে আসেন কি না এবং এলেও বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণে তিনি আন্তরিক কি না। বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের প্রতিশ্রুত ১০০ কোটি ডলারের ঋণ যাতে দ্রুত ছাড়ের ব্যবস্থা হয়, সেই ব্যাপারে তিনি ভূমিকা রাখবেন আশা করি। এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় যা সম্ভব হয়নি, এখন দেরিতে হলেও প্রণব মুখার্জির সফরে তা আলোর মুখ দেখুক, এটাই কাম্য।
দুই দেশের মধ্যে কোনো বিষয়ে চুক্তি হলে এর দ্রুত বাস্তবায়ন সবাই প্রত্যাশা করেন—এটা কূটনীতির স্বাভাবিক রীতি। এর কোনো ব্যতিক্রম নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে। দুই দেশের সীমান্তের ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি হস্তান্তর এবং অবশিষ্ট সাড়ে ছয় কিলোমিটার অচিহ্নিত সীমানা চিহ্নিত করার বিষয়ে ১৯৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। গত ৩৮ বছরেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এর পর স্বাক্ষরিত প্রটোকলও বাস্তবায়িত হলো না। এটা দুঃখজনক।
প্রটোকল দ্রুত বাস্তবায়ন চায় ঢাকা। আর ভারতীয় পক্ষ বলছে, সংবিধান সংশোধনীসহ আইনি বাধ্যবাধকতার পর এটি বাস্তবায়ন করা হবে। চলতি মাসে লোকসভার বাজেট অধিবেশনেই বিষয়টি তোলার কথা।
সীমান্তে অবৈধ তর‌্যাপরতা বন্ধে গোলাগুলি না করার বিষয়ে গত বছর মার্চ মাসে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা হয়। অথচ তার পরও বিএসএফ সীমান্তে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। সম্প্রতি একজন বাংলাদেশি নাগরিককে বিএসএফ নির্মমভাবে অত্যাচার করলে দুই দেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এ ব্যাপারে গত ২৪ জানুয়ারি ভারতের ইংরেজি দৈনিক তাদের সম্পাদকীয়তে দাবি করে, বিএসএফের অভিযুক্ত সদস্যদের এই বর্বরতার জন্য বাংলাদেশের কাছে দিল্লির খোলা মনে ক্ষমা চাওয়া উচিত। গত ৩১ জানুয়ারি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তাঁর দায়িত্ব হবে ভবিষ্যতে সীমান্তে এ ধরনের ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।
বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধন রচিত হয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময়। দুই দেশের মধ্যে অমীমাংসিত সমস্যাগুলো কখনোই স্থায়ী সমস্যা হয়ে বিরাজ করতে পারে না। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী যেন বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চলের ভূমি অবৈধভাবে ব্যবহার করতে না পারে, সে ব্যাপারে বাংলাদেশ কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। এখন ভারতকেও এগিয়ে আসতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.