শব্দদূষণঃ উদাসীন পরিবেশ অধিদপ্তর by টিটু সাহা
রাজধানীতে শব্দ দূষণের মাত্রা অনেকগুণে বেড়ে গেছে। কিন্তু দূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ অধিদপ্তর উদাসীন। অথচ শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে দেশে একটি বিধিমালা রয়েছে। তবে অধিদপ্তর বিধিমালা অনুযায়ী কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে রীতিমতো ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিতে দীর্ঘদিন থেকে দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন। সংগঠণগুলোর অভিযোগ, দীর্ঘদিন পরপর দায়সারা গোছের অভিযান পরিচালনা করেই পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের দায়িত্ব শেষ করে।
ফলে বিধিমালা পাসের ৫ বছর পার হয়ে গেলেও ঢাকার শব্দদূষণ কমছে না। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা মহানগরের পরিচালক সুকুমার বিশ্বাস। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। মামলা, জরিমানাসহ নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছি।
সরকার ২০০৬ সালে দেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুমোদন করে। বিধিমালায় দেশে দূষণ নিয়ন্ত্রণে স্থান ও সময় ভেদে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এ রকম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট (ডাব্লিউবিবি)।
ডাব্লিউবিবি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার বেশিরভাগ এলাকাতেই শব্দের মাত্রা বিধিমালায় নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি শব্দের এ মাত্রা পরিমাপ করে।
জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, গত ২৪ জুলাই ফার্মগেটে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা হয় সকাল দশটায় সর্বোচ্চ ১০৩ ডেসিবেল।
আর মতিঝিল শাপলা চত্বরে ২২ সেপ্টেম্বর সকাল নয়টায় শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা মাপা হয় ১০৩ ডেসিবেল।
অথচ বিধিমালা অনুসারে বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন সময়ে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ ডেসিবেল।
২৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় জাদুঘর এলাকায় সকাল এগারোটায় শব্দের মাত্রা সর্বোচ্চ পরিমাপ করা হয় ৯৩ ডেসিবেল। এ সকল স্থানের ক্ষেত্রে শব্দের গ্রহণযোগ্য ডেসিবলিটি নির্ধারণ করা আছে ৬০। নগরীর সব ব্যস্ত এলাকাতেও একই রকম চিত্র পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, নীরব এলাকা বলে বিবেচিত রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও হাসপাতালের আশেপাশের শব্দ মাত্রাও অনেক বেশি। এসব এলাকায় দিবা ও রাত্রীকালীন সময়ের জন্য শব্দের মাত্রা নির্ধারিত রয়েছে ৫০ ও ৪০ ডেসিবেল। কিন্তু ওই তিন মাসে দিনের বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নাম্বার অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সাত মসজিদ রোডের কাকলী স্কুল, ধানমন্ডি বয়েজ স্কুল ও কলেজ, সিটি কলেজে শব্দের ডেসিবিলিটি রেকর্ড করা হয়েছে যথাক্রমে ৯৮, ৯৫, ৯৮ ও ১০৪।
রাজধানীর হাসপাতালগুলোর আশেপাশেও একই চিত্র দেখা গেছে।
গত ২১ জুলাই সকাল নয়টায় স্কয়ার হসপিটাল এবং ২৪ জুলাই সকাল দশটায় পিজি ও বারডেম হাসপাতালে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে যথাক্রমে ১০০ ও ১০৪ ডেসিবল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ এবং বিশ্ব ব্যাংকের একাধিক গবেষণা ও সমীক্ষা থেকে জানা যায়, দেশে ৩০টি কঠিন রোগের কারণ ১২ রকম পরিবেশ দূষণ। শব্দদূষণ এর মধ্যে অন্যতম।
সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু জানান, মাত্রাতিরিক্ত শব্দ যে কোনও মানুষের জন্যে ক্ষণস্থায়ী, স্থায়ী বা উভয় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। শব্দদূষণের কারণে ক্ষণস্থায়ী রক্তচাপ বৃদ্ধি, কানে কম শোনা, ইনসোমনিয়া (অনিদ্রা), স্নায়ুচাপ, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ মানুষের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সাধারণত শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, গর্ভবতী মহিলা, বয়স্ক ব্যক্তিরা শব্দদূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এছাড়া ট্রাফিক পুলিশ, গাড়িচালকরাও শব্দদূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জানান তিনি।
শব্দদূষণে সবচেয়ে বেশি শিকার হন গাড়িচালক-শ্রমিক ও ট্রাফিক পুলিশ।
এ ব্যাপারে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভারমেন্টাল সাইন্স বিভাগের প্রভাষক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বাংলানিউজকে জানান, সম্প্রতি রাজধানীর গাড়িচালক ও শ্রমিকদের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, এদের শতকরা ২৫ শতাংশই শব্দদূষণের কারণে সৃষ্ট কোনও না কোনও স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভূগছেন। এছাড়া ট্রাফিক পুলিশদের ২০ শতাংশ এ ধরনের সমস্যায় ভূগছেন।
মৌচাক মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ তরিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অতিরিক্ত শব্দের কারণে মেজাজ বিগড়ে যায় মাঝে মধ্যেই। কাজে সমস্যা হয়। কাজের উদ্যম নষ্ট হয়ে যায়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রাজ্জাক বলেন, রাজধানীতে শব্দদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ গাড়ির হর্ন।
এছাড়া ইটভাঙ্গা ও নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, জেনারেটর, কলকারখানা, এয়ার কন্ডিশনের কম্প্রেসার, মাইক, ট্রেনের হুইসেলের শব্দসহ নানা কারণে শব্দদূষণের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, এসব যন্ত্র বিশেষ ধরনের শব্দ প্রতিরোধক ধাতব পদার্থ দিয়ে ঢেকে দিলে অতিরিক্ত শব্দ পরিবেশের ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিধিমালা ২০০৬ এর বাস্তবায়ন, নিয়মিত অভিযান পরিচালনাসহ দূষণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেন।
সরকার ২০০৬ সালে দেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুমোদন করে। বিধিমালায় দেশে দূষণ নিয়ন্ত্রণে স্থান ও সময় ভেদে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করে এ রকম একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট (ডাব্লিউবিবি)।
ডাব্লিউবিবি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার বেশিরভাগ এলাকাতেই শব্দের মাত্রা বিধিমালায় নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি।
চলতি বছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি শব্দের এ মাত্রা পরিমাপ করে।
জরিপে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, গত ২৪ জুলাই ফার্মগেটে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা হয় সকাল দশটায় সর্বোচ্চ ১০৩ ডেসিবেল।
আর মতিঝিল শাপলা চত্বরে ২২ সেপ্টেম্বর সকাল নয়টায় শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা মাপা হয় ১০৩ ডেসিবেল।
অথচ বিধিমালা অনুসারে বাণিজ্যিক এলাকায় দিবাকালীন সময়ে শব্দের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ ডেসিবেল।
২৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় জাদুঘর এলাকায় সকাল এগারোটায় শব্দের মাত্রা সর্বোচ্চ পরিমাপ করা হয় ৯৩ ডেসিবেল। এ সকল স্থানের ক্ষেত্রে শব্দের গ্রহণযোগ্য ডেসিবলিটি নির্ধারণ করা আছে ৬০। নগরীর সব ব্যস্ত এলাকাতেও একই রকম চিত্র পাওয়া যায়।
প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, নীরব এলাকা বলে বিবেচিত রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও হাসপাতালের আশেপাশের শব্দ মাত্রাও অনেক বেশি। এসব এলাকায় দিবা ও রাত্রীকালীন সময়ের জন্য শব্দের মাত্রা নির্ধারিত রয়েছে ৫০ ও ৪০ ডেসিবেল। কিন্তু ওই তিন মাসে দিনের বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর ধানমন্ডি ২৭ নাম্বার অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, সাত মসজিদ রোডের কাকলী স্কুল, ধানমন্ডি বয়েজ স্কুল ও কলেজ, সিটি কলেজে শব্দের ডেসিবিলিটি রেকর্ড করা হয়েছে যথাক্রমে ৯৮, ৯৫, ৯৮ ও ১০৪।
রাজধানীর হাসপাতালগুলোর আশেপাশেও একই চিত্র দেখা গেছে।
গত ২১ জুলাই সকাল নয়টায় স্কয়ার হসপিটাল এবং ২৪ জুলাই সকাল দশটায় পিজি ও বারডেম হাসপাতালে শব্দের মাত্রা পরিমাপ করা হয়েছে যথাক্রমে ১০০ ও ১০৪ ডেসিবল।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ এবং বিশ্ব ব্যাংকের একাধিক গবেষণা ও সমীক্ষা থেকে জানা যায়, দেশে ৩০টি কঠিন রোগের কারণ ১২ রকম পরিবেশ দূষণ। শব্দদূষণ এর মধ্যে অন্যতম।
সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু জানান, মাত্রাতিরিক্ত শব্দ যে কোনও মানুষের জন্যে ক্ষণস্থায়ী, স্থায়ী বা উভয় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। শব্দদূষণের কারণে ক্ষণস্থায়ী রক্তচাপ বৃদ্ধি, কানে কম শোনা, ইনসোমনিয়া (অনিদ্রা), স্নায়ুচাপ, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ মানুষের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
সাধারণত শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, গর্ভবতী মহিলা, বয়স্ক ব্যক্তিরা শব্দদূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এছাড়া ট্রাফিক পুলিশ, গাড়িচালকরাও শব্দদূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় জানান তিনি।
শব্দদূষণে সবচেয়ে বেশি শিকার হন গাড়িচালক-শ্রমিক ও ট্রাফিক পুলিশ।
এ ব্যাপারে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভারমেন্টাল সাইন্স বিভাগের প্রভাষক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বাংলানিউজকে জানান, সম্প্রতি রাজধানীর গাড়িচালক ও শ্রমিকদের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, এদের শতকরা ২৫ শতাংশই শব্দদূষণের কারণে সৃষ্ট কোনও না কোনও স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভূগছেন। এছাড়া ট্রাফিক পুলিশদের ২০ শতাংশ এ ধরনের সমস্যায় ভূগছেন।
মৌচাক মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ তরিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অতিরিক্ত শব্দের কারণে মেজাজ বিগড়ে যায় মাঝে মধ্যেই। কাজে সমস্যা হয়। কাজের উদ্যম নষ্ট হয়ে যায়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রাজ্জাক বলেন, রাজধানীতে শব্দদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ গাড়ির হর্ন।
এছাড়া ইটভাঙ্গা ও নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, জেনারেটর, কলকারখানা, এয়ার কন্ডিশনের কম্প্রেসার, মাইক, ট্রেনের হুইসেলের শব্দসহ নানা কারণে শব্দদূষণের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, এসব যন্ত্র বিশেষ ধরনের শব্দ প্রতিরোধক ধাতব পদার্থ দিয়ে ঢেকে দিলে অতিরিক্ত শব্দ পরিবেশের ছড়িয়ে পড়া বন্ধ করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লা শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিধিমালা ২০০৬ এর বাস্তবায়ন, নিয়মিত অভিযান পরিচালনাসহ দূষণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করেন।
No comments