কলগার্ল পরিচয়ে কেন কবর হলো মডেল আদৃতার?

‌্যাম্প মডেল তাহিয়া তাবাসসুম আদৃতার (১৮) মৃত্যু এবং অচেনা কলগার্ল হিসেবে দাফনের ঘটনা নিয়ে রহস্য দানা বাঁধছে। গত সোমবার রাত পৌনে ১০টায় মোহাম্মদপুরে তাজমহল রোডের 'সি' ব্লকের একটি ভবনের ছাদসংলগ্ন সিঁড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে গত বৃহস্পতিবার আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম তাঁর লাশ দাফন সম্পন্ন করেছে। আর এর ঠিক কয়েক ঘণ্টা পর স্বজনরা দাবি করেন, নিহত তরুণীই মডেল আদৃতা।


পুলিশ গতকাল শুক্রবার থেকে নতুন করে এ হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে মাঠে নামলেও গত তিন দিনে তাদের ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। কলগার্ল হিসেবে সন্দেহপোষণ এবং হত্যার আলামত সত্ত্বেও লাশ দ্রুত দাফনের ব্যবস্থা করায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে 'নিখোঁজ আদৃতা'র স্বজনরা হাজির হন মোহাম্মদপুর থানায়। তখন তাঁরা লাশের ছবি দেখে আদৃতার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হন। অথচ দুপুরেই আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম আদৃতার লাশ দাফন করে। মর্গ সূত্রে জানা যায়, পুলিশ সেখানে 'অজ্ঞাতপরিচয় কলগার্ল' হিসেবে লাশ রেখে দেওয়ায় দ্রুত দাফনের ব্যবস্থা করা হয়। তদন্তাধীন ঘটনা সত্ত্বেও লাশ দাফনে পুলিশের আপত্তি ছিল না।
মোহাম্মদপুর থানার ওসি মো. মাহমুদুল হক জানান, মডেল আদৃতার পরিচয় সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া গেলেও তা গোপন করা হয়েছিল আসামিদের গ্রেপ্তার করার জন্যই। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ নেই। তিনি দাবি করেন, আদৃতাকে কলগার্ল হিসেবে উপস্থাপন করেছিল ওই ভবনে অবস্থিত জেনেসিস ভিউ অ্যান্ড মিডিয়া ম্যানেজমেন্টের লোকজন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, আদৃতার প্রেমিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র রেহানও একজন র‌্যাম্প মডেল। আদৃতার খুনের রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাঁকে। এ ছাড়া ওই ভবনের আরো ১৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত খুনের মোটিভ এবং খুনিদের ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। ওড়নাজাতীয় কিছু দিয়ে শ্বাস রোধ করে হত্যার পর ঘাতকরা আলামত সরিয়ে ফেলেছে।
আদৃতার ঘনিষ্ঠজনরা জানান, মডেলিং কাজে বেরিয়ে গত রবিবার দুপুরের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন আদৃতা। পরের দিন সোমবার রাত পৌনে ১০টায় মোহাম্মদপুরে তাজমহল রোডের সি ব্লকের ১২/৬ নম্বর ভবনের ছাদসংলগ্ন সিঁড়ি থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়।
ওই ভবনের তৃতীয় তলার বাসিন্দা নাজিয়া নাসরিন জানান, ভবনের চতুর্থ তলায় জেনেসিস ভিউ মিডিয়া অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের অফিস। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মোতালেব হোসেনসহ এ অফিসের লোকজনই প্রথম মেয়েটির লাশের সন্ধান দেয়। তারা প্রথমে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছিল, মেয়েটিকে তারা চেনে না।
আদৃতার মামা জি কে গাফ্ফার জানান, আদৃতা প্রচণ্ড জেদি ছিলেন। মাঝেমধ্যে রাগ করে বান্ধবীদের বাসায় থাকতেন। এ কারণে তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পেয়ে তেমন খোঁজাখুঁজি করেননি তাঁরা। কিন্তু তিন দিন পরও যখন আদৃতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন তাঁদের সন্দেহ হয়। তাঁরা আদৃতার বন্ধু ও আত্মীয়স্বজনের বাসায় খোঁজ করেন। পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর তাঁরা আদৃতার হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে নিশ্চিত হন।
খালা রুমী জানান, আদৃতা তাঁর সঙ্গেই গোড়ানের একটি বাসায় থাকতেন। তাঁর বাবার নাম তৌহিদুল ইসলাম আজাদ। বাড়ি কুমিল্লায়। মায়ের নাম বেবি। তিনি থাকেন রাজধানীর মতিঝিলে এক বোনের বাসায়। ২০১০ সালে কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন আদৃতা। পরে তিনি ফারিয়া নামের এক মডেলের মাধ্যমে মডেলিং জগতে পা বাড়িয়েছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.