টার্মিনালে দিনভর অপেক্ষা by পার্থ সারথি দাস
যানজটের কারণে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে আটকা পড়ে আছে বাস-মিনিবাস। ফলে সময়মতো সেগুলো ফিরে আসতে পারছে না রাজধানীর টার্মিনালগুলোতে। এ অবস্থায় গতকাল শুক্রবার সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালে ছিল তীব্র গাড়ি সংকট। ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা সকাল থেকে টার্মিনালগুলোতে ভিড় জমালেও গাড়ির অভাবে তাদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। গতকাল কমলাপুর রেলস্টেশনে ছিল ঘরমুখো মানুষের ব্যাপক চাপ। ভেতরে জায়গা না পেয়ে অনেকেই ট্রেনের ছাদে চড়ে গন্তব্যে রওনা হয়েছেন। অথচ সময়মতো স্টেশন ছেড়ে যেতে পারেনি কোনো রুটের ট্রেনই।
প্রায় প্রতিটি রুটেই ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটেছে। আর সদরঘাট টার্মিনালে গতকালও প্রতিটি লঞ্চ অতিরিক্ত যাত্রী বহন করেছে। তবে রওনা হয়ে গেছে সঠিক সময়েই।
পরিবহন নেতা ও চালকদের কাছ থেকে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন মহাসড়কে যানজটের কারণে বাইরে থেকে সময়মতো বাস ফিরতে পারেনি। এর ফলে রাজধানীর তিনটি বাস টার্মিনালেই ছিল তীব্র গাড়ি সংকট। টার্মিনালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর মাঝেমধ্যে যাত্রীশূন্য বাস ও মিনিবাস এলেই খুশিতে ঝলক দিয়ে উঠেছে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের মুখ। কিন্তু যাত্রীর তুলনায় গাড়ি কম থাকায় সেই আনন্দও মাটি হতে সময় লাগেনি গাড়িতে উঠতে ব্যর্থদের।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী খান কালের কণ্ঠকে জানান, গত ঈদের চেয়ে এবার সড়কপথে যাত্রীর চাপ বেশি নয়। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে দীর্ঘ যানজটের কারণে গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনালে প্রয়োজনীয় গাড়ি নেই। এ ছাড়া দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে ফেরি পারাপারে বিলম্বের কারণে খুলনা, বরিশালসহ সংশ্লিষ্ট রুটের গাড়ি টার্মিনালে সময়মতো ফিরতে পারছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাখালী বাস টার্মিনালে গতকাল সকাল থেকেই ছিল বাস সংকট। এদিকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাত্রীর ভিড় বাড়তে থাকে। বাসের অভাবে অনেক কাউন্টারে দুপুর থেকেই টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুপুর ২টার দিকে টার্মিনালে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের এনা ট্রান্সপোর্ট ও শামীম এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি পরিবহনের কাউন্টারে টিকিট কিনতে যাত্রীদের ভিড় চোখে পড়ে। কিন্তু নেত্র পরিবহন, টাঙ্গাইল নিরালা সিটিং সার্ভিস, ধলেশ্বরী, ঝটিকা, মহানগর, রিফাত পরিবহন, সখীপুর-সাগরদীঘি সার্ভিসসহ অধিকাংশ পরিবহন কম্পানির কাউন্টারেই টিকিট বিক্রি বন্ধ ছিল। যাত্রী ও পরিবহন কর্মীরা মহাসড়কের যানজট পেরিয়ে বাস-মিনিবাস কখন টার্মিনালে আসার অপেক্ষায় ছিল।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মহাখালী বাস টার্মিনালের একটি দেয়ালে হেলান দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তরুণ আনাম। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে বিরক্তি চেপে জানান, দুপুর দেড়টা থেকেই টিকিট হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। পরিবহন কর্মীরা বলতে পারছেন না কখন বাস আসবে। জানা গেল, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া যেতে ময়মনসিংহ পর্যন্ত বাসে যেতে আনামের সঙ্গে অপেক্ষায় আছেন তাঁর ভাই মজিবুর রহমান ও বোন রাজিয়া পারভীনও। ধানমণ্ডি থেকে দুপুর ১টায় রওনা দিয়ে এ টার্মিনালে এসে টিকিট পেলেও বিকেল ৪টার দিকেও তাঁরা গাড়িতে উঠতে পারেননি। টার্মিনালের সামনের ফুটপাতে কাগজ বিছিয়ে, অনেকে পথের ওপর লাইন ধরে দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষায় ছিল।
নেত্র পরিবহনের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি বন্ধ হয়ে যায় দুপুরেই। ঢাকা-নেত্রকোনা রুটে এই কম্পানির ১০টি বাস চলাচল করে। দুপুরে টার্মিনালে একটি বাসও ছিল না। কাউন্টারের সহকারী মাস্টার জামাল জানান, যানজটের কারণে গাড়ি সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে।
মহানগর পরিবহন কম্পানির ৫০টি বাস ঢাকা-শেরপুর রুটে চলাচল করে। কাউন্টারের মাস্টার জাফর জানান, এই পরিবহনের একটি বাসও টার্মিনালে নেই। তিনি জানান, বাসপ্রতি দিনে অতিরিক্ত জ্বালানি ৫০০-১০০০ টাকা খরচ হচ্ছে যানজটের কারণে। এ জন্য যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ৭-৮ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা-মাদারগঞ্জ রুটে চলাচলকারী অর্কিড এলিগেন্স পরিবহনের কাউন্টারেও টিকিট বিক্রি বন্ধ ছিল দুপুরে। ব্যবস্থাপক সুমন জানান, টাঙ্গাইলের মধুপুর হয়ে তাঁদের বাসগুলো আসা-যাওয়া করে। বুধবার রাত থেকে তীব্র যানজটের কারণে এই রুটের বিভিন্ন পয়েন্টে বাসগুলো আটকা পড়ছে।
টিকিটের জন্য আসা যাত্রীদের একজন আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মাদারগঞ্জ যেতে ছয় ঘণ্টা ধরে বারবার খোঁজ নিচ্ছেন কখন টিকিট দেওয়া হবে। কিন্তু উত্তর মিলছে না।
ময়মনসিংহের নান্দাইল যেতে দুপুর ১টা থেকে জলসিঁড়ি পরিবহনের টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন খায়রুল আলম বাদল। টার্মিনালের সামনের রাস্তায় ৪০-৫০ জন যাত্রীর সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি জানান, জলসিঁড়ি পরিবহনের একটি বাস এলেই সবাই খুশি হয়ে দৌড়ঝাঁপ করছে। কিন্তু ভিড়ের কারণে অনেকে উঠতে পারছে না। গতকাল গাবতলী ও সায়েদাবাদেও ছিল প্রায় একই চিত্র_গাড়ি নেই। অথচ টার্মিনাল উপচে পড়ছে যাত্রী।
বিআরটিসিতেও বাড়তি ভাড়া : বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) গত ২ নভেম্বর থেকে বিশেষ ঈদ সেবা শুরু করেছে। বিভিন্ন রুটে নামানো হয়েছে ৩০০ বাস। এসব বাস ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, বগুড়া, নেত্রকোনা, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। যাত্রীরা অভিযোগ করে, সরকারি বাসগুলোতেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গতকাল মতিঝিল ডিপোতে দুপুর ২টা থেকেই শতাধিক যাত্রী টিকিট কিনতে অপেক্ষা করে। কিন্তু টিকিট দেওয়া শুরু হয় বিকেল ৪টায়।
যাত্রী মজুমদার বাবু কুমিল্লা যাওয়ার জন্য টিকিট কিনতে গেলে তাঁর কাছে ২০৪ টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু ঢাকা থেকে কুমিল্লা রুটে যাত্রীপ্রতি ভাড়া আগে ছিল ১৬০ টাকা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআরটিসির মতিঝিল ডিপোর পরিবহন কর্মকর্তা জমসেদ আলী বলেন, 'এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।' গতকাল ডিপো থেকে ৭৮টি বাস বিভিন্ন রুটে চলাচল করেছে বলে তিনি জানান।
ট্রেনে যথারীতি শিডিউল বিপর্যয় : ঈদে শুরু থেকেই চলছে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়। কোনো রুটের ট্রেনই নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে কমলাপুর রেল স্টেশন ছাড়তে পারছে না। গতকাল শুক্রবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কমলাপুর রেল স্টেশনে গতকাল শুক্রবার যাত্রীর চাপ ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু টিকিট কেটে নির্ধারিত সময়ের আগে স্টেশনে পেঁৗছেও যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সকাল ৭টার ট্রেন ছাড়তে ছাড়তে প্রায় দুপুর ছুঁয়েছে। এর পরও ছিল মাত্রাতিরিক্ত ভিড়। ভেতরে দাঁড়ানোরও জায়গা নেই। এ অবস্থায় অনেকেই উঠে গেছেন ট্রেনের ছাদে। বাদুড়ঝোলা হয়ে একে অন্যের শরীর চেপে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই গতকাল ঢাকা ছেড়ে গেছে।
এদিকে কুমিল্লায় মালবাহী একটি ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় শিডিউল বিপর্যয়ে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ওই দুর্ঘটনার কারণে গতকাল বিকেলে তিন ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেল চলাচল বন্ধ ছিল। এতে এই রুটের যাত্রীদের পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়ে থাকে যাত্রীরা। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় লাইনচ্যুত বগি উদ্ধারের পর আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
সব লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী : সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গতকাল ছিল যাত্রীর প্রচণ্ড ভিড়। এর প্রভাব পড়েছে লঞ্চগুলোর যাত্রী পরিবহনে। সব লঞ্চেই ছিল উপচেপড়া যাত্রী। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে গন্তব্যে রওনা হয়েছে সব লঞ্চ। তবে লঞ্চগুলো সময়মতোই সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে সকাল ১১টায় সদরঘাটে দেখা গেছে, লঞ্চগুলো কানায় কানায় ভর্তি। আরো যাত্রী ওঠা বন্ধে সেগুলো নিয়ে রাখা হয়েছে মাঝ বুড়িগঙ্গায়। কিন্তু যাত্রীরা ছোট ছোট নৌকাযোগে বুড়িগঙ্গার মাঝখানে গিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে উঠে কোনোক্রমে জায়গা করে নিচ্ছে। লঞ্চের কর্মচারীদের বাধাও তারা মানতে নারাজ।
লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ আছে কি না এ ব্যাপারে জানতে সদরঘাটে গতকাল দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।
পরিবহন নেতা ও চালকদের কাছ থেকে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-টাঙ্গাইলসহ বিভিন্ন মহাসড়কে যানজটের কারণে বাইরে থেকে সময়মতো বাস ফিরতে পারেনি। এর ফলে রাজধানীর তিনটি বাস টার্মিনালেই ছিল তীব্র গাড়ি সংকট। টার্মিনালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পর মাঝেমধ্যে যাত্রীশূন্য বাস ও মিনিবাস এলেই খুশিতে ঝলক দিয়ে উঠেছে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের মুখ। কিন্তু যাত্রীর তুলনায় গাড়ি কম থাকায় সেই আনন্দও মাটি হতে সময় লাগেনি গাড়িতে উঠতে ব্যর্থদের।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী খান কালের কণ্ঠকে জানান, গত ঈদের চেয়ে এবার সড়কপথে যাত্রীর চাপ বেশি নয়। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে দীর্ঘ যানজটের কারণে গাবতলী ও মহাখালী টার্মিনালে প্রয়োজনীয় গাড়ি নেই। এ ছাড়া দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে ফেরি পারাপারে বিলম্বের কারণে খুলনা, বরিশালসহ সংশ্লিষ্ট রুটের গাড়ি টার্মিনালে সময়মতো ফিরতে পারছে না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মহাখালী বাস টার্মিনালে গতকাল সকাল থেকেই ছিল বাস সংকট। এদিকে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যাত্রীর ভিড় বাড়তে থাকে। বাসের অভাবে অনেক কাউন্টারে দুপুর থেকেই টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দুপুর ২টার দিকে টার্মিনালে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের এনা ট্রান্সপোর্ট ও শামীম এন্টারপ্রাইজসহ কয়েকটি পরিবহনের কাউন্টারে টিকিট কিনতে যাত্রীদের ভিড় চোখে পড়ে। কিন্তু নেত্র পরিবহন, টাঙ্গাইল নিরালা সিটিং সার্ভিস, ধলেশ্বরী, ঝটিকা, মহানগর, রিফাত পরিবহন, সখীপুর-সাগরদীঘি সার্ভিসসহ অধিকাংশ পরিবহন কম্পানির কাউন্টারেই টিকিট বিক্রি বন্ধ ছিল। যাত্রী ও পরিবহন কর্মীরা মহাসড়কের যানজট পেরিয়ে বাস-মিনিবাস কখন টার্মিনালে আসার অপেক্ষায় ছিল।
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে মহাখালী বাস টার্মিনালের একটি দেয়ালে হেলান দিয়ে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন তরুণ আনাম। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে বিরক্তি চেপে জানান, দুপুর দেড়টা থেকেই টিকিট হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। পরিবহন কর্মীরা বলতে পারছেন না কখন বাস আসবে। জানা গেল, ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া যেতে ময়মনসিংহ পর্যন্ত বাসে যেতে আনামের সঙ্গে অপেক্ষায় আছেন তাঁর ভাই মজিবুর রহমান ও বোন রাজিয়া পারভীনও। ধানমণ্ডি থেকে দুপুর ১টায় রওনা দিয়ে এ টার্মিনালে এসে টিকিট পেলেও বিকেল ৪টার দিকেও তাঁরা গাড়িতে উঠতে পারেননি। টার্মিনালের সামনের ফুটপাতে কাগজ বিছিয়ে, অনেকে পথের ওপর লাইন ধরে দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষায় ছিল।
নেত্র পরিবহনের কাউন্টারে টিকিট বিক্রি বন্ধ হয়ে যায় দুপুরেই। ঢাকা-নেত্রকোনা রুটে এই কম্পানির ১০টি বাস চলাচল করে। দুপুরে টার্মিনালে একটি বাসও ছিল না। কাউন্টারের সহকারী মাস্টার জামাল জানান, যানজটের কারণে গাড়ি সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখা হয়েছে।
মহানগর পরিবহন কম্পানির ৫০টি বাস ঢাকা-শেরপুর রুটে চলাচল করে। কাউন্টারের মাস্টার জাফর জানান, এই পরিবহনের একটি বাসও টার্মিনালে নেই। তিনি জানান, বাসপ্রতি দিনে অতিরিক্ত জ্বালানি ৫০০-১০০০ টাকা খরচ হচ্ছে যানজটের কারণে। এ জন্য যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ৭-৮ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
ঢাকা-মাদারগঞ্জ রুটে চলাচলকারী অর্কিড এলিগেন্স পরিবহনের কাউন্টারেও টিকিট বিক্রি বন্ধ ছিল দুপুরে। ব্যবস্থাপক সুমন জানান, টাঙ্গাইলের মধুপুর হয়ে তাঁদের বাসগুলো আসা-যাওয়া করে। বুধবার রাত থেকে তীব্র যানজটের কারণে এই রুটের বিভিন্ন পয়েন্টে বাসগুলো আটকা পড়ছে।
টিকিটের জন্য আসা যাত্রীদের একজন আবু বকর সিদ্দিক বলেন, মাদারগঞ্জ যেতে ছয় ঘণ্টা ধরে বারবার খোঁজ নিচ্ছেন কখন টিকিট দেওয়া হবে। কিন্তু উত্তর মিলছে না।
ময়মনসিংহের নান্দাইল যেতে দুপুর ১টা থেকে জলসিঁড়ি পরিবহনের টিকিট কেটে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন খায়রুল আলম বাদল। টার্মিনালের সামনের রাস্তায় ৪০-৫০ জন যাত্রীর সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে তিনি জানান, জলসিঁড়ি পরিবহনের একটি বাস এলেই সবাই খুশি হয়ে দৌড়ঝাঁপ করছে। কিন্তু ভিড়ের কারণে অনেকে উঠতে পারছে না। গতকাল গাবতলী ও সায়েদাবাদেও ছিল প্রায় একই চিত্র_গাড়ি নেই। অথচ টার্মিনাল উপচে পড়ছে যাত্রী।
বিআরটিসিতেও বাড়তি ভাড়া : বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি) গত ২ নভেম্বর থেকে বিশেষ ঈদ সেবা শুরু করেছে। বিভিন্ন রুটে নামানো হয়েছে ৩০০ বাস। এসব বাস ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, বগুড়া, নেত্রকোনা, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। যাত্রীরা অভিযোগ করে, সরকারি বাসগুলোতেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। গতকাল মতিঝিল ডিপোতে দুপুর ২টা থেকেই শতাধিক যাত্রী টিকিট কিনতে অপেক্ষা করে। কিন্তু টিকিট দেওয়া শুরু হয় বিকেল ৪টায়।
যাত্রী মজুমদার বাবু কুমিল্লা যাওয়ার জন্য টিকিট কিনতে গেলে তাঁর কাছে ২০৪ টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু ঢাকা থেকে কুমিল্লা রুটে যাত্রীপ্রতি ভাড়া আগে ছিল ১৬০ টাকা। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বিআরটিসির মতিঝিল ডিপোর পরিবহন কর্মকর্তা জমসেদ আলী বলেন, 'এ ধরনের অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু জানি না।' গতকাল ডিপো থেকে ৭৮টি বাস বিভিন্ন রুটে চলাচল করেছে বলে তিনি জানান।
ট্রেনে যথারীতি শিডিউল বিপর্যয় : ঈদে শুরু থেকেই চলছে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়। কোনো রুটের ট্রেনই নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যের উদ্দেশে কমলাপুর রেল স্টেশন ছাড়তে পারছে না। গতকাল শুক্রবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কমলাপুর রেল স্টেশনে গতকাল শুক্রবার যাত্রীর চাপ ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু টিকিট কেটে নির্ধারিত সময়ের আগে স্টেশনে পেঁৗছেও যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সকাল ৭টার ট্রেন ছাড়তে ছাড়তে প্রায় দুপুর ছুঁয়েছে। এর পরও ছিল মাত্রাতিরিক্ত ভিড়। ভেতরে দাঁড়ানোরও জায়গা নেই। এ অবস্থায় অনেকেই উঠে গেছেন ট্রেনের ছাদে। বাদুড়ঝোলা হয়ে একে অন্যের শরীর চেপে তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই গতকাল ঢাকা ছেড়ে গেছে।
এদিকে কুমিল্লায় মালবাহী একটি ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় শিডিউল বিপর্যয়ে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ওই দুর্ঘটনার কারণে গতকাল বিকেলে তিন ঘণ্টা ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেল চলাচল বন্ধ ছিল। এতে এই রুটের যাত্রীদের পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়ে থাকে যাত্রীরা। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় লাইনচ্যুত বগি উদ্ধারের পর আস্তে আস্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
সব লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী : সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে গতকাল ছিল যাত্রীর প্রচণ্ড ভিড়। এর প্রভাব পড়েছে লঞ্চগুলোর যাত্রী পরিবহনে। সব লঞ্চেই ছিল উপচেপড়া যাত্রী। ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন করে গন্তব্যে রওনা হয়েছে সব লঞ্চ। তবে লঞ্চগুলো সময়মতোই সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে গেছে।
সরেজমিনে গিয়ে সকাল ১১টায় সদরঘাটে দেখা গেছে, লঞ্চগুলো কানায় কানায় ভর্তি। আরো যাত্রী ওঠা বন্ধে সেগুলো নিয়ে রাখা হয়েছে মাঝ বুড়িগঙ্গায়। কিন্তু যাত্রীরা ছোট ছোট নৌকাযোগে বুড়িগঙ্গার মাঝখানে গিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লঞ্চে উঠে কোনোক্রমে জায়গা করে নিচ্ছে। লঞ্চের কর্মচারীদের বাধাও তারা মানতে নারাজ।
লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ আছে কি না এ ব্যাপারে জানতে সদরঘাটে গতকাল দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।
No comments