ইডেন কলেজে বাবুর্চি খুন, ৯ শ্রমিক আটক

রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের ভেতরে নায়েব আলী (৩৫) নামের এক যুবক খুন হয়েছেন। তিনি নির্মাণ শ্রমিকদের খাবার রান্না করতেন। গতকাল শুক্রবার ভোরে পুলিশ তাঁর লাশ নির্মাণাধীন একটি ১১ তলা ভবনের সামনে থেকে উদ্ধার করে মিটফোর্ড মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়।প্রাথমিক তদন্তের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী লালবাগ থানার এসআই মীর সাবি্বর কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিদিন ৫০ জন শ্রমিককে রান্না করে খাওয়াতেন বাবুর্চি নায়েব আলী। বাজার খরচ বাবদ অন্য শ্রমিকরা তাঁর কাছে সব সময় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা গচ্ছিত রাখত। এ টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্যই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে তাঁর ধারণা।


পারিবারিক সূত্র জানায়, নায়েব গাইবান্ধার সাঘাটা থানার পশ্চিম রাঘবপুর গ্রামের রাজীব উদ্দিনের ছেলে। তাঁর স্ত্রী ও তিন সন্তান রয়েছে।
এসআই সাবি্বর আরো বলেন, বাবুর্চি নায়েব আলী প্রতিদিনের মতো গতকাল ভোরেও শ্রমিকদের জন্য খাবার রান্না করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় তাঁকে জবাই করে লাশ রান্নাঘরের পাশেই ফেলে রাখা হয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি রক্তমাখা বঁটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৯ শ্রমিককে আটক করা হয়েছে। তারা হলো মো. জাকির হোসেন, এরশাদ, শিজু, সুজন, সাইফুল জুয়েল, মতি ও ভুট্টো। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রকৌশলী শামসুল হক বলেন, ছাত্রীদের আবাসনের জন্য প্রায় আড়াই শ কক্ষবিশিষ্ট ভবনটির নির্মাণকাজ তিন বছর ধরে চলছে। ৯ জন ঠিকাদারের অধীনে প্রায় দুই শতাধিক শ্রমিক কাজ করছে। নিহত নায়েব তারাজুল ইসলাম নামের এক ঠিকাদারের অধীনে বাবুর্চির কাজ করতেন।
নির্মাণাধীন ভবনটির সহযোগী ঠিকাদার তারাজুল ইসলাম বলেন, ভবন নির্মাণ শুরুর পর থেকেই নায়েব আলী তাঁর অধীনে বাবুর্চির কাজ করছেন। প্রতিদিনের মতো গতকাল ভোরে তিনি রান্না শুরু করেন। এর কিছুক্ষণ পর তাঁর সহযোগী বাবুর্চি সাইফুল রান্নাঘরে গিয়ে এর পাশেই নায়েবের রক্তাক্ত দেহ দেখতে পান। এরপর তাঁর চিৎকারে অন্য শ্রমিকরা ঘটনাস্থলে যায়। পরে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়।
তারাজুল ইসলাম আরো বলেন, তিনি নায়েবের কাছে মাঝেমধ্যে শ্রমিকদের সাপ্তাহিক খাবার খরচের জন্য পাঁচ-ছয় হাজার টাকা দিতেন। এ ছাড়া শ্রমিকরা তাঁর কাছে টাকা রাখত। বিভিন্ন সময় তাঁর কাছে ৩০-৪০ হাজার টাকা থাকত। এসব টাকা নেওয়ার জন্য তাঁকে কেউ খুন করে থাকতে পারে।
নির্মাণাধীন ভবনের পাশেই ইডেন কলেজের ৩ নম্বর গেটে দারোয়ানের দায়িত্ব পালন করেন আবদুল মতিন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, বৃহস্পতিবার সারা রাত তিনিই গেটে দায়িত্ব পালন করেন। গতকাল ভোর রাতে বাইরে থেকে নির্মাণাধীন ভবন এলাকায় কাউকে ঢুকতে দেখা যায়নি। কেউ বাইরেও বের হয়নি। তাঁর ধারণা, নায়েব আলীকে ভেতরের কেউ খুন করেছে।
লালবাগ থানার ওসি আজিজুর রহমান বলেন, 'বাবুর্চি নায়েব আলী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তাঁর সহকর্মী শ্রমিকরা জড়িত থাকতে পারে। লাশ উদ্ধারের সময় নায়েবের লুঙ্গির নিচে একটি হাফপ্যান্ট ছিল। ওই প্যান্টের সাইডের পকেটের চেইন খোলা পাওয়া গেছে। এ পকেটেই সে সব সময় শ্রমিকদের গচ্ছিত টাকা রাখত।' ওসি আরো বলেন, ইডেন কলেজের ভবন নির্মাণ করতে প্রতিদিন অনেক শ্রমিক কাজ করে। গতকাল ঘটনাস্থলে গিয়ে অন্য শ্রমিকদের খুনের ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। নায়েবের কাছ থেকে খোয়া যাওয়া টাকা উদ্ধার করতে অন্য শ্রমিকদের আসবাবপত্র ও বিছানায় তল্লাশি চালানো হয়েছে। তবে কোথাও টাকা পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে আটক ৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.