আজ হজ, লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখরিত হবে আরাফাতের ময়দান

জ শনিবার পবিত্র হজ। 'লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি'মাতা লাকা ওয়ালমুল্ক (আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার)' ধ্বনিতে মুখরিত হবে আরাফাতের ময়দান। পাপমোচন ও আত্মশুদ্ধির লক্ষ্যে এভাবে তালবিয়া পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হবেন লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান।


সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কায় এরই মধ্যে সমবেত হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ২৫ লাখের বেশি ধর্মপ্রাণ মুসলি্ল। সাতবার কাবা শরিফ তাওয়াফের পর পবিত্র হজের আহকাম পালন করতে গতকাল শুক্রবার তাঁরা মিনার উদ্দেশে রওনা হন। কেউ গাড়িতে চড়ে, কেউ বা পায়ে হেঁটে এ পথ পাড়ি দেন।
মুসলি্লরা আজ মিনা থেকে আরাফাতের ময়দানে সমবেত হয়ে জামাতে জোহরের নামাজ আদায় করবেন। হজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ শুরু হবে তখনই। সেখানে তাঁরা হজের খুতবা শুনবেন। আরাফাতের ময়দানে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থানের পর তাঁরা শয়তানের উদ্দেশে নিক্ষেপের জন্য ৪৯টি পাথর সংগ্রহ করতে মুজদালিফায় যাবেন। সেখানে রাতযাপন শেষে ফজরের নামাজ আদায় করে মিনায় ফিরে যাবেন। মিনায় এসে হাজিরা শয়তানকে পাথর ছোড়ার পর আগামীকাল রবিবার পশু কোরবানি দেবেন। পরে মিনা থেকে মক্কায় গিয়ে হাজিরা পবিত্র কাবা শরিফ আবারও সাতবার তাওয়াফ করবেন। সেখান থেকে তাঁরা আবার মিনায় ফিরে এসে আরো দুই দিন অবস্থান করে হজের অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষ করবেন।
হাজিদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সৌদি সরকার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। এ বছর হাজিদের সহযোগিতার জন্য কমপক্ষে এক লাখ নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করেছে দেশটি। হাজিদের নিরাপত্তা দেখভালের পাশাপাশি অতীতের মতো দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে বা পদদলিত হয়ে কোনো হাজির মৃত্যুর ঘটনা যাতে না ঘটে সে বিষয়েও সার্বক্ষণিক নজরদারি করবেন নিরাপত্তাকর্মীরা।
সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ১৭ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান হজ পালনের জন্য এসেছেন। আর সাত থেকে আট লাখ সৌদি নাগরিক হজ পালন করছেন।
ইসলাম ধর্মের প্রচারক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মভূমি সৌদি আরব। ইসলাম ধর্মের পূর্ণ বিকাশ এখানেই ঘটেছে। মক্কা-মদিনার মতো নবীর স্মৃতিবিজড়িত শহর, কাবা শরিফ এবং হজের তীর্থকেন্দ্র আরাফাতের ময়দান এখানে হওয়ায় বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোর অভিভাবক বলা হয়ে থাকে সৌদি আরবকে। সেই দায়িত্ব পালনে সৌদি সরকার আন্তরিক হলেও গত ২০ বছরে সংঘটিত বেশ কিছু বড় দুর্ঘটনা দেশটিকে বিপাকে ফেলে। সে কারণে এ বছর নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়ানো এবং হাজিদের সেবাদান ও চলাচল নিরাপদ করতে মিনা শহরের একটি পুরনো সেতু ভেঙে সেটি বহুমুখী করে তৈরি করা হয়েছে। হাজিদের হাঁটার জন্য সেখানে একমুখী লেন করা হয়েছে। এ ছাড়া পবিত্র শহরগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের সুবিধার্থে হালকা রেলব্যবস্থাও চালু করা হয়েছে।
২০০৬ সালে আরাফাতের ময়দান থেকে শয়তানের উদ্দেশে পাথর নিক্ষেপের জন্য মিনায় ফেরত আসার পথে সংকীর্ণ ওই সেতুটি অতিক্রম করার সময় অন্য হাজিদের দ্বারা পদদলিত হয়ে ৩৬৪ জন হাজি নিহত হন। এর আগে ২০০৪ সালেও মিনায় ২৫১ জন হাজি পদদলিত হয়ে মারা যান। এ ছাড়া ১৯৯০ সালে মিনা শহরের আরেকটি টানেলের ভেতরে দ্রুতগামী হাজিদের পায়ের চাপে পিষ্ট ও শ্বাসরুদ্ধ হয়ে এক হাজার ৪২৬ জন হাজির করুণ মৃত্যু হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশি হাজিরাও ছিলেন। সূত্র : এএফপি ও বাংলাদেশ হজ ব্যবস্থাপনা পোর্টাল।

No comments

Powered by Blogger.