জামায়াতের আলোচনা সভা : দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে ৭ নভেম্বরের চেতনায় বৃহত্তর ঐক্য গড়তে হবে

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক একেএম নাজির আহমদ বলেছেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এ দেশের মানুষের মনের ভাষা বুঝতে পেরেছিলেন বলেই সংবিধানে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস সংযোজন করেছিলেন। এ দেশের মানুষ গণতন্ত্রমনা। তারা স্বাধীনভাবে কথা বলতে চায়। এ জন্য জিয়াউর রহমান একদলীয় বাকশালী শাসন ব্যবস্থা খতম করে দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। সে জন্য রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা পেয়েছিলেন। ক্ষমতার বলে আইন আর জোর করে মানুষের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা পাওয়া যায় না।


যত ভালো উদ্দেশ্য নিয়েই একদলীয় বাকশালী শাসন প্রতিষ্ঠা করা হোক না কেন, এর শেষ পরিণাম কখনও ভালো হয় না। তিনি বলেন, ’৭৫ সালের ৭ নভেম্বরে সিপাহী-জনতার মধ্যে যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল, তা ছিল এক ঐতিহাসিক ঐক্য। সিপাহী-জনতা সেদিন সুদৃঢ় ঐক্যের প্রাচীর গড়ে তুলে দেশ এবং জাতিকে অপশাসন থেকে মুক্ত করেছিল। তাই বর্তমান আওয়ামী দুঃশাসন থেকে দেশ ও জাতিকে মুক্ত করতে ৭ নভেম্বরের সেই চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি গতকাল সকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। দলের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী সেক্রেটারি এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ এমপির সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরী কর্মপরিষদ সদস্য প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা, মো. ফরিদ হোসাইন, মঞ্জুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, কবির আহমদ ও মহানগরী প্রচার সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। সভা পরিচালনা করেন মহানগরী নেতা ডা. রেদওয়ান উল্লাহ শাহিদী।
অধ্যাপক নাজির আহমদ আরও বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে আরেকটি সংযোজন হলো কেয়ারটেকার সরকার। জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক গোলাম আযম ছিলেন এর রূপকার। আওয়ামী লীগ এবং জামায়াতে ইসলামীর যুগপত্ আন্দোলনের মাধ্যমে সংবিধানে এই পদ্ধতি সংযোজন করা হয়। বিগত তিনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের নির্বাচন ছিল মাইলফলক। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনে ভরাডুবির আশঙ্কায় কেয়ারটেকার পদ্ধতি সংবিধান থেকে বাদ দিয়েছে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ কেয়ারটেকার সরকারের জন্য ঐক্যবদ্ধ। তাই আগামীতে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। তিনি বলেন, বিরোধী দল বা জামায়াত সরকারের শত্রু নয়, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। তাদের সঙ্গে রাজনৈতিক আচরণ করতে হবে। জামায়াতে ইসলামী একটি বৈধ ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। কিন্তু, গণতন্ত্রের দাবিদার সরকার জামায়াত-শিবিরকে কোনো কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। বিরোধীদলের মতো সরকার মিডিয়াকেও নিয়ন্ত্রণ করে রাখছে।
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে সরকার জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আটক রেখেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জামায়াত নেতাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সরকার শুধু মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ এখনও আনতে পারেনি সরকার। তিনি মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ বন্ধ এবং আটক জামায়াত নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে হামিদুর রহমান আযাদ এমপি বলেন, ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এক টার্নিং পয়েন্ট। সেদিন সিপাহী-জনতা দেশ এবং জাতিকে একটি কালো অধ্যায় থেকে মুক্ত করেছিল। মানুষ একটি নতুন দেশ দেখতে পেয়েছিল। তিনি বলেন, শেখ মুজিবুর রহমান একজন জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। কিন্তু তিনি ’৭২ সালে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি অন্তর্ভুক্ত এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েমের মাধ্যমে জুলুম-নির্যাতনে মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিলেন। দুঃশাসনের ফলশ্রুুতিতে জনপ্রিয় দল আওয়ামী লীগ ইতিহাসের আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। পরে জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার কারণেই তারা বর্তমানে রাজনীতি করার সুযোগ পাচ্ছে। তিনি বলেন, ৭ নভেম্বরের চেতনা ধর্মনিরপেক্ষতা ও জয় বাংলার স্লোগানের নয়, আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস এবং নারায়ে তাকবির স্লোগানের চেতনা। বর্তমানে আবারও ’৭৪-এর পদধ্বনি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখন আর সময় নেই। দেশ রক্ষায় মিথ্যাবাদী, দুর্নীতিবাজ সরকারকে হটাতে শপথ নিতে হবে। তিনি কারাগারে আটক নিরাপরাধ জামায়াত নেতাদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন। অন্যথায় জনগণ জেলখানার দিকে লংমার্চ করে নেতাদের মুক্ত করে আনবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.