মসলার বাজার এবার ঠাণ্ডা, স্বস্তিতে ক্রেতারা by রাজীব আহমেদ

প্রতিবছর ঈদের আগে মসলার দাম বাড়লেও এ বছর দেখা যাচ্ছে উল্টো। আদা, জিরা, এলাচ, লবঙ্গসহ কয়েকটি প্রয়োজনীয় মসলার দাম প্রতি ১০০ গ্রামে পাঁচ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পেঁয়াজ ও রসুনের দাম তুলনামূলক কম।সব মিলিয়ে গরম মসলার বাজারে এখন শীতলভাবই বইছে। ফলে গত রোজার ঈদের তুলনায় কোরবানির ঈদে স্বস্তিতে আছে ক্রেতারা। বিক্রেতারা বলছেন, প্রচুর আমদানি ও নতুন মৌসুমের দেশীয় পণ্য বাজারে আসায় দাম কমেছে।


বছরের সবচেয়ে বেশি মসলা বিক্রি হয় কোরবানির ঈদে। এ সময় চাহিদা বেশি থাকায় দাম বেড়ে যায়। কিন্তু এ বছর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি বলে মনে করেন পাইকারি ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা। পাশাপাশি তাঁদের ধারণার চেয়ে এ বছর দেশি কয়েকটি পণ্যের সরবরাহ অনেক বেশি।
সাধারণভাবে মাংস রান্নার জন্য পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ, জিরা, দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ ও গোলমরিচ প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ ও গোলমরিচ প্রয়োজন হয় খুব কম পরিমাণে। অন্যদিকে আলুবোখারা, জয়ত্রি, কাজুবাদাম, জায়ফল ইত্যাদি বিশেষ মসলা প্রয়োজন হয় বিশেষ রান্নার জন্য। মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ
সাধারণত মসলা ১০০ গ্রাম অথবা ২৫০ গ্রাম হারে কেনে। আর কম আয়ের মানুষ গরম মসলা কেনে সর্বোচ্চ ৫০ টাকার। যার মধ্যে দারুচিনি, এলাচ, লবঙ্গ, গোলমরিচ ইত্যাদি থাকে।
কারওয়ান বাজারের খুচরা মসলা বিক্রেতা চান মিয়া জানান, গত রোজার ঈদে মসলার দাম এত বেশি ছিল যে ৫০ টাকার মসলা বিক্রি করা কঠিন ছিল। কিন্তু এবার দাম কমেছে। ফলে ৫০ টাকার মসলা কিনলে একটি পরিবারের কয়েক বেলার রান্না হয়ে যাবে। তিনি আরো জানান, সবচেয়ে বেশি কমেছে এলাচ ও লবঙ্গের দাম। এ ছাড়া জিরা, কালিজিরা ও গোলমরিচের দাম কিছুটা কমেছে। তবে বেড়েছে জায়ফলের দাম।
কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানের মালিক মিজানুর রহমান জানান, তাঁর দোকানে সবচেয়ে ভালো মানের জিরা ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরেও জিরা পাওয়া যাচ্ছে। বেশির ভাগ মানুষ কিনছে ৪০০ টাকা কেজির জিরা। তবে এখানে খুচরা মসলার দোকানে প্রতি কেজি জিরা ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। জিরার দাম আগের চেয়ে ৪০-৫০ টাকা কম বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া গোলমরিচ এক হাজার টাকা থেকে কমে এখন ৮৫০ টাকা, দারুচিনি ৩০০, জয়ত্রিক ৪০০০, আলুবোখারা ৭২০-৭৫০, কিশমিশ ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। জায়ফল বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ১০ টাকা দরে। এটির দাম কেজিপ্রতি ৫০০ টাকা বেড়ে ১,৩৫০ টাকা হয়েছে বলে জানান মিজানুর রহমান। এ ছাড়া লবঙ্গের দাম ছিল কেজিপ্রতি ২,৬০০ টাকা। এখন তা কমে কেজিপ্রতি ১,৬০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
সবচেয়ে বেশি স্বস্তি এখন আদা ও রসুনের বাজারে। গত বছরের এই সময়ের ২৫০ টাকার দেশি রসুন এখন কেজিপ্রতি ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। চীনের রসুন বরং দেশি রসুনের দামের চেয়ে বেশি। প্রতি কেজি তা বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা দরে। হরেক রকমের আদায় বাজার সয়লাব। দেশি নতুন আদা ৫০, ভারতীয় মিজোরামের আদা ৪০, চীনের আদা ৬০-৭০, দেশি পুরনো আদা ১২০ টাকা_ইত্যাদি নানা দামে পাওয়া যাচ্ছে আদা।
পেঁয়াজের দামও নাগালের মধ্যে। বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৪০ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরেই স্থিতিশীল আছে পেঁয়াজের দাম।
পাইকারি বাজারে আদা-রসুনের দাম আরো কম। শ্যামবাজারের সুরমা ট্রেডার্সের মালিক ঝুটন সাহা কালের কণ্ঠকে জানান, তিনি কেজিপ্রতি চীনের আদা ৪৫, দেশি নতুন আদা ৩২, কেরালার আদা ৩০-৩৫ ও মিজোরামের আদা ১৫-২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এ ছাড়া চীনের রসুন ৪০-৪৫, দেশি রসুন ৩০-৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
আদা, রসুন ও পেঁয়াজের দাম এ বছর কম কেন জানতে চাইলে শ্যামবাজারের আমদানিকারক ও নবীন ট্রেডার্সের মালিক নারায়ণ সাহা কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছর এই সময়ে দেশীয় পণ্যের সরবরাহ অনেক কম থাকে। কিন্তু এ বছর সরবরাহ প্রচুর। আমদানিও বেশি। ফলে দাম অনেক কমে গেছে।
এ বছর দামের ক্ষেত্রে ক্রেতারা অনেক স্বস্তি পাচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, '২০০-২৫০ টাকার রসুন এখন ৫০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। এর চেয়ে দাম আর কী কমবে।'

No comments

Powered by Blogger.