ভিজিএফ কার্ডের চাল-এমপি রনির আপত্তির কারণে বঞ্চিত তিন হাজার দুস্থ মানুষ

টুয়াখালী-৩ আসনের আলোচিত-সমালোচিত সাংসদ গোলাম মাওলা রনির আপত্তির কারণে ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারের বিশেষ বরাদ্দকৃত ভিজিএফ চাল থেকে বঞ্চিত হয়েছে গলাচিপা পৌর এলাকার ৩ হাজার দুস্থ মানুষ। এমপি-মেয়রের ক্ষমতার লড়াইয়ে এসব দুস্থ মানুষের এখন ঈদুল আজহার আনন্দ ম্লান হওয়ার উপক্রম। তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা ঈদুল আজহার আগেই ভিজিএফ চাল বিতরণের দাবি জানিয়েছেন সরকার ও প্রশাসনের কাছে।


গতকাল শুক্রবার সকালে গলাচিপা পৌর শহরে ভিজিএফ চাল বিতরণের দাবিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং এমপি গোলাম মাওলা রনি সমর্থকরা পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিল করেছে। ঈদের আগে ভিজিএফ চাল বিতরণ নিয়ে টালবাহানার প্রতিবাদে সকাল ১০টায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা টিটো ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ মজিবুর রহমান প্যাদার নেতৃত্বে পৌর চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
মিছিলটি থানার সামনের সড়ক অতিক্রমকালে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় এমপি রনি সমর্থকরা মিছিলকারীদের ওপর হামলা চালায়। এ নিয়ে দু'পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরে এমপি রনির সমর্থিত তিন কাউন্সিলর সমীর পাল, আবুল বাশার ও মাহামুদুল হাসান ডিউকের নেতৃত্বে পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে মিছিল বের হয়। তারা 'দুর্নীতিবাজ মেয়রের' অপসারণের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। এতে শহরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং বন্ধ হয়ে যায় এলাকার দোকানপাট। দুর্ভোগে পড়ে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা সাধারণ মানুষ।
গলাচিপা পৌর এলাকায় ১ হাজার হতদরিদ্র ও দুস্থ লোকের জন্য ভিজিএফ কার্ড বরাদ্দ রয়েছে এবং ঈদুল আজহা উপলক্ষে বিশেষ বরাদ্দ হিসেবে আরও ২ হাজার কার্ড বরাদ্দ দেয় সরকার। অতিরিক্ত ২ হাজার ভিজিএফ কার্ডের তালিকা নিয়ে প্রথমে মেয়র ও এমপি সমর্থিত কাউন্সিলরদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরে পৌর মেয়র-কাউন্সিলররা ভিজিএফ কার্ডের তালিকা চূড়ান্ত করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান এবং জেলা প্রশাসক তা অনুমোদন করে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরে প্রেরণ করেন। সে অনুযায়ী গলাচিপা পৌর এলাকার ৩ হাজার দুস্থ মানুষের জন্য জনপ্রতি ১০ কেজি করে মোট ৩০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে পৌর কর্তৃপক্ষ ১০ টন চাল উত্তোলনও করেছে। এ খবর পেয়ে স্থানীয় সাংসদ গোলাম মাওলা রনি আপত্তি জানালে বাকি ২০ টন চাল উত্তোলন বন্ধ করে দেয় ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ। গত ১ নভেম্বর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত পৌর মেয়রকে দেওয়া এক চিঠিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যর সুপারিশসহ নতুন করে ভিজিএফ কার্ডের তালিকা দেওয়ার জন্য বলা হয়। অফিস ছুটি হয়ে যাওয়ায় নতুন করে আর তালিকাও করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ঈদুল আজহার আগে গলাচিপা পৌর এলাকার ৩ হাজার হতদরিদ্র মানুষ ভিজিএফ কার্ডের চাল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
ভিজিএফ বঞ্চিত আবদুর রহিম ও আবদুস সোবহান বলেন, 'মোরা এমপি-মেয়র বুঝি না, ঈদের লাইগ্যা সরকার মোগোরে চাউল দিছে, মোরা হেই চাউল চাই। নেতা-নেতা ঝগড়া-কাইজ্যা করবে, আর ভোগান্তি হইবো মোগো গরিব গো। হেডা হইবো না, ঈদের আগে মোগে চাউল দিতে হইবো।'
পৌর মেয়র হাজি আবদুল ওহাব খলিফা বলেন, 'পৌর পরিষদ সম্মিলিতভাবে ভিজিএফ তালিকা করা হয়েছে এবং তা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। জেলা প্রশাসকের অনুমোদনের পর ৩০ টন চালও বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এমপি গোলাম মাওয়া রনি আপত্তি দেওয়ার কারণে পৌর এলাকার গরিব-দুস্থ মানুষ ভিজিএফ চাল থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এমপি রনি টেলিফোন করে ভিজিএফ চালের ছাড়পত্র না দেওয়ার জন্য উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন এবং ভিজিএফ চালের ছাড়পত্র দিলে তার পরিণতি ভালো হবে না বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের শাসিয়ে দেন। এতে ত্রাণ দফতর ভীতিগ্রস্ত হয়ে ভিজিএফ চাল উত্তোলন বন্ধ করে দেয়।
এমপি রনি সমর্থিত পৌর কাউন্সিলর সমীর চন্দ্র পাল, আবুল বাশার ও মাহামুদুল হাসান ডিউক বলেন, 'মেয়রের খামখেয়ালিপনা এবং নিজের পছন্দের মতো তালিকা করায় এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে ঈদের আগে হতদরিদ্র লোকজন ভিজিএফ কার্ডের চাল থেকে বঞ্চিত হলো।'
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক অমল কৃষ্ণ মণ্ডল জানান, তালিকা অনুযায়ী ভিজিএফের বিশেষ বরাদ্দের চাল তারা যথাসময়ে পাঠিয়েছেন এবং পৌর মেয়রকে গরিবদের মধ্যে এ চাল সুষ্ঠুভাবে বিতরণের জন্য বলা হয়েছে। এখন তারা সেটা বিতরণ করতে না পারলে তাদের ব্যর্থতা। সরকার চাল দিয়েছে গরিবদের দেওয়ার জন্য। এ নিয়ে সেখানে রাজনীতি কিংবা দলাদলি করার জন্য নয়।

No comments

Powered by Blogger.