রাজনৈতিক আলোচনা- ''উচিত কথায় ননদ বেজার, গরম ভাতে বিলাই (বিড়াল)' by আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী

লিখতে বসেছিলাম 'বিশ্বের পরবর্তী সুপারপাওয়ার কে হবে, চীন, না ভারত' শীর্ষক আমার অসমাপ্ত লেখাটির শেষাংশ। এমন সময় খবর এল বিএনপির সহসভাপতি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে শুধু তাঁর পদ থেকে নয়, দলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সর্বস্তরের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এটা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত। আসলে দলের চেয়ারপারসনের ফরমান। সভায় উপস্থিত স্থায়ী কমিটির আর সব সদস্য 'জি ম্যাডাম' বলে অনুগত পারিষদের ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে বিএনপির রাজনীতিতে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তাঁর মেকিয়াভেলিয়ান চতুর হাসিটি নিশ্চয়ই হেসেছেন।
হয়তো ভাবছেন ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি নিয়ে তাঁর খেলারই জিত হয়েছে। তাঁর চাতুর্যের খেলায় একদিকে খালেদা জিয়া বাড়িছাড়া, অন্যদিকে নাজমুল হুদা দলছাড়া।
বিএনপি থেকে ব্যারিস্টার হুদার বহিষ্কারের খবরটি জেনে কালের কণ্ঠে আমার আজকের লেখার সাবজেক্টটি বদলাতে হলো। চীন ও ভারত আগামীকালই বিশ্বের সুপারপাওয়ার হতে যাচ্ছে না। দুটি দেশের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মাত্র শুরু হয়েছে। গঙ্গা ও হোয়াংহো নদীর জল কোথা থেকে কোথায় গড়ায়, তা দেখার জন্য আমরা আরো কিছুকাল অপেক্ষা করতে পারি। তা নিয়ে লেখালেখিও আরো কিছুকাল স্থগিত রাখা যায়। সে কথা ভেবেই চীন ও ভারত সম্পর্কিত লেখা শেষ করা স্থগিত রেখে নিজেদের ঘরের একটি সমস্যার দিকে চোখ ফিরিয়েছি। আশা করি কালের কণ্ঠের সহৃদয় পাঠকরা এ জন্য আমাকে ক্ষমা করবেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন যেভাবে বিভিন্ন তোলপাড় কাণ্ড চলছে, তাতে ব্যারিস্টার হুদা দল ছাড়লেন, কি তাঁকে দল ছাড়ানো হলো_এটা কোনো বড় খবর নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী কোনো প্রকার কৈফিয়ত তলব না করেই তাঁকে যেভাবে দলের সর্বস্তরের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হলো, তা অবশ্যই একটি বড় খবর। স্পষ্ট বক্তা বলে নাজমুল হুদার বহুকাল থেকে দলের ভেতর দুর্নাম এবং বাইরে সুনাম রয়েছে। বহুদিন থেকেই তিনি দলের একজন ডিসিডেন্ট নেতা। সব বড় গণতান্ত্রিক দলের এ ধরনের ভিন্নমত পোষণকারী নেতা-কর্মী থাকেন। আওয়ামী লীগেও আছেন। তাঁরা সংখ্যালঘিষ্ঠ হওয়ায় দলে কোণঠাসা হয়ে আছেন। দলনেত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের শিরশ্ছেদের হুকুম দেননি।
যদি এই ভিন্নমত পোষণকারীদের হাসিনা শিরশ্ছেদের হুকুম দিতেন, তাহলে তোফায়েল আহমদ, আমির হোসেন আমু থেকে শুরু করে অনেক প্রবীণ ও নবীন নেতাই আজ আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হতেন। শেখ হাসিনার দলের শীর্ষ নেতা এবং পরিবারের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ও এক-এগারোর সময় জেলে বসে তাঁর বিরুদ্ধে অত্যন্ত আপত্তিকর ও ক্ষতিকর বিবৃতি দেওয়া সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হননি। এখানেই দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সাংগঠনিক চরিত্রের বিরাট পার্থক্য ও ভিন্নতা। একটি দল তার সব ত্রুটিবিচ্যুতি সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত গণতান্ত্রিক চরিত্র আঁকড়ে ধরে আছে। অন্য দলটি জন্মাবধি একটি গ্রান্ড ওল্ড ফ্যাসিস্ট অ্যাসেম্বলি (আমি মুসলিম লীগ নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কাছ থেকে শেষের এই কথাটি কয়েন করেছি)।
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা সম্প্রতি এমন কী কথা বলেছেন, যে জন্য তাঁকে দল থেকে বহিষ্কৃত হতে হলো? তাঁর কোন কথাটিতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে অথবা তিনি কথা বলার সময় তাঁর কোন কথায় দলের গণতান্ত্রিক বিধিবিধান অমান্য করা হয়েছে? সোমবারের (২২ নভেম্বর) ঢাকার কাগজে প্রকাশিত এ সম্পর্কিত খবর দেখেছি। তিনি দুই দিন আগে সাংবাদিকদের কাছে দলের সমালোচনা করেননি, দলের আইনজীবীদের সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, 'খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়িছাড়া-সংক্রান্ত হাইকোর্ট বেঞ্চের আদেশের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশের আবেদন না করার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিলের পাশাপাশি আইনজীবীদের অবশ্যই আলাদাভাবে হাইকোর্ট বেঞ্চের আদেশটি স্থগিত রাখার আবেদন জানানো উচিত ছিল। আবেদনটি করলে বাড়ি ছাড়ার বিষয়ে আদালতের কাছ থেকে একটা সিদ্ধান্ত জানা যেত।'
এই কথায় কি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা হলো? ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা একজন আইনজীবী। তাঁর স্ত্রী সিগমা হুদাও একজন আইনজীবী। এই স্বামী-স্ত্রীর কেউ যদি কোনো আইন বা মামলাঘটিত বিষয়ে আইনজীবী হিসেবে মতামত প্রকাশ করেন, তা কি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের পর্যায়ে পড়ে? এ ব্যাপারে মতামত প্রকাশে বিএনপি হাইকমান্ড কোনো নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি। তাহলে এই হাস্যকর অভিযোগটি তাঁর বিরুদ্ধে আনা হলো কেন? তাঁর বহিষ্কারাদেশের মধ্য দিয়েও দলের নেত্রীর এবং তাঁর 'জি ম্যাডাম' সভাসদদের ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে আক্রোশ চরিতার্থ করা এবং প্রতিহিংসামূলক মনোভাবেরই প্রমাণ পাওয়া যায় না কি?
১৯৬৪ সালের ১৬ আগস্ট মুসলিম লীগ দলের নেতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নির্দেশে তাঁর দল সারা অবিভক্ত ভারতে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস (direct action day) পালনের ব্যবস্থা করেছিল। তাতে বাংলা ও বিহার প্রদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের লাখ লাখ নর-নারী আহত, নিহত, ধর্ষিত, অপহৃত ও বাস্তুহারা হয়েছিল। ওই সময়ের কলকাতার দাঙ্গাকে এখনো 'গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং' বলে অভিহিত করা হয়। এই দাঙ্গার পরে দিলি্লতে মুসলিম লীগের কনভেনশনে বাংলা মুসলিম লীগের অন্যতম নেতা আবদুর রহমান সিদ্দিকী (ডেইলি মর্নিং নিউজের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক এবং পরবর্তীকালে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর) দাঁড়িয়ে জিন্নাহর মুখের ওপর বলেছিলেন, '১৬ আগস্ট তারিখে ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে' পালন করার দলীয় সিদ্ধান্ত ছিল একটা মস্তবড় ভুল। এই দিবস পালনের জন্য দেশে এমন ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে এবং অসংখ্য নর-নারী নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বলি হয়েছে।'
জিন্নাহ মুসলিম লীগের ডিক্টেটর-সুলভ নেতা হওয়া সত্ত্বেও এই অভিযোগ খণ্ডন করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু আবদুর রহমান সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিষ্কার করেননি। মুসলিম লীগেরই আদর্শে ও আদলে গঠিত বর্তমান বাংলাদেশের বিএনপি অর্ধশতকেরও আগে তাদের পিতৃপ্রতিম দলটি যে গণতান্ত্রিক রাজনীতির মূল্যবোধ ছিল, সেই মূল্যবোধ রক্ষা করতে পারেনি অথবা রক্ষা করতে চায়নি। ডিবেট এবং ভিন্ন মতামতের সহাবস্থানই গণতন্ত্রের চরিত্র-বৈশিষ্ট্য। সেই চরিত্র-বৈশিষ্ট্যকে বর্জন করে বিএনপি কী করে নিজেকে গণতান্ত্রিক দল বলে দাবি করে, তা আমি জানি না।
খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে ১৪ নভেম্বর যে হরতাল ডাকা হয়েছে, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা তার বিরোধিতা করেননি। সুতরাং এই ব্যাপারেও তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা যায় না। তিনি বলেছেন, ঈদের ঠিক আগে এই হরতাল ডাকা ঠিক হয়নি। তাতে সাধারণ মানুষের অপরিসীম কষ্ট ও যন্ত্রণা হয়েছে। ঈদের আগে এ রকম হরতাল ডাকার মাধ্যমে তাঁর নেত্রীর প্রতি দেশের মানুষের সহানুভূতি বিভক্ত হয়েছে। খালেদা জিয়ার প্রতি সরকারের নির্দয় আচরণে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল এবং দেশবাসীর মনে তাঁর প্রতি যে সহানুভূতি জেগেছিল, এই হরতালের ফলে তা ম্লান হয়ে গেছে।'
এই বক্তব্য তো হরতাল ডাকার দলীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা নয়; বরং এই হরতাল ডাকার দিন-তারিখ সম্পর্কে একটি যুক্তিপূর্ণ আপত্তি জানানো। তাঁর এই আপত্তির সঙ্গে যে দেশের অধিকাংশ মানুষ একমত, তা তো এখন খবরের কাগজের পৃষ্ঠায় চোখ বুলালেই দেখা যায়। ঠিক ঈদের আগে শহরের মানুষ যখন ঘরমুখো, তখন হরতাল ডেকে জনমানুষকে যে দুর্ভোগ ও দুর্দশায় ফেলা হয়েছে, তার ফলে হরতালই শুধু শিথিল হয়নি, হরতাল ডাকার উদ্দেশ্যও ব্যর্থ হয়েছে। বিএনপির প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন বাড়েনি, ক্ষোভ ও অসন্তোষ বেড়েছে।
এই সত্যটা বিএনপির সাধারণ নেতা-কর্মীর অধিকাংশই উপলব্ধি করেছেন। কিন্তু উপলব্ধি করতে পারেননি দলনেত্রী খালেদা জিয়া এবং তাঁর 'গ্রান্ড ফ্যাসিস্ট অ্যাসেম্বলি'র অনুগত সদস্যরা। দলকে নিশ্চয়ই ভালোবাসেন বলে নাজমুল হুদা দলকে ভুল পদক্ষেপ সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। দলকে সতর্ক করা ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা কি এক কথা? আমি ব্যারিস্টার হুদার রাজনৈতিক মতামতের অধিকাংশের সঙ্গে সহমত পোষণ করি না। অতীতে তাঁর অনেক কথাবার্তা ও কার্যকলাপের কঠোর সমালোচনা করেছি। কিন্তু এবার তাঁর মতো দলের এক ওল্ডভ্যানগার্ড সম্পর্কে দল যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, তাকে উইচহান্টিংয়ের সঙ্গে তুলনা করা অন্যায় মনে করি না।
অতীতেও দেখা গেছে, স্পষ্ট কথা বলতে গিয়ে, দলকে সঠিক পথ দেখাতে গিয়ে নাজমুল হুদা একাধিকবার দলনেত্রী কর্তৃক তিরস্কৃত হয়েছেন, শাস্তি পেয়েছেন, এমনকি মন্ত্রিত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ১৯৯১-৯৬ সালে খালেদা-সরকারের তথ্যমন্ত্রী থাকাকালে দেশে যখন নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলছে, তখন খালেদা জিয়া এই ব্যবস্থার তীব্র বিরোধিতা করে বলেছিলেন, 'পাগল ও শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়'। আর নাজমুল হুদা বলেছিলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণাটি মেনে নেওয়ার মতো।' অমনি নেত্রী মহাখাপ্পা এবং তাঁর সভাসদরাও তাই। ব্যারিস্টার হুদাকে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছিল। পরে দেখা গেল, গণ-আন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়া শুধু নাকে খত দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলা মেনে নেননি, সেই সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে বাধ্য হয়েছিলেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রতি কিছুমাত্র শ্রদ্ধা ও নিষ্ঠা থাকলে বেগম জিয়ার উচিত ছিল নিজের ভুল স্বীকার করা এবং ব্যারিস্টার হুদার কাছে তাঁর প্রতি অবিচার করার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।
খালেদা জিয়া তা তো করেনইনি; বরং বারবার দলবদল করা বহুরূপী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের প্রতি, যিনি একাধিকবার বেগম জিয়াকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন, তাঁর প্রতি অনুকম্পা ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করেছেন। ব্যারিস্টার হুদা যেমন বিএনপির ওল্ডগার্ড ও প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের একজন এবং জেনারেল জিয়াউর রহমানের বিশ্বস্ত সহকর্মী ছিলেন, মওদুদ আহমদ তা নন। তিনি সাইবেরিয়ান বার্ড। জেনারেল জিয়া যখন ক্ষমতার তুঙ্গে, তখন তিনি তাঁর দলে এসে ভিড়েছিলেন এবং মন্ত্রী হয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান একসময় তাঁকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়েছিলেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে 'এক অঙ্গে এত রূপ' শুধু মওদুদ আহমদের আছে, আর কারো নেই। তিনি বিএনপির সাত্তার সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। দুর্নীতির অভিযোগে জেলে গেছেন। জেল থেকে বেরিয়ে বিএনপি দলে সদ্য নেতৃত্বগ্রহণকারী বেগম জিয়াকে কাঁচকলা দেখিয়ে এরশাদের দলে গিয়ে ভিড়েছিলেন এবং তাঁর মন্ত্রী হয়েছিলেন। এরশাদের পতনের পর ভিজে বিড়ালের মতো আবার দেশনেত্রীর ছত্রচ্ছায়ায় এসে আশ্রয় নেন। অনেকেরই অভিযোগ_বিএনপির আইনমন্ত্রী হিসেবে দেশের বিচারব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ তছনছ করা এবং দলনেত্রীকে বিভিন্ন কুবুদ্ধি জোগানোর ব্যাপারে মওদুদ আহমদের 'প্রতিভা' জারের রাশিয়ার রাসপুটিনের সমতুল্য।
ব্যারিস্টার নাজমুলের আরেকটি অপরাধ সম্ভবত এই, ব্যারিস্টার মওদুদের তীব্র সমালোচনা এবং তাঁর স্বরূপ উদ্ঘাটন। বিএনপিতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব, বিশেষ করে তাঁর গুণধর পুত্র তারেক রহমানের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর দেখা গেছে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের অধিকাংশই, যাঁরা জিয়াউর রহমানের বিশ্বাসভাজন সহকর্মী ছিলেন, যেমন ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, কর্নেল (অব.) অলি, আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, কে এম ওবায়দুর রহমান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনসহ অনেকেই এবং পরবর্তীকালে তানভীর আহমদ সিদ্দিকী, আখতারুজ্জামান, আশরাফ হোসেন প্রমুখ অবমাননাকরভাবে একেক সময় দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন এবং তাঁদের স্থানে দলে এবং বিএনপি সরকারেও তারেক কর্তৃক মনোনীত বাবরজাতীয় দুর্বৃত্ত শ্রেণীর ব্যক্তিরা এসে মন্ত্রী ও নেতা হয়ে বসেছিলেন। বিএনপি রাজনীতির এই ট্র্যাডিশনেরই সাম্প্রতিক বলি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।
বাংলাদেশে একটা কথা আছে, 'উচিত কথায় ননদ বেজার, গরম ভাতে বিলাই।' কেউ কেউ কথাটা পাল্টে বলেন, 'উচিত কথায় বিলাইও (বিড়াল) বেজার।' সন্দেহ নেই, বিএনপির বর্তমান হটকারী রাজনীতিতে ব্যারিস্টার হুদার স্পষ্ট ও উচিত কথা, দলের শীর্ষ নেত্রী ও তাঁর সভাসদদের ক্রুদ্ধ ও বেজার করেছে। ফলে ব্যারিস্টার হুদার শিরশ্ছেদের এই হুকুম। তাতে এই উচিত বক্তার শিরশ্ছেদ হবে না, হবে বিএনপির তথাকথিত গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তির শিরশ্ছেদ। বিএনপি থেকে একে একে দলের ওল্ডগার্ডরা বিদায় নিচ্ছেন। দলের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তিও বড় বেশি উলঙ্গ হয়ে পড়ছে। এই দল কী করে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নেগেটিভ ভোট কুড়িয়ে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে তা আমি জানি না। দলের রাসপুটিনরা অতি আশা পোষণ করতে পারেন এবং দল থেকে ওল্ডগার্ডদের একে একে হটিয়ে দিয়ে বিড়াল-তপস্বীর হাসি হাসতে পারেন। কিন্তু এই হাসি বেশি দিন স্থায়ী হবে কি? মওদুদ আহমদরা কি জানেন, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার পর দলে পরবর্তী ভিকটিম কে হবেন? আয়নায় নিজের চেহারাটা দেখুন।
==========================
প্রকৃতি- 'জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃক্ষশত্রু' by মেহেদী উল্লাহ  ইতিহাস- 'ইতিহাসে মওলানা ভাসানীর আসন' by সৈয়দ আবুল মকসুদ  ইতিহাস- 'টিকে থাকুক ‘টেগর লজ’' by আশীষ-উর-রহমান  আলোচনা- 'কর্মশক্তি ও টাকার অপচয়!' by রোজিনা ইসলাম  রাজনৈতিক আলোচনা- 'আশির দশকে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন' by আবুল কাসেম ফজলুল হক  আলোচনা- 'বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ব আকাশচুম্বী' by ড. নিয়াজ আহম্মেদ  ইতিহাস- 'প্রত্যন্ত জনপদে ইতিহাস-সঙ্গী হয়ে' by সাযযাদ কাদির  আন্তর্জাতিক- 'জাতিসংঘ বনাম যুক্তরাষ্ট্র' by শহিদুল শহিদুল ইসলাম  গল্পালোচনা- 'দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ?' by মহসীন মহসীন হাবিব  স্বাস্থ্য আলোচনা- 'প্রসূতিসেবায় পিছিয়ে দেশ' by শেখ সাবিহা আলম  রাজনৈতিক আলোচনা- 'বন্দিত কান্না, নিন্দিত হরতাল আর রাজকীয় অশ্রুপাতের গল্প' by ফারুক ওয়াসিফ  খবর- উত্তর কোরিয়ার নতুন পরমাণু প্ল্যান্ট দেখে 'তাজ্জব' মার্কিন বিজ্ঞানীরা  গল্পসল্প- 'মুজিব একবার আসিয়া সোনার বাংলা যাওরে দেখিয়ারে' by মোস্তফা হোসেইন  আন্তর্জাতিক- 'ওবামা কি ক্লিনটনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করবেন?' by সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী  কৃষি আলোচনা- 'পোষের শেষ মাঘের বারো' by ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস  মণিপুরি মহা রাসলীলা উৎসবের ইতিকথা by মুজিবুর রহমান


কালের কন্ঠ এর সৌজন্যে
লেখকঃ আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী


এই আলোচনা'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.