টিউলিপকে দুর্নীতিবিরোধী দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান -বিবিসির প্রতিবেদন

বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত বৃটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে অর্থমন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি দমন বিষয়ক দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে দেশটির দুর্নীতিবিরোধী জোট অক্সফাম এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতো দাতব্য সংস্থাগুলো। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

এতে বলা হয়, অর্থমন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে টিউলিপের দায়িত্ব হচ্ছে বৃটেনের আর্থিক দুর্নীতি মোকাবেলা করা। তবে তার পরিবারের সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগের ফলে তাকে সংশ্লিষ্ট দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। লন্ডনে আওয়ামী ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তির কাছ থেকেও বিনামূল্যে দুটি ফ্ল্যাট উপহার পেয়েছেন টিউলিপ। যে তথ্য গোপন করায় পদত্যাগের ক্রমবর্ধমান চাপে পড়েছেন তিনি।

সপ্তাহান্তে কনজারভেটিভ নেতা কেমি ব্যাডেনোচও প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারের কাছে টিউলিপকে বরখাস্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে তার ফ্ল্যাট কাণ্ডের কথা প্রকাশ হওয়ার পর টিউলিপ নিজে স্টারমারের মান উপদেষ্টাকে তার বিরুদ্ধে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তার দাবি তিনি কোনো ভুল করেননি।

বিবিসি বলছে, এত কিছুর পরও টিউলিপের ওপর আস্থা রাখছেন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার। সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি মুখপাত্র বলেছেন, স্যার কিয়ের স্টারমার টিউলিপের ওপর ‘পূর্ণ আস্থা’ রেখেছেন। তবে বৃটেনের দুর্নীতিবিরোধী জোট অক্সফাম এবং ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের মতো সংস্থাগুলো টিউলিপকে তার দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে তদন্তের মুখে রয়েছেন টিউলিপ। তার খালা, বাংলাদেশ সরকারের সাবেক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুর্নীতির সঙ্গে টিউলিপেরও নাম রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই তদন্তটি হাসিনার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ববি হাজ্জাজের করা একাধিক মামলার সঙ্গে যুক্ত।

বিবিসির হাতে পৌঁছানো আদালতের নথিতে দেখা গেছে, ২০১৩ সালে রাশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করার অভিযোগে টিউলিপের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ববি হাজ্জাজ। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, টিউলিপের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকার জন্য চুক্তিভুক্ত ওই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যায়ের পরিমাণ অতিরিক্ত হারে বেড়েছে। দাবি করা হচ্ছে- ওই চুক্তির ফলে ব্যয় বেড়ে ১ বিলিয়ন পাউন্ড হয়েছে। নথি অনুসারে, চুক্তির ৩০ শতাংশ অর্থ একটি বিদেশী কোম্পানি এবং ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টিউলিপ এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

দুর্নীতিবিরোধী দাতব্য সংস্থাগুলোর জোট বলছে, বিশ্বে বৃটেনের সুনাম ধরে রাখতে সরকারকে বিশ্বাসযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। টিউলিপের বর্তমান অবস্থা সেরকম সিদ্ধান্তের মধ্যে পড়ে। যদিও তিনি ওমন কাজ করেছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়, তবে এর সঙ্গে বৃটেনের স্বার্থ জড়িত রয়েছে। বিবৃতিতে তারা আরও বলেছে, বৃটেনের অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক দুর্নীতি মোকাবেলার দায়িত্বে আছেন টিউলিপ। তবে একজন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে তদন্ত জোরালো করা যেতে পারে। ওই দাতব্য সংস্থাগুলো বলছে, মন্ত্রী (টিউলিপ) আইন লঙ্ঘন করেছে কিনা তা নিয়ে মান উপদেষ্টার তদন্তের ফলাফল যাই হোক না কেন, এ নিয়ে দ্বন্দ্ব দীর্ঘস্থায়ী হবে।

১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের মুখপাত্র এর আগে টিউলিপের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, মান উপদেষ্টার কাছে তদন্তের আহ্বান জানিয়ে সঠিক কাজ করেছেন টিউলিপ। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমারের মান উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে প্রকাশ্যে তদন্তের আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন টিউলিপ। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমি আর্থিক দুর্নীতি এবং বাংলাদেশের সাবেক সরকারের সঙ্গে আমার পরিবারের যোগসূত্রের জন্য মিডিয়ার বিষয়বস্তু হয়েছি, যার বেশিরভাগই ভুল। আমি স্পষ্ট যে আমি কোনো ভুল করিনি। তবে সন্দেহ এড়ানোর জন্য আমি চাই আপনি স্বাধীনভাবে এ বিষয়ে তদন্ত করুন।’

ওদিকে প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের কাছে তদন্তের স্বার্থে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে দুর্নীতিবিরোধী জোট। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট দাবি জানিয়েছে তারা। জোট মনে করে যে, বাংলাদেশের নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন করা, সেখানে গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করা এবং আত্মসাত হওয়া সম্পদ পুনরুদ্ধারে তাদের সাহায্য করা বৃটেনের নিজের দায়িত্ব। এ লক্ষ্যে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুর্নীতিবিরোধী জোটের অনুরোধ হচ্ছেঃ
১. সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সদস্য ও সহযোগীদের ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং সম্পদ জব্দ করার জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া।
২. বৃটেনের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো যেন সম্পদ হিমায়িত করতে এবং পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্রুত কাজ শুরু করে তা নিশ্চিত করা।
৩. ক্ষমতাচ্যুত শাসনের সদস্য এবং তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পদের সন্দেহজনক গতিবিধির জন্য তাদের রেড অ্যালার্টে রাখার বিষয়টিও নিশ্চিত করা।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.