হামলা অব্যাহত, গাজায় ভয়াবহ দুর্ভোগে মানুষ
সোমবার ভোর থেকে গাজায় ভয়াবহ হামলায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৬ ফিলিস্তিনি। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষগুলো আশ্রয় নিয়েছিলেন গাজা সিটির সালাহ আল দিন স্কুলে। সেখানে ইসরাইলি বাহিনী হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে কমপক্ষে ৫ জনকে। গাজার উত্তরাঞ্চলে বিশাল এলাকা অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরাইল। সেখানে হামলা শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ৫ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বা নিখোঁজ আছে। কাতারের রাজধানী দোহায় অব্যাহত আছে সমঝোতা প্রক্রিয়া। এরই মধ্যে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনে ইসরাইল গণহত্যা চালিয়ে হত্যা করেছে কমপক্ষে ৪৬,৫৮৪ জনকে। আহত হয়েছেন কমপক্ষে এক লাখ ৯ হাজার ৭৩১ জন। ওই একই দিনের আগে হামাসের নেতৃত্বে ইসরাইলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। তাতে কমপক্ষে ১১৩৯ জন ইসরাইলি নিহত হয়। কমপক্ষে ২০০ মানুষকে জিম্মি করে হামাস। এর বদলা নিতে ইসরাইল নৃশংসভাবে গাজায় হামলা চালিয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের বসতি, হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র, স্কুল সহ সব স্থানে। যারা বেঁচে আছেন, এই শীত মৌসুমে তাদের অবস্থা করুণ। নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের (এনআরসি) কমিউনিকেশন বিষয়ক উপদেষ্টা শাইনা লো বলেছেন, গাজার উত্তরাঞ্চলে পরিস্থিতি অকল্পনীয়। সেখানে মানুষের খাদ্য ও পানের পানি নেই বললেই চলে। ত্রাণ পৌঁছানো হচ্ছে না সেখানে। উত্তর গাজার ক্রসিং পয়েন্ট ইসরাইলিরা অবরুদ্ধ করে ৬ই অক্টোবর। তখন থেকে ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘ গাজার উত্তরাঞ্চলে প্রবেশের জন্য ১৬৫ বার চেষ্টা করেছে। জর্ডানের রাজধানী আম্মান থেকে শাইনা লো বলেন, এর মধ্যে ১৪৯ বারই আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়। বাকি ১৬ বার ইসরাইলিরা তাদের সঙ্গে করে নিয়ে গেছে। গাজাবাসীর মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ। তার ওপর হামলা হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে নয়। এর মধ্যে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাওয়া নিরাপদ কিনা সে বিষয়েও নিশ্চিত নন গাজাবাসী। বহু মানুষ চলাচলে অক্ষম। অথবা এতই প্রবীণ যে, তারা চলাচল করতে পারেন না। ফলে অনেক মানুষ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। তারা ঘর ছাড়তে নারাজ। কারণ, তারা বিশ্বাস করেন নিজের ঘরে থাকার অধিকার তাদের আছে। আন্তর্জাতিক আইনেই তাদের এই অধিকার আছে। তাদেরকে সরে যেতে বলা হলেও তারা সুরক্ষিত বলে মনে করেন। গাজা সিটি থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টাকালে অনেক পুরুষ এবং বালককে আটক করা হয়েছে। তারা কোথায় আছেন তার চেয়ে তাদের ভবিষ্যৎ কী তা নিয়ে বেশি আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। অনেক সময়ই বিতরণ করার মতো ত্রাণ থাকে না এনআরসি’র হাতে। শাইনা লো বলেন, গাজার মানুষ যে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন তার কোনো প্রতিকার আমাদের কাছে নেই। তার ভাষায়, আমাদের এমন একজন স্টাফ মেম্বার আছেন, যিনি নভেম্বরে তার পরিবারের কমপক্ষে ১২০ জন সদস্যকে হারিয়েছেন। তারপরও তিনি বাইরে এসে তার দায়িত্ব পালনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কাজ করছেন শিশুদের নিয়ে। ওদিকে কাতারে যুদ্ধবিরতি নিয়ে যে আলোচনা চলছে তার সমালোচনা করেছেন ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচ। তিনি ইসরাইলের কট্টর জাতীয়তাবাদী ধর্মীয় দলগুলোর অন্যতম একটি দলের প্রধান। বলেছেন, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ এবং জিম্মিদের মুক্তির যে আলোচনা চলছে, তাতে চুক্তি হলে সেটা হবে একটি ‘আত্মসমর্পণের’ চুক্তি। এমন চুক্তি হলে তা হবে ইসরাইল রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এক বিপর্যয়।
No comments