লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলের কারণ কী: এখনো জ্বলছে ঘর–বাড়ি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামানো হতে পারে সেনাবাহিনী
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসের যে কয়েকটি অঞ্চল দাবানলে জ্বলছে, সেগুলোর মধ্যে প্যালিসেইডস ও ইটন অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রে দাবানলের সাধারণ কারণ হিসেবে বজ্রপাতকে দায়ী করা হয়। কিন্তু এবার এ দুই অঞ্চলে বজ্রপাতের কারণে দাবানল হয়নি।
কেউ আগুন দিয়েছে বা গ্যাস-বিদ্যুতের সংযোগ থেকে দাবানলের সূত্রপাত হয়েছে; এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে এমন কোনো ইঙ্গিতও দেওয়া হয়নি। বজ্রপাতের পর এ দুটি উৎসকেই দাবানলের সবচেয়ে বড় দুই কারণ হিসেবে ধরা হয়।
ক্যালিফোর্নিয়া ২০২২-২৩ সালে বেশ আর্দ্র ছিল। ফলে ওই সময়ে সেখানে বিপুল গাছপালা জন্মেছে। কিন্তু পরের বছরের খরার কারণে সেই আর্দ্রতা শুকিয়ে গিয়েছিল। এতে সেখানে প্রচুর পরিমাণে ছোটখাটো দাবানলের সৃষ্টি হয়েছিল।
গত বছরের অক্টোবর থেকে লস অ্যাঞ্জেলেসের বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্রগুলোতে কেবল দশমিক ৪ সেন্টিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এই নজিরবিহীন শুষ্ক সময় এবং সান্তা অ্যানা হিসেবে পরিচিত সমুদ্রের শক্তিশালী ঝোড়ো হাওয়া একসঙ্গে মিলে দাবানল সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছিল।
বিবিসির আবহাওয়া পূর্বাভাস–বিশেষজ্ঞ সারাহ কিথ-লুকাস বলেন, অন্তত আগামী সপ্তাহে (দাবানলকবলিত) অঞ্চলে বৃষ্টির কোনো পূর্বাভাস নেই।
স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার পর্যন্ত দাবানলকবলিত অঞ্চলে বাতাসের গতি কিছুটা কমেছে; কিন্তু পূর্বাভাস–বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ঝোড়ো হাওয়া রোববার থেকে সোমবারের মধ্যে ফের বাড়তে পারে।
এখনো জ্বলছে ঘর–বাড়ি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামানো হতে পারে সেনাবাহিনী
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে ব্যস্ত সময় পার করছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। একে তো টানা সাত দিন ধরে দাবানলে জ্বলছে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের এই শহর, তারপর দিন দুয়েকের বিরতির পর আবার বাড়তে শুরু করেছে বাতাসের গতি। বাতাসের গতি তীব্র হওয়ার আগেই আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে ফায়ার সার্ভিস।
৭ জানুয়ারি সূত্রপাতের পর লস অ্যাঞ্জেলেসে ছয়টি দাবানল ছড়িয়ে পড়েছিল। এখনো তিনটি দাবানল সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে শহরের পশ্চিম অংশে ‘প্যালিসেইডস’ ও পূর্বে ‘এটন’ দাবানলের ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশি। এই দুই দাবানল সামান্যই নিয়ন্ত্রণে আনা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষয়ক্ষতির নিরিখে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে চলেছে।
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা আসলেই হতবাক করে দেওয়ার মতো। দাবানলে লস অ্যাঞ্জেলেসের এলাকার পর এলাকা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ধনকুবের কি সাধারণ মানুষ—সবার বাড়ি মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। আগুন পুড়েছে অন্তত ১২ হাজার ৩০০ বাড়ি। আর আগুনে এখন পর্যন্ত ১৩৫ থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়াবিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদার।
আগুনে সম্পদের ক্ষতির পাশাপাশি মানুষের দুর্দশাও চরমে পৌঁছেছে। বাড়িঘর হারানোর শোকের মধ্যেই প্রাণ বাঁচাতে এক লাখ মানুষকে উপদ্রুত এলাকা ছাড়তে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি আরও প্রতিকূল হলে একই নির্দেশ দেওয়া হতে পারে আরও ৮৭ হাজার জনকে। আর ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এখন পর্যন্ত অন্তত ২৪ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন।
আগুন নেভাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। আকাশ থেকে ফেলা হচ্ছে পানি ও রাসায়নিক। নানা সরঞ্জাম হাতে মাঠে নেমেছেন ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা। এখন পর্যন্ত ২৩ হাজার ৭১৩ একর জায়গা গ্রাস করা সবচেয়ে ভয়াবহ প্যালিসেইডস দাবানল মাত্র ১৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আর ১৪ হাজার ১১৭ একর এলাকায় জ্বলতে থাকা এটন দাবানল নিয়ন্ত্রণে এসেছে ২৭ শতাংশ।
ফায়ার সার্ভিস যেটুকু সফলতা পেয়েছে, তার একটি বড় কারণ ঝড়ো বাতাস সান্তা আনার গতি কমা। তবে সপ্তাহান্তে বাতাসের গতি কমার পর আবার বাড়াতে শুরু করেছে। ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রোববার রাত থেকে বুধবার পর্যন্ত স্থানীয় মরুভূমি থেকে সৃষ্টি হওয়া এই বাতাস লস অ্যাঞ্জেলেসের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৮০ থেকে ১১২ কিলোমিটার গতিতে বয়ে যেতে পারে।
লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ফায়ার সার্ভিসের প্রধান অ্যান্থনি ম্যারন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এ বাতাসে আর্দ্রতা খুবই কম। তাই লস অ্যাঞ্জেলেসজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ার উচ্চ ঝুঁকি থাকবে। যেসব এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যেতে বলা হয়েছে, আগামী বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ সতর্কতা তুলে নেওয়ার আগপর্যন্ত ওই এলাকাগুলো খুলে দেওয়া হবে না।
এদিকে আগুন নেভানোর কাজে এরই মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়ার আশপাশের সাত অঙ্গরাজ্য থেকে ছুটে এসেছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। প্রতিবেশী দেশ কানাডা ও মেক্সিকোও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এজেন্সির প্রশাসক ড্যানি ক্রিসওয়েল বলেছেন, আগুন নেভানোর কাজে সহায়তার জন্য সেনাসদস্যদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের প্যালিসেইডস অঞ্চলের দাবানলের ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে একটি হেলিকপ্টার। ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ছবি: রয়টার্স |
No comments