জুয়ার আসরে উড়ছে কোটি টাকা by রুদ্র মিজান
জুয়া।
সঙ্গে মাদকসহ বিনোদনের আরো আয়োজন। এ এক অন্যরকম নেশার জগৎ। রাতভর কাটে
নেশায় নেশায়। মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে আসরে ডুবে থাকেন জুয়াড়িরা। পাশে বসে
অনুপ্রেরণা দেন সুন্দরী ললনারা।
থাকে বাহারি খাবারের আয়োজন। লাখ লাখ টাকা হেরে শূন্য হাতে ফিরেন অনেকে। কেউ কেউ হাসেন জয়ের হাসি। এরকম দৃশ্য রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবের। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে নামি অনেক ক্লাবে চলে এই জুয়ার আসর।
এসব ক্লাবে খেলার নামে মূলত হচ্ছে জুয়া খেলা। নানা নামে, নানাভাবে চলছে জুয়া। রেমি, কাটাকাটি, নিপুণ, চড়াচড়ি, ডায়েস, ওয়ান-টেন, ওয়ান-এইট, তিন তাস, নয় তাস, ফ্লাশ নানা নাম। এসব খেলার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আয়োজক চক্র। সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেকে। আইনানুসারে দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও নানা কৌশলে কর্তাদের ম্যানেজ করেই চলছে জুয়ার আসর। শুধু রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে না, হোটেলে, বাসায়, বস্তিতেও চলছে জুয়া। ঢাকার অদূরে ঘোষণা দিয়েই আয়োজন করা হচ্ছে জুয়ার মেলা।
জুয়ার এসব আসর থেকে প্রতি রাতে মোটা অঙ্কের টাকা পাচ্ছেন নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে পরিচিত প্রভাবশালীরা। শুধু রাজধানী নয় পুরো দেশেই রয়েছে জুয়াড়িদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। জুয়ার আসরের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন প্রভাবশালীরাই। ‘বড় ভাই’ হিসেবে পরিচিত এই প্রভাবশালীরা থানা-পুলিশ ও এলাকার মাস্তানদের ম্যানেজ করেন। ঢাকার অন্তত ১১টি ক্লাব এখন শুধুই জুয়ার আখড়া। অথচ ক্লাবগুলোর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে খেলাধুলার বিষয়টি। খেলা চর্চার জন্য গঠন করা হয়েছিল এসব ক্লাব। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পরপরই ক্লাবগুলোর সামনে বাড়তে থাকে গাড়ির বহর। বিলাসবহুল গাড়িতে চড়ে ক্লাবে পা রাখেন বিত্তশালীরা।
গভীর রাত পর্যন্ত জুয়া খেলা হয় ক্লাবগুলোতে। জুয়াকে কেন্দ্র করে চলে মাদকসেবনও। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা। আরামবাগের সরু গলি দিয়ে একটি ক্লাবের প্রধান ফটকে দাঁড়াতেই নিরাপত্তা প্রহরীর জিজ্ঞাসা, কাকে চান। পরিচয় গোপন করে ভেতরে যেতে চাইলে কার কাছে, কেন যাবেন জানতে চান। একটি রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনের নেতার পরিচয় দিতেই অনুমতি মেলে ভেতরে যাওয়ার। দরজার পাশেই অভ্যর্থনা কক্ষ। ভেতরে প্রতিটি টেবিলে সাজানো মদের গ্লাস, সঙ্গে চিকেন ফ্রাইড, কাঁচা পেঁপে, চানাচুর, বাদাম ও শসা..। প্রতিটি গোল টেবিল ঘিরে বসেছেন পাঁচ-ছয়জন। দরজার ডানদিকে ক্যাশকাউন্টার। সেখানে বসে আছেন তিন ব্যক্তি। ক্যাশ কাউন্টারে ভিড় লেগেই আছে। সেখান থেকে টাকার বিনিময়ে প্লাস্টিকের কয়েন কিনছেন জুয়াড়িরা। ৫০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে এসব কয়েন। প্লাস্টিকের এসব কয়েন দিয়েই খেলা হচ্ছে জুয়া। জুয়াড়িদের কাছে এগুলোর নাম চিপস।
ক্লাবের ভেতরেও আছেন অস্ত্রধারী কয়েক নিরাপত্তাকর্মী। মদের গ্লাস রেডি থেকে শুরু করে সেবা দিতে রয়েছেন বেশ কয়েক তরুণ। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই সঙ্গে নিয়ে আসা টাকা হেরে ফেরত যেতে দেখা গেছে অনেককে। পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ীকে দেখা গেছে, দেড় লাখ টাকা হেরে একের পর এক মদের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছিলেন। অনেকটা মাতাল হয়ে কিছু টাকা ফেরত দিতে অনুরোধ করছিলেন জয়ী জুয়াড়িদের। এ নিয়ে হাসাহাসি করছিলেন অন্যরা। একপর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মীদের প্রশ্নের কারণে বের হয়ে এলেও ক্লাবেই বাইরে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে বিমর্ষ চেহারায় বের হয়ে যেতে অনেককে। হাসিমুখ ছিল খুবই কম। ক্লাবের পাশে তখনও সরগরম চা-সিগারেটের দোকান। আলফু নামে এক চা বিক্রেতা জানান, ক্লাব মানে সব বড় লোকদের ব্যাপার-স্যাপার। তাদের সঙ্গে আসা ড্রাইভাররা ক্লাবেই বাইরেই অবস্থান নেন। তারা ক্লাবে আসে বলেই রাতেও দোকান খোলা রাখতে হয়।
জানা গেছে, উত্তরা, কলাবাগান, ধানমন্ডি ও গুলশান-বাড্ডা লিঙ্ক রোডের একটি ক্লাবে রয়েছে ক্যাসিনো। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিত্তশালী পরিবারের তরুণরাও অংশ নিচ্ছেন সেখানে। জুয়া পরিচালনা করার জন্য নেপালসহ পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েক দেশের তরুণীরা রয়েছেন এসব ক্লাবে। গুলশান-বাড্ডা লিঙ্ক রোডের ওই ক্লাবে জুয়ায় অংশ নেন এমন এক ব্যক্তি জানান, ক্লাবের ডান দিকের ভবনে রয়েছে বিশাল হলরুম। সেখানেই ক্যাসিনো। প্রায় ২০টি বোর্ড রয়েছে সেখানে। বোর্ডের চারপাশে জুয়াড়িরা। তাদের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকেন বিদেশি তরুণীরা। এসব তরুণীরা জুয়াড়িদের প্রতিনিয়ত খেলায় উৎসাহ দিয়ে যান। অত্যাধুনিক এ ক্লাবগুলোয় দিন-দিন জুয়াড়িদের সংখ্যা বাড়ছে।
এসব বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি সহেলী ফেরদৌস মানবজমিনকে বলেন, জুয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটা কোনোভাবেই আমরা সমর্থন করি না। যদি কোনো ক্লাবে বা অন্য কোথাও জুয়া অনুষ্ঠিত হয় আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
থাকে বাহারি খাবারের আয়োজন। লাখ লাখ টাকা হেরে শূন্য হাতে ফিরেন অনেকে। কেউ কেউ হাসেন জয়ের হাসি। এরকম দৃশ্য রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবের। ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে নামি অনেক ক্লাবে চলে এই জুয়ার আসর।
এসব ক্লাবে খেলার নামে মূলত হচ্ছে জুয়া খেলা। নানা নামে, নানাভাবে চলছে জুয়া। রেমি, কাটাকাটি, নিপুণ, চড়াচড়ি, ডায়েস, ওয়ান-টেন, ওয়ান-এইট, তিন তাস, নয় তাস, ফ্লাশ নানা নাম। এসব খেলার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে আয়োজক চক্র। সর্বস্বান্ত হচ্ছেন অনেকে। আইনানুসারে দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও নানা কৌশলে কর্তাদের ম্যানেজ করেই চলছে জুয়ার আসর। শুধু রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাবে না, হোটেলে, বাসায়, বস্তিতেও চলছে জুয়া। ঢাকার অদূরে ঘোষণা দিয়েই আয়োজন করা হচ্ছে জুয়ার মেলা।
জুয়ার এসব আসর থেকে প্রতি রাতে মোটা অঙ্কের টাকা পাচ্ছেন নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে পরিচিত প্রভাবশালীরা। শুধু রাজধানী নয় পুরো দেশেই রয়েছে জুয়াড়িদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। জুয়ার আসরের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন প্রভাবশালীরাই। ‘বড় ভাই’ হিসেবে পরিচিত এই প্রভাবশালীরা থানা-পুলিশ ও এলাকার মাস্তানদের ম্যানেজ করেন। ঢাকার অন্তত ১১টি ক্লাব এখন শুধুই জুয়ার আখড়া। অথচ ক্লাবগুলোর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে খেলাধুলার বিষয়টি। খেলা চর্চার জন্য গঠন করা হয়েছিল এসব ক্লাব। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, সন্ধ্যার পরপরই ক্লাবগুলোর সামনে বাড়তে থাকে গাড়ির বহর। বিলাসবহুল গাড়িতে চড়ে ক্লাবে পা রাখেন বিত্তশালীরা।
গভীর রাত পর্যন্ত জুয়া খেলা হয় ক্লাবগুলোতে। জুয়াকে কেন্দ্র করে চলে মাদকসেবনও। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টা। আরামবাগের সরু গলি দিয়ে একটি ক্লাবের প্রধান ফটকে দাঁড়াতেই নিরাপত্তা প্রহরীর জিজ্ঞাসা, কাকে চান। পরিচয় গোপন করে ভেতরে যেতে চাইলে কার কাছে, কেন যাবেন জানতে চান। একটি রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনের নেতার পরিচয় দিতেই অনুমতি মেলে ভেতরে যাওয়ার। দরজার পাশেই অভ্যর্থনা কক্ষ। ভেতরে প্রতিটি টেবিলে সাজানো মদের গ্লাস, সঙ্গে চিকেন ফ্রাইড, কাঁচা পেঁপে, চানাচুর, বাদাম ও শসা..। প্রতিটি গোল টেবিল ঘিরে বসেছেন পাঁচ-ছয়জন। দরজার ডানদিকে ক্যাশকাউন্টার। সেখানে বসে আছেন তিন ব্যক্তি। ক্যাশ কাউন্টারে ভিড় লেগেই আছে। সেখান থেকে টাকার বিনিময়ে প্লাস্টিকের কয়েন কিনছেন জুয়াড়িরা। ৫০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে এসব কয়েন। প্লাস্টিকের এসব কয়েন দিয়েই খেলা হচ্ছে জুয়া। জুয়াড়িদের কাছে এগুলোর নাম চিপস।
ক্লাবের ভেতরেও আছেন অস্ত্রধারী কয়েক নিরাপত্তাকর্মী। মদের গ্লাস রেডি থেকে শুরু করে সেবা দিতে রয়েছেন বেশ কয়েক তরুণ। মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই সঙ্গে নিয়ে আসা টাকা হেরে ফেরত যেতে দেখা গেছে অনেককে। পুরান ঢাকার এক ব্যবসায়ীকে দেখা গেছে, দেড় লাখ টাকা হেরে একের পর এক মদের গ্লাসে চুমুক দিচ্ছিলেন। অনেকটা মাতাল হয়ে কিছু টাকা ফেরত দিতে অনুরোধ করছিলেন জয়ী জুয়াড়িদের। এ নিয়ে হাসাহাসি করছিলেন অন্যরা। একপর্যায়ে নিরাপত্তাকর্মীদের প্রশ্নের কারণে বের হয়ে এলেও ক্লাবেই বাইরে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে বিমর্ষ চেহারায় বের হয়ে যেতে অনেককে। হাসিমুখ ছিল খুবই কম। ক্লাবের পাশে তখনও সরগরম চা-সিগারেটের দোকান। আলফু নামে এক চা বিক্রেতা জানান, ক্লাব মানে সব বড় লোকদের ব্যাপার-স্যাপার। তাদের সঙ্গে আসা ড্রাইভাররা ক্লাবেই বাইরেই অবস্থান নেন। তারা ক্লাবে আসে বলেই রাতেও দোকান খোলা রাখতে হয়।
জানা গেছে, উত্তরা, কলাবাগান, ধানমন্ডি ও গুলশান-বাড্ডা লিঙ্ক রোডের একটি ক্লাবে রয়েছে ক্যাসিনো। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিত্তশালী পরিবারের তরুণরাও অংশ নিচ্ছেন সেখানে। জুয়া পরিচালনা করার জন্য নেপালসহ পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েক দেশের তরুণীরা রয়েছেন এসব ক্লাবে। গুলশান-বাড্ডা লিঙ্ক রোডের ওই ক্লাবে জুয়ায় অংশ নেন এমন এক ব্যক্তি জানান, ক্লাবের ডান দিকের ভবনে রয়েছে বিশাল হলরুম। সেখানেই ক্যাসিনো। প্রায় ২০টি বোর্ড রয়েছে সেখানে। বোর্ডের চারপাশে জুয়াড়িরা। তাদের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকেন বিদেশি তরুণীরা। এসব তরুণীরা জুয়াড়িদের প্রতিনিয়ত খেলায় উৎসাহ দিয়ে যান। অত্যাধুনিক এ ক্লাবগুলোয় দিন-দিন জুয়াড়িদের সংখ্যা বাড়ছে।
এসব বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি সহেলী ফেরদৌস মানবজমিনকে বলেন, জুয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এটা কোনোভাবেই আমরা সমর্থন করি না। যদি কোনো ক্লাবে বা অন্য কোথাও জুয়া অনুষ্ঠিত হয় আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
No comments