যে ফাঁদে আটকা সিলেটের রহিমা by ওয়েছ খছরু
এখন
রুহির তেমন হাঁকডাক নেই। স্টেজ প্রোগ্রামই পারফরমেন্সের শেষ ঠিকানা। বাউল
গান করেন। পিতা-ভাইও বাউল শিল্পী। এরই মধ্যে নানা ঘটনায় জড়িয়েছেন রুহি।
শেষমেশ ইলিয়াস নামের একজনের চোখেরমণি হয়েছিলেন। সেই ইলিয়াসের ফাঁদে পড়ে এখন
কাঁদছেন সিলেটের কণ্ঠশিল্পী রহিমা আক্তার রুহি। ইয়াবার চালানসহ আটকের
ঘটনায় তার পিতা ও ভাই হবিগঞ্জের কারাগারে বন্দি। এই অবস্থায় অসহায় হয়ে
পড়েছেন তিনি। ঘটনা সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। নাটকীয় এই ঘটনা জানাতে
সিলেটের সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন রুহি। জানালেন, তার পিতা ও ভাইকে
জড়ানোর ঘটনা। তবে নিজের ঘটনাবলি সম্পর্কে তিনি জানালেন না কিছু। রুহিকে
সিলেটের বাউল জগতের মানুষজন একটু-আধটু চিনতে শুরু করেছেন। ওরস কিংবা বিয়ের
অনুষ্ঠানে গান করেন। মূল বাড়ি সিলেটের বাইরে হলেও তারা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস
করছেন সিলেট নগরীর কলাপাড়ার ডহর এলাকায়। তার পিতা আবুল কালাম আজাদ একজন
বাউল শিল্পী। ভাই ইমন গান গাওয়ার পাশাপাশি ঢোলও বাজান। পুরো পরিবারটি জড়িয়ে
আছে বাউল গানের সঙ্গে। রুহির কাঠগড়ায় অভিযুক্ত ইলিয়াস মিয়ার বাড়ি শহরতলীর
পূর্বদশা গ্রামে। গানে আসক্ত ইলিয়াস মিয়া। বিয়ে করেছেন একাধিক। রুহির
পরিবারের সঙ্গে কয়েক মাস আগে সম্পর্ক হয়। রুহির পিতার একান্তজন হয়ে উঠেন
তিনি। এরপর থেকে প্রায়ই যেতেন রুহিদের ডহর গ্রামের বাড়িতে। শিল্পী রুহি ছিল
তার চোখেরমণি। রুহিকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন পিতার কাছে। এরই মধ্যে
রুহির পরিবারের সবাইকে নিয়ে গত ২রা ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারে বেড়াতে যান
ইলিয়াস মিয়া। সঙ্গে ছিলেন তার বন্ধু আলাউদ্দিন, মানিক, সুবান মিয়া।
ইলিয়াসসহ তার বন্ধুরা ছিলেন এক গাড়িতে। আর রুহি পরিবারের স্বজনদের নিয়ে
ছিলেন অন্য গাড়িতে। কক্সবাজারে তারা অনুষ্ঠানে গেছেন বলে রুহির তরফ থেকে
বলা হলেও তারা কক্সবাজারে কোনো অনুষ্ঠান করেছেন বলে তথ্য মিলেনি। গত ২রা
ফেব্রুয়ারি সকালে পরিবারের সকল সদস্যসহ তারা দুটি গাড়ি নিয়ে কক্সবাজারের
উদ্দ্যেশে রওয়ানা দেয়। সেখানে হোটেলে দুই দিন অবস্থানের পর ৪ঠা ফেব্রুয়ারি
সন্ধ্যায় সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। আসার পথেও রুহি ছিলেন পরিবারের
সদস্যদের নিয়ে একক গাড়িতে। আর ইলিয়াস বন্ধুদের নিয়ে ছিলেন তাদের গাড়িতে।
হবিগঞ্জের মাধবপুর পুলিশ চেকপোস্টে আসার পর পুলিশ গাড়িটি তল্লাশি চালায়।
তল্লাশির ফাঁকে গাড়ির চালক আলাউদ্দিন পুলিশের চোখের সামনে পালিয়ে যায়।
পুলিশ গাড়ির বনেট ও ড্রাইভিং সিটের নিচের বক্স থেকে বিশ হাজার পিস ইয়াবার
চালান উদ্ধার করে। ইয়াবা দেখে হতবিহ্বল পড়েন রুহি তাদের পরিবারের সদস্যরা।
পুলিশ গাড়িতে থাকা রুহি ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যায় থানায়। তাদের
প্রথমে ইয়াবা ব্যবসায়ী বলে আটক করে। সঙ্গে থাকা হারমনি, ঢোল, তবলা, মন্দিরা
ও গানের ডায়েরি পুলিশ হেফাজতে নিয়ে নেয়। রাতে পুলিশ থানায় তাদের ব্যাপক
জিজ্ঞাসাবাদ করে। এক পর্যায়ে পুলিশ রুহি, তার মা, ছোটোবোন, ভাইয়ের স্ত্রীকে
ছেড়ে দেয়। ইয়াবা মামলায় চালান দেয়ায় পরবর্তীতে হবিগঞ্জ আদালত বাউল আবুল
কালাম আজাদ ও ঢোল বাদক ভাই ইমনকে জেল হাজতে পাঠায়। বর্তমানে আমার তারা
দুইজন হবিগঞ্জ জেল হাজতে রয়েছেন।’ সিলেটে সংবাদ সম্মেলনে রুহি জানিয়েছেন,
‘ইলিয়াস আলী ও তার লোকজন মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকতে পারে। তারা ধোঁকা দিয়ে
সুকৌশলে আমাদের গাড়িতে অবৈধ মাল পাচারের উদ্দেশে রাখতে পারে। আমরা এই বিষয়
সম্পর্কে কিছু জানি না বা জানতাম না। আমার সহজ সরল গায়ক পিতা এসবের কিছু
অবগত নন। তাকে ফাঁসানোর জন্য দষ্কৃতকারীরা আমাদের বহনকৃত গাড়িতে এই ইয়াবা
রেখেছে। পুলিশ আমার পিতা ও ভাইকে আটক করলেও মূলহোতা ইলিয়াস আলী ও তার
সাঙ্গোপাঙ্গরা বহাল তবিয়তে রয়েছে। মাধবপুর থানার এক এসআই বাদী হয়ে ইয়াবা
উদ্ধারের সঙ্গে আমার বাবা ও ভাইকে জড়িয়ে যে মামলা দায়ের করেছেন, তা মিথ্যা ও
বানোয়াট। ইয়াবা বিষয়ে আমরা কিছুই জানতাম না।’ এলাকা সূত্র জানা গেছে-
রুহিকে কেন্দ্র করেই ঘটছে এ ঘটনা। রুহি অপ্রাপ্ত থাকা অবস্থায় শরীফ নামে এক
যুবককে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। পরে রুহির পিতা তাকে নিয়ে আসেন। শরীফ
বারবার রুহিকে ঘরে তোলার প্রস্তাব দিলেও রুহি ও তার পরিবার সাড়া দেয়নি। এ
কারণে শরীফ এখন মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এরপরও আরো এক যুবকের সঙ্গে তার
প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সবশেষ রুহির প্রতি ইলিয়াসের দুর্বলতা বাড়ে। সেই
দুর্বলতার সুবাদে ইলিয়াস তার পিতার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে। কয়েক মাস আগেও তারা
কক্সবাজার গিয়ে ঘুরে এসেছেন। পরে রুহি ও তার পরিবারের সবাইকে নিয়ে
কক্সবাজারে যান ইলিয়াস। রুহি জানিয়েছেন, তাদের বহরকারী গাড়িটি ছিল ইলিয়াসের
দেয়া। তারা ওই গাড়ির চালককে চিনতেন না। সুতরাং গাড়িতে ইয়াবা ঢুকালে সে কাজ
করবে ইলিয়াস ও তার বন্ধুরা। যখন তাদের পুলিশ আটক করলো তখন ইলিয়াস ও তার
বন্ধুরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসেনি। বারবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগের
চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। ১৫ দিন পেরিয়ে গেলে এখনো ইলিয়াস তাদের
সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি বলে জানান রুহি। তিনি বলেন, ‘আমি ইলিয়াসকে চাচ্চু
ডাকতাম। সে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে কি-না জানি না। তবে তার সঙ্গে আমার কোনো
সম্পর্ক ছিল না।’ পূর্বে শরীফের সঙ্গে বিয়ের বিষয়টিও অস্বীকার করে রুহি।
No comments