সেদিন একুশে by জোবায়ের রাজু
বারান্দা
থেকে রোজি আপা, শ্যামা আর বাবার কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে। এখন রাত সাড়ে ১০টা। এ
সময়ে এ তিনটি প্রাণীর নিজ ঘরে থাকার কথা। রোজি আপা হয়তো নিজের রুমে বসে
শ্যামার কণ্ঠে সুকুমার রায়ের কবিতা আবৃত্তি শুনছে, বাবা হয়তো তার সিংহাসনের
মতো দেখতে কাঠের চেয়ারে বসে পুরনো পত্রিকায় খেলার পাতায় চোখ বুলাচ্ছেন
কিন্তু আজ এ অবেলায় তারা তিনজন একত্র হয়ে বারান্দায় খোশগল্পে বিভোর কেন?
আমি তাদের কাছে যেতেই রোজি আপা বলল-
- আয় বস, বাবার গল্প শুনবি।
- বাবার গল্প মানে?
- বসে পড়ত। শুনলে বুঝতে পারবি। কাল একুশে ফেব্রুয়ারি, তোর মনে নেই?
এতক্ষণে ঘটনা পরিষ্কার হলো। প্রতিবার একুশের রাতে বাবা তার দুই মেয়েকে নিয়ে বারান্দায় বসে নিজের ছেলেবেলার একুশের গল্প শোনাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। কিভাবে ছোটবেলায় বাবা তার বন্ধুদের নিয়ে রাতভর রঙিন পেপারে বর্ণমালা লিখে একুশের পোস্টার বানাতেন, তারপর প্রভাতলগ্নে সবাই মিলে ফুলের ডালি নিয়ে সোজা শহীদ মিনারে চলে যেতেন খালি পায়ে। সবাই সমবেত কণ্ঠে কোরাস গাইতেন- আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো... প্রতিবার ঘুরেফিরে বাবা রোজি আপা আর শ্যামাকে এসব গল্পই শোনান। তারাও পুরনো গল্প শুনতে কান পেতে থাকে। আমি বুঝি না, একই গল্প শুনে ওরা দুই বোন কী আনন্দ পায়। গল্প বলা শেষে রাত ১২টা হলেই বাবা রোজি আপা আর শ্যামাকে বাড়ির পাশের কলেজের শহীদ মিনারে নিয়ে যান রাতের জোছনা গায়ে মেখে। শ্যামার হাতে তখন থাকে রোজি আপার বানানো গাঁদা ফুলের দীর্ঘ মালা, যে মালাটি তারা শহীদ মিনারে দেবে বলে গেঁথে রেখেছে। ভোরে শ্যামার চেঁচামেচিতে সবার ঘুম ভাঙল। হঠাৎ শ্যামার গলা কাঁপানো কান্না- কাল রাতে তার শখের বানানো ফুলের বাগানের সব ক’টি ফুল চুরি হয়ে গেছে। এটা নিশ্চয়ই পাড়ার উঠতি তরুণদের কাজ, যারা শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার বাসনায় শ্যামার বাগানের এ সর্বনাশ করে গেল রাতের অমানিশায় লোকচক্ষুর অন্তরালে।
- আয় বস, বাবার গল্প শুনবি।
- বাবার গল্প মানে?
- বসে পড়ত। শুনলে বুঝতে পারবি। কাল একুশে ফেব্রুয়ারি, তোর মনে নেই?
এতক্ষণে ঘটনা পরিষ্কার হলো। প্রতিবার একুশের রাতে বাবা তার দুই মেয়েকে নিয়ে বারান্দায় বসে নিজের ছেলেবেলার একুশের গল্প শোনাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। কিভাবে ছোটবেলায় বাবা তার বন্ধুদের নিয়ে রাতভর রঙিন পেপারে বর্ণমালা লিখে একুশের পোস্টার বানাতেন, তারপর প্রভাতলগ্নে সবাই মিলে ফুলের ডালি নিয়ে সোজা শহীদ মিনারে চলে যেতেন খালি পায়ে। সবাই সমবেত কণ্ঠে কোরাস গাইতেন- আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো... প্রতিবার ঘুরেফিরে বাবা রোজি আপা আর শ্যামাকে এসব গল্পই শোনান। তারাও পুরনো গল্প শুনতে কান পেতে থাকে। আমি বুঝি না, একই গল্প শুনে ওরা দুই বোন কী আনন্দ পায়। গল্প বলা শেষে রাত ১২টা হলেই বাবা রোজি আপা আর শ্যামাকে বাড়ির পাশের কলেজের শহীদ মিনারে নিয়ে যান রাতের জোছনা গায়ে মেখে। শ্যামার হাতে তখন থাকে রোজি আপার বানানো গাঁদা ফুলের দীর্ঘ মালা, যে মালাটি তারা শহীদ মিনারে দেবে বলে গেঁথে রেখেছে। ভোরে শ্যামার চেঁচামেচিতে সবার ঘুম ভাঙল। হঠাৎ শ্যামার গলা কাঁপানো কান্না- কাল রাতে তার শখের বানানো ফুলের বাগানের সব ক’টি ফুল চুরি হয়ে গেছে। এটা নিশ্চয়ই পাড়ার উঠতি তরুণদের কাজ, যারা শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার বাসনায় শ্যামার বাগানের এ সর্বনাশ করে গেল রাতের অমানিশায় লোকচক্ষুর অন্তরালে।
বাবা আর রোজি আপা মিলে শ্যামাকে
সান্ত্বনার বুলি আওড়াতে লাগলেন- ‘দেখো শ্যামা, ভাষাযুদ্ধে সালাম, রফিক,
বরকত ও জব্বারেরা প্রাণ দিয়েছেন। আজ একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে তাদের স্মরণে
ফুল দিতে ছেলেগুলো আমাদের বাগানের ফুল চুরি করে অন্যায় তো করেনি।’ শ্যামা
তার কাজল কালো দুটি চোখে রোজি আপার দিকে তাকিয়ে রইল। বাবা বললেন, ‘চল মা
শ্যামু, আমরা শহীদ মিনারে যাই। দেখবে সবাই ফুল নিয়ে এসেছে। তোর মন ভালো হয়ে
যাবে।’ শ্যামা কোনো কথা বলছে না। রোজি আপা বলল- ‘কিরে যাবি না?’ শ্যামা
হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল। বাবা, শ্যামা আর রোজি আপা এই সাতসকালে শহীদ মিনারে
যাচ্ছে। আমি জানালা দিয়ে তাদের যাওয়া দেখছি। কী সুন্দর সে দৃশ্য। দূরের
মাইকে বাজছে- ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো...’ গানের গলাটা অনেক পরিচিত। পাশের
বাড়ির ফারহানার নয়তো, যে মেয়ে প্রতিবার একুশের এই দিনে সবাইকে গান শুনিয়ে
কলেজ প্রাঙ্গণ মাতিয়ে রাখার যোগ্যতা রাখে।
আমিশাপাড়া, রাজু ফার্মেসি, নোয়াখালী
আমিশাপাড়া, রাজু ফার্মেসি, নোয়াখালী
No comments