শহীদমিনারের স্রোত গ্রন্থমেলায় by মুনির হোসেন
অপেক্ষার
প্রহর ভোর থেকে। এই অপেক্ষা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। তবুও ক্লান্তি নেই,
নেই কোনো হতাশা। শোকগুলো যেন আজ শক্তিতে পুনরায় জেগে ওঠার সাহস জোগাচ্ছে।
হৃদয় নিংড়ানো শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার আবেগের কাছে হার মেনেছে সব কষ্টের।
জনতার স্রোত ঢেকেছে পলাশী থেকে আজিমপুর অন্যদিকে নীলক্ষেত পর্যন্ত।
যেখানে দাঁড়িয়ে থাকুক না কেন, হৃদয় যেন পড়ে আছে কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে। ধীরলয়ে এগিয়ে আসছে তারা স্মৃতির মিনারের দিকে। ফুলে ফুলে ভরে দিয়েছে আগ থেকে ভালোবাসায় সিক্ত হতে বুক পেতে থাকা শহীদ বেদিকে। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাঙালি জাতি এভাবে স্মরণ করেছে ৫২-র ভাষা শহীদদের। যাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার ফিরে পেয়েছি আমরা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদ বেদির পূর্ব পাশ ধরে বাঙালি হেঁটেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার দিকে। যেখানে সাদা কাগজের ওপর বিভিন্ন ছন্দে ও আবেগে কালো কালিতে লেখা আমাদের গর্বের বর্ণমালাগুলো। যে মেলা বাঙালি জাতীয়তাবোধের চেতনা ও শিল্পকে শানিত করে। তাইতো শহীদমিনার থেকে বেরিয়ে দোয়েল চত্বর কিংবা টিএসসি হয়ে এদিন মেলায় প্রবেশ করেছে লাখো বাঙালি। এখানেও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই প্রবেশে করেছে গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সৃজনশীল সব বইয়ের সমাহার, অন্যদিকে বাংলা একাডেমিতে গবেষণাধর্মী ও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও স্মারকের সমাহার। মেলায় আসা দর্শনার্থীরা ঘুরেছে এপাশ থেকে ওইপাশ, এ স্টল থেকে ওই স্টল। দেখেছে বিভিন্ন স্মারক, তথ্য-উপাত্ত ও বই। এরপর পছন্দমতো কিনেছেও।
এদিন মেলায় আসা দর্শনার্থীদের পোশাকেও ফুটে উঠেছে শহীদদের প্রতি বাঙালি জাতির শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নমুনা। পুরুষের পরনের পাঞ্জাবি, ফতুয়া কিংবা নারীকুলের পরনের শাড়ি সব কিছুতে ফুটে উঠেছে বাংলার প্রতি মমত্ববোধ। ভাষা আন্দোলনের মহিমায় উজ্জ্বল এসব পোশাক। কালো পাঞ্জাবি কিংবা শাড়িতে যেমন ছিল সালাম, রফিক, বরকতদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তেমনই কালো সাদার মিশেলে তৈরি পোশাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শহীদমিনার, মানচিত্র, পতাকা, একুশের গান, কবিতা, স্লোগান, পঙ্ক্তিমালাসহ নানা কিছু। ধানমন্ডি থেকে আসা গৃহিণী নিলুফার আক্তার বলেন, ‘সাদা কালোর মিশ্র রঙের শাড়ি পরেই শহীদমিনারে এসেছি, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কারণে। আমার শাড়ির জমিনে শহীদমিনারের ছবি রয়েছে। শহীদমিনার থেকে সরাসরি মেলায় চলে এসেছি। অন্য যেকোনো দিন থেকে আজ গ্রন্থমেলায় আসতে পারা অনেকটা গর্বের। কিছু বইও কিনবো বলে লক্ষ্য আছে।’
এদিকে গতকাল অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আগ থেকেই ঘোষণা দিয়েছে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়। হয়েছেও তাই। সকাল থেকেই গ্রন্থমেলায় দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সরাসরি গ্রন্থমেলায় চলে এসেছে পাঠক। দর্শনার্থীদের প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে গতকাল মেলায় বেচাকিনাও হয়েছে বেশ। অন্য যেকোনো দিনের থেকে গতকাল মেলায় সর্বোচ্চ বেচাবিক্রি হয়েছে বলে জানান প্রকাশকরা। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের বেশির ভাগের হাতেই বই দেখা গেছে এদিন। জানতে চাইলে কাকলী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘আজ মেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক দর্শনার্থী থাকবে এটা আগ থেকেই জানা ছিল। তাই আমরাও স্টলে পাঠকের চাপের কথা খেয়াল রেখে আগ থেকে বাড়তি প্রস্তুতি রেখেছি। বেচাবিক্রিও খুব ভালো চলছে।’ অন্য প্রকাশের মিডিয়া বিভাগে নিয়োজিত আলাউদ্দিন টিপু বলেন, ‘বেচাবিক্রি ভালো চলছে। পাঠক হুমায়ুন আহমেদের বই বেশি কিনছে।’ ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, ‘বেচাবিক্রি বরাবরই ভালো থাকে। তবে আজ একটু বেশি।’
গতকাল মেলা চলে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল সাড়ে ৭টায় একুশে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে হয়েছে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে সভাপতিত্ব করেন কবি কামাল চৌধুরী। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে- অমর একুশে বক্তৃতা। একুশে ফেব্রুয়ারির লক্ষ্য কী, অর্জনের পথ কোন দিকে শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
যেখানে দাঁড়িয়ে থাকুক না কেন, হৃদয় যেন পড়ে আছে কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে। ধীরলয়ে এগিয়ে আসছে তারা স্মৃতির মিনারের দিকে। ফুলে ফুলে ভরে দিয়েছে আগ থেকে ভালোবাসায় সিক্ত হতে বুক পেতে থাকা শহীদ বেদিকে। মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বাঙালি জাতি এভাবে স্মরণ করেছে ৫২-র ভাষা শহীদদের। যাদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলার অধিকার ফিরে পেয়েছি আমরা। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদ বেদির পূর্ব পাশ ধরে বাঙালি হেঁটেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার দিকে। যেখানে সাদা কাগজের ওপর বিভিন্ন ছন্দে ও আবেগে কালো কালিতে লেখা আমাদের গর্বের বর্ণমালাগুলো। যে মেলা বাঙালি জাতীয়তাবোধের চেতনা ও শিল্পকে শানিত করে। তাইতো শহীদমিনার থেকে বেরিয়ে দোয়েল চত্বর কিংবা টিএসসি হয়ে এদিন মেলায় প্রবেশ করেছে লাখো বাঙালি। এখানেও দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই প্রবেশে করেছে গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রাঙ্গণে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সৃজনশীল সব বইয়ের সমাহার, অন্যদিকে বাংলা একাডেমিতে গবেষণাধর্মী ও বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত ও স্মারকের সমাহার। মেলায় আসা দর্শনার্থীরা ঘুরেছে এপাশ থেকে ওইপাশ, এ স্টল থেকে ওই স্টল। দেখেছে বিভিন্ন স্মারক, তথ্য-উপাত্ত ও বই। এরপর পছন্দমতো কিনেছেও।
এদিন মেলায় আসা দর্শনার্থীদের পোশাকেও ফুটে উঠেছে শহীদদের প্রতি বাঙালি জাতির শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নমুনা। পুরুষের পরনের পাঞ্জাবি, ফতুয়া কিংবা নারীকুলের পরনের শাড়ি সব কিছুতে ফুটে উঠেছে বাংলার প্রতি মমত্ববোধ। ভাষা আন্দোলনের মহিমায় উজ্জ্বল এসব পোশাক। কালো পাঞ্জাবি কিংবা শাড়িতে যেমন ছিল সালাম, রফিক, বরকতদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা তেমনই কালো সাদার মিশেলে তৈরি পোশাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শহীদমিনার, মানচিত্র, পতাকা, একুশের গান, কবিতা, স্লোগান, পঙ্ক্তিমালাসহ নানা কিছু। ধানমন্ডি থেকে আসা গৃহিণী নিলুফার আক্তার বলেন, ‘সাদা কালোর মিশ্র রঙের শাড়ি পরেই শহীদমিনারে এসেছি, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কারণে। আমার শাড়ির জমিনে শহীদমিনারের ছবি রয়েছে। শহীদমিনার থেকে সরাসরি মেলায় চলে এসেছি। অন্য যেকোনো দিন থেকে আজ গ্রন্থমেলায় আসতে পারা অনেকটা গর্বের। কিছু বইও কিনবো বলে লক্ষ্য আছে।’
এদিকে গতকাল অমর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আগ থেকেই ঘোষণা দিয়েছে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টায়। হয়েছেও তাই। সকাল থেকেই গ্রন্থমেলায় দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। কেন্দ্রীয় শহীদমিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সরাসরি গ্রন্থমেলায় চলে এসেছে পাঠক। দর্শনার্থীদের প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে গতকাল মেলায় বেচাকিনাও হয়েছে বেশ। অন্য যেকোনো দিনের থেকে গতকাল মেলায় সর্বোচ্চ বেচাবিক্রি হয়েছে বলে জানান প্রকাশকরা। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের বেশির ভাগের হাতেই বই দেখা গেছে এদিন। জানতে চাইলে কাকলী প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী নাসির উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘আজ মেলায় সর্বোচ্চ সংখ্যক দর্শনার্থী থাকবে এটা আগ থেকেই জানা ছিল। তাই আমরাও স্টলে পাঠকের চাপের কথা খেয়াল রেখে আগ থেকে বাড়তি প্রস্তুতি রেখেছি। বেচাবিক্রিও খুব ভালো চলছে।’ অন্য প্রকাশের মিডিয়া বিভাগে নিয়োজিত আলাউদ্দিন টিপু বলেন, ‘বেচাবিক্রি ভালো চলছে। পাঠক হুমায়ুন আহমেদের বই বেশি কিনছে।’ ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী আমজাদ হোসেন কাজল বলেন, ‘বেচাবিক্রি বরাবরই ভালো থাকে। তবে আজ একটু বেশি।’
গতকাল মেলা চলে সকাল ৮টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। সকাল সাড়ে ৭টায় একুশে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে হয়েছে স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে সভাপতিত্ব করেন কবি কামাল চৌধুরী। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে- অমর একুশে বক্তৃতা। একুশে ফেব্রুয়ারির লক্ষ্য কী, অর্জনের পথ কোন দিকে শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
No comments