পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন॥ বাংলাদেশের না by হামিদ-উজ-জামান মামুন
পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের
অর্থায়ন চায় না বাংলাদেশ। দীর্ঘ টানাপোড়েনের পর এ নিয়ে আল্টিমেটামের শেষ
দিনেই বিশ্বব্যাংককে সাফ জানিয়ে দিয়েছে সরকার।
পদ্মা সেতু
প্রকল্পে সংস্থাটির ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব
প্রত্যাহার করে বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক ই-মেইল বার্তায়
বিশ্বব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়। শুক্রবার সকালে
বিশ্বব্যাংকের স্থানীয় কার্যালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য প্রকাশ করে। এ
প্রেক্ষিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় সরকারী এক বিবৃতিতে জানানো হয়, নির্বাচনী
অঙ্গীকার পরিপূরণের জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, বিশ্বব্যাংকের সহায়তা
ছাড়াই এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। প্রয়োজনে প্রকল্পের ব্যয় কমানোর জন্য
শুধু সড়ক সংযোগ সেতু নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে অন্য উন্নয়ন সহযোগীদেরও
এই তথ্য সরবরাহ করে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়। এই
প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সূচী এবং পদক্ষেপ নিয়ে সকল উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে
আলোচনার জন্য সত্বর তাদের ঢাকায় বৈঠক আহ্বান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
অন্যদিকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মালয়েশিয়া, চীন ও ভারত পদ্মা প্রকল্পে অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এ প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত হবে এবং কাজও শুরু হবে এ সরকারের সময়েই। শুক্রবার ঢাকা-মংমনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা প্রকল্পের কাজ দেখতে গাজীপুরে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকারের এ মেয়াদেই পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর টার্গেট নিয়ে প্রস্তুতিমূলক তৎপরতা ও কর্মকা- জোরদার করতে হবে। আমি এখন সে কাজটিই করে যাচ্ছি। অর্থায়নের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজে দেখবেন আর দাতাদের সামলাবেন অর্থমন্ত্রী।
বিশ্বব্যাংকের দেয়া সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংককে জানিয়েছেÑ তারা পদ্মা সেতুর জন্য অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। তবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাওয়া হবে। বাংলাদেশ সরকারের এ সিদ্ধান্ত আমলে নিয়ে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির পূর্ণ ও নিরপেক্ষ তদন্ত শেষ করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) উৎসাহ দিচ্ছে।
এর আগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়টি জানুয়ারির মধ্যে নিশ্চিত করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এর মধ্যে কোন সাড়া না পাওয়ায় এ প্রকল্পে সংস্থাটির ফিরে আসার বিষয়ে আশা হারিয়ে ফেলে সরকার। উল্টো পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের বুধবারের মন্তব্য সরকারকে পুরোপুরি হতাশ করে। বুধবার বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম ওয়াশিংটনের এক সেমিনারে বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত শর্ত মেনে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ সুষ্ঠুভাবে তদন্ত না হচ্ছে ততক্ষণ এ প্রকল্পে অর্থায়নের কথা চিন্তা করতে পারে না বিশ্বব্যাংক। এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জরুরী বৈঠক করেন। এতে পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারের শীর্ষ মহলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অর্থমন্ত্রণালয় বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে ই-মেইল বার্তার মাধ্যমে ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব প্রত্যাহারের বিষয়টি জানায়। একই সঙ্গে এ প্রকল্পের ঋণ দাতা অন্য তিন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ও ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংককে (আইডিবি) সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে জানানো হয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা অন্য দাতা সংস্থাগুলোকে অর্থায়নের অনুরোধ করেছি। তারা অর্থায়নের বিষয়ে সব সময়ই আগ্রহী। তবে বিশ্বব্যাংক চলে যাওয়ায় নতুন কনসোর্টিয়ামের আওতায় অন্য দাতাদের অর্থায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, এ মূহূর্তে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপানের সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নের বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা সম্ভব নয়। সংস্থাগুলোর উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা ইতিবাচক হলেও তাদের বোর্ডের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।
অর্থমন্ত্রীর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। কিন্তু আপাতত পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনা করার জন্য আগে যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সেটি প্রত্যাহার করছি। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, জানুয়ারির মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে কোন ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে সরকার অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রয়োজনে নিজেদের অর্থায়নেই এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হবে। পদ্মা সেতুর জন্য অনুরোধ ফিরিয়ে নেয়া হলেও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নকৃত অন্য প্রকল্পে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রবিবার চিঠির বিস্তারিত দিক এবং সেতু নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরার কথা থাকলেও শুক্রবার সন্ধ্যায় সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের আজকের তারিখে (১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩) একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, তারা পদ্মা সেতুর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা আর চাইছে না এবং পদ্মা সেতুর তদন্ত প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার কিছুদিন আগে থেকেই বলছে যে, তারা জানুয়ারি ২০১৩ এর মধ্যে পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের প্রত্যাবর্তন আশা করছিল এবং জানুয়ারিতেই এই বিষয়ক বিকল্প সিদ্ধান্ত নিতে সরকার বদ্ধপরিকর। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংককে জানিয়ে দেয় যে তারা পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ এক্ষুণি শুরু করতে চাচ্ছে এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়াই কাজটি শুরু করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের বিবেচনায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের পুনর্বিবেচনা ছিল বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক এবং সরকার প্রথম থেকেই যা বলছে তা তারই প্রত্যায়ন। সরকার প্রথম থেকেই বলছে যে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি বিষয়ক অভিযোগ তারা যথাযথভাবেই বিবেচনা করছে। কিন্তু অভিযোগের পক্ষে প্রমাণের অভাবে ২০১২ সালের জুন মাস পর্যন্ত এফআইআর পেশ করার মতো অবস্থা ছিল না। বিশ্বব্যাংক পরবর্তীকালে নবেম্বর মাসে অতিরিক্ত প্রমাণ সরবরাহ করলে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন কিছু অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর পেশ করে। এই এফআইআর-এ তারা আরও কতিপয় অভিযুক্ত ব্যক্তি সমন্ধে তদন্ত চালিয়ে যাবার ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানায়। বাংলাদেশ সরকার মনে করে যে এই পদক্ষেপটি যথাযথ এবং তারই ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করা সমীচীন হতো। এ ক্ষেত্রে দেখা গেল যে বাংলাদেশ সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সূচী বিশ্বব্যাংকের সময়সূচীর সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়। বিশ্বব্যাংকের সময়সূচী অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ অনিশ্চিত।
নির্বাচনী অঙ্গীকার পরিপূরণের জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়াই এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। প্রয়োজনে প্রকল্পের ব্যয় কমানোর জন্য শুধু সড়ক সংযোগ সেতু নির্মাণ করা হবে। বিবৃতিতে জানানো হয়, অর্থমন্ত্রী ভেবেছিলেন যে, আগামী রবিবার অথবা সোমবারে তিনি এ বিষয়ে সংসদে বক্তব্য রাখবেন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা সেতু বিষয়ে আজকের বিজ্ঞপ্তিটি দেয়া হলো। আগামী রবিবার বা সোমবার অর্থমন্ত্রী এই বিষয়ে জাতীয় সংসদে বিস্তৃত বক্তব্য রাখবেন।
সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু অর্থায়নের বিষয়টির সঙ্গে উর্ধতন সরকারী ব্যক্তিবর্গ ও কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ সরকারকে একাধিকবার তুলে ধরার পরও সরকারের কাছ থেকে যথাযথ সাড়া না পাওয়ার অভিযোগে বিশ্বব্যাংক ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ গত ২৯ জুন বাতিল করে। পরবর্তীতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় ও গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে সরকার বেশ কিছু বিষয়ে সম্মত হয়। এগুলো হলো, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন সব সরকারী কর্মকর্তা ও ব্যক্তিকে সরকারী দায়িত্ব পালন থেকে ছুটি প্রদান, এই অভিযোগ তদন্তের জন্য বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি বিশেষ তদন্ত ও আইনী দল গঠন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি এক্সটারনাল প্যানেলের কাছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সব তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা। যাতে এই প্যানেল তদন্তের ব্যাপকতা ও সুষ্ঠুতার ব্যাপারে উন্নয়ন সহযোগীদের পরামর্শ দিতে পারে। বিকল্প বাস্তবায়ন পন্থা অবলম্বন যাতে বিশ্বব্যাংক ও উন্নয়ন সহযোগীদের ক্রয় প্রক্রিয়া আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণ সম্ভব হবে। তারপর থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংকের সব শর্ত পূরণের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়।
এরই অংশ হিসেবে লুইস গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বে গত ১ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বার ঢাকা সফরে আসে বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক প্যানেল। ৩ ডিসেম্বর ও ৫ ডিসেম্বর দুদকের সঙ্গে বৈঠক করেন প্যানেলের সদস্যরা। তিন দফা বৈঠক শেষে আবুল হোসেনকে মামলার আসামি করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে একমত হতে পারেনি উভয়পক্ষই।
এ প্রেক্ষিতে ৫ ডিসেম্বর বৈঠক শুরুর মাত্র ৪০ মিনিট পর অভিমান করে বৈঠক থেকে বের হয়ে যান বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্যসহ বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা। পরে বিশেষজ্ঞ প্যানেল রাজধানীর মিণ্টো রোডে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বাসায় যায়। সেখানে বৈঠক শেষে সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় বিশেষজ্ঞ প্যানেল পুনরায় দুদকে ফিরে আসে। অর্থমন্ত্রীর বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁরা সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান। এদিন দ্বিতীয় দফায় অল্প সময় দুদকে বৈঠক শেষ করে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল। বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওকাম্পো বলেন, খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এখন আমরা চলে যাচ্ছি। এর পরই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলা এফআইআর পাঠানো হয় বিশেষজ্ঞ প্যানেলের কাছে। সম্প্রতি দুদককে চিঠি দিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের ব্যাখা চায় প্যানেল। এ ব্যাখাগুলোও পাঠানো হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রতিবেদন আর আসে না।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এ সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়া অন্যান্য দাতা সংস্থার মধ্যে ওই বছরের ১৮ মে জাপানের সঙ্গে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান বিষয়ক চুক্তি করে সরকার। ২৪ মে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে ১৪ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ৬ জুন এশীয় ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে ৪ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা (৬১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়। এর মধ্য দিয়ে সেতু নির্মাণে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে সবগুলো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া শেষ হয়। এ পর্যায় পর্যন্ত সবকিছু চলছিল ঠিকঠাক। কিন্তু তারপরই শুরু হয় জটিলতা।
অন্যদিকে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মালয়েশিয়া, চীন ও ভারত পদ্মা প্রকল্পে অর্থায়নের আগ্রহ দেখিয়েছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যেই এ প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত হবে এবং কাজও শুরু হবে এ সরকারের সময়েই। শুক্রবার ঢাকা-মংমনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করা প্রকল্পের কাজ দেখতে গাজীপুরে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সরকারের এ মেয়াদেই পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর টার্গেট নিয়ে প্রস্তুতিমূলক তৎপরতা ও কর্মকা- জোরদার করতে হবে। আমি এখন সে কাজটিই করে যাচ্ছি। অর্থায়নের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নিজে দেখবেন আর দাতাদের সামলাবেন অর্থমন্ত্রী।
বিশ্বব্যাংকের দেয়া সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংককে জানিয়েছেÑ তারা পদ্মা সেতুর জন্য অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। তবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে তদন্ত চালিয়ে যাওয়া হবে। বাংলাদেশ সরকারের এ সিদ্ধান্ত আমলে নিয়ে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির পূর্ণ ও নিরপেক্ষ তদন্ত শেষ করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) উৎসাহ দিচ্ছে।
এর আগে পদ্মা সেতুতে অর্থায়নের বিষয়টি জানুয়ারির মধ্যে নিশ্চিত করার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এর মধ্যে কোন সাড়া না পাওয়ায় এ প্রকল্পে সংস্থাটির ফিরে আসার বিষয়ে আশা হারিয়ে ফেলে সরকার। উল্টো পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের বুধবারের মন্তব্য সরকারকে পুরোপুরি হতাশ করে। বুধবার বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম ওয়াশিংটনের এক সেমিনারে বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত শর্ত মেনে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ সুষ্ঠুভাবে তদন্ত না হচ্ছে ততক্ষণ এ প্রকল্পে অর্থায়নের কথা চিন্তা করতে পারে না বিশ্বব্যাংক। এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা জরুরী বৈঠক করেন। এতে পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারের শীর্ষ মহলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অর্থমন্ত্রণালয় বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে ই-মেইল বার্তার মাধ্যমে ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব প্রত্যাহারের বিষয়টি জানায়। একই সঙ্গে এ প্রকল্পের ঋণ দাতা অন্য তিন সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা) ও ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংককে (আইডিবি) সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংকের কাছে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে জানানো হয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা অন্য দাতা সংস্থাগুলোকে অর্থায়নের অনুরোধ করেছি। তারা অর্থায়নের বিষয়ে সব সময়ই আগ্রহী। তবে বিশ্বব্যাংক চলে যাওয়ায় নতুন কনসোর্টিয়ামের আওতায় অন্য দাতাদের অর্থায়ন করতে হবে। তিনি বলেন, এ মূহূর্তে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপানের সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নের বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা সম্ভব নয়। সংস্থাগুলোর উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা ইতিবাচক হলেও তাদের বোর্ডের অনুমোদন প্রয়োজন হয়।
অর্থমন্ত্রীর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। কিন্তু আপাতত পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণচুক্তি পুনর্বিবেচনা করার জন্য আগে যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সেটি প্রত্যাহার করছি। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, জানুয়ারির মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে কোন ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে সরকার অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রয়োজনে নিজেদের অর্থায়নেই এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন করা হবে। পদ্মা সেতুর জন্য অনুরোধ ফিরিয়ে নেয়া হলেও বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নকৃত অন্য প্রকল্পে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জাতীয় সংসদ অধিবেশনে রবিবার চিঠির বিস্তারিত দিক এবং সেতু নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরার কথা থাকলেও শুক্রবার সন্ধ্যায় সরকারের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংকের আজকের তারিখে (১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩) একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে, তারা পদ্মা সেতুর বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। তারা আরও জানিয়েছে যে, বাংলাদেশ সরকার পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা আর চাইছে না এবং পদ্মা সেতুর তদন্ত প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সরকার কিছুদিন আগে থেকেই বলছে যে, তারা জানুয়ারি ২০১৩ এর মধ্যে পদ্মা সেতুর অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের প্রত্যাবর্তন আশা করছিল এবং জানুয়ারিতেই এই বিষয়ক বিকল্প সিদ্ধান্ত নিতে সরকার বদ্ধপরিকর। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংককে জানিয়ে দেয় যে তারা পদ্মা সেতু প্রকল্পের কাজ এক্ষুণি শুরু করতে চাচ্ছে এবং বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন ছাড়াই কাজটি শুরু করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকারের বিবেচনায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের পুনর্বিবেচনা ছিল বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক এবং সরকার প্রথম থেকেই যা বলছে তা তারই প্রত্যায়ন। সরকার প্রথম থেকেই বলছে যে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতি বিষয়ক অভিযোগ তারা যথাযথভাবেই বিবেচনা করছে। কিন্তু অভিযোগের পক্ষে প্রমাণের অভাবে ২০১২ সালের জুন মাস পর্যন্ত এফআইআর পেশ করার মতো অবস্থা ছিল না। বিশ্বব্যাংক পরবর্তীকালে নবেম্বর মাসে অতিরিক্ত প্রমাণ সরবরাহ করলে বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন কিছু অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে এফআইআর পেশ করে। এই এফআইআর-এ তারা আরও কতিপয় অভিযুক্ত ব্যক্তি সমন্ধে তদন্ত চালিয়ে যাবার ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানায়। বাংলাদেশ সরকার মনে করে যে এই পদক্ষেপটি যথাযথ এবং তারই ভিত্তিতে বিশ্বব্যাংকের প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করা সমীচীন হতো। এ ক্ষেত্রে দেখা গেল যে বাংলাদেশ সরকারের প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সূচী বিশ্বব্যাংকের সময়সূচীর সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়। বিশ্বব্যাংকের সময়সূচী অনুযায়ী প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ অনিশ্চিত।
নির্বাচনী অঙ্গীকার পরিপূরণের জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়াই এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। প্রয়োজনে প্রকল্পের ব্যয় কমানোর জন্য শুধু সড়ক সংযোগ সেতু নির্মাণ করা হবে। বিবৃতিতে জানানো হয়, অর্থমন্ত্রী ভেবেছিলেন যে, আগামী রবিবার অথবা সোমবারে তিনি এ বিষয়ে সংসদে বক্তব্য রাখবেন। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে পদ্মা সেতু বিষয়ে আজকের বিজ্ঞপ্তিটি দেয়া হলো। আগামী রবিবার বা সোমবার অর্থমন্ত্রী এই বিষয়ে জাতীয় সংসদে বিস্তৃত বক্তব্য রাখবেন।
সূত্র জানায়, পদ্মা সেতু অর্থায়নের বিষয়টির সঙ্গে উর্ধতন সরকারী ব্যক্তিবর্গ ও কর্মকর্তাদের দুর্নীতিতে জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণ সরকারকে একাধিকবার তুলে ধরার পরও সরকারের কাছ থেকে যথাযথ সাড়া না পাওয়ার অভিযোগে বিশ্বব্যাংক ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ গত ২৯ জুন বাতিল করে। পরবর্তীতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় ও গত ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে সরকার বেশ কিছু বিষয়ে সম্মত হয়। এগুলো হলো, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজন সব সরকারী কর্মকর্তা ও ব্যক্তিকে সরকারী দায়িত্ব পালন থেকে ছুটি প্রদান, এই অভিযোগ তদন্তের জন্য বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি বিশেষ তদন্ত ও আইনী দল গঠন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি এক্সটারনাল প্যানেলের কাছে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সব তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা। যাতে এই প্যানেল তদন্তের ব্যাপকতা ও সুষ্ঠুতার ব্যাপারে উন্নয়ন সহযোগীদের পরামর্শ দিতে পারে। বিকল্প বাস্তবায়ন পন্থা অবলম্বন যাতে বিশ্বব্যাংক ও উন্নয়ন সহযোগীদের ক্রয় প্রক্রিয়া আরও নিবিড় পর্যবেক্ষণ সম্ভব হবে। তারপর থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংকের সব শর্ত পূরণের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়।
এরই অংশ হিসেবে লুইস গ্যাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পোর নেতৃত্বে গত ১ ডিসেম্বর দ্বিতীয়বার ঢাকা সফরে আসে বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক প্যানেল। ৩ ডিসেম্বর ও ৫ ডিসেম্বর দুদকের সঙ্গে বৈঠক করেন প্যানেলের সদস্যরা। তিন দফা বৈঠক শেষে আবুল হোসেনকে মামলার আসামি করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে একমত হতে পারেনি উভয়পক্ষই।
এ প্রেক্ষিতে ৫ ডিসেম্বর বৈঠক শুরুর মাত্র ৪০ মিনিট পর অভিমান করে বৈঠক থেকে বের হয়ে যান বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্যসহ বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিরা। পরে বিশেষজ্ঞ প্যানেল রাজধানীর মিণ্টো রোডে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বাসায় যায়। সেখানে বৈঠক শেষে সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় বিশেষজ্ঞ প্যানেল পুনরায় দুদকে ফিরে আসে। অর্থমন্ত্রীর বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তাঁরা সাংবাদিকদের এড়িয়ে যান। এদিন দ্বিতীয় দফায় অল্প সময় দুদকে বৈঠক শেষ করে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেল। বেরিয়ে যাওয়ার সময় ওকাম্পো বলেন, খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এখন আমরা চলে যাচ্ছি। এর পরই দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলা এফআইআর পাঠানো হয় বিশেষজ্ঞ প্যানেলের কাছে। সম্প্রতি দুদককে চিঠি দিয়ে বেশ কিছু প্রশ্নের ব্যাখা চায় প্যানেল। এ ব্যাখাগুলোও পাঠানো হয়। কিন্তু বিশেষজ্ঞ প্যানেলের প্রতিবেদন আর আসে না।
সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এ সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৯৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়া অন্যান্য দাতা সংস্থার মধ্যে ওই বছরের ১৮ মে জাপানের সঙ্গে ৪০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ প্রদান বিষয়ক চুক্তি করে সরকার। ২৪ মে ইসলামি উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে ১৪ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তা বিষয়ক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ৬ জুন এশীয় ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে ৪ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা (৬১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়। এর মধ্য দিয়ে সেতু নির্মাণে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকারের সঙ্গে সবগুলো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের প্রক্রিয়া শেষ হয়। এ পর্যায় পর্যন্ত সবকিছু চলছিল ঠিকঠাক। কিন্তু তারপরই শুরু হয় জটিলতা।
No comments