সুরের ভূবনে by বারী সিদ্দিকী
নেত্রকোনার সনত্মান। বারী সিদ্দিকী। এক
নামেই যাকে চেনে দেশ-বিদেশের বহু মানুষ। তাকে নিয়ে নতুন করে ভূমিকা লেখার
আর কোন প্রয়োজন নেই। তিনি এখন সবার প্রিয় সঙ্গিতশিল্পী। তার বাঁশির ভক্তের
সংখ্যাও কম নেই।
নেত্রকোনায় গানে তার হাতেখড়ি। তিনি বলেন
গ্রামের বাড়ি থাকাকালে বয়োজ্যেষ্ঠদের গান শুনে শুনে গান গাওয়া শিখি। এক
পর্যায়ে বড় ভাই আবদুর রহমানের কাছেও একটু একটু করে গান শেখা শুরম্ন করি।
এরপর এ গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে গিয়ে গান শোনা এবং গান শেখা চলত। এভাবে কাস
নাইন-টেন পর্যনত্ম গ্রামের মুক্ত পরিবেশেই গানের চর্চা করেছি। সত্তর দশকের
শেষের দিকের কথা। জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সঙ্গে যুক্ত হই। তখন বিভিন্ন
অনুষ্ঠানে গানও করতাম। সে সময়ে যাদের কাছে গান শিখেছি তাদের মধ্যে
উলেস্নখযোগ্য হচ্ছেন রফিক মাহমুদ, বিপুল চৌধুরী, দুলাল, সুব্রত সরকারসহ
প্রমুখ। এসব মানুষের অনুপ্রেরণায় এবং পদ্ধতিগতভাবে গান শেখার কারণেই আমি
আজকের বারী সিদ্দিকী হয়েছি। এরপর একসময় দেখা হয় ওসত্মাদ গোপাল দত্তের
সঙ্গে। গোপাল দত্ত বললেন_ কাসিক্যাল মিউজিক শুরম্ন কর। আমার মনে হচ্ছে তুমি
পারবে। তখন ফজর আলী ভাইও সহোযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেন। এবং কাসিক শেখা
শুরম্ন করলাম। এভাবে সত্তর দশক চলে গেল। কাসিক্যাল ২ থেকে ৩ বছর শেখার পর
ঢাকায় চলে এলাম। ঢাকাতে ওসত্মাদ আমিনুর রহমানের কাছে কাসিক্যাল গান শেখা
শুরম্ন করি। তার বাড়িতে থাকার সুবাদেই তখন ভারত বর্ষের গুণী প-িত দেব
মুদ্রেশ্ব, প-িত ভিজি কার্নাড, ডাগর ব্রাকারসসহ প্রমুখ ব্যক্তিত্বের
সানি্নধ্যে যাওয়ার সুযোগ হয়। পরবতর্ীতে ওসত্মাদ আমিনুর রহমান বললেন
কার্নাডের কাছে কিছু শেখার চেষ্টা কর। সেই কথার প্রেৰিতে পুনাতে যাই এবং
সেখানে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের ওপর তালিম নেয়া শুরম্ন করি। ততদিনে আমি রেডিও ও
টেলিভিশনে গান করে অল্প স্বল্প পরিচিতি পেতেও শুরম্ন করেছি। সেখান থেকে
বাঁশি বাজাতেও শুরম্ন করি নিয়মিতভাবে। এবং নানা চড়াই উৎরাই পার করে চলতে
হয়েছে সে সময়। মানসিকভাবে ভেঙ্গেও পড়েছিলাম। কেননা তখন সঙ্গীতের কোন ভাল
অবস্থা ছিল না। তখন যাদের সঙ্গে গান করতাম তাদের আচরণ বড়ই পীড়া দিত। সবকিছু
মিলিয়ে সিদ্ধানত্ম নিতে পারছিলাম না কি করব। তখন একা একা গান করতে শুরম্ন
করি। মাঝে মাঝে বাঁশিও বাজিয়েছি বিভিন্ন শিল্পীর গানের সঙ্গে। আর তা করেছি
নিতানত্মই পেটের দায়ে।
বাংলাদেশের সঙ্গীতের বর্তমান প্রেৰাপট দেখলে খুবই দুঃখ হয়। বর্তমান শিল্পীরা শেকড় থেকে বিচু্যত। মূল সংস্কৃতি থেকেও তারা দিন দিন বিচু্যত হচ্ছে। এখন পরিবেশটা কেমন যেন অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে। অথচ এ পরিবেশে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করলে তাঁরা অনেক দূর যেতে পারতেন।
আজকের এই অবস্থানে আসব একথা ভাবা শুরম্ন করি আজ থেকে ষোলো-সতেরো বছর আগে। তখন সেই পরিবেশেই সিদ্ধানত্ম নেই গান রেকর্ড করার। নিজের যা কিছু আছে তা নিয়ে দু'টি গান রেকর্ড করা শুরম্ন করি কাকরাইলের ডন স্টুডিওতে। এবং সেই গান দুটো নিয়ে শ্রদ্ধেয় হুমায়ূন আহমেদ সাহেবকে দেই। তখন উনি খুবই পপুলার পার্সন। তিনি তখন 'আমার গায়ে যত দুঃখ সয়...' গানটি ঈদ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান রঙের বাড়ইতে প্রচার করেন। গানটি সর্ব মহলে সমাদৃত হয়। এবং নানা জায়গা থেকে ফোন পাওয়া শুরম্ন করি। হুমায়ূন সাহেব তারপর আমাকে দিয়ে তাঁর শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে গান গাওয়ালেন। সেখানে পাঁচটি গান করলাম। সব গানই জনপ্রিয় হলো। ছবি মুক্তির পর মধুমিতায় গেলাম ছবি দেখতে। সেখান থেকে বের হওয়ার সময় দেখলাম কেউ আমার গান গেয়ে বের হচ্ছে আবার কেউ চোখ মুছতে মুছতে বের হচ্ছে। এর মাঝে সুযোগ হয় এশিয়া থিয়েটার রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোগে সিঙ্গাপুরে গান গাওয়ার। সেখানে এক মাস থাকলাম এবং সেখান থেকে ফিরে চলচ্চিত্রে নিয়মিত গান শুরম্ন করি। এরপর আমি আমার প্যাটার্নে গান গাওয়া শুরম্ন করি। কেননা দেখলাম গানের একটা ৰেত্র তৈরি হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন দর্শক শ্রোতা। আমি গানে তখন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটা মিলন ঘটিয়েছি। আমার গায়কী ও গানের কথা মানুষের কথা, এদেশের মাটির কথা বলে। তাই আমি মনে করি আমার গান বেঁচে থাকবে এদেশের মাটি ও মানুষের কাছে চিরদিন।
বাঁশির কথা বলতে হলে বলব, বাঁশি আমার নিজের জন্য বাজাই। আমি বাঁশিকে যে অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই তা সম্ভব না। শুধু বাঁশির শ্রোতা এখনও তৈরি হয়নি। সবাই এটা নিতেও পারে না। তবে অদূর ভবিষ্যতে দু এক জেনারেশন পরে আমার বিশ্বাস বাঁশি গ্রহণ করবে। জেনেভাতে একবার বাঁশি নিয়ে একক পারফর্ম করেছিলাম। একসময় ইচ্ছে ছিল শুধু বাঁশি আর কাসিক্যাল মিউজিক নিয়ে থাকব। কিন্তু সংসারের কারণে তা সম্ভব হয়নি। অর্থের জন্য চলচ্চিত্রে গান গেয়ে সময় নষ্ট করেছি। আর তা না করলে আমার স্ত্রী, সনত্মানদের ভরণপোষণ করতে পারতাম না।
মানুষ পাগল হলেই পায় এ কথাটি আমি বিশ্বাস করি। কোন কিছু পেতে হলে তাকে ভালবাসতে হয়। প্র্যাকটিস না করলে কোন সফলতা আসতে পারে না এটা আমি মনে করি। ভবিষ্যতে আমার গান নিয়ে একটি আর্কাইভ করার কথা ভাবছি। আর তিন চার বছর গান করব। এরপর নিজেকে নিয়েই থাকব। সংস্কৃতি রৰার জন্য ব্যাপকভাবে কিছু করারও ইচ্ছা আছে।
বাংলাদেশের সঙ্গীতের বর্তমান প্রেৰাপট দেখলে খুবই দুঃখ হয়। বর্তমান শিল্পীরা শেকড় থেকে বিচু্যত। মূল সংস্কৃতি থেকেও তারা দিন দিন বিচু্যত হচ্ছে। এখন পরিবেশটা কেমন যেন অন্য রকম হয়ে যাচ্ছে। অথচ এ পরিবেশে সুস্থ সংস্কৃতির চর্চা করলে তাঁরা অনেক দূর যেতে পারতেন।
আজকের এই অবস্থানে আসব একথা ভাবা শুরম্ন করি আজ থেকে ষোলো-সতেরো বছর আগে। তখন সেই পরিবেশেই সিদ্ধানত্ম নেই গান রেকর্ড করার। নিজের যা কিছু আছে তা নিয়ে দু'টি গান রেকর্ড করা শুরম্ন করি কাকরাইলের ডন স্টুডিওতে। এবং সেই গান দুটো নিয়ে শ্রদ্ধেয় হুমায়ূন আহমেদ সাহেবকে দেই। তখন উনি খুবই পপুলার পার্সন। তিনি তখন 'আমার গায়ে যত দুঃখ সয়...' গানটি ঈদ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান রঙের বাড়ইতে প্রচার করেন। গানটি সর্ব মহলে সমাদৃত হয়। এবং নানা জায়গা থেকে ফোন পাওয়া শুরম্ন করি। হুমায়ূন সাহেব তারপর আমাকে দিয়ে তাঁর শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে গান গাওয়ালেন। সেখানে পাঁচটি গান করলাম। সব গানই জনপ্রিয় হলো। ছবি মুক্তির পর মধুমিতায় গেলাম ছবি দেখতে। সেখান থেকে বের হওয়ার সময় দেখলাম কেউ আমার গান গেয়ে বের হচ্ছে আবার কেউ চোখ মুছতে মুছতে বের হচ্ছে। এর মাঝে সুযোগ হয় এশিয়া থিয়েটার রিসার্চ সেন্টারের উদ্যোগে সিঙ্গাপুরে গান গাওয়ার। সেখানে এক মাস থাকলাম এবং সেখান থেকে ফিরে চলচ্চিত্রে নিয়মিত গান শুরম্ন করি। এরপর আমি আমার প্যাটার্নে গান গাওয়া শুরম্ন করি। কেননা দেখলাম গানের একটা ৰেত্র তৈরি হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন দর্শক শ্রোতা। আমি গানে তখন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটা মিলন ঘটিয়েছি। আমার গায়কী ও গানের কথা মানুষের কথা, এদেশের মাটির কথা বলে। তাই আমি মনে করি আমার গান বেঁচে থাকবে এদেশের মাটি ও মানুষের কাছে চিরদিন।
বাঁশির কথা বলতে হলে বলব, বাঁশি আমার নিজের জন্য বাজাই। আমি বাঁশিকে যে অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই তা সম্ভব না। শুধু বাঁশির শ্রোতা এখনও তৈরি হয়নি। সবাই এটা নিতেও পারে না। তবে অদূর ভবিষ্যতে দু এক জেনারেশন পরে আমার বিশ্বাস বাঁশি গ্রহণ করবে। জেনেভাতে একবার বাঁশি নিয়ে একক পারফর্ম করেছিলাম। একসময় ইচ্ছে ছিল শুধু বাঁশি আর কাসিক্যাল মিউজিক নিয়ে থাকব। কিন্তু সংসারের কারণে তা সম্ভব হয়নি। অর্থের জন্য চলচ্চিত্রে গান গেয়ে সময় নষ্ট করেছি। আর তা না করলে আমার স্ত্রী, সনত্মানদের ভরণপোষণ করতে পারতাম না।
মানুষ পাগল হলেই পায় এ কথাটি আমি বিশ্বাস করি। কোন কিছু পেতে হলে তাকে ভালবাসতে হয়। প্র্যাকটিস না করলে কোন সফলতা আসতে পারে না এটা আমি মনে করি। ভবিষ্যতে আমার গান নিয়ে একটি আর্কাইভ করার কথা ভাবছি। আর তিন চার বছর গান করব। এরপর নিজেকে নিয়েই থাকব। সংস্কৃতি রৰার জন্য ব্যাপকভাবে কিছু করারও ইচ্ছা আছে।
No comments