এখন প্রয়োজন দ্রুত ২১ আগস্ট ষড়যন্ত্রের বিচার- স্বদেশ রায়
বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের বিচার ও শাসত্মি
দেয়া কোন অর্থেই শুধু হত্যার বিচার ও হত্যাকারীর শাসত্মি দেয়া নয়। এর মূল
উদ্দেশ্য একটি জাতি ও একটি রাষ্ট্রকে রা করা।
রাষ্ট্রের
রাজনীতি, বিচার বিভাগসহ সকল অঙ্গকে সুষ্ঠু পথে আনা। বঙ্গবন্ধুর কয়েক
হত্যাকারীর বিচার ও কয়েক জনকে শাসত্মি দেবার ভেতর দিয়ে সে কাজের সূচনা
হয়েছে। আরও কিছু হত্যাকারী বাইরে আছে। তাদেরকেও দ্রম্নত ফিরিয়ে আনা সম্ভব
হবে। তারাও শাসত্মির আওতায় যাবে। বিশ্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি সেটাই বলছে। যার
ফলে দেশের মানুষ অনেকখানি স্বসত্মির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবে। কিন্তু দেশের
মানুষকে তো পুরোপুরি স্বসত্মির নিঃশ্বাস ফেলতে হবে। দেশকে সঠিক খাতে
প্রবাহিত করতে হবে।
দেশকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করতে হলে দেশের রাজনৈতিক সমস্যা চিহ্নিত করার প্রয়োজন পড়ে সবার আগে। সেখানে দেখা যায়, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পরে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়। যে পট পরিবর্তন দেশকে ভিন্নখাতে নিয়ে যায়। দেশ মুক্তি সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যে চরিত্র অর্জন করেছিল সেখান থেকে সম্পূর্ণ সরে আসে। দেশকে এই মুক্তি সংগ্রামের ভেতর দিয়ে অর্জিত চরিত্র থেকে সরিয়ে আনার েেত্র বঙ্গবন্ধুর খুনীরা একটি বিশাল ষড়যন্ত্রের অংশ। সরাসরি খুনীরা ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্রের এবং হত্যাকা-ের অন্যতম ব্যক্তি। কিন্তু মূলত এই ষড়যন্ত্রের ধারায় তারা সবটুকু নয়। এই ষড়যন্ত্রের ধারা প্রবাহিত। এবং ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে যে রাজনীতি এই খুনীদেরকে রা করে চলেছে এরা এই খুনীদের অংশ। ১৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে আসা মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতের রাজনীতিকে শুধু রা নয়, যে কোন মূল্যে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে এরা খুুনীদের অংশ। ষড়যন্ত্রের তারা অন্যতম অংশ। এরা খুনীদের প্রশ্রয় দিয়েছে। তাদেরকে নানাভাবে সুবিধা দিয়েছে। অন্যদিকে রাজনীতি তারা প্রতিমুহূর্তে প্রতিহত করে চলেছে হত্যা, খুন ও কালো টাকার বিনিময়ে।
১৯৭৫-এর পনেরো আগস্টের পর থেকে ল্য করলে দেখা যায়, দেশের রাজনীতি ক্রমেই কালো টাকানির্ভর হয়ে উঠেছে। খুনীদের রাকারীরা রাষ্ট্রীয় মতা দখল করে দেশের সমুদয় রাজনীতি যাতে কালো টাকানির্ভর হয়ে ওঠে সেই কাজ করেছে। যার ফলে দেশের প্রকৃত রাজনীতির যে ধারা ছিল সে ধারাও এক পর্যায়ে এসে টাকানির্ভর হতে বাধ্য হয়েছে। প্রকৃত সৎ রাজনীতিকদের বিপরীতে বিভিন্ন পথে উপার্জিত ব্যক্তিরা এসে প্রকৃত রাজনীতির কাতারে জড়িত হয়েছে। আর খুনীদের প েরাষ্ট্রমতা দখলে রাখার জন্যে যেটা চলছে তা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় টাকাসহ মাদক, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার অর্থসহ বিভিন্ন ধরনের অঢেল অর্থ ব্যবহার করে এক ধরনের রাজনীতিকে সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় মতা ধরে রাখা।
কিন্তু বাঙালী জাতি যেহেতু দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রাম ও বিশাল আত্মত্যাগের ভিতর দিয়ে বেড়ে ওঠা একটি জাতি তাই শত চেষ্টা করেও এর মূল স্রোত বা জাতির মূল চেতনাকে ধ্বংস করা তাদের প েসম্ভব হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, অবৈধ এই অর্থের বিপরীতে সব সময়ের জন্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি ধারা দারম্নণ তেজে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। সেই ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের সকাল থেকেই এ ধারা বহমান। কারণ এটা এই জাতির সয়ম্ভু ধারা। একে বিনাশ করা সম্ভব হয়। এ কারণে পঁচাত্তরের এই হত্যাকারীরা এবং তাদের রাকারী রাজনীতির ধারা শুরম্ন থেকেই যে পথ বেছে নিয়েছে সেটা হচ্ছে কালো টাকার রাজনীতির পাশাপাশি হত্যা ও কু্য চালিয়ে যাওয়া। ১৯৯০ অবধি তারা হত্যা ও কু্যর রাজনীতি সমানতালে চালিয়ে রাষ্ট্রীয় মতা ধরে রেখেছে। ১৯৯০-এ মানুষের অভু্যত্থানের পরে অনত্মত এটা নিশ্চিত হয়েছে যে, এ দেশে কু্য করে আর রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার মতা অর্জন করা যাবে না। যে কারণে ১৯৯৬-তে আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে সামনে রেখে ১৯৭৫-এর বেনিফিশিয়ারি এবং কু্যর ভিতর দিয়ে আসা রাজনৈতিক দল একবার সামরিক অভু্যত্থান করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। আবার ২০০৬-এ ১৯৭৫-এর এই সুবিধাভোগী বা '৭৫-এর খুনের ভিতর দিয়ে আসা দল কয়েকবার কু্যর মাধ্যমে তাদের মতা ধরে রাখার চেষ্টা করে, তারা সহযোগিতা করে ১/১১ ঘটায়। কিন্তু তার পরেও তারা জনগণের কাছে পরাজিত হয়।
তবে কু্যর রাজনীতি যে পরিবর্তিত বিশ্বে চলবে না এটা তারাও বুঝতে পেরেছে। তাই তারাও তাদের চলার পথ পরিবর্তন করেছে। যে কারণে ২০০১ থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন ষড়যন্ত্রের পথ দেখা গেছে। এই পথ হলো গুপ্তহত্যা এবং সন্ত্রাসের পথ। ২০০১-এ যে নির্বাচন হয়েছিল, ওই নির্বাচনের নামে দেশে যেটা চালানো হয়েছিল তা ব্যাপক সন্ত্রাস ও গুপ্তহত্যা। সাহাবুদ্দিন-লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে এই ব্যাপক সন্ত্রাস ও গুপ্তহত্যা চলে। লতিফুর রহমান ১৯৭১-এ অবস্থান নেন রাজাকারদের প।ে তাই এ সন্ত্রাসের নেতৃত্বে আসা তার প েস্বাভাবিক। কিন্তু বিচারপতি সাহাবুদ্দিন কেন এই হত্যা ও ষড়যন্ত্রের নেতৃত্ব দিলেন এটা বিসত্মারিত গবেষণার বিষয়। বিচারপতি সাহাবুদ্দিনকে এরশাদ আমলে সামরিক সরকারের অনুগত দেখা গেছে। এরশাদও তাকে নিজের লোক মনে করে প্রধান বিচারপতি করেছিলেন। তারপরেও ২০০১-এ বাংলাদেশে গুপ্তহত্যার ও মৌলবাদের রাজনীতি চরম উত্থানের পথ তৈরির নেতৃত্ব এ ব্যক্তি কেন দিলেন, কেন ড. কামাল হোসেনও এই কাতারে গিয়ে দাঁড়ালেন এগুলোও এখন বিশদভাবে গবেষণার দরকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের শাসত্মি দেয়ার পরে দেশের রাজনীতিকে সুস্থ পথে আনতে হলে এসব মুখোশও উন্মোচন প্রয়োজন।
যাহোক সাহাবুদ্দিন-লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে এবং ১৯৭৫-এর খুনীদের সুবিধাভোগী সুশীল সমাজের সহায়তায় বাংলাদেশে ২০০১-এ হত্যা, খুন ও জঙ্গীবাদের রাজনীতি জয়ী হয়। যার ফলে ১৯৯৬ সালে কম মতা নিয়ে রাষ্ট্রীয় মতায় এসে খুনের রাজনীতির বিরম্নদ্ধে দেশকে যতটুকু এগিয়ে নেয়া হয় সেখান থেকে দেশ অনেক পিছনে চলে যায়। ১৯৭৫-এ দেশের স্থপতিদের জেলের অভ্যনত্মরে যে খুন করা হয় ওই খুনীরা অবলীলায় মুক্তি পেয়ে যায়। তাদের অনেকে আবার রাষ্ট্রীয় চাকরিতে বহাল হয়। এগুলো অবশ্য নতুন কিছু নয়। কারণ, ১৯৭৫-এর পর থেকে এই ধারা খুনের সুবিধাভোগীরা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ২০০১-এ মতায় এসে তারা যে নতুন সিদ্ধানত্ম নেয় সেটা সরাসরি সামরিক বাহিনীর সদস্য দ্বারা নয়, তবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়, রাষ্ট্রের এবং বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার অর্থের সাহায্যে ১৯৭৫-এর মতো আবার দেশকে রাজনৈতিক নেতৃত্বশূন্য করা। তারা বেশ হিসেব করে দেখে, ১৯৭৫-এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর যোগ্য সহকর্মীদের হত্যা করতে পেরেছিল বলে খুনীরা নামে-বেনামে ২১ বছর রাষ্ট্রীয় মতায় থাকতে পেরেছিল। ১৯৯৬-এ শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে আবার রাষ্ট্রীয় মতায় নেবার পরে তারা ধরে নেয় শেখ হাসিনা ও তাঁর যোগ্য সহকর্মীদের হত্যা করা ছাড়া ১৯৭৫-এর পনেরো আগস্টের খুনের রাজনীতির ধারা বাংলাদেশে চালু রাখা যাবে না। তারা এটা বুঝতে পারে রাষ্ট্রীয় মতা দখল ছাড়া, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া তারা শেখ হাসিনা বা তাঁর যোগ্য সহকর্মীদের হত্যা করতে পারবে না। কারণ সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে ১৯৭৫-এর মতো সরাসরি হত্যা করানোর পরিবেশ ও পরিস্থিতি আর নেই। এ কারণে একদিকে ১৯৭৫-এর খুনের বেনিফিশিয়ারি তথাকথিত সকল রাজনৈতিক শক্তি যেমন চারদলীয় জোটের নামে একই পস্নাটফর্মে আসে তেমনি কালো টাকার বিনিময়ে তারা কিনে নেয় দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজকে। তবে এই সুশীল সমাজ যে শুধু টাকার বিনিময়ে তাদের কাছে গিয়েছিল তা নয়, এরা আদর্শগতভাবেও খুনের বেনিফিশিয়ারির প।ে কারণ এরা সহজে অর্থ উপার্জন করতে চায়। এরা দেশে সাধারণের শাসনের বদলে গোষ্ঠীর শাসন চায়। সর্বোপরি তারা সাধারণের রাজত্বের পরিবর্তে তথাকথিত এলিটের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। অন্যদিকে ১৯৭৫-এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শাসনকাল ছিল দেশের কৃষক সনত্মানদের শাসনকাল। শ্রমিকদের শাসনকাল। যা আইউব-মোনায়েমের অর্থে পুষ্ট এই তথাকথিত এলিটদের জন্যে মোটেই সুখকর ছিল না। তেমনি ১৯৯৬-এ শেখ হাসিনা মতায় আসার পরে বঙ্গবন্ধুর মতো অতটা কৃষকের সনত্মান ও শ্রমিকদের শাসন কায়েম করতে না পারলেও তার রাষ্ট্রীয় নীতি ছিল কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের প।ে সাধারণ মানুষের মতায়ন_ এ নীতিহীন, মানবিক কালচারহীন এ এলিটদের প েসহনীয় নয়। এ কারণেও ২০০১-এ শেখ হাসিনা বা জনগণ যাতে আবার মতায় না আসতে পারে ১৯৭৫-এর খুনীদের বেনিফিশিয়ারি যাতে আবার মতায় আসতে পারে সেই কাজে শামিল হয় এই তথাকথিত এলিট বা সুশীল সমাজ। এছাড়া ২০০১-এর ষড়যন্ত্রে দেশের সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের ভেতর থাকা খুনীদের প শক্তি কাজ করে অত্যনত্ম সক্রিয় পথে। যার ফলে ২০০১-এ এসে ১৯৭৫-এর মতো সামরিক কু্যর মাধ্যমে না হলেও একটি নির্বাচনী কু্যর ভেতর দিয়ে ১৯৭৫-এর খুনীদের সুবিধাভোগীরা রাষ্ট্রীয় মতা দখল করে। আর এই রাষ্ট্রীয় মতা দখল করেই তারা সিদ্ধানত্ম নেয়, যে কোন মূল্যে হোক শেখ হাসিনা ও তাঁর যোগ্য সহকর্মীদের হত্যা করতে হবে। পাশাপাশি প্রগতিশীল ধারার বা মুক্তিযুদ্ধের ধারার রাজনীতি চিরতরে ধ্বংস করার জন্যে দেশে জঙ্গী ও মৌলবাদীদের আরও শক্তিশালী করতে হবে। এমনকি দেশের মানুষকে জানিয়ে দিতে হবে, এ দেশে প্রগতিশীল রাজনীতির থেকে জঙ্গী ও মৌলবাদীরা অনেক বেশি শক্তিশালী। যাতে দেশের মানুষ ভীত হয়ে পড়ে। তারা কোন প্রতিবাদে না নেমে আসে জঙ্গী ও মৌলবাদীদের প।ে যে কারণে তারা দেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে ৫২৭টি বোমা ফাটায়। যাদের নূ্যনতম যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আছে, সামরিক বিজ্ঞান নিয়ে যাদের পড়াশোনা আছে তাদের প েএটা বুঝতে আদৌ কষ্ট হবার কথা নয় যে, একটি রেগুলার কাঠামোর সহযোগিতা ছাড়া ৫২৭টি বোমা এক ঘণ্টার ভেতর এভাবে ফাটানো সম্ভব নয়। আর এত বড় কাঠামো যে জঙ্গীদের নেই সেটা সকলে জানে। তাই নিঃসন্দেহে এই রেগুলার কাঠামো মানেই সরকারের কোন না কোন অংশ। অর্থাৎ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সেদিন জনগণকে ভীত করার জন্যে এই বোমা ফাটানো হয়েছিল। একদিকে তারা যেমন এ ধরনের সশস্ত্র মহড়ার ভেতর দিয়ে জনগণকে ভীত করতে চেয়েছিল অন্যদিকে তারা চেয়েছিল ১৯৭৫-এর মতো দেশকে আবার নেতৃত্বশূন্য করতে। তবে এবার তাদের পথ ছিল ভিন্ন। দেশের মানুষ যেন বুঝতে না পারে তারাই হত্যাকারী ও হত্যার বেনিফিশিয়ারি। কারণ পঁচাত্তরের কয়েক হত্যাকারী তখন জেলে। তাই এবার তারা আর '৭৫-এর মতো সদম্ভ হত্যাকারী হতে চায় না। তাছাড়া বিশ্ব পরিস্থিতিও বদলে গেছে। তাই এবার তারা জঙ্গীদের নামে এবং জঙ্গী সৃষ্টি করে গুপ্তহত্যায় নামে। এই গুপ্তহত্যায় তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল ২১ আগস্ট।
২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা কখনই কোনমতে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ২০০১-এ নির্বাচনী কু্যর মাধ্যমে মতায় এসে তারা দেশকে নেতৃত্বশূন্য ও প্রগতিশীল রাজনীতিশূন্য করার যে পরিকল্পনা নেয় তারই চূড়ানত্ম প্রকাশ ২১ আগস্ট। এই কাজ করার জন্যে তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রকে যতটা কাজে লাগানো যায় তার সবটুকু তারা এ কাজে লাগিয়েছিল। এমনকি এখন দেশবাসীর কাছে এটাও পরিষ্কার দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে তারা এই অপারেশনের নেতৃত্বে রেখেছিল। তাই এর থেকে এটা স্পষ্ট হয়, ১৯৭৫-এ হত্যার মাধ্যমে এ দেশের রাজনীতিকে ধ্বংস করার যে সর্বোচ্চ চেষ্টা হয়েছিল ২০০৪-এর ২১ আগস্ট ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল। ব্যতিক্রম শুধু এটুকু যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হয়েছিলেন, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনা আহত হয়ে প্রাণে বেঁচে যান। তাই ১৫ আগস্ট হত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া শেষ ও শাসত্মি দেয়া শুরম্নর পরে এখন প্রথম কর্তব্য হওয়া উচিত অতি দ্রম্নত ২১ আগস্ট হত্যাকা- এবং এর ষড়যন্ত্রের বিচার করা। বাংলাদেশের রাজনীতিকে সুস্থ খাতে প্রবাহিত করতে হলে, দেশকে স্থিতিশীল করতে হলে এখন সবার আগে দরকার ২১ আগস্ট হত্যাকা-ের দ্রম্নত বিচার করা। এবং এই বিচার যেন কোনমতেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মতো আংশিক বিচার না হয়। এই বিচার অবশ্যই হতে হবে একটি পরিপূর্ণ বিচার। শুধু প্রত্য হত্যাকারীরা নয়, যত গভীরেই এর অসত্মিত্ব হোক না কেন, ২১ আগস্টের পরিকল্পনাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদেরকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। এদের যদি কেউ কেউ বিদেশে থাকে, তাদের যদি দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হয় তাহলেও তাদের অবর্তমানে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন, ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ দেশের মানুষ বিশেষ করে তরম্নণ প্রজন্ম বর্তমান সরকারকে ব্যাপক মান্ডেট দিয়েছে একটি স্থিতিশীল দেশ গড়ার জন্যে। ২০০১ থেকে ২০০৮ অবধি যে জঙ্গী, হত্যা ও ভীতিকর দেশ তারা দেখেছে ভবিষ্যতে তারা আর এই দেশ দেখতে চায় না। তরম্নণ প্রজন্ম উন্নত জীবন গড়তে পারে এমন একটি দেশ চায়। এই উন্নত দেশ গড়তে হলে অবশ্যই একটি স্থিতিশীল রাজনীতির দেশ সৃষ্টি করতে হবে। পাঁচ বছর পরে আবার জঙ্গী মৌলবাদী, হত্যা_কু্যর বেনিফিসিশারিরা ফিরে আসবে এমন দেশ কোনমতেই আর নয়। '৭৫-এর খুনীদের সাজা দেবার প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়েছে। মানুষ সে আনন্দে রাসত্মায় নেমে এসেছে। একে অপরকে মিষ্টিমুখ করিয়েছে। মানুষের এই আনন্দকে চিরস্থায়ী করতে হলে হত্যা ও হত্যার বেনিফিশিয়ারিদের রাজনীতি অবশ্যই এদেশে বন্ধ করতে হবে। আর সেজন্যই প্রয়োজন ২১ আগস্টের হত্যাকারী, হত্যার ষড়যন্ত্রকারী বা পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা সকলকে অবলম্বে বিচারের আওতায় আনা। অবিলম্বে তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে তাদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রম্নত তালে এগিয়ে নেয়া। যাতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে চূড়ানত্ম রায় আসে। ২১ আগস্টের হত্যাকারী, পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতাদের চূড়ানত্ম বিচার এ মুহূর্তে দেশের রাজনীতির জন্যে সব থেকে জরম্নরী। এমনকি সত্য বলতে কি, ২১ আগস্টের হত্যাকারীদের বিচার হলে বাংলাদেশে সকল খুনীর প্রশ্রয়দাতাদের আবাসস্থল ভেঙ্গেচুরে গুঁড়িয়ে যাবে। মনে রাখা দরকার, '৭১-এর হত্যাকারী ও '৭৫-এর হত্যাকারীদের আশ্রয়স্থলই কিন্তু ২১ আগস্টের হত্যার পরিকল্পনাকারীরা।
ংধিফবংযৎড়ু@মসধরষ.পড়স
দেশকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করতে হলে দেশের রাজনৈতিক সমস্যা চিহ্নিত করার প্রয়োজন পড়ে সবার আগে। সেখানে দেখা যায়, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পরে দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়। যে পট পরিবর্তন দেশকে ভিন্নখাতে নিয়ে যায়। দেশ মুক্তি সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যে চরিত্র অর্জন করেছিল সেখান থেকে সম্পূর্ণ সরে আসে। দেশকে এই মুক্তি সংগ্রামের ভেতর দিয়ে অর্জিত চরিত্র থেকে সরিয়ে আনার েেত্র বঙ্গবন্ধুর খুনীরা একটি বিশাল ষড়যন্ত্রের অংশ। সরাসরি খুনীরা ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্রের এবং হত্যাকা-ের অন্যতম ব্যক্তি। কিন্তু মূলত এই ষড়যন্ত্রের ধারায় তারা সবটুকু নয়। এই ষড়যন্ত্রের ধারা প্রবাহিত। এবং ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে যে রাজনীতি এই খুনীদেরকে রা করে চলেছে এরা এই খুনীদের অংশ। ১৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে আসা মুক্তিযুদ্ধের বিপরীতের রাজনীতিকে শুধু রা নয়, যে কোন মূল্যে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছে এরা খুুনীদের অংশ। ষড়যন্ত্রের তারা অন্যতম অংশ। এরা খুনীদের প্রশ্রয় দিয়েছে। তাদেরকে নানাভাবে সুবিধা দিয়েছে। অন্যদিকে রাজনীতি তারা প্রতিমুহূর্তে প্রতিহত করে চলেছে হত্যা, খুন ও কালো টাকার বিনিময়ে।
১৯৭৫-এর পনেরো আগস্টের পর থেকে ল্য করলে দেখা যায়, দেশের রাজনীতি ক্রমেই কালো টাকানির্ভর হয়ে উঠেছে। খুনীদের রাকারীরা রাষ্ট্রীয় মতা দখল করে দেশের সমুদয় রাজনীতি যাতে কালো টাকানির্ভর হয়ে ওঠে সেই কাজ করেছে। যার ফলে দেশের প্রকৃত রাজনীতির যে ধারা ছিল সে ধারাও এক পর্যায়ে এসে টাকানির্ভর হতে বাধ্য হয়েছে। প্রকৃত সৎ রাজনীতিকদের বিপরীতে বিভিন্ন পথে উপার্জিত ব্যক্তিরা এসে প্রকৃত রাজনীতির কাতারে জড়িত হয়েছে। আর খুনীদের প েরাষ্ট্রমতা দখলে রাখার জন্যে যেটা চলছে তা হচ্ছে রাষ্ট্রীয় টাকাসহ মাদক, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার অর্থসহ বিভিন্ন ধরনের অঢেল অর্থ ব্যবহার করে এক ধরনের রাজনীতিকে সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় মতা ধরে রাখা।
কিন্তু বাঙালী জাতি যেহেতু দীর্ঘ মুক্তি সংগ্রাম ও বিশাল আত্মত্যাগের ভিতর দিয়ে বেড়ে ওঠা একটি জাতি তাই শত চেষ্টা করেও এর মূল স্রোত বা জাতির মূল চেতনাকে ধ্বংস করা তাদের প েসম্ভব হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, অবৈধ এই অর্থের বিপরীতে সব সময়ের জন্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটি ধারা দারম্নণ তেজে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। সেই ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের সকাল থেকেই এ ধারা বহমান। কারণ এটা এই জাতির সয়ম্ভু ধারা। একে বিনাশ করা সম্ভব হয়। এ কারণে পঁচাত্তরের এই হত্যাকারীরা এবং তাদের রাকারী রাজনীতির ধারা শুরম্ন থেকেই যে পথ বেছে নিয়েছে সেটা হচ্ছে কালো টাকার রাজনীতির পাশাপাশি হত্যা ও কু্য চালিয়ে যাওয়া। ১৯৯০ অবধি তারা হত্যা ও কু্যর রাজনীতি সমানতালে চালিয়ে রাষ্ট্রীয় মতা ধরে রেখেছে। ১৯৯০-এ মানুষের অভু্যত্থানের পরে অনত্মত এটা নিশ্চিত হয়েছে যে, এ দেশে কু্য করে আর রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার মতা অর্জন করা যাবে না। যে কারণে ১৯৯৬-তে আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে সামনে রেখে ১৯৭৫-এর বেনিফিশিয়ারি এবং কু্যর ভিতর দিয়ে আসা রাজনৈতিক দল একবার সামরিক অভু্যত্থান করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পারেনি। আবার ২০০৬-এ ১৯৭৫-এর এই সুবিধাভোগী বা '৭৫-এর খুনের ভিতর দিয়ে আসা দল কয়েকবার কু্যর মাধ্যমে তাদের মতা ধরে রাখার চেষ্টা করে, তারা সহযোগিতা করে ১/১১ ঘটায়। কিন্তু তার পরেও তারা জনগণের কাছে পরাজিত হয়।
তবে কু্যর রাজনীতি যে পরিবর্তিত বিশ্বে চলবে না এটা তারাও বুঝতে পেরেছে। তাই তারাও তাদের চলার পথ পরিবর্তন করেছে। যে কারণে ২০০১ থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন ষড়যন্ত্রের পথ দেখা গেছে। এই পথ হলো গুপ্তহত্যা এবং সন্ত্রাসের পথ। ২০০১-এ যে নির্বাচন হয়েছিল, ওই নির্বাচনের নামে দেশে যেটা চালানো হয়েছিল তা ব্যাপক সন্ত্রাস ও গুপ্তহত্যা। সাহাবুদ্দিন-লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে এই ব্যাপক সন্ত্রাস ও গুপ্তহত্যা চলে। লতিফুর রহমান ১৯৭১-এ অবস্থান নেন রাজাকারদের প।ে তাই এ সন্ত্রাসের নেতৃত্বে আসা তার প েস্বাভাবিক। কিন্তু বিচারপতি সাহাবুদ্দিন কেন এই হত্যা ও ষড়যন্ত্রের নেতৃত্ব দিলেন এটা বিসত্মারিত গবেষণার বিষয়। বিচারপতি সাহাবুদ্দিনকে এরশাদ আমলে সামরিক সরকারের অনুগত দেখা গেছে। এরশাদও তাকে নিজের লোক মনে করে প্রধান বিচারপতি করেছিলেন। তারপরেও ২০০১-এ বাংলাদেশে গুপ্তহত্যার ও মৌলবাদের রাজনীতি চরম উত্থানের পথ তৈরির নেতৃত্ব এ ব্যক্তি কেন দিলেন, কেন ড. কামাল হোসেনও এই কাতারে গিয়ে দাঁড়ালেন এগুলোও এখন বিশদভাবে গবেষণার দরকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের শাসত্মি দেয়ার পরে দেশের রাজনীতিকে সুস্থ পথে আনতে হলে এসব মুখোশও উন্মোচন প্রয়োজন।
যাহোক সাহাবুদ্দিন-লতিফুর রহমানের নেতৃত্বে এবং ১৯৭৫-এর খুনীদের সুবিধাভোগী সুশীল সমাজের সহায়তায় বাংলাদেশে ২০০১-এ হত্যা, খুন ও জঙ্গীবাদের রাজনীতি জয়ী হয়। যার ফলে ১৯৯৬ সালে কম মতা নিয়ে রাষ্ট্রীয় মতায় এসে খুনের রাজনীতির বিরম্নদ্ধে দেশকে যতটুকু এগিয়ে নেয়া হয় সেখান থেকে দেশ অনেক পিছনে চলে যায়। ১৯৭৫-এ দেশের স্থপতিদের জেলের অভ্যনত্মরে যে খুন করা হয় ওই খুনীরা অবলীলায় মুক্তি পেয়ে যায়। তাদের অনেকে আবার রাষ্ট্রীয় চাকরিতে বহাল হয়। এগুলো অবশ্য নতুন কিছু নয়। কারণ, ১৯৭৫-এর পর থেকে এই ধারা খুনের সুবিধাভোগীরা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ২০০১-এ মতায় এসে তারা যে নতুন সিদ্ধানত্ম নেয় সেটা সরাসরি সামরিক বাহিনীর সদস্য দ্বারা নয়, তবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়, রাষ্ট্রের এবং বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার অর্থের সাহায্যে ১৯৭৫-এর মতো আবার দেশকে রাজনৈতিক নেতৃত্বশূন্য করা। তারা বেশ হিসেব করে দেখে, ১৯৭৫-এ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর যোগ্য সহকর্মীদের হত্যা করতে পেরেছিল বলে খুনীরা নামে-বেনামে ২১ বছর রাষ্ট্রীয় মতায় থাকতে পেরেছিল। ১৯৯৬-এ শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে আবার রাষ্ট্রীয় মতায় নেবার পরে তারা ধরে নেয় শেখ হাসিনা ও তাঁর যোগ্য সহকর্মীদের হত্যা করা ছাড়া ১৯৭৫-এর পনেরো আগস্টের খুনের রাজনীতির ধারা বাংলাদেশে চালু রাখা যাবে না। তারা এটা বুঝতে পারে রাষ্ট্রীয় মতা দখল ছাড়া, রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া তারা শেখ হাসিনা বা তাঁর যোগ্য সহকর্মীদের হত্যা করতে পারবে না। কারণ সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে ১৯৭৫-এর মতো সরাসরি হত্যা করানোর পরিবেশ ও পরিস্থিতি আর নেই। এ কারণে একদিকে ১৯৭৫-এর খুনের বেনিফিশিয়ারি তথাকথিত সকল রাজনৈতিক শক্তি যেমন চারদলীয় জোটের নামে একই পস্নাটফর্মে আসে তেমনি কালো টাকার বিনিময়ে তারা কিনে নেয় দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজকে। তবে এই সুশীল সমাজ যে শুধু টাকার বিনিময়ে তাদের কাছে গিয়েছিল তা নয়, এরা আদর্শগতভাবেও খুনের বেনিফিশিয়ারির প।ে কারণ এরা সহজে অর্থ উপার্জন করতে চায়। এরা দেশে সাধারণের শাসনের বদলে গোষ্ঠীর শাসন চায়। সর্বোপরি তারা সাধারণের রাজত্বের পরিবর্তে তথাকথিত এলিটের রাজত্ব কায়েম করতে চায়। অন্যদিকে ১৯৭৫-এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের শাসনকাল ছিল দেশের কৃষক সনত্মানদের শাসনকাল। শ্রমিকদের শাসনকাল। যা আইউব-মোনায়েমের অর্থে পুষ্ট এই তথাকথিত এলিটদের জন্যে মোটেই সুখকর ছিল না। তেমনি ১৯৯৬-এ শেখ হাসিনা মতায় আসার পরে বঙ্গবন্ধুর মতো অতটা কৃষকের সনত্মান ও শ্রমিকদের শাসন কায়েম করতে না পারলেও তার রাষ্ট্রীয় নীতি ছিল কৃষক, শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের প।ে সাধারণ মানুষের মতায়ন_ এ নীতিহীন, মানবিক কালচারহীন এ এলিটদের প েসহনীয় নয়। এ কারণেও ২০০১-এ শেখ হাসিনা বা জনগণ যাতে আবার মতায় না আসতে পারে ১৯৭৫-এর খুনীদের বেনিফিশিয়ারি যাতে আবার মতায় আসতে পারে সেই কাজে শামিল হয় এই তথাকথিত এলিট বা সুশীল সমাজ। এছাড়া ২০০১-এর ষড়যন্ত্রে দেশের সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের ভেতর থাকা খুনীদের প শক্তি কাজ করে অত্যনত্ম সক্রিয় পথে। যার ফলে ২০০১-এ এসে ১৯৭৫-এর মতো সামরিক কু্যর মাধ্যমে না হলেও একটি নির্বাচনী কু্যর ভেতর দিয়ে ১৯৭৫-এর খুনীদের সুবিধাভোগীরা রাষ্ট্রীয় মতা দখল করে। আর এই রাষ্ট্রীয় মতা দখল করেই তারা সিদ্ধানত্ম নেয়, যে কোন মূল্যে হোক শেখ হাসিনা ও তাঁর যোগ্য সহকর্মীদের হত্যা করতে হবে। পাশাপাশি প্রগতিশীল ধারার বা মুক্তিযুদ্ধের ধারার রাজনীতি চিরতরে ধ্বংস করার জন্যে দেশে জঙ্গী ও মৌলবাদীদের আরও শক্তিশালী করতে হবে। এমনকি দেশের মানুষকে জানিয়ে দিতে হবে, এ দেশে প্রগতিশীল রাজনীতির থেকে জঙ্গী ও মৌলবাদীরা অনেক বেশি শক্তিশালী। যাতে দেশের মানুষ ভীত হয়ে পড়ে। তারা কোন প্রতিবাদে না নেমে আসে জঙ্গী ও মৌলবাদীদের প।ে যে কারণে তারা দেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে ৫২৭টি বোমা ফাটায়। যাদের নূ্যনতম যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আছে, সামরিক বিজ্ঞান নিয়ে যাদের পড়াশোনা আছে তাদের প েএটা বুঝতে আদৌ কষ্ট হবার কথা নয় যে, একটি রেগুলার কাঠামোর সহযোগিতা ছাড়া ৫২৭টি বোমা এক ঘণ্টার ভেতর এভাবে ফাটানো সম্ভব নয়। আর এত বড় কাঠামো যে জঙ্গীদের নেই সেটা সকলে জানে। তাই নিঃসন্দেহে এই রেগুলার কাঠামো মানেই সরকারের কোন না কোন অংশ। অর্থাৎ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সেদিন জনগণকে ভীত করার জন্যে এই বোমা ফাটানো হয়েছিল। একদিকে তারা যেমন এ ধরনের সশস্ত্র মহড়ার ভেতর দিয়ে জনগণকে ভীত করতে চেয়েছিল অন্যদিকে তারা চেয়েছিল ১৯৭৫-এর মতো দেশকে আবার নেতৃত্বশূন্য করতে। তবে এবার তাদের পথ ছিল ভিন্ন। দেশের মানুষ যেন বুঝতে না পারে তারাই হত্যাকারী ও হত্যার বেনিফিশিয়ারি। কারণ পঁচাত্তরের কয়েক হত্যাকারী তখন জেলে। তাই এবার তারা আর '৭৫-এর মতো সদম্ভ হত্যাকারী হতে চায় না। তাছাড়া বিশ্ব পরিস্থিতিও বদলে গেছে। তাই এবার তারা জঙ্গীদের নামে এবং জঙ্গী সৃষ্টি করে গুপ্তহত্যায় নামে। এই গুপ্তহত্যায় তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা ছিল ২১ আগস্ট।
২১ আগস্ট শেখ হাসিনাকে হত্যা করার চেষ্টা কখনই কোনমতে কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ২০০১-এ নির্বাচনী কু্যর মাধ্যমে মতায় এসে তারা দেশকে নেতৃত্বশূন্য ও প্রগতিশীল রাজনীতিশূন্য করার যে পরিকল্পনা নেয় তারই চূড়ানত্ম প্রকাশ ২১ আগস্ট। এই কাজ করার জন্যে তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছিল। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রকে যতটা কাজে লাগানো যায় তার সবটুকু তারা এ কাজে লাগিয়েছিল। এমনকি এখন দেশবাসীর কাছে এটাও পরিষ্কার দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে তারা এই অপারেশনের নেতৃত্বে রেখেছিল। তাই এর থেকে এটা স্পষ্ট হয়, ১৯৭৫-এ হত্যার মাধ্যমে এ দেশের রাজনীতিকে ধ্বংস করার যে সর্বোচ্চ চেষ্টা হয়েছিল ২০০৪-এর ২১ আগস্ট ঠিক একই ঘটনা ঘটেছিল। ব্যতিক্রম শুধু এটুকু যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু নিহত হয়েছিলেন, ২১ আগস্ট শেখ হাসিনা আহত হয়ে প্রাণে বেঁচে যান। তাই ১৫ আগস্ট হত্যাকারীদের বিচার প্রক্রিয়া শেষ ও শাসত্মি দেয়া শুরম্নর পরে এখন প্রথম কর্তব্য হওয়া উচিত অতি দ্রম্নত ২১ আগস্ট হত্যাকা- এবং এর ষড়যন্ত্রের বিচার করা। বাংলাদেশের রাজনীতিকে সুস্থ খাতে প্রবাহিত করতে হলে, দেশকে স্থিতিশীল করতে হলে এখন সবার আগে দরকার ২১ আগস্ট হত্যাকা-ের দ্রম্নত বিচার করা। এবং এই বিচার যেন কোনমতেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের মতো আংশিক বিচার না হয়। এই বিচার অবশ্যই হতে হবে একটি পরিপূর্ণ বিচার। শুধু প্রত্য হত্যাকারীরা নয়, যত গভীরেই এর অসত্মিত্ব হোক না কেন, ২১ আগস্টের পরিকল্পনাকারী ও ষড়যন্ত্রকারীদেরকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। এদের যদি কেউ কেউ বিদেশে থাকে, তাদের যদি দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব না হয় তাহলেও তাদের অবর্তমানে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
একটি বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন, ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ দেশের মানুষ বিশেষ করে তরম্নণ প্রজন্ম বর্তমান সরকারকে ব্যাপক মান্ডেট দিয়েছে একটি স্থিতিশীল দেশ গড়ার জন্যে। ২০০১ থেকে ২০০৮ অবধি যে জঙ্গী, হত্যা ও ভীতিকর দেশ তারা দেখেছে ভবিষ্যতে তারা আর এই দেশ দেখতে চায় না। তরম্নণ প্রজন্ম উন্নত জীবন গড়তে পারে এমন একটি দেশ চায়। এই উন্নত দেশ গড়তে হলে অবশ্যই একটি স্থিতিশীল রাজনীতির দেশ সৃষ্টি করতে হবে। পাঁচ বছর পরে আবার জঙ্গী মৌলবাদী, হত্যা_কু্যর বেনিফিসিশারিরা ফিরে আসবে এমন দেশ কোনমতেই আর নয়। '৭৫-এর খুনীদের সাজা দেবার প্রক্রিয়া শুরম্ন হয়েছে। মানুষ সে আনন্দে রাসত্মায় নেমে এসেছে। একে অপরকে মিষ্টিমুখ করিয়েছে। মানুষের এই আনন্দকে চিরস্থায়ী করতে হলে হত্যা ও হত্যার বেনিফিশিয়ারিদের রাজনীতি অবশ্যই এদেশে বন্ধ করতে হবে। আর সেজন্যই প্রয়োজন ২১ আগস্টের হত্যাকারী, হত্যার ষড়যন্ত্রকারী বা পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা সকলকে অবলম্বে বিচারের আওতায় আনা। অবিলম্বে তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে তাদের বিচার প্রক্রিয়া দ্রম্নত তালে এগিয়ে নেয়া। যাতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে চূড়ানত্ম রায় আসে। ২১ আগস্টের হত্যাকারী, পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতাদের চূড়ানত্ম বিচার এ মুহূর্তে দেশের রাজনীতির জন্যে সব থেকে জরম্নরী। এমনকি সত্য বলতে কি, ২১ আগস্টের হত্যাকারীদের বিচার হলে বাংলাদেশে সকল খুনীর প্রশ্রয়দাতাদের আবাসস্থল ভেঙ্গেচুরে গুঁড়িয়ে যাবে। মনে রাখা দরকার, '৭১-এর হত্যাকারী ও '৭৫-এর হত্যাকারীদের আশ্রয়স্থলই কিন্তু ২১ আগস্টের হত্যার পরিকল্পনাকারীরা।
ংধিফবংযৎড়ু@মসধরষ.পড়স
No comments