জলকেলি কলকাকলি_আনন্দে আত্মহারা শিশু কিশোররা- জাবিতে পাখিমেলা ও ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা by কুন্তল রায়
'আচ্ছা ওরা কি খায়? ওরা কি আমাদের মতো কথা বলতে পারে? পারে না? তাহলে
কোন্ ভাষায় কথা বলে? পানিতে ওদের ঠা-া লাগে না? ইস! আমি যদি ওদের মতো উড়তে
পারতাম।'
ছয় বছরের শায়লার প্রশ্নবাণে জর্জরিত তার বাবা। লেকের স্থির
পানিতে তুলোর মতো নরম পালকের শরীর নিয়ে অলস ভঙ্গিতে ভাসতে থাকা সরালি কিংবা
হঠাৎ পানির মধ্যে ডুবসাঁতার দেয়া পানকৌড়ি দেখে বার বারই আনন্দে চিৎকার
করে উঠছিল সে। আর প্রশ্নের কোন শেষ নেই তার। ইট-সিমেন্টে গড়া ঢাকা শহরের
আবদ্ধ জীবন থেকে একদিনের জন্য মুক্ত হয়ে নিজেকে পাখির মতোই স্বাধীন ভাবছিল
যেন!শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার (ডবিস্নউআরসি)-এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পাখিমেলায় শায়লার মতো অসংখ্য শিশুরা প্রকৃতির অপার সুন্দর সৃষ্টি পাখি দেখতে এসেছিল। শুধু শিশুকিশোররাই নয়, তাদের বাবা-মা, পরিবারের অন্য সদস্যরাও পাখি দেখতে এসে মেতে উঠেছিলেন তাদেরই সঙ্গে। লেকের পানিতে পাখিদের জলক্রীড়া টেলিস্কোপে চোখ লাগিয়ে দেখার আনন্দ নিয়েছেন ছেলে-বুড়ো সবাই।
প্রতিবারের মতো এ বছরও উৎসবের আমেজে আয়োজিত হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক আয়োজন পাখিমেলা। 'পাখপাখালি দেশের রত্ন, আসুন সবাই করি যত্ন' এটাই ছিল এবারের পাখিমেলার মূলমন্ত্র। শুক্রবার সকাল নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসত্মাবিত জহির রায়হান মিলনায়তন চত্বরে উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির বেলুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোঃ ফরহাদ হোসেন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস সালাম, অধ্যাপক মোঃ মফিজুল কবির, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এটিএম আতিকুৃর রহমান।
পাখিমেলা উপল েবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের বিপরীতে লেকের পাড়ে টেলিস্কোপ বসানো হয়। ঢাকা থেকে আসা এবং স্থানীয় দর্শকরা এই টেলিস্কোপে পাখি দেখেছেন। ঢাকা থেকে ছেলেমেয়েদের নিয়ে পাখিমেলা ঘুরতে এসে আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান মোঃ আবদুলস্নাহ। বলেন, এমন আয়োজন প্রতিবছরই করা উচিত। প্রকৃতির সানি্নধ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসতে পেরে খুব ভাল লাগছে।
শুধু পাখি দেখেই ানত্ম হয়নি মেলায় আসা প্রায় পাঁচ শতাধিক দর্শনাথর্ী। আয়োজন করা হয় আনত্মঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতার। প্রতিযোগিতায় জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারজন করে মোট চারটি দল অংশ নেয়। সকাল নয়টা থেকে এগারটা পর্যনত্ম প্রসত্মাবিত জহির রায়হান মিলনায়তনের গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হয় শিশুকিশোরদের জন্য পাখির ছবি অাঁকা প্রতিযোগিতা। দু'টি গ্রম্নপে বিভক্ত এ প্রতিযোগিতায় দেশের বিভিন্ন স্থানের স্কুল পর্যায়ের ২৯১ শিার্থী অংশ নেয়। এ ছাড়াও ছিল পাখি বিষয়ক উপস্থিত বক্তৃতা ও কুইজ প্রতিযোগিতা। পাখিকে সঙ্গে নিয়ে মেলার প্রতিটি আয়োজনই ছিল আনন্দ-উচ্ছ্বাসে ভরা। বিকেলে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। বিকেলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও পাখিরা বাদ পড়েনি।
পাখিমেলার আহ্বায়ক অধ্যাপক মোঃ মফিজুল কবির বলেন, পাখি সংরণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির ল্যেই এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। এ মেলার নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা পাখিদের সম্পর্কে জানতে ও শিখতে পারব। আমাদের মধ্যে পাখিদের প্রতি মমত্ববোধ তৈরি হবে যা পাখি সংরণে গূরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি মনত্মব্য করেন।
No comments