ছাত্রলীগের গোলাগুলিতে শিশু নিহত -এ তাণ্ডব থামানোর দায়িত্ব কার?
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, অস্ত্রবাজি থেকে শুরু করে, নিয়োগবাণিজ্য, ভর্তিবাণিজ্যসহ হেন অপরাধ নেই যেখানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি নেই।
এসব কর্মকাণ্ডের ফলে প্রায় প্রতিদিনই ছাত্রলীগ পত্রপত্রিকায় আলোচিত শিরোনাম হয়ে আসছে। এখনো তা অব্যাহত। ছাত্রলীগ সম্পর্কিত সর্বশেষ শিরোনামটি হলোÑ ‘ছাত্রলীগের গুলিতে শিশু নিহত। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ুব্ধ গ্রামবাসীর হামলাপত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ, এবার ছাত্রলীগের ‘বলির পাঁঠা’ হলো নিষ্পাপ শিশু রাব্বি। আধিপত্য বিস্তার ও পূর্বশত্রুতা এবং নিয়োগবাণিজ্য নিয়ে কোন্দলের জের ধরে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত শনিবার ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ব্যাপক গোলাগুলি চলে। এ সময় ছাত্রলীগ নেতার ছোড়া গুলি মাথায় লেগে মারা যায় শিশু রাব্বি। এই গোলাগুলির শব্দে আঁতকে ওঠা শিশু রাব্বি মাঠে গরু চরাতে যাওয়া দাদিকে বাঁচাতে যায় দাদির কাছে। কারণ, সেখানেই গোলাগুলি হচ্ছে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে। দাদির কাছাকাছি যেতেই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয় রাব্বি। দুপুর ১২টায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তাকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসারত অবস্থায় বেলা ২টায় সে মারা যায়। বেলা ৩টার দিকে ুব্ধ গ্রামবাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি হলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে লুটপাট ও ভাঙচুর করে। উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। অপর দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে। কয়েক দিন ধরেই ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের সশস্ত্র সংঘর্ষ চলছে ছাত্রলীগের বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের মধ্যে সশস্ত্র সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে গুলি চালায়। এই সংঘর্ষে ৫০ জন আহত হন। ইত্তেফাক পত্রিকা ছাত্রলীগের কয়েকজনের নামোল্লেখ করে বলেছে, এরা পুলিশকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় ছাত্রদলের ওপর হামলা করার জন্য। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশ প্রথমে যেতে না চাইলে পুলিশকে তারা পেটায়। এ সময় ছাত্রলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন এক পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে তা ছাত্রলীগ নেতা সজীবের হাতে তুলে দেন। সজীব সেই অস্ত্র দিয়ে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর চার রাউন্ড গুলি করে। তখন পুলিশও ছাত্রদল নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হয়।
বর্তমান সরকারের আমলে বরাবর ছাত্রলীগের এ ধরনের ভূমিকাই দেশবাসী দেখে আসছে। ওপরে বর্ণিত ঘটনা দুটো এ ধারাবাহিকতার সর্বশেষ দুই পর্ব। এখন প্রশ্ন, ছাত্রলীগের মুরব্বি সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার যখন ক্ষমতায় আসীন, তখন এর দায় এ সরকার এড়াতে পারে কি? এ জন্য সরকার কি দায়ী নয়? সরকার কেনই বা ছাত্রলীগের ব্যাপারে বরাবর নীরবতা পালন করে আসছে? দেশের সাধারণ মানুষ জানতে চায়Ñ ছাত্রলীগের এ তাণ্ডবের জন্য কে দায়ী এবং এ তাণ্ডব থামানোর দায়িত্বই বা কার?
No comments