পুলিশকে মেরে অস্ত্র কেড়ে নিলো ছাত্রলীগ - আর কত দূর গেলে এরা অপরাধী হবে
ছাত্রলীগ অব্যাহতভাবে সারা দেশে দানবীয় কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এবার এরা পুলিশকে বাধ্য করেছে প্রতিপক্ষ ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের ওপর আক্রমণ করতে।
তাদের মারের চোটে পুলিশ কেঁদেছে। চোখের অশ্রু ফেলেছে। এ এক অদ্ভুত দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশ যেন নবপরিচয়ে পরিচিত হচ্ছে। শেষে মার খেয়ে পুলিশ সদস্যরা ঠিকই ছাত্রদলের ওপর চড়াও হয়েছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন, আশঙ্কাজনক একজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তর করা হয়েছে। এরা ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের একতরফা মারধরের পর গ্রেফতারও করেছে। গত বৃহস্পতিবার অদ্ভুত ঘটনা যারা ঘটালো, এরা সুস্পষ্টভাবে চিহ্নিত। এক সপ্তাহ আগে এসব ছাত্রলীগ ক্যাডারের সশস্ত্র ছবি বিভিন্ন জাতীয় সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে। এত দিনে যাদের থাকার কথা ছিল জেলে, তারা যেন হয়ে গেল পুলিশের হর্তাকর্তা। অপরাধীরা যদি শাস্তির বদলে পুরস্কৃত হয়, তাহলে সে দেশে এমন অরাজকতা নেমে আসাই স্বাভাবিক।শিক্ষকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। মিছিলটি প্রশাসন ভবনের সামনে গেলে ছাত্রলীগ বিনা উসকানিতে পেছন দিক থেকে তাদের ধাওয়া করে। ছাত্রলীগকে পাল্টাধাওয়া দিলে উভয় গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় ছাত্রলীগ দেশীয় অস্ত্র, চাপাতি, রামদা নিয়ে ছাত্রদলের ওপর হামলা চালায়। ছাত্রদলও ইটপাটকেল ও লাঠি নিয়ে পাল্টা আক্রমণ গড়ে তোলে। এ সময় ঘণ্টাব্যাপী উভয় পক্ষের সংঘর্ষ চলে। ছাত্রলীগ এবার ক্ষেপে গেল পুলিশের ওপর। তারা চায় পুলি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাত্রদলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়–ক। এরা পুলিশকে বাধ্য করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তিন পুলিশকে এরা বেধড়ক পেটায়। মার খেয়ে পুলিশ সদস্যরা কান্নাকাটি করতে থাকে। মার খাওয়া পুলিশ সদস্যদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে সহযোগী দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, ‘পেটের দায়ে মানুষের নিরাপত্তা দেয়ার কাজ করি। অথচ ছাত্রলীগ আমাদের বেধড়ক পিটিয়ে আহত করল এবং আমাদের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে গুলি করল। আমাদেরই এখন নিরাপত্তা নেই এবং চাকরি হারানোর ভয়ে এখন আমাদের বোবাকান্না কাঁদতে হচ্ছে।’ খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যদি এ বক্তব্য রাখেন তাহলে দেশ কোথায় গিয়েছে ভাবা যায়! পুলিশ সদস্যরা যখন ছাত্রলীগ নেতার কথামতো প্রথমে কাজ করছিলেন না, তখন বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি তাদের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নেন। সেটা তার সহযোগী সন্ত্রাসী এক লীগ সদস্যকে দিলে সে ছাত্রদলকে লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে।
বিষয়টি একেবারেই স্পষ্ট, সরকারদলীয় অপরাধীরা আজ স¤পূর্ণ নির্ভয়। যত জঘন্য অপরাধ করুক না কেন, ক্ষমতাসীন দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো পদক্ষেপ নেয়ার এখতিয়ার এখন নেই। সরকারের পক্ষ থেকে এ আদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়া হয়নি। অনানুষ্ঠানিকভাবে এ আদেশই কার্যকর রয়েছে, এতে সন্দেহ করার কোনো সুযোগ নেই। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ছাত্রলীগ সদস্যরা কয়েক বছরে অসংখ্য অপরাধ করেছে। বিভিন্ন অপরাধের দালিলিক প্রমাণ মিডিয়ায় প্রকাশ হয়েছে। শিক্ষকদের ওপর সশস্ত্র হামলা করেছে। মার খেয়ে শিক্ষকেরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেছেন। শিক্ষক নেতাদের কাস নেবে বলে অস্ত্রের মুখে ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। এগুলোর সচিত্র প্রতিবেদন পত্রপত্রিকা ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রকাশ হয়েছে। এরাই এবার পুলিশকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। তাদের হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নিয়ে সরাসরি প্রতিপক্ষের ওপর গুলি করেছে। এভাবে চলতে থাকলে বেশি দিন আর দূরে নয়, যে দিন অন্তরালে থাকা এমপি-মন্ত্রীদেরও এরা মারধর করতে দ্বিধা করবে না। এসব ব্যাপারে সরকারকে সংবাদমাধ্যম অব্যাহতভাবে সতর্ক করে আসছে। মনে হচ্ছে না সরকার তার সামান্যতমও আমলে নিয়েছে। এখন আমাদের সে দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে কখন সরকারের লোকজনই ছাত্রলীগের হাতে মার খাবে।
No comments