সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় মাইলফলক রায়- আযাদের ফাঁসির আদেশ
অবশেষে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সদস্য ও চিহ্নিত রাজাকার আবুল কালাম আযাদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে। এই রায় বহুল আলোচিত ও দীর্ঘ প্রত্যাশিত। তাঁর বিরুদ্ধে নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা ও ধর্ষণসংক্রান্ত আটটি অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল।
পলাতক থাকলেও তিনি আইনি সুবিধা পেয়েছেন এবং এখন আপিলসহ অন্যান্য সুবিধাও পাবেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার দোসর হিসেবে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর নিষ্ঠুরতা সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসে এক বিরাট কলঙ্ক। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার দালাল আইনে অপরাধের বিচার শুরু করলেও নানা কারণে তা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। বিশেষ করে পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে এই বিচার-প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াটি নতুন করে শুরু করে, যা ছিল দেশবাসীর দাবি।
১৯৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনটি প্রণয়নের পর কখনো বিলোপ করা হয়নি। সামরিক শাসনে সংবিধানের যথেষ্ট কাটাছেঁড়া হয়েছে। কিন্তু এই আইনের সাংবিধানিক নিরাপত্তা ও ধারাবাহিকতা নষ্ট করা হয়নি। এই মানদণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে একটি অনুচ্চারিত জাতীয় ঐকমত্য আমাদের সমাজে সব সময় জাগরূক রয়েছে বলে আমরা ধরে নিতে পারি। পঁচাত্তর-পূর্বকালে তৈরি করা অনেক বিধিবিধান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে মুছে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ১৯৭৩ সালের এই আইনকে যথার্থই অব্যাহতভাবে রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছে। এমনকি মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে সংগঠনগতভাবে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গে মন্ত্রিসভা গঠন করে সংবিধানের অন্য বিধানে হাত দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু তারাও ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিলোপের উদ্যোগ নেওয়ার সাহস দেখায়নি। এই বাস্তব সত্য বিচারবিরোধী মহলও অগ্রাহ্য করতে পারে না।
আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট কোনো মহলের রাজনৈতিক বা দলীয় অভিসন্ধি কিংবা কোনো অদক্ষতার বিষয়টি পুঁজি করে গোটা বিচার-প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ নেই। চার দশক পরে হলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় নিশ্চিতভাবেই একটি জাতীয় অর্জন। এটি আমাদের জাতীয় জীবনে একটি ঐতিহাসিক ও মাইলফলক ঘটনা হয়ে থাকবে। এই বিলম্বিত রায়ে লাখো শহীদ ও নির্যাতিত পরিবার ও স্বজনেরা কিছুটা হলেও সান্ত্বনা খুঁজে পাবে।
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার যে অন্তর্নিহিত দুর্বলতা রয়েছে, সামগ্রিক মানবাধিকার রক্ষায় সরকারি দলের যে ব্যর্থতা ও মলিন রেকর্ড রয়েছে, তা নিশ্চয় পীড়াদায়ক। কিন্তু সে কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া ভন্ডুলের কোনো অপচেষ্টা অবশ্যই বরদাশত করা চলে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগকে বাংলাদেশের সামগ্রিক বিচারব্যবস্থার আলোকেই বিবেচনায় নেওয়া সমীচীন।
আমরা আশা করব, জাতির আবেগ স্পর্শ করা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে যেকোনো ধরনের সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থরক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি সব মহল সযত্নে পরিহার করে চলতে সচেষ্ট থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের অধিকতর সতর্ক ও সাবধান থাকাটা সময়ের দাবি। আইনকে তার নিজস্ব পথে চলতে দিতে হবে এবং সেটা যে সত্যিই ঘটছে, তা জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে প্রতীয়মান হতে হবে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নৃশংসতার দোসর হিসেবে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর নিষ্ঠুরতা সমগ্র মানবজাতির ইতিহাসে এক বিরাট কলঙ্ক। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার দালাল আইনে অপরাধের বিচার শুরু করলেও নানা কারণে তা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। বিশেষ করে পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে এই বিচার-প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়াটি নতুন করে শুরু করে, যা ছিল দেশবাসীর দাবি।
১৯৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনটি প্রণয়নের পর কখনো বিলোপ করা হয়নি। সামরিক শাসনে সংবিধানের যথেষ্ট কাটাছেঁড়া হয়েছে। কিন্তু এই আইনের সাংবিধানিক নিরাপত্তা ও ধারাবাহিকতা নষ্ট করা হয়নি। এই মানদণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে একটি অনুচ্চারিত জাতীয় ঐকমত্য আমাদের সমাজে সব সময় জাগরূক রয়েছে বলে আমরা ধরে নিতে পারি। পঁচাত্তর-পূর্বকালে তৈরি করা অনেক বিধিবিধান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে মুছে ফেলা হয়েছে। কিন্তু ১৯৭৩ সালের এই আইনকে যথার্থই অব্যাহতভাবে রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছে। এমনকি মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে সংগঠনগতভাবে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামী বিএনপির সঙ্গে মন্ত্রিসভা গঠন করে সংবিধানের অন্য বিধানে হাত দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু তারাও ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিলোপের উদ্যোগ নেওয়ার সাহস দেখায়নি। এই বাস্তব সত্য বিচারবিরোধী মহলও অগ্রাহ্য করতে পারে না।
আওয়ামী লীগ-সংশ্লিষ্ট কোনো মহলের রাজনৈতিক বা দলীয় অভিসন্ধি কিংবা কোনো অদক্ষতার বিষয়টি পুঁজি করে গোটা বিচার-প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ নেই। চার দশক পরে হলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায় নিশ্চিতভাবেই একটি জাতীয় অর্জন। এটি আমাদের জাতীয় জীবনে একটি ঐতিহাসিক ও মাইলফলক ঘটনা হয়ে থাকবে। এই বিলম্বিত রায়ে লাখো শহীদ ও নির্যাতিত পরিবার ও স্বজনেরা কিছুটা হলেও সান্ত্বনা খুঁজে পাবে।
বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার যে অন্তর্নিহিত দুর্বলতা রয়েছে, সামগ্রিক মানবাধিকার রক্ষায় সরকারি দলের যে ব্যর্থতা ও মলিন রেকর্ড রয়েছে, তা নিশ্চয় পীড়াদায়ক। কিন্তু সে কারণে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-প্রক্রিয়া ভন্ডুলের কোনো অপচেষ্টা অবশ্যই বরদাশত করা চলে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগকে বাংলাদেশের সামগ্রিক বিচারব্যবস্থার আলোকেই বিবেচনায় নেওয়া সমীচীন।
আমরা আশা করব, জাতির আবেগ স্পর্শ করা মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে যেকোনো ধরনের সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতি ও গোষ্ঠীগত স্বার্থরক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি সব মহল সযত্নে পরিহার করে চলতে সচেষ্ট থাকবে। তবে এ ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের অধিকতর সতর্ক ও সাবধান থাকাটা সময়ের দাবি। আইনকে তার নিজস্ব পথে চলতে দিতে হবে এবং সেটা যে সত্যিই ঘটছে, তা জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে প্রতীয়মান হতে হবে।
No comments